ক্রীড়া ডেস্ক : অভিজ্ঞ ফরাসি স্ট্রাইকার অলিভার গিরুদের একমাত্র গোলে নাপোলিকে পরাজিত করে সিরি-এ টেবিলের শীর্ষস্থান পুনরুদ্ধার করেছে এসি মিলান। স্তাদিও দিয়েগো আরমান্ডো ম্যারাডোনা স্টেডিয়ামে বিরতির ঠিক পরপরই ৪৯ মিনিটে গিরুদের গোলে মিলানের জয় নিশ্চিত হয়। এই জয়ে নগর প্রতিদ্বন্দ্বী ইন্টার মিলানকে দুই পয়েন্টের ব্যবধানে পিছনে ফেলে শীর্ষস্থানে উঠে এসেছে মিলান। যদিও বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইন্টারের হাতে এক ম্যাচ বেশী রয়েছে। শুক্রবার তলানির দল সালেরনিতানাকে ৫-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে উপরে উঠে আসার পর কাল আবারো মিলানের জয়ে দ্বিতীয় স্থানে নেমে গেছে। তৃতীয় স্থানে থাকা নাপোলি থেকে ইন্টার মাত্র এক পয়েন্ট এগিয়ে আছে। এনিয়ে লিগে অষ্টম গোল করলেন ফ্রেঞ্চম্যান গিরুদ। গত গ্রীষ্মে চেলসি থেকে সান সিরোতে আসার পর এটাই তার প্রথম এ্যাওয়ে গোল। ৩৫ বছর বয়সী এই অভিজ্ঞ স্ট্রাইকারের জন্য এই গোলটি নি:সন্দেহে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ম্যাচ শেষে গণমাধ্যমে গিরুদ বলেছেন, ‘আমি যখনই মাঠে নামি নিজের পরিপূর্ণ দায়িত্বটুকু পালনের চেষ্টা করি। সঠিক সময়ে, সঠিক জায়গায় থেকে নিজেকে ও একইসাথে দলকে এগিয়ে নিয়ে যাবার চেষ্টার করি। আমি এখনই শিরোপার কথা বলছি না। কিন্তু এ বছর কিছু একটা জয়ের আশা করছি। আমাদের সকলের মধ্যে সেই আশা আছে এবং এজন্য শেষ পর্যন্ত আমরা লড়াই চালিয়ে যেতে চাই।’
প্রথমার্ধের ২৪ মিনিটে নাপোলির সেনেগালিজ মিডফিল্ডার কালিদু কুলিবালির কঠিন এক চ্যালেঞ্জের মুখে গিরুদ গোঁড়ালিতে আঘাত পেয়েছিলেন। দুই মিনিটেরও বেশী সময় তিনি মাটি থেকে উঠতে পারেননি। ঐ সময় মনে হয়েছিল গিরুদ হয়তো আর খেলতে পারবেন না। তবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিয়ে তিনি আবারো খেলা শুরু করেন। বিরতির সাত মিনিট আগে গিরুদের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন নাপোলি গোলরক্ষক ডেভিড ওসপিনা। কিন্তু নিজেকে আবারো ম্যাচে ফিরিয়ে এনে নাপোলিকে রক্ষা করেন এই কলম্বিয়ান গোলরক্ষক। যদিও ৪৯ মিনিটে আর শেষ রক্ষা হয়নি। ঐ গিরুদের কাছেই তাকে পরাস্ত হতে হয়েছে। ৬০ মিনিটে ইসমায়েল বেনাকারের লো শট দারুন দক্ষতায় রুখে দেন ওসপিনা। ম্যাচের শেষ ভাগে থিও হার্নান্দেজ ও এ্যালেক্সিস সায়েলেমেকার্স জয়ের ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ হাতছাড়া করেন। এর আগে তলানির দুই দল সালেরনিতানা ও উদিনেসের সাথে হতাশাজনক দুই ড্রয়ে এসি মিলান গোল ব্যবধানে নাপোলির থেকে পিছিয়ে পড়েছিল। এই সুযোগে নাপোলি লিগ টেবিলের শীর্ষস্থানও অল্প সময়ের জন্য দখল করেছিল। লুসিয়ানো স্পালেত্তির নাপোলি প্রায় পুরো মৌসুমেই পূর্ণ শক্তির দল ও বিশাল সমর্থক গোষ্ঠীর অকুন্ঠ সমর্থণ পুঁজি করেও কোন না কোন ম্যাচে হোঁচট খেয়ে বারবার পিছিয়ে পড়েছে। নাপোলি অধিনায়ক লোরেঞ্জো ইনসিগনে ম্যাচ শেষে হতাশা নিয়ে বলেছেন, ‘আমাদের সামনে আজ অনেক বড় সুযোগ ছিল যা আমরা হারিয়েছি। কিন্তু এজন্য আমরা পিছিয়ে পড়ছি না। কারন এখনো বেশ কয়েকটি ম্যাচ বাকি আছে। আজ আমরা যেভাবে খেলেছি তার ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে লিগে যেকোন কিছুই সম্ভব।’
এদিকে তুরিনের আলিয়াঁজ এরিনাতে দিনের আরেক ম্যাচে আলভারো মোরাতার একমাত্র গোলে স্বাগতিক জুভেন্টাস হারিয়েছে স্পেজিয়াকে। ম্যাচের ২০ মিনিটে মোরাতার গোলে জুভেন্টাসের জয় নিশ্চিত হয়। মধ্য জানুয়ারির পর এই প্রথম মোরাতা গোল পেলেন। এই জয়ের পরও মিলানের থেকে সাত পয়েন্ট পিছিয়ে সিরি-এ টেবিলের চতুর্থ স্থানেই থাকলো জুভেন্টাস। নভেম্বরের শেষ থেকে এ পর্যন্ত লিগে টানা ১৪ ম্যাচে অপরাজিত রয়েছে জুভেন্টাস। যদিও কোচ মাসিমিলিয়ানো আলেগ্রি বারবার বলে আসছেন এবারের লিগে শিরোপা দৌঁড়ে আর নেই তার দল। মোরাতাও অবশ্য মৌসুমের শেষ নাগাদ কি ঘটবে তা নিয়ে চিন্তা করতে প্রস্তুত নন। ম্যাচ শেষে তিনি বলেছেন, ‘আমার কাছে যদি জানতে চান তবে আমি বলবো এই মুহূর্তে আমি পরবর্তী অনুশীলন ও পরবর্তী ম্যাচ নিয়ে চিন্তা করছি। এর থেকে বেশী কিছু ভাবতে চাইনা।’ রোববারের ম্যাচে জুভেন্টাস দলে বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় অনুপস্থিত ছিলেন। যাদের মধ্যে অন্যতম হলেন পাওলো দিবালা, ওয়েস্টন ম্যাককিনি, গিওর্গিও চিয়েলিনি, লিওনার্দো বনুচ্চি ও ডেনিস জাকারিয়া। দ্বিতীয়ার্ধে স্পেজিয়া দারুন আক্রমনাত্বক হয়ে উঠে। এর ফলে দুটি গোলের সুযোগও হাতছাড়া করে। বিরতির পাঁচ মিনিট পর এমানুয়েল গিয়াসির হেড সরাসরি জুভ গোলরক্ষক ওজিচেচ সিজিসনির হাতে ধরা পড়ে। ম্যাচ শেষের ১০ মিনিট আগে কেভিন আগুডেলোকে দারুনভাবে রুখে দেন পোলিশ এই গোলরক্ষক। আরেক ম্যাচে ধুকতে থাকা ভেনেজিয়াকে ৪-১ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে সাসৌলো। টেবিলের ১০ম স্থানে থাকা সাসৌলোর হয়ে আরো একবার দারুন ছন্দে ছিলেন ডোমেনিকো বেরারডি। ইতালিয়ান এই এ্যাটাকার স্পট কিক থেকে কাল জোড়া গোল করেছেন। এনিয়ে মৌসুমে ১২ গোল করলেন বেরারডি। একইসাথে এসিস্টের দিক থেকেও তিনি ডাবল ফিগারে পৌঁছে গেছেন। ফেডেরিকো চিয়েসা ইনজুরির কারনে পুরো মৌসুম থেকে ছিটকে পড়ার কারনে ২৭ বছর বয়সী এই স্ট্রাইকারকে নিয়ে আজ্জুরিদের বিশ্বকাপ প্লে-অফ ম্যাচকে সামনে রেখে কোচ রবার্তো মানচিনি নি:সন্দেহে নতুন কিছু চিন্তা করছেন।