মহামারী চলাকালীন প্রথম দশ (১০) মাসে আমাদের দেশে করোনা ভাইরাসে প্রাণ হারিয়েছে পাঁচ (৫) হাজার মানুষ আর আতœহত্যায় প্রাণ হারিয়েছে এগারো (১১) হাজার মানুষ।
ক্রমশ মৃত্যুর মিছিল দ্রুত গতিতে ধাবমান। পৃথিবী নামক বসবাসের স্থল আজ সংকটময় পরিস্থিতি ও চরম বির্পযয়ে উপনিত।
ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক চাহিদার চেয়ে যোগানের অপ্রতুলতা অনিস্বীকার্য। তথাপি জীবনধারার গতিময়তায় অনাকাঙ্ক্ষিত আগুন্তক ভাইরাসে দৌরাতেœ মরন ছোবলে যেন নিশ্চিহ্ন গোটা জনপদ।
সামগ্রিক পর্যালোচনায় বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পরা সংকটের মুহূর্তে ও ক্ষুদ্র রাষ্ট্র বাংলাদেশ অনেকাংশেই তার কর্মপপরিধি যথাযথভাবে পালন করার সর্বাতœক চেষ্টা করছে।
ভাইরাসের সংক্রমণে হাজারো প্রাণ অকাতরে বিপন্ন হচ্ছে। চিকিৎসা, যতœ, চেষ্টা উপেক্ষা করে আজ প্রানহানীতে এক উন্মাদনা। দূর দূরান্তরের সাহায্য, পরামর্শ এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতি রুখতে অনেকাংশে অপারগ। জীবন নাশের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলছে।
অর্থ, বিত্ত, সম্পদ সব যেন তুচ্ছ। কোন বিনিময়ে আজও প্রাণ প্রদীপ রক্ষা ও সুরাক্ষা হচ্ছে না। মলিনতা, উৎকন্ঠায় আজ মৃত্যুপুরী আমাদের যাপিত জীবন। সামান্য বিচ্যুতি সৃষ্টির ধারাবাহিকতার নাম মৃত্যু। ঘাতক ভাইরাসে সংক্রমণে প্রতিদিন লাশের সংখ্যার বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তবুও বাস্তবতার নামান্তর অস্তিত্বের বেরাজালে কিছু প্রাণকনা টিকে আছে। কেউ হয়তো অস্তিত্বের সংকটে দিকভ্রান্ত বিপন্ন।
জীবনের সকল আয়োজন অনুভূতি প্রকাশ ব্যতিত কেউ আতœহননে অগ্রসর হচ্ছে।মানুষের জীবন দোয়েল পাখি বা শালিক পাখির মতো এতটা নিশ্চিত সুখকর নয়। ক্রমাগত জটিলতায় আচ্ছন্ন বিমূর্ত জীবনের রেখাপথ।বেচে থাকা ও নিজেকে বাচিঁয়ে রাখা যেন দুর্নিবার যুদ্ধ।
প্রতিকূল পরিস্থিতিতে আজ যেন মানুষ দিশেহারা। স্বাভাবিক জীবন ধারা অব্যাহত রাখতে কেউ হিমসিম অবস্থায়।
যশোরে রিনের টাকা যোগার করতে না পারায় এক নারী আতœহুতি দিয়েছেন।
প্রতিটি আতœহত্যার জন্য অসংখ্য জানা অজানা কারণ বিদ্যমান। নির্মমতা শোচনীয় অবস্থায় চরম মাত্রায় পৌঁছালেই জীবন থেকে মানুষ স্বেচ্ছায় মুক্তি নিতে চায় ও আতœহননের পথ বেছে নেয়।
যদিও পারিপার্শ্বিক অবস্থা,বিষাদ, আতœনিমগ্নতায় মানুষ আতœহত্যা করে।
নিজ জীবন বয়ে বেরানো কখনো মানুষের কাছে বোঝা মনে হয়, সেই পরিস্থিতিতে হয়তো আতœহত্যা শ্রেয় মনে হয়।
চারপাশের মানুষের নিস্ঠুরতা, স্বার্থপরতা ও উৎপীড়ন অনেক সময় একজন মানুষ কে স্বেচ্ছায় মৃত্যুর পথে ঠেলে দেয়।
ভোজ্য তেলের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধির জন্য আজ নিন্ম আয়ের মানুষ দশ (১০) টাকার তেল কিনতে হয়।
জীবন শুধু হিসেবী সমীকরনের এক কঠোর রেখাপাত সমতুল্য। বেচে থাকার সব আয়োজন যেন ফুরিয়ে যাবার সমীপে। যাতাকলে পিষ্ঠ অনেক মানুষ আজ নিরুপায় হয়ে আতœহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। অথচ সামান্য সহানুভূতি আর কিছু প্রাপ্তিতে নিরুপায় জীবনগুলো হয়তো বাঁচার উপযোগিতা পেত।
এই করোনাকালীন সময়ে বেকারত্বের সংখ্যা বেড়ে গেছে। সামান্য আয়ের মানুষের জীবন আজ অতিষ্ট। অভাব যেন মানুষের পিছু হাটে। দারিদ্র্যতা মোকাবেলা করার সাধ্য মানুষ ক্রমান্বয়ে হারিয়ে ফেলছে।
পাশবিক নির্যাতন ও আচরণে আজ জীবন ভারাক্রান্ত। রুখে দাঁড়ানোর পথ ও অবরুদ্ধ।
তাই বর্নহীন জীবনে মানুষ আজ নিরুপায় হয়ে স্বেচ্ছায় মরনকে প্রাধান্য দিচ্ছে।
হয়তো একদল স্বেচ্ছাসেবক, সহানুভূতিশীল মানুষের উত্তরন বা কাছের মানুষের ভালবাসা,স্বার্থহীন আচরণ এই অপমৃত্যু রুখে দেয়া যেত।
বিচ্ছিন্ন পরিক্রমায় পরিলক্ষিত হয় যে, সুনির্দিষ্ট আইনের সুস্পষ্ট বাধ্যবাধকতা থাকা স্বত্তেও নিদিষ্ট সময়ে তদন্ত রির্পোট পেশ করতে কেউ অপরাগ হচ্ছে, যার ফলশ্রুতিতে কারাগারে অভিযুক্ত ব্যক্তির মৃত্যু হচ্ছে। এই মৃত্যুর দায় কার?
এত ভারী লাশ বহনের শক্তি কি কোন জাতিগোষ্ঠী বহন করতে পারবে?
ফারজানা কাশেমী
আইনজীবী
সুপ্রিম কোর্ট অব বাংলাদেশ