প্রত্যাশা ডেস্ক : মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চির বিচার আগামী সপ্তাহে শুরু হবে। তাঁর আইনজীবী এ কথা জানিয়েছেন। এদিকে সব রাজবন্দীকে মুক্তি দিতে মিয়ানমারের জান্তার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আঞ্চলিক জোট আসিয়ানের রাষ্ট্রদূতেরা। বার্তা সংস্থা এএফপি ও রয়টার্সের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়। রাজধানী নেপিডোতে গৃহবন্দী সু চির সঙ্গে সাক্ষাতের পর তাঁর আইনজীবী মিন মিন সোয়ে আজ সোমবার বলেন, সু চির বিরুদ্ধে মামলার শুনানির জন্য ১৪ জুন তারিখ ধার্য রয়েছে। এদিন বিচার শুরু হবে। সবাইকে সুস্থ-নিরাপদে থাকতে বলেছেন সু চি। ৭৫ বছর বয়সী সু চির বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগে মামলা করেছে জান্তা। কোন মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে বিচার শুরু হচ্ছে, তা জানা যায়নি।
আসিয়ানের রাষ্ট্রদূতদের আহ্বান : নারী, শিশু, বিদেশিসহ মিয়ানমারের সব রাজবন্দীর মুক্তির পাশাপাশি দেশটিতে অভ্যুত্থানের পর সৃষ্ট অস্থিরতার অবসানে আসিয়ানের পাঁচ দফা প্রস্তাব বাস্তবায়নে জান্তার প্রতি আঞ্চলিক জোটটির রাষ্ট্রদূতেরা আহ্বান জানিয়েছেন। আসিয়ানের রাষ্ট্রদূতেরা গত শুক্রবার মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোতে দেশটির সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পরে আসিয়ানের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়।
৫ জুনের বিবৃতিতে বলা হয়, আসিয়ানের রাষ্ট্রদূতদের নেপিডো সফরের উদ্দেশ্য ছিল দেশটির জনগণের স্বার্থে পাঁচ দফা প্রস্তাব বাস্তবায়নের মাধ্যমে মিয়ানমার কীভাবে একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানে পৌঁছাতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা করা।
মিয়ানমারে রক্তপাত বন্ধের উপায় খুঁজতে গত এপ্রিলে ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় সদস্যদেশগুলোর সম্মেলন করেছিল আসিয়ান। সম্মেলনে মিয়ানমারের জান্তাপ্রধান উপস্থিত ছিলেন। আসিয়ানের নেতারা বিক্ষোভ দমনের নামে রক্তপাত বন্ধ, আলোচনার পথ খোলা রাখা, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, রাজবন্দীদের মুক্তিসহ মোটাদাগে পাঁচ দফা প্রস্তাব মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইয়ের কাছে রাখেন। তখন আসিয়ানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, মিয়ানমারে সহিংসতার অবসানে জান্তা সরকার ঐকমত্যে পৌঁছেছে। একই সঙ্গে জান্তা সরকার মিয়ানমারের বিবদমান পক্ষগুলোর সঙ্গে আলোচনার ব্যাপারেও সম্মত হয়েছে। আসিয়ানের প্রস্তাব ইতিবাচকভাবে বিবেচনার কথা জানিয়েছিল মিয়ানমারের সামরিক জান্তা। কিন্তু আসিয়ানের প্রস্তাব বাস্তবায়নের কোনো লক্ষণ এখন পর্যন্ত মিয়ানমারের সামরিক জান্তার মধ্যে দেখা যাচ্ছে না। এই প্রেক্ষাপটে আসিয়ানের রাষ্ট্রদূতেরা মিয়ানমার সফর করেন। আসিয়ানের বিবৃতির বিষয়ে মিয়ানমার জান্তার মুখপাত্রের বক্তব্য জানতে পারেনি রয়টার্স।
জান্তার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে না পারায় আসিয়ানের প্রতি হতাশা ব্যক্ত করেছেন মিয়ানমারের সেনাশাসন-বিরোধীরা। মিয়ানমারে গত বছরের নভেম্বরে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) বিপুল ভোটে জয় পায়। নির্বাচন স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হয়েছে বলে দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক সংস্থা অভিমত দেয়। তবে এই নির্বাচনে কারচুপি-জালিয়াতির অভিযোগ আনে দেশটির সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর এই অভিযোগ নাকচ করে তৎকালীন নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনে কথিত জালিয়াতির অজুহাত তুলে দেশটির সেনাবাহিনী গত ১ ফেব্রুয়ারি সামরিক অভ্যুত্থান করে। তারা সু চির নির্বাচিত সরকার উৎখাতের মাধ্যমে দেশটির ক্ষমতা দখল করে। একই সঙ্গে সু চিসহ দেশটির রাজনৈতিক ও গণতন্ত্রপন্থীদের গ্রেপ্তার করে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দেশটিতে জরুরি অবস্থা জারি করে। সেনা অভ্যুত্থানের পরপরই দেশটির গণতন্ত্রপন্থীরা বিক্ষোভ শুরু করেন। সেনা শাসনবিরোধী এই বিক্ষোভে জান্তার নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে এখন পর্যন্ত প্রায় ৮৫০ জন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অনেকে। এ ছাড়া সাড়ে ৪ হাজারের বেশি বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার বা আটক করা হয়েছে।
সু চির বিচার আগামী সপ্তাহে শুরু হবে
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ