ঢাকা ০৭:১৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৯ অগাস্ট ২০২৫

১১ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বড় দরপতন পুঁজিবাজারে

  • আপডেট সময় : ০১:৪৩:০৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ মার্চ ২০২২
  • ১০৪ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : ইউক্রেইন যুদ্ধের জেরে বিশ্ব বাজারে আতঙ্কের দিনে ১১ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বড় দরপতন দেখল ঢাকার পুঁজিবাজার, এক দিনেই সূচক কমে গেল পৌনে তিন শতাংশ।
গতকাল সোমবার সকালে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই)যখন লেনদেনের শুরু হয়, প্রধান সূচক ডিএসইএক্স তখন ৬ হাজার ৬৩৮ দশমিক ৬৪ পয়েন্টে ছিল। শুরুতেই সূচক পড়তে থাকে এবং মোটামুটি লেনদেনের পুরোটা সময় সেই প্রবণতা চলে। দিন শেষে ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ১৮২ দশমিক ১২ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৭৪ শতাংশ কমে ৬ হাজার ৪৫৬ দশমিক ৫১ পয়েন্ট হয়। শতাংশের হিসাবে ডিএসই সূচকের এই পতন গত ১১ মাস ৩ দিনের মধ্যে বেশি। এর আগে গত বছরের ৪ এপ্রিল ৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ পড়ে গিয়েছিল ঢাকার প্রধান সূচক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, এত বড় পতনের কোনো যৌক্তিক কারণ তিনি ‘খুঁজে পাচ্ছেন না’।
“বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়ার কারণে বা যুদ্ধের কারণে আমাদের দেশে যে প্রভাব পড়বে বা পড়তে পারে সেটা ঠেকানোর সক্ষমতা আমাদের বাজারের আছে। সেটা বড় প্রভাব ফেলতে পারার কথা না।
“আমারে মনে হয় বিনিয়োগকারীরা ভয়ে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। এই শেয়ার কমে ছেড়ে দিয়ে পরে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্থ হবেন।”
মহামারীর ধাক্কা সামলে বিশ্ব অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করায় বেড়ে গেছে জ্বালানি তেলের চাহিদা। কিন্তু সে অনুপাতে যোগান কম হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম গত কিছুদিন ধরেই বাড়ছিল। এর মধ্যে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেইনে যুদ্ধ বাধিয়ে দিলে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। রাশিয়ার আগ্রাসনের জবাবে মস্কোর তেল-গ্যাসের ওপর যুক্তরাষ্ট্র অবরোধ আরোপের সম্ভাবনার খবরে সোমবার তেলের দাম উঠে যায় ১৩০ ডলারে, যা ২০০৮ সালের পর সর্বোচ্চ। স্বাভাবিকভাবেই তেলের বাজারের ধাক্কা লাগে বিশ্ব পুঁজিবাজারে। এশিয়ার মধ্যে জাপানের নিক্কেই সূচক কমেছে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ এবং হংকংয়ের হ্যাং সেং সূচক ৪ শতাংশ পড়ে যায়। তেলের দাম নিয়ে ওই আতঙ্কই বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে সূচক পতনের বড় কারণ বরে মনে করছেন মার্চেন্ট ব্যাংক আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান। তিনি বলেন, “আজকে সকালে তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার যে খবরটা এসেছে, এর জন্য বিনিয়োগকারীরা একটু ভয় পেয়ে গেছে। তাই হয়ত ভয়ে শেয়ার ছেড়ে দিয়েছে।”
শেয়ার বিক্রির এই চাপে সোমবার ঢাকার বাজারে লেনদেন বেড়ে গেছে আগের দিনের চেয়ে ১৩ দশমিক ৬১ শতাংশ। ডিএসইতে এদিন ৭৪০ কোটি ২৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা আগের কর্মদিবসে ৬৫১ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ছিল। আর লেনদেন হওয়া ৯৬ শতাংশ কোম্পানির দাম এদিন পড়ে গেছে। এর বিপরীতে মাত্র ২ শতাংশের দাম বেড়েছে এবং ২ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার আগের দাম ধরে রাখতে পেরেছে। লেনদেন হওয়া ৩৭৯টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটের মধ্যে ৭টির দর বেড়েছে, ৩৬৪টির কমেছে এবং ৮টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে।
ঢাকার অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসইএস বা শরীয়াহ সূচক ৩৬ দশমিক ৬২ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৩৯৪ দশমিক ৪০ পয়েন্ট হয়েছে। ডিএস৩০ সূচক ৬৪ দশমিক ৫৫ পয়েন্ট কমে হয়েছে ২ হাজার ৩৭৪ দশমিক ৩৯ পয়েন্ট। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জও এদিন সূচকপতন দেখেছে। এ বাজারের প্রধান সূচক সিএএসপিআই ৪৫৫ দশমিক ৩৬ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৩৪ শতাংশ কমে হয়েছে ১৮ হাজার ৯৮৯ দশমিক ১২ পয়েন্ট। সিএসইতে লেনদেন হয়েছে আগের দিনের তুলনায় ১৬ দশমিক ৩০ শতাংশ বা ২ কোটি ৯০ লাখ টাকা বেশি। মোট ২০ কোটি ৭১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে চট্টগ্রামে, যা আগের দিন ১৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা ছিল। সিএসইতে ২৯৪টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট কেনাবেচা হয়েছে এদিন, এর মধ্যে ১৯টির দর বেড়েছে, ২৫৪টির কমেছে এবং ২১টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

রোববার থেকে টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু, ৮০ টাকায় মিলবে চিনি

১১ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বড় দরপতন পুঁজিবাজারে

আপডেট সময় : ০১:৪৩:০৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ মার্চ ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক : ইউক্রেইন যুদ্ধের জেরে বিশ্ব বাজারে আতঙ্কের দিনে ১১ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বড় দরপতন দেখল ঢাকার পুঁজিবাজার, এক দিনেই সূচক কমে গেল পৌনে তিন শতাংশ।
গতকাল সোমবার সকালে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই)যখন লেনদেনের শুরু হয়, প্রধান সূচক ডিএসইএক্স তখন ৬ হাজার ৬৩৮ দশমিক ৬৪ পয়েন্টে ছিল। শুরুতেই সূচক পড়তে থাকে এবং মোটামুটি লেনদেনের পুরোটা সময় সেই প্রবণতা চলে। দিন শেষে ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ১৮২ দশমিক ১২ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৭৪ শতাংশ কমে ৬ হাজার ৪৫৬ দশমিক ৫১ পয়েন্ট হয়। শতাংশের হিসাবে ডিএসই সূচকের এই পতন গত ১১ মাস ৩ দিনের মধ্যে বেশি। এর আগে গত বছরের ৪ এপ্রিল ৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ পড়ে গিয়েছিল ঢাকার প্রধান সূচক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, এত বড় পতনের কোনো যৌক্তিক কারণ তিনি ‘খুঁজে পাচ্ছেন না’।
“বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়ার কারণে বা যুদ্ধের কারণে আমাদের দেশে যে প্রভাব পড়বে বা পড়তে পারে সেটা ঠেকানোর সক্ষমতা আমাদের বাজারের আছে। সেটা বড় প্রভাব ফেলতে পারার কথা না।
“আমারে মনে হয় বিনিয়োগকারীরা ভয়ে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। এই শেয়ার কমে ছেড়ে দিয়ে পরে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্থ হবেন।”
মহামারীর ধাক্কা সামলে বিশ্ব অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করায় বেড়ে গেছে জ্বালানি তেলের চাহিদা। কিন্তু সে অনুপাতে যোগান কম হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম গত কিছুদিন ধরেই বাড়ছিল। এর মধ্যে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেইনে যুদ্ধ বাধিয়ে দিলে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। রাশিয়ার আগ্রাসনের জবাবে মস্কোর তেল-গ্যাসের ওপর যুক্তরাষ্ট্র অবরোধ আরোপের সম্ভাবনার খবরে সোমবার তেলের দাম উঠে যায় ১৩০ ডলারে, যা ২০০৮ সালের পর সর্বোচ্চ। স্বাভাবিকভাবেই তেলের বাজারের ধাক্কা লাগে বিশ্ব পুঁজিবাজারে। এশিয়ার মধ্যে জাপানের নিক্কেই সূচক কমেছে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ এবং হংকংয়ের হ্যাং সেং সূচক ৪ শতাংশ পড়ে যায়। তেলের দাম নিয়ে ওই আতঙ্কই বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে সূচক পতনের বড় কারণ বরে মনে করছেন মার্চেন্ট ব্যাংক আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান। তিনি বলেন, “আজকে সকালে তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার যে খবরটা এসেছে, এর জন্য বিনিয়োগকারীরা একটু ভয় পেয়ে গেছে। তাই হয়ত ভয়ে শেয়ার ছেড়ে দিয়েছে।”
শেয়ার বিক্রির এই চাপে সোমবার ঢাকার বাজারে লেনদেন বেড়ে গেছে আগের দিনের চেয়ে ১৩ দশমিক ৬১ শতাংশ। ডিএসইতে এদিন ৭৪০ কোটি ২৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা আগের কর্মদিবসে ৬৫১ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ছিল। আর লেনদেন হওয়া ৯৬ শতাংশ কোম্পানির দাম এদিন পড়ে গেছে। এর বিপরীতে মাত্র ২ শতাংশের দাম বেড়েছে এবং ২ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার আগের দাম ধরে রাখতে পেরেছে। লেনদেন হওয়া ৩৭৯টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটের মধ্যে ৭টির দর বেড়েছে, ৩৬৪টির কমেছে এবং ৮টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে।
ঢাকার অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসইএস বা শরীয়াহ সূচক ৩৬ দশমিক ৬২ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৩৯৪ দশমিক ৪০ পয়েন্ট হয়েছে। ডিএস৩০ সূচক ৬৪ দশমিক ৫৫ পয়েন্ট কমে হয়েছে ২ হাজার ৩৭৪ দশমিক ৩৯ পয়েন্ট। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জও এদিন সূচকপতন দেখেছে। এ বাজারের প্রধান সূচক সিএএসপিআই ৪৫৫ দশমিক ৩৬ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৩৪ শতাংশ কমে হয়েছে ১৮ হাজার ৯৮৯ দশমিক ১২ পয়েন্ট। সিএসইতে লেনদেন হয়েছে আগের দিনের তুলনায় ১৬ দশমিক ৩০ শতাংশ বা ২ কোটি ৯০ লাখ টাকা বেশি। মোট ২০ কোটি ৭১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে চট্টগ্রামে, যা আগের দিন ১৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা ছিল। সিএসইতে ২৯৪টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট কেনাবেচা হয়েছে এদিন, এর মধ্যে ১৯টির দর বেড়েছে, ২৫৪টির কমেছে এবং ২১টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে।