ঢাকা ০৬:৪৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ মে ২০২৫

আত্মঘাতী হয়েছেন বোকো হারাম প্রধান!

  • আপডেট সময় : ১২:৩৫:৪২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ জুন ২০২১
  • ৬৬ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক : আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়ায় ত্রাস সৃষ্টিকারী জঙ্গি গোষ্ঠী বোকো হারামের প্রধান নেতা আবুবকর শেখাও আত্মঘাতী হয়েছেন বলে এক অডিও রেকর্ডিংয়ে দাবি করেছে বিরোধী আরেকটি জঙ্গি গোষ্ঠী।
বার্তা সংস্থাগুলোর হাতে আসা একটি অডিওতে শোনা যায়, ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রোভিন্স-আইএসডাব্লিউএপি নামে একটি জঙ্গি গোষ্ঠী দাবি করছে যে, দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষের এক পর্যায়ে সাথে থাকা বিস্ফোরকের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিহত হন আবুবকর শেখাও। গত মাসেও একবার শেখাও এর মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছিলো। এর আগেও তিনি নিহত হয়েছিলেন বলে খবর প্রকাশ করা হয়েছিল। তবে বোকো হারাম কিংবা নাইজেরিয়ার সরকার-কেউই এই মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেনি।
রেকর্ডিংয়ে কী আছে? কোনো সুনির্দিষ্ট তারিখ ছাড়া ওই অডিও রেকর্ডিংয়ে ধারণ করা গলার স্বর যা আইএসডাব্লিউএপি- এর নেতা মুসাব আল-বারনাওয়ির বলে ধারণা করা হচ্ছে, সেখানে তিনি বলেন, শেখাও বিস্ফোরণ ঘটানোর মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবেই মারা যান। আইএসডাব্লিউএপি এর যোদ্ধারা তাকে গ্রেপ্তার করে এবং তাদের দলে যোগ দেয়ার সুযোগ দেয়। শেখাও পৃথিবীর বুকে অপমানিত হওয়ার পরিবর্তে পরজীবনে অপমানিত হওয়াকে বেছে নিয়েছেন। এর আগে গত মাসে যখন শেখাও এর মৃত্যুর খবর প্রচার করা হয়েছিল তখন নাইজেরিয়ার সামরিক বাহিনী জানিয়েছিল যে, তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখবে। সেসময় সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মেদ ইয়েরিমা বিবিসিকে বলেছিলেন যে, কী ঘটেছে সে বিষয়ে অনুসন্ধান করছে সামরিক বাহিনী। তবে নিশ্চিত প্রমাণ ছাড়া তারা কোন বিবৃতি দেবে না বলেও জানান তিনি। নিরাপত্তা সংস্থার সাথে ঘণিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে এমন এক সাংবাদিক জানান, উত্তর-পূর্ব নাইজেরিয়ার সামবিসা বনে বোকো হারামের অবস্থান লক্ষ্য করে আইএসডাব্লিউএপি হামলা চালালে শেখাও নিহত হন। এর আগে অসংখ্যবার তিনি নিহত বলে প্রচার করা হলেও আবার আত্মপ্রকাশ করেছেন তিনি। ২০০৯ সালে পুলিশের হেফাজতে বোকো হারামের প্রতিষ্ঠাতা মারা যাওয়ার পর এই গোষ্ঠীটির নেতৃত্ব নেন শেখাও। এরপর এটিকে একটি গোপন বিদ্রোহী গোষ্ঠী থেকে ভয়ঙ্কর জঙ্গি গোষ্ঠীতে পরিণত করেন তিনি। গোষ্ঠীটি পরবর্তীতে উত্তর-পূর্ব নাইজেরিয়ায় ত্রাসের রাজ্য কায়েম করে। শেখাওয়ের নেতৃত্বে বোকো হারাম ওই এলাকায় বোমা হামলা, অপহরণ এবং কারাগারে হামলা চালিয়ে বন্দীদের মুক্ত করার মতো ঘটনা ঘটিয়েছে। ২০১৪ সাল থেকে শরীয়া আইনের আওতায় ইসলামি রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে শহরগুলো দখলে নেয়া শুরু করে। চল্লিশের কোঠায় থাকা শেখাও প্রোপাগান্ডা ভিডিওর মাধ্যমে রক্তক্ষয়ী জিহাদি প্রচারণার প্রতি সমর্থন টানেন। যার কারণে তাকে ওসামা বিন লাদেনের সাথে তুলনা করা হয়। ২০২১ সালের এক ভিডিওতে তিনি বলেন, মুরগি আর ভেড়া জবাই করার মতো, আমি হত্যা করতেও পছন্দ করি। তার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে ৩০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে এবং ২০ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুহারা হয়েছে।
২০১৪ সালে বর্নো স্টেটের চিবুক এলাকার একটি স্কুল থেকে কয়েকশ ছাত্রীকে অপহরণের ঘটনার মাধ্যমে এই গোষ্ঠীটি আন্তর্জাতিক নজর কাড়ে। এ ঘটনা থেকেই হ্যাশট্যাগ ‘ব্রিংব্যাকআওয়ারগার্লস’ বা আমাদের মেয়েদের ফিরিয়ে দাও নামে একটি আন্দোলন শুরু হয়। অপহরণের শিকার ওই ছাত্রীদের মধ্যে এখনো অনেকেই নিখোঁজ রয়েছেন। এর পরপরই যুক্তরাষ্ট্র শেখাওকে ‘আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী’ বলে চিহ্নিত করে এবং তাকে জীবিত অথবা মৃত ধরিয়ে দেবার জন্য ৭০ লাখ ডলার পুরষ্কার ঘোষণা করে। শেখাওয়ের নীতি এতো বেশি কট্টর ছিল যে ইসলামিক স্টেট তাকে প্রত্যাখ্যান করে। ইসলামিক স্টেট-পন্থীরা বোকো হারাম থেকে বের হয়ে গিয়ে ২০১৬ সালে আইএসডাব্লিউএপি গঠন করে।
বোকো হারামের ভবিষ্যৎ কী? বিশ্লেষকরা বলছেন, শেখাওয়ের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হলেই যে বোকো হারামের সমাপ্তি ঘটবে তা বলা যাবে না। ভেঙে যাওয়ার পর থেকে আইএসডাব্লিউএপি বোকো হারামকে ওই এলাকার প্রভাবশালী সহিংস গোষ্ঠীর তকমা থেকে স্থানচ্যুত করেছে। অনেকেই মনে করেন যে, শেখাওয়ের মৃত্যুর পর দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সহিংস বিরোধিতা শেষ হয়ে যেতে পারে। বোকো হারামের যোদ্ধারা হয়তো আইএসডাব্লিউএপিতে যোগ দিতে পারে। কিন্তু অন্যরা বলছেন যে, তারা হয়তো আবার তাদের নেতার আদর্শেই অটল থাকতে পারেন। জেমসটাউন ফাউন্ডেশন টেরোরিজম মনিটর এর সম্পাদক জেকব জেন বিবিসিকে বলেন, আইএসডাব্লিউএপি-এ যোগ দেয়া নাকি তাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে- তা নিয়ে বোকো হারামের যোদ্ধাদের মধ্যে বিভক্তি রয়েছে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

আত্মঘাতী হয়েছেন বোকো হারাম প্রধান!

আপডেট সময় : ১২:৩৫:৪২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ জুন ২০২১

প্রত্যাশা ডেস্ক : আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়ায় ত্রাস সৃষ্টিকারী জঙ্গি গোষ্ঠী বোকো হারামের প্রধান নেতা আবুবকর শেখাও আত্মঘাতী হয়েছেন বলে এক অডিও রেকর্ডিংয়ে দাবি করেছে বিরোধী আরেকটি জঙ্গি গোষ্ঠী।
বার্তা সংস্থাগুলোর হাতে আসা একটি অডিওতে শোনা যায়, ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রোভিন্স-আইএসডাব্লিউএপি নামে একটি জঙ্গি গোষ্ঠী দাবি করছে যে, দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষের এক পর্যায়ে সাথে থাকা বিস্ফোরকের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিহত হন আবুবকর শেখাও। গত মাসেও একবার শেখাও এর মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছিলো। এর আগেও তিনি নিহত হয়েছিলেন বলে খবর প্রকাশ করা হয়েছিল। তবে বোকো হারাম কিংবা নাইজেরিয়ার সরকার-কেউই এই মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেনি।
রেকর্ডিংয়ে কী আছে? কোনো সুনির্দিষ্ট তারিখ ছাড়া ওই অডিও রেকর্ডিংয়ে ধারণ করা গলার স্বর যা আইএসডাব্লিউএপি- এর নেতা মুসাব আল-বারনাওয়ির বলে ধারণা করা হচ্ছে, সেখানে তিনি বলেন, শেখাও বিস্ফোরণ ঘটানোর মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবেই মারা যান। আইএসডাব্লিউএপি এর যোদ্ধারা তাকে গ্রেপ্তার করে এবং তাদের দলে যোগ দেয়ার সুযোগ দেয়। শেখাও পৃথিবীর বুকে অপমানিত হওয়ার পরিবর্তে পরজীবনে অপমানিত হওয়াকে বেছে নিয়েছেন। এর আগে গত মাসে যখন শেখাও এর মৃত্যুর খবর প্রচার করা হয়েছিল তখন নাইজেরিয়ার সামরিক বাহিনী জানিয়েছিল যে, তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখবে। সেসময় সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মেদ ইয়েরিমা বিবিসিকে বলেছিলেন যে, কী ঘটেছে সে বিষয়ে অনুসন্ধান করছে সামরিক বাহিনী। তবে নিশ্চিত প্রমাণ ছাড়া তারা কোন বিবৃতি দেবে না বলেও জানান তিনি। নিরাপত্তা সংস্থার সাথে ঘণিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে এমন এক সাংবাদিক জানান, উত্তর-পূর্ব নাইজেরিয়ার সামবিসা বনে বোকো হারামের অবস্থান লক্ষ্য করে আইএসডাব্লিউএপি হামলা চালালে শেখাও নিহত হন। এর আগে অসংখ্যবার তিনি নিহত বলে প্রচার করা হলেও আবার আত্মপ্রকাশ করেছেন তিনি। ২০০৯ সালে পুলিশের হেফাজতে বোকো হারামের প্রতিষ্ঠাতা মারা যাওয়ার পর এই গোষ্ঠীটির নেতৃত্ব নেন শেখাও। এরপর এটিকে একটি গোপন বিদ্রোহী গোষ্ঠী থেকে ভয়ঙ্কর জঙ্গি গোষ্ঠীতে পরিণত করেন তিনি। গোষ্ঠীটি পরবর্তীতে উত্তর-পূর্ব নাইজেরিয়ায় ত্রাসের রাজ্য কায়েম করে। শেখাওয়ের নেতৃত্বে বোকো হারাম ওই এলাকায় বোমা হামলা, অপহরণ এবং কারাগারে হামলা চালিয়ে বন্দীদের মুক্ত করার মতো ঘটনা ঘটিয়েছে। ২০১৪ সাল থেকে শরীয়া আইনের আওতায় ইসলামি রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে শহরগুলো দখলে নেয়া শুরু করে। চল্লিশের কোঠায় থাকা শেখাও প্রোপাগান্ডা ভিডিওর মাধ্যমে রক্তক্ষয়ী জিহাদি প্রচারণার প্রতি সমর্থন টানেন। যার কারণে তাকে ওসামা বিন লাদেনের সাথে তুলনা করা হয়। ২০২১ সালের এক ভিডিওতে তিনি বলেন, মুরগি আর ভেড়া জবাই করার মতো, আমি হত্যা করতেও পছন্দ করি। তার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে ৩০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে এবং ২০ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুহারা হয়েছে।
২০১৪ সালে বর্নো স্টেটের চিবুক এলাকার একটি স্কুল থেকে কয়েকশ ছাত্রীকে অপহরণের ঘটনার মাধ্যমে এই গোষ্ঠীটি আন্তর্জাতিক নজর কাড়ে। এ ঘটনা থেকেই হ্যাশট্যাগ ‘ব্রিংব্যাকআওয়ারগার্লস’ বা আমাদের মেয়েদের ফিরিয়ে দাও নামে একটি আন্দোলন শুরু হয়। অপহরণের শিকার ওই ছাত্রীদের মধ্যে এখনো অনেকেই নিখোঁজ রয়েছেন। এর পরপরই যুক্তরাষ্ট্র শেখাওকে ‘আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী’ বলে চিহ্নিত করে এবং তাকে জীবিত অথবা মৃত ধরিয়ে দেবার জন্য ৭০ লাখ ডলার পুরষ্কার ঘোষণা করে। শেখাওয়ের নীতি এতো বেশি কট্টর ছিল যে ইসলামিক স্টেট তাকে প্রত্যাখ্যান করে। ইসলামিক স্টেট-পন্থীরা বোকো হারাম থেকে বের হয়ে গিয়ে ২০১৬ সালে আইএসডাব্লিউএপি গঠন করে।
বোকো হারামের ভবিষ্যৎ কী? বিশ্লেষকরা বলছেন, শেখাওয়ের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হলেই যে বোকো হারামের সমাপ্তি ঘটবে তা বলা যাবে না। ভেঙে যাওয়ার পর থেকে আইএসডাব্লিউএপি বোকো হারামকে ওই এলাকার প্রভাবশালী সহিংস গোষ্ঠীর তকমা থেকে স্থানচ্যুত করেছে। অনেকেই মনে করেন যে, শেখাওয়ের মৃত্যুর পর দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সহিংস বিরোধিতা শেষ হয়ে যেতে পারে। বোকো হারামের যোদ্ধারা হয়তো আইএসডাব্লিউএপিতে যোগ দিতে পারে। কিন্তু অন্যরা বলছেন যে, তারা হয়তো আবার তাদের নেতার আদর্শেই অটল থাকতে পারেন। জেমসটাউন ফাউন্ডেশন টেরোরিজম মনিটর এর সম্পাদক জেকব জেন বিবিসিকে বলেন, আইএসডাব্লিউএপি-এ যোগ দেয়া নাকি তাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে- তা নিয়ে বোকো হারামের যোদ্ধাদের মধ্যে বিভক্তি রয়েছে।