নিজস্ব প্রতিবেদক : এলিট ফোর্স র্যাব এবং এর সাবেক-বর্তমান সাত কর্মকর্তার উপর দেওয়া নিষেধাজ্ঞা যে সহসা উঠছে না, বাংলাদেশকে সেই ইংগিতই দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বুধবার জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের রাজনীতি বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ডের ঢাকা সফরের সময় এমন আলোচনাই হয়েছে। “উনারা বলেছেন যে, এটা একটা প্রক্রিয়া, এটা একটি জটিল প্রক্রিয়া। সুতরাং মুখে বললেই হবে না। তবে, তারা এটা নিয়ে কাজ করবে।”
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে গত বছরের ১০ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্র ‘গুরুতর’ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও বর্তমান পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমদসহ বাহিনীর সাত কর্মকর্তার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। সে সময় ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে ডেকে এমন পদক্ষেপ নিয়ে অসন্তোষ জানিয়েছিল বাংলাদেশ সরকার। পরে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে একটি লবিস্ট সংস্থাকেও নিয়োগ দেওয়া হয়। বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র পার্টনারশিপ ডায়ালগে যোগ দিতে আন্ডার সেক্রেটারি নুল্যান্ড গত ১৯ থেকে ২১ মার্চ ঢাকা সফরে এলে বাংলাদেশের তরফ থেকে র্যাবের ওপর ওই নিষেধাজ্ঞার প্রসঙ্গও তোলা হয়।
গত রোববার সাংবাদিকদের প্রশ্নে বাইডেন প্রশাসনের ওই কর্মকর্তাও বলেছিলেন, নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি ’জটিল ও কঠিন’। তবে এটা নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাবে দুই দেশের সরকার।
গতকাল বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আসছে এপ্রিলে ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের সাথে বৈঠকেও তিনি নিষেধাজ্ঞা তোলার বিষয়ে কথা বলবেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “গত ১০ ডিসেম্বরের পরে মার্কিন প্রতিনিধি যার সাথেই আলাপ হয়েছে, র্যাব ইস্যুটা এসেছে। আর সম্প্রতি মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি যিনি আসছিলেন, তার সাথেও এটা নিয়ে আলাপ হয়েছে।
“উনার বক্তব্য আপনারা শুনেছেন। উনি বলেছেন যে, গত তিন মাস র্যাবের কারণে কারও মৃত্যু হয় নাই, এসবৃ তারা খুশি।”
তিনি বলেন, “আমরা উনাদের বলেছি, আমরা প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছি, যা যা নেওয়ার। আমি বলতে চাই, এই প্রতিকারের ব্যবস্থাগুলো আমাদের সিস্টেমে এমনিতেই ছিল। কিন্তু অনেক সময় সেগুলো ঠিকমত কার্যকর হয় নাই।
”আমরা চাই সেগুলো যাতে কার্যকরী হয়। কারণ, কোথাও কোনো অঘটন যদি ঘটে, তার একটা জুডিশিয়াল প্রসেস আছে আমাদের। কিন্তু সোচ্চার করে আগে অত কার্যকর করিনি, আমরা এখন সেগুলো জোরালোভাবে বলছি। আমরা প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছি।”
যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক নীতির সাথে সম্পর্কিত মানবপাচার, মাদক নির্মূল ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে র্যাবের কার্যক্রমের কথাও আলোচনায় তুলে ধরার কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন। আলোচনার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “বিশেষ করে টেরোরিজম কমানো- এক্ষেত্রে র্যাব অসাধারণ কাজ করেছে। আপনারা সেটা স্বীকার করেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে র্যাব যাতে কাজ চালিয়ে যেতে পারে, আপনারা সেজন্য এটা উইথড্র করলে আমরা খুশি হব।”
র্যাবের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আলোচনার প্রশ্নে দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রসঙ্গও টানেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র নীতিগতভাবে, আদর্শগতভাবে ‘একই বিশ্বাস’ ধারণ করে।
“আমাদের সৃষ্টি হয়েছে, যখন গণতান্ত্রিক অধিকার দেওয়া হচ্ছিল না, মানুষের মত প্রকাশের অধিকার দেওয়া হচ্ছিল না।”
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “গত ১৩ বছরে আমাদের দেশে যেভাবে স্মুথলি ডেমোক্রেসি চলছে, এটার কিন্তু নজীর মাঝখানে ছিল না। আগে অনেক ধরনের মিলিটারি, অমুক তমুক ছিল, এখন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত ১৩ বছর ধরে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
”যে ভোট দিতে চায়, ভোট দিতে পারে। অবৈধ ভোট যেটাকে বলে, সেটা বাদ হয়ে গেছে। ছবিযুক্ত ভোটার আইডি হয়েছে, যার ফলে কারচুপির পরিমাণ কমে গেছে। আপনার স্বীকার করতেই হবে, আমাদের দেশের লোকগুলো মেন্টালি খুব ডেমোক্রেটিক, তারা পার্টিসিপেট করতে চায়।”
র্যাবের নিষেধাজ্ঞা মুখে বললেই উঠবে না, ঢাকাকে বলেছে যুক্তরাষ্ট্র
জনপ্রিয় সংবাদ