নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশে গত এক দিনে আরও ১ হাজার ৬৭৬ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসে সংক্রমণ ধরা পড়েছে, আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে আরও ৩৮ জনের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল রোববার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় নতুন আক্রান্তদের নিয়ে দেশে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে ৮ লাখ ১০ হাজার ৯৯০ জন হয়েছে। আর করোনাভাইরাসে মৃতের মোট সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১২ হাজার ৮৩৯ জন।
সরকারি হিসাবে, আক্রান্তদের মধ্যে একদিনে আরও ১ হাজার ৮৯৭ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তাদের নিয়ে মোট সুস্থ হয়েছেন ৭ লাখ ৫১ হাজার ৩২২ জন।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গতবছর ৮ মার্চ; তা আট লাখ পেরিয়ে যায় এ বছর ৩১ মে। সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে গত ৭ এপ্রিল রেকর্ড ৭ হাজার ৬২৬ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়। প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর গত বছরের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ বছর ১১ মে তা ১২ হাজার ছাড়িয়ে যায়। এর মধ্যে ১৯ এপ্রিল রেকর্ড ১১২ জনের মৃত্যুর খবর দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
বিশ্বে শনাক্ত কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা ইতোমধ্যে ১৭ কোটি ৩০ লাখ ছাড়িয়েছে। মৃত্যু হয়েছে সাড়ে ৩৭ লাখ ২২ হাজারের বেশি মানুষের। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৫০৯টি ল্যাবে ১৫ হাজার ৬১৩টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৬০ লাখ ৪৯ হাজার ৮৭৩টি নমুনা।
রোববার নমুনা পরীক্ষা অনুযায়ী শনাক্তের হার ১০ দশমিক ৭৩ শতাংশ। এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৪১ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯২ দশমিক ৬৪ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৮ শতাংশ। সরকারি ব্যবস্থাপনায় এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৪৪ লাখ ১২ হাজার ৭৩১টি; বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৬ লাখ ৩৭ হাজার ১৪২টি।
গত এক দিনে যারা মারা গেছেন, তাদের ২৫ জন পুরুষ আর নারী ১৩ জন। তাদের ৩১ জন সরকারি হাসপাতালে, ৬ জন বেসরকারি হাসপাতালে এবং ১ জন বাড়িতে মারা যান। তাদের মধ্যে ২৩ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি, ৯ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ২ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছর,এবং ৩ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছর এবং ১ জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ছিল। মৃতদের মধ্যে ৪ জন ঢাকা বিভাগের, ১২ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, ৪ জন রাজশাহী বিভাগের, ৬ জন খুলনা বিভাগের, ১ জন বরিশাল বিভাগের, ৩ জন সিলেট বিভাগের, ৫ জন রংপুর বিভাগের এবং ৩ জন ময়মনসিংহ বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন। এ পর্যন্ত মৃত ১২ হাজার ৮৩৯ জনের মধ্যে ৯ হাজার ২৫৬ জন পুরুষ এবং ৩ হাজার ৫৮৩ জন নারী।
মোংলায় সংক্রমণ ৭১ শতাংশ, লকডাউন : বাগেরহাটের মোংলা উপজেলায় করোনাভাইরাস সংক্রমণ মারাত্মক আকার নিয়েছে। গত শনিবার (৫ জুন) সেখানে সংক্রমণের হার ৭১ শতাংশে পৌঁছেছে।
মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জীবিতেশ বিশ্বাস গতকাল রোববার (৬ জুন) দুপুরে জানান, শনিবার (৫ জুন) মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টে ৪৮ জনের মধ্যে ৩৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এই হিসাবে সংক্রমণের হার ৭১ শতাংশ।
কয়েকদিন ধরে উপজেলায় সংক্রমণ বাড়ছে বলে জানান উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা। তিনি পরিসংখ্যান দিয়ে জানান, শুক্রবার (৪ জুন) টেস্ট বন্ধ ছিল। এর আগের দিনে বৃহস্পতিবার (৩ জুন) উপজেলায় ২৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করে শনাক্ত হয় ১০ জন, যা ৪০ শতাংশ। আর বুধবার (২ জুন) ৫৯ জনের মধ্যে পজেটিভ রেজাল্ট আসে ৩৩ জনের, যা ৫৬ শতাংশ।
করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকায় গত ৩০ মে থেকে মোংলা উপজেলার মোংলা পোর্ট পৌরসভায় বিশেষ বিধিনিষেধ (লকডাউন) ঘোষণা করে উপজেলা প্রশাসন। প্রাথমিকভাবে ৮ দিনের জন্য ৭ দফা নির্দেশনা জারি করা হয়। এর মধ্যে আজ রোববার (৬ জুন) পুরো উপজেলায় বিশেষ বিধিনিষেধ (লকডাউন) জারি করেছে প্রশাসন। সংক্রমণ হার না কমলে চলমান বিধিনিষেধ বাড়তে পারে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কমলেশ মজুমদার। মোংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কমলেশ মজুমদার বলেন, প্রথমে শুধু পৌরসভা এলাকায় বিধিনিষেধ জারি করা হয়। আজ পুরো উপজেলা জুড়ে জারি করা হলো। পুলিশ, আনসার, স্বেচ্ছাসেবকদের পাশাপাশি আজ থেকে কোস্টগার্ডের সদস্যরা মাঠে থাকবে। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত ও বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে বলে জানান তিনি।
কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোন, মোংলার অপারেশন কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার ইমতিয়াজ আলম বলেন, ‘৩০ মে উপজেলা প্রশাসনের বিধিনিষেধ জারির পর থেকে মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলে টহল জোদার করেছি। শনিবার (৫ জুন) থেকে উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় টহল কার্যক্রম শুরু করেছি।’ জনসচেতনতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতেও কোস্টগার্ড সদস্যরা কাজ করছে বলে জানান লেফটেন্যান্ট কমান্ডার ইমতিয়াজ আলম।
দেশে আরও ৩৮ মৃত্যু, ১৬৭৬ রোগী শনাক্ত
ট্যাগস :
দেশে আরও ৩৮ মৃত্যু
জনপ্রিয় সংবাদ