ঢাকা ১২:৫৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সুষ্ঠু-সুন্দর নিরাপদে বাঁচার জন্য চাই বই

  • আপডেট সময় : ০৯:৪০:১৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ মার্চ ২০২২
  • ৮১ বার পড়া হয়েছে

সাহিত্য ডেস্ক : সৈয়দা রাশিদা বারী : আমরা কম-বেশি নীতি বাক্য সবাই জানি, ‘বই পড়ে কেউ দেউলিয়া হয় না’। আমাদের দেশে বইপড়ার সংকীর্ণতা রয়েছে। তাই এত অত্যাচার আর অনিয়ম লেগেই আছে। আবার শতকরা ৮০ ভাগ শিক্ষার হার বাড়িয়েছি। কিন্তু তাতে কী? কতজন আমরা নীতি বাক্য মেনে চলি যে, প্রকৃতপক্ষে ভালো হবো। জ্ঞান অর্জনে শীর্ষস্থানে পৌঁছাবো। পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছি, এই ঢের। আমরা বই পড়ে কেউ পরীক্ষা দিই না। তার ছোট্ট একটি নমুনা বা প্রমাণ ২০০৩ সালের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল। এ ফলাফল বিশ্লেষণ করলেই বিষয়টি পরিষ্কার হবে। এরপরও যে ভালো চলছে, তা কিন্তু নয়। কতবার প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার ঘটনা ঘটেছে, কে না জানে?
বই কী? বই হচ্ছে শিক্ষার আলো, সে বই যে কোনো বিষয়ের উপরে হতে পারে। আমরা ছোটবেলা থেকেই তো বইয়ের আলোকে বড় হতে থাকি। এমন কি গর্ভে থাকা অবস্থায়ও মা কিন্তু কোনো একটা বইয়ের আলোকেই আমাদের প্রতিপালন করেছেন বা করেন। মা তার শিশু যেন ভালো থাকে, ঠিকমত বাড়ে, সে খেয়াল রাখতে ডাক্তার বা শিশুতথ্য বিষয়ের কোনো বই অনুসরণ করেন। তাই বলতে পারি, সন্তান গর্ভে আসা থেকে সন্তানের জন্ম, শিশু, বালক, কিশোর, যুবক, বৃদ্ধ- সব বয়সেই বই-ই একমাত্র পথচলার নির্দেশাবলী। মা-বাবা শিশুর নামও নির্ধারণ করেন বই থেকে। শিশু কোন রাশি নিয়ে জন্মগ্রহণ করলো, তা পর্যন্তও বই থেকেই সংগ্রহ করা হয়। আমরা রান্না করি, তাও বই থেকে নিয়ম জেনে নিই। সেলাই পর্যন্ত বই থেকেই জেনে নিই।
বই পড়েননি এমন ব্যক্তি কি আছেন? আমার তো মনে হয় আজকের যুগে আর নেই। আগেও ছিল না। তার মানে আগে যে মানুষটি অশিক্ষিত ছিলেন, তিনিও কোনো এক শিক্ষিতের নির্দেশ মেনে চলতেন। অর্থ একই। বই থেকে জ্ঞান অর্জন করে চলা। আর বই পড়ে জ্ঞানী হওয়া বা জ্ঞানী থেকে জ্ঞান ধার নিয়ে চলা। তাই বইয়ের কার্যক্রম ও পরিধি ব্যাপক। রাজনীতিকগণ রাজনৈতিক বিষয়ের বই পড়েন। রান্নার বই পড়েন রাঁধুনে। সেলাই যারা করেন, তারা সেলাই শেখার বই হাতে নিয়েই বসেন। এমনকি স্বর্ণকারও স্বর্ণালংকার তৈরি করতে বই নিয়ে বসেন। সুস্বাদু আচার, জেলি, সস ইত্যাদি তৈরি করতেও বই লাগে। এভাবেই যুুগে যুগে বই-ই সব কাজে সহায়ক। আজকাল ফুল বাগান তত্ত্বাবধানের জন্যও বই হয়েছে। মালি ফুল গাছের পরিচর্যা করতে বই ব্যবহার করেন। কৃষিকাজে কৃষক নিয়মিতভাবেই বইয়ের নিয়ম-পদ্ধতি মানেন।
চিকিৎসক চিকিৎসা করেন বইয়ের আলোকে। ধর্মীয় নিদর্শন, হজ-জাকাত-ফিতরা-নামাজ-রোজা যা-ই করি না কেন, আমাদের আদর্শিক সহায়ক বন্ধু বই-ই লাগে। সহায়ক গ্রন্থের আলোকেই আমরা সঠিকরূপে প্রত্যেকটি বিষয় নিরূপণ করি। চলতি বছরের দিন, ক্ষণ, সপ্তাহ, মাস হিসাব নিয়ন্ত্রণে পঞ্জিকা বা ক্যালেন্ডারও এক শ্রেণির বই। গার্মেন্টস ডিজাইন সুরক্ষার ক্ষেত্রে ফ্যাশন ডিজইনাররাও এক শ্রেণির বই ব্যবহার করেন। মুসলমানদের কোরআন, হিন্দুদের বেদ বা গীতা, খ্রিষ্টানদের বাইবেল, বৌদ্ধদের ত্রিপিটক, ইহুদিদের তানাথ ইত্যাদিও বই। বাড়ি, ঘর, স্কুল, কালভার্ট এগুলোও বইয়ের নকশার অনুরূপ করা হয়। ব্যায়ামের ক্ষেত্রে বইয়ের অনুরূপী হতে হয়। গান শিখতে-শেখাতে বই (সরগম), কম্পিউটার শিখতে-শেখাতেও বই লাগে।
এমনই ভাবে দার্শনিক বিজ্ঞানী গবেষক সবারই ক্ষেত্রে বই চাই। বই ছাড়া কারো দৈনন্দিন জীবন চলে না। দৈনিক কাজও হয় না। এত গেল দরকারি ক্ষেত্রের বই। এবার আমরা বিনোদনের দিকে তাকাই। বিনোদনেও কিন্তু বই ব্যবহার করা ভালো। আপনি সময় পেয়ে শুধু রেডিও, টিভি, সিডি, অডিও, ভিসিআর, ভিসিপি অথবা ই-মেইল, ইমো, ভাইবার, ফেসবুক, ইউটিউব, মেসেঞ্জার ব্যবহার করছেন। কিন্তু বই বাদ দিলে কিছুই করতে পারবেন না। স্মার্টফোন হাতে থাকলে মানুষ তাকে ধনী মনে করলেও সম্মানিত মনে করে না। বরং বই হাতে থাকলে তাকে শিক্ষিত মনে করে ও সম্মানিতও ভাবে। তা ছাড়া ফেসবুক, ইউটিউবের পেছনে শিক্ষিতজন তার মূল্যবান সময় দেন না। এতে কানটা ঝালাপালা হয়, চোখেরও ক্ষতি। তার চেয়ে মাঝে মাঝে কোনো একটি বই হাতে নীরবে কোনো আশ্রয়ে বসুন। পত্রিকা পড়ে আপডেট খবরাখবর জানেন। বসেন বই হাতে বাগানের মধ্যে বেঞ্চে। সুন্দর কোনো গাছের ডালে অথবা গোড়ায়। পুকুরের নিঝুম কোনো পাড়ে। কেউ থাকবে না সেখানে। একান্তই নিজের জন্য কাটান সময়টা। শুধু নিজেকেই ভাবেন। কেউ রাগ করেছে, অপমান করেছে, অহংকার দেখিয়েছে, রেজাল্ট মনমত হয়নি কিংবা বেশি ভালো হয়েছে। অনেক দিন আগের বাবা-মায়ের মুখ মনে পড়েছে। দাদা-দাদির স্মৃতি, নানা-নানির কথা স্মরণে এসেছে। আপনার সন্তান কিংবা স্ত্রী-স্বামী? সব রকমেই আপনি একান্তই আপনার জন্য সময় কাটান কিছুক্ষণ।
কী করবেন এ সময়? সঙ্গী থাকবে বই। সুন্দর খোলা আকাশের নিচে পাখি, গাছের পাতা, সবুজ ঘাস, প্রজাপতি আর বই। গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, উপন্যাস কোনো সমস্যা নয়। বই মাত্রই জ্ঞানের ধারক। যেহেতু প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি কাগজ, তাই ক্ষতির প্রশ্নই নেই। বই বুকের মধ্যে নিয়েও ঘুমানো যায়। তাতে মানসিক ভাইরাস দূর হয়। কিন্তু মোবাইল কাছে থাকলেও তো সাংঘাতিক অন্য ধরনের ক্ষতি। বিছানায় রাখলেও ক্ষতি।
বই আনন্দের খোরাক। যা আপনাকে জ্ঞানও দেবে, সুখও দেবে। অন্তর্দৃষ্টি করবে পরিপাটি। কবিতায় স্পৃহা বাড়ায় ভালোবাসার প্রতি। সেই ভালোবাসার মানুষ যে কেউ হতে পারে। মা, বাবা, সন্তান, প্রেমিক-প্রেমিকা। প্রবন্ধ যুক্তির বাহক-ধারক। নীতি জ্ঞানের মালঞ্চ। যে প্রবন্ধ বেশি বেশি পড়ে; সে উচ্চাভিলাষী জ্ঞানী, এ কথা বলতে বাধা নেই। সুষ্ঠু কথায় সুষ্ঠু জ্ঞান অর্জনে তিনিই একজন ধন্য ব্যক্তি।
তাই কেউ যদি বেশি বেশি উপন্যাস পড়ে থাকেন, সে যে উপন্যাসই হোক, হোক প্রবীণ-নবীন যে লেখকেরই লেখা; অথবা মন্দ-ভালো যেমনই; একথা সত্য যে জীবনে ভুল কাজ তাকে দিয়ে হবে না। সে ঠকবেও না কারো কাছে। ঝরঝরে একটি জীবন নিশ্চিত তাকে দিয়ে সম্ভব। তার সংসারেও থাকবে সুষ্ঠু পরিবেশ। তিনি নিজে যেমন সুখী হবেন। অপরকেও সুখী করতে সামর্থ হবেন। তাই তার জীবন নিঃসন্দেহে ধন্য ও পরিপূর্ণ হবে।
তবুও প্রশ্ন থাকে। আমরা কি সত্যি সত্যি বই পড়ি? যদি বলি পড়ি, ভুল হবে না। যদি বলি পড়ি না, তাতেও ভুল নেই। তবে এ কথা মিথ্যা নয়, বই ছাড়া আমাদের জীবনে কিছুই সম্ভব নয়। এই যে জীবনের প্রতি এত অনিহা, চারিদিকে এত অন্যায় এও কিন্তু বই পড়ি না বলেই। জ্ঞানের অভাবেই অজ্ঞানতা। জ্ঞানের অভাবই আমাদের সব অশান্তির মূল। বই পড়লে সমাজের সব অশোভন দূর হবে। তাই আমাদের সবার বেলায়ই বই চাই। ‘শরীর ভালো রাখতে যেমন খাদ্য চাই; মন ভালো রাখতে হলেও বই চাই’। শরীর এবং মন মিলেই মানুষের পূর্ণাঙ্গ রুচি সম্মত আবির্ভাব, পূর্ণাঙ্গ জীবন। প্রযোজ্য তাই এই প্রবাদ:
‘জোটে যদি মোটে একটি পয়সা
খাদ্য কিনিও ক্ষুধার লাগি
দু’টি যদি হয় অর্ধেক দিয়ে
বই কিনো হে অনুরাগী’।
বই মানুষের সবচেয়ে বড় বন্ধু এবং চির বন্ধু। এই বন্ধু উপকার ছাড়া অপকার করতে জানে না। কোনো দিন শত্রুও বনে যায় না। তাই আমাদের প্রত্যেকের বই পড়া দরকার। তা ছাড়াও কেন পড়বেন না? লেখালেখি সম্পর্কে জানারও তো দরকার। সেই বাংলা সাহিত্যের প্রথম উপন্যাস বা সাহিত্য চর্যাপদ থেকে আজকের ২০২২ সাল নাগাদ কী আমরা পেয়েছি।
কতদূর এগিয়েছি। কুসংস্কারগুলোকে কতদূরে পেছনে রেখে চলেছি। সীমা পরিসীমা কতদূর পেরিয়ে এসেছি। বুদ্ধদেবের সময়ে, মোঘল যুগে, ইংরেজ শাসনামল; গৌতম বুদ্ধ থেকে মুসলিম লীগ অবধি এবং আজকের বাংলাদেশ। ভারতবর্ষ, পূর্ব পাকিস্তান, পশ্চিম পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ। বাংলা ভাষাভাষির কী তারতম্য এসেছে। তখনো নারী লেখক ছিলেন, সমাজদ্রোহী-রাজনৈতিক রাজদ্রোহী, নারীও ছিলেন। এখনো আছে। হয়েছে-হচ্ছে-হবে। নারীরা এগিয়ে যাবে।
৫০ বছর আগে পুরুষ অপেক্ষা কতভাগ, ১০০ বছর আগে কতভাগ, ২০০ বছর, ৪০০ বছর, ১০০০ বছর এবং এখন ২০২২ সালে কতভাগ হয়েছে? শিক্ষার সাথে জাতীয়তা ও রাজনৈতিক ক্ষেত্র, বেগম রোকেয়ার অনুসৃত পথ পরিক্রমায় সাহিত্য কেমন সমৃদ্ধ হলো। সুলতানা রাজিয়া, গুলবাহার সুলতান, নূর জাহান, মমতাজ, লুৎফুননেসা বেগম, বেগম ফয়েজুন নেসা চৌধুরানী, দেওয়ান ছহিফা বানু চৌধুরানী, মৃণালিনী দেবী, বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন, ননীবালা দেবী, নীলা নাগ, প্রমীলা নজরুল, সৈয়দা সেলিমা নূরজাহান বেগম, মাদার তেরেসা, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, ইলা মিত্র, সুচিত্রা সেন, জাহানারা হক নীলু, তসলিমা নাসরিনরা দুর্বল, ভীরু না সমৃদ্ধশালী? দেখুন বইপত্র না পড়লে তো আর জানা যাবে না। এই জানতে জানতেই হয়তো বা আপনিও একদিন হয়ে যাবেন বেশ ভালো একজন গবেষক। হয়তো ডি-লিট ডিগ্রিও পেতে পারেন। বলা তো যায় না।
পড়ে দেখুন বেগম রোকেয়ার ‘চাঁদ’ কবিতা। মাত্র এক শতাব্দী যাওয়ার মুখেই কত তারতম্যের জীবনাবাস আর লেখালেখি। খনার বচন থেকে আজকের বাংলাদেশের ছড়া ও কবিতার ধরন কত অগ্রগতি নিয়েছে। আপনি পড়ে পড়ে বিচার বিশ্লেষণ করলে তবেই তো হবেন জ্ঞানী থেকে মহাজ্ঞানী।
আপনি কি হিটলারের জীবনী পড়েছেন? মহাভারত, রামায়ণ, শাহনামা, গীতাঞ্জলি, সঞ্চিতা? কী তবে পড়েছেন? নিশ্চয়ই উইলিয়াম গোল্ডিংয়ের ‘লর্ড অব দ্য ফ্লাইজ’, দ্য কোরআন, বাইবেল, শ্রী গীতা, ত্রিপিটক? নাকি বিষাদ সিন্ধু? অসুবিধা নেই। সব বই-ই মানুষকে জ্ঞান দেয়। সব ফুলই ভ্রমরকে সৌরভ আনন্দ দেয়। তবে ওই পড়ার সাথে আজকের লেখাপড়ার একটি মিলনকেন্দ্র গড়ুন। কিছু পেলেন? বুঝলেন? আপনি তো সেই যে পড়লেন জসীম উদদীনের ‘কবর’ ও ‘নিমন্ত্রণ’। যোগেন্দ্রনাথ বাগচীর ‘কাজলা দিদি’। নবকৃষ্ণ ভট্টাচার্যের ‘কাজের লোক’। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘তালগাছ’। এসব কবিতা আপনাকে আনন্দ দেয়নি? নাকি শুধু কাঁদিয়েছে। আনন্দও পেয়েছেন তাই না? কান্নার সাথে আনন্দও ছিল। আর তা ছাড়া দেখুন তো কাজের লোক কবিতায় কীভাবেই না আপনার পথ চিনিয়েছে। আপনি কি কারো সাথে এখন আর সময় দেন? আপনার নিজের কাজ ছাড়া। অথচ এ কথাটিই সেদিন বলে দিয়েছিল। কখনো পিপীলিকা, কখনো ছোট পাখি, কখনো মৌমাছি হয়ে তাই না? কাজলা দিদি নিশ্চয়ই আপনার মনের কথাই বলতেন? মা কি তখন বাইরে হই-হুল্লোড় করে সময় কাটালে রাগ করেননি? যদি মটরের শাক, চুলা জালাবার খড়ি ঘুস পেতেন, নিশ্চয়ই সব ভুলে আদর করেছেন। আর দিদি ‘কাজলা দিদি’ কবিতা শুনিয়েছেন, কোলে নিয়ে চুমা খেয়েছেন তাই না? চাঁদও দেখিয়েছেন বাঁশ বাগানের মাথার উপরের।
নজরুলের ‘চল্ চল্ চল্’ অথবা ‘অগ্রপথিক’ কেমন লাগত, খুব ভালো তাই না? না ভালো লাগলে দলবলসহ অভিনয় করে গাইলেন কী করে? আপনার এখনো ভালো লাগবে। পড়েই দেখুন, যে কোনো বই। তবে মনোযোগ না দিলে ভালো লাগবে কেন? যদি ভালো না লাগে, বুঝবেন আপনার পড়া সঠিকরূপে হচ্ছে না। বই পড়তে মনের যে আবেদন সেটা নেই। দোষ আপনাতেই। অন্তর্দৃষ্টি না মেললে পড়ার সদ্ভাব জন্মে না। আর সদ্ভাব না জন্মালে ভালোও লাগে না। এ তো গেল কবিতা। ছোটবেলায় টুনটুনির রান্না, কিশোরকালের পদ্ম গোখরো নাটক, বিলাসী, হৈমন্তী কিংবা ডাক হরকরার গল্প মনে করুন তো; ভালো লাগেনি? আনন্দ দেয়নি আপনাকে? যৌবনে লুকিয়ে পড়লেন ‘দেবদাস’, ‘গোরা’, ‘শিউলীমালা’, ‘পথের পাঁচালি’, ‘পদ্মরাগ’ ও ‘মতিচূর’। তখন কেমন লাগলো? ভালো লাগেনি? মনে হয়নি, আরও পড়ি। খেয়ে না খেয়ে পড়ি। ঘরের দরজা বন্ধ করে অথবা বাঁশবনে গিয়ে। মশার কামড় তখন কিছুই মনে হয়নি, তাই না?
আপনি তো তখন বই চুরিও করতেন। ভাইয়ের বন্ধুর বই চুরি করেননি? ভাবির ভাইয়ের বই চুরি করেননি? বোনের দেবরের বইও তো চুরি করেছিলেন, তাই না? তারপর লোভে লুকিয়েও রেখেছিলেন। তবে এখন পড়বেন না কেন? এখন আরও আধুনিক; আধুনিক যুগের আধুনিক লেখক, তাই আরও সুন্দর সুন্দর বই বেরিয়েছে। নতুন প্রজন্মের বই আরও রোমান্টিক এবং আরও জ্ঞানে পরিপূর্ণ। একদম আপনার মনের কথাটাই বলে। আপনার মন, চিন্তা, চেতনা, পছন্দ সব মিলিয়ে ভীষণ ভালো লাগবে। ভালো লাগার চেতনা, পছন্দ সব মিলিয়ে ভীষণ ভালো লাগবে। ভালো লাগার ছোঁয়ায় আপনি এক অজানা সুখের আনন্দরাজ্যে হারিয়ে যাবেন।
একই সাথে মেলাতে পারবেন ভাষাগত দিক, সমাজতান্ত্রিকতা, রাজনৈতিক পটভূমি। শিক্ষার হার, নীতিজ্ঞান, কল্যাণ, বিভিন্ন তথ্য ও নিদর্শন। দেখবেন কত মহান হবে আপনার চেতনাশক্তি ও বোধ। অবলীলায় আপনি হবেন ধন্য। আপনি বীর পুরুষ, বীর নারী, বীর মানুষ বনে যাবেন। মন্দ আপনার ধারে-কাছেও আসবে না। অশান্তি আপনায় উঁকি মেরেও দেখবে না। অকল্যাণ ও অমঙ্গল কোনো কালেও হবে না। আপনি পূর্ণ সুখী, সুস্থ ও সমৃদ্ধশালী জীবন পাবেন। থাকবেন মহাসুখে, যতদিন বাঁচবেন।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

সুষ্ঠু-সুন্দর নিরাপদে বাঁচার জন্য চাই বই

আপডেট সময় : ০৯:৪০:১৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ মার্চ ২০২২

সাহিত্য ডেস্ক : সৈয়দা রাশিদা বারী : আমরা কম-বেশি নীতি বাক্য সবাই জানি, ‘বই পড়ে কেউ দেউলিয়া হয় না’। আমাদের দেশে বইপড়ার সংকীর্ণতা রয়েছে। তাই এত অত্যাচার আর অনিয়ম লেগেই আছে। আবার শতকরা ৮০ ভাগ শিক্ষার হার বাড়িয়েছি। কিন্তু তাতে কী? কতজন আমরা নীতি বাক্য মেনে চলি যে, প্রকৃতপক্ষে ভালো হবো। জ্ঞান অর্জনে শীর্ষস্থানে পৌঁছাবো। পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছি, এই ঢের। আমরা বই পড়ে কেউ পরীক্ষা দিই না। তার ছোট্ট একটি নমুনা বা প্রমাণ ২০০৩ সালের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল। এ ফলাফল বিশ্লেষণ করলেই বিষয়টি পরিষ্কার হবে। এরপরও যে ভালো চলছে, তা কিন্তু নয়। কতবার প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার ঘটনা ঘটেছে, কে না জানে?
বই কী? বই হচ্ছে শিক্ষার আলো, সে বই যে কোনো বিষয়ের উপরে হতে পারে। আমরা ছোটবেলা থেকেই তো বইয়ের আলোকে বড় হতে থাকি। এমন কি গর্ভে থাকা অবস্থায়ও মা কিন্তু কোনো একটা বইয়ের আলোকেই আমাদের প্রতিপালন করেছেন বা করেন। মা তার শিশু যেন ভালো থাকে, ঠিকমত বাড়ে, সে খেয়াল রাখতে ডাক্তার বা শিশুতথ্য বিষয়ের কোনো বই অনুসরণ করেন। তাই বলতে পারি, সন্তান গর্ভে আসা থেকে সন্তানের জন্ম, শিশু, বালক, কিশোর, যুবক, বৃদ্ধ- সব বয়সেই বই-ই একমাত্র পথচলার নির্দেশাবলী। মা-বাবা শিশুর নামও নির্ধারণ করেন বই থেকে। শিশু কোন রাশি নিয়ে জন্মগ্রহণ করলো, তা পর্যন্তও বই থেকেই সংগ্রহ করা হয়। আমরা রান্না করি, তাও বই থেকে নিয়ম জেনে নিই। সেলাই পর্যন্ত বই থেকেই জেনে নিই।
বই পড়েননি এমন ব্যক্তি কি আছেন? আমার তো মনে হয় আজকের যুগে আর নেই। আগেও ছিল না। তার মানে আগে যে মানুষটি অশিক্ষিত ছিলেন, তিনিও কোনো এক শিক্ষিতের নির্দেশ মেনে চলতেন। অর্থ একই। বই থেকে জ্ঞান অর্জন করে চলা। আর বই পড়ে জ্ঞানী হওয়া বা জ্ঞানী থেকে জ্ঞান ধার নিয়ে চলা। তাই বইয়ের কার্যক্রম ও পরিধি ব্যাপক। রাজনীতিকগণ রাজনৈতিক বিষয়ের বই পড়েন। রান্নার বই পড়েন রাঁধুনে। সেলাই যারা করেন, তারা সেলাই শেখার বই হাতে নিয়েই বসেন। এমনকি স্বর্ণকারও স্বর্ণালংকার তৈরি করতে বই নিয়ে বসেন। সুস্বাদু আচার, জেলি, সস ইত্যাদি তৈরি করতেও বই লাগে। এভাবেই যুুগে যুগে বই-ই সব কাজে সহায়ক। আজকাল ফুল বাগান তত্ত্বাবধানের জন্যও বই হয়েছে। মালি ফুল গাছের পরিচর্যা করতে বই ব্যবহার করেন। কৃষিকাজে কৃষক নিয়মিতভাবেই বইয়ের নিয়ম-পদ্ধতি মানেন।
চিকিৎসক চিকিৎসা করেন বইয়ের আলোকে। ধর্মীয় নিদর্শন, হজ-জাকাত-ফিতরা-নামাজ-রোজা যা-ই করি না কেন, আমাদের আদর্শিক সহায়ক বন্ধু বই-ই লাগে। সহায়ক গ্রন্থের আলোকেই আমরা সঠিকরূপে প্রত্যেকটি বিষয় নিরূপণ করি। চলতি বছরের দিন, ক্ষণ, সপ্তাহ, মাস হিসাব নিয়ন্ত্রণে পঞ্জিকা বা ক্যালেন্ডারও এক শ্রেণির বই। গার্মেন্টস ডিজাইন সুরক্ষার ক্ষেত্রে ফ্যাশন ডিজইনাররাও এক শ্রেণির বই ব্যবহার করেন। মুসলমানদের কোরআন, হিন্দুদের বেদ বা গীতা, খ্রিষ্টানদের বাইবেল, বৌদ্ধদের ত্রিপিটক, ইহুদিদের তানাথ ইত্যাদিও বই। বাড়ি, ঘর, স্কুল, কালভার্ট এগুলোও বইয়ের নকশার অনুরূপ করা হয়। ব্যায়ামের ক্ষেত্রে বইয়ের অনুরূপী হতে হয়। গান শিখতে-শেখাতে বই (সরগম), কম্পিউটার শিখতে-শেখাতেও বই লাগে।
এমনই ভাবে দার্শনিক বিজ্ঞানী গবেষক সবারই ক্ষেত্রে বই চাই। বই ছাড়া কারো দৈনন্দিন জীবন চলে না। দৈনিক কাজও হয় না। এত গেল দরকারি ক্ষেত্রের বই। এবার আমরা বিনোদনের দিকে তাকাই। বিনোদনেও কিন্তু বই ব্যবহার করা ভালো। আপনি সময় পেয়ে শুধু রেডিও, টিভি, সিডি, অডিও, ভিসিআর, ভিসিপি অথবা ই-মেইল, ইমো, ভাইবার, ফেসবুক, ইউটিউব, মেসেঞ্জার ব্যবহার করছেন। কিন্তু বই বাদ দিলে কিছুই করতে পারবেন না। স্মার্টফোন হাতে থাকলে মানুষ তাকে ধনী মনে করলেও সম্মানিত মনে করে না। বরং বই হাতে থাকলে তাকে শিক্ষিত মনে করে ও সম্মানিতও ভাবে। তা ছাড়া ফেসবুক, ইউটিউবের পেছনে শিক্ষিতজন তার মূল্যবান সময় দেন না। এতে কানটা ঝালাপালা হয়, চোখেরও ক্ষতি। তার চেয়ে মাঝে মাঝে কোনো একটি বই হাতে নীরবে কোনো আশ্রয়ে বসুন। পত্রিকা পড়ে আপডেট খবরাখবর জানেন। বসেন বই হাতে বাগানের মধ্যে বেঞ্চে। সুন্দর কোনো গাছের ডালে অথবা গোড়ায়। পুকুরের নিঝুম কোনো পাড়ে। কেউ থাকবে না সেখানে। একান্তই নিজের জন্য কাটান সময়টা। শুধু নিজেকেই ভাবেন। কেউ রাগ করেছে, অপমান করেছে, অহংকার দেখিয়েছে, রেজাল্ট মনমত হয়নি কিংবা বেশি ভালো হয়েছে। অনেক দিন আগের বাবা-মায়ের মুখ মনে পড়েছে। দাদা-দাদির স্মৃতি, নানা-নানির কথা স্মরণে এসেছে। আপনার সন্তান কিংবা স্ত্রী-স্বামী? সব রকমেই আপনি একান্তই আপনার জন্য সময় কাটান কিছুক্ষণ।
কী করবেন এ সময়? সঙ্গী থাকবে বই। সুন্দর খোলা আকাশের নিচে পাখি, গাছের পাতা, সবুজ ঘাস, প্রজাপতি আর বই। গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, উপন্যাস কোনো সমস্যা নয়। বই মাত্রই জ্ঞানের ধারক। যেহেতু প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি কাগজ, তাই ক্ষতির প্রশ্নই নেই। বই বুকের মধ্যে নিয়েও ঘুমানো যায়। তাতে মানসিক ভাইরাস দূর হয়। কিন্তু মোবাইল কাছে থাকলেও তো সাংঘাতিক অন্য ধরনের ক্ষতি। বিছানায় রাখলেও ক্ষতি।
বই আনন্দের খোরাক। যা আপনাকে জ্ঞানও দেবে, সুখও দেবে। অন্তর্দৃষ্টি করবে পরিপাটি। কবিতায় স্পৃহা বাড়ায় ভালোবাসার প্রতি। সেই ভালোবাসার মানুষ যে কেউ হতে পারে। মা, বাবা, সন্তান, প্রেমিক-প্রেমিকা। প্রবন্ধ যুক্তির বাহক-ধারক। নীতি জ্ঞানের মালঞ্চ। যে প্রবন্ধ বেশি বেশি পড়ে; সে উচ্চাভিলাষী জ্ঞানী, এ কথা বলতে বাধা নেই। সুষ্ঠু কথায় সুষ্ঠু জ্ঞান অর্জনে তিনিই একজন ধন্য ব্যক্তি।
তাই কেউ যদি বেশি বেশি উপন্যাস পড়ে থাকেন, সে যে উপন্যাসই হোক, হোক প্রবীণ-নবীন যে লেখকেরই লেখা; অথবা মন্দ-ভালো যেমনই; একথা সত্য যে জীবনে ভুল কাজ তাকে দিয়ে হবে না। সে ঠকবেও না কারো কাছে। ঝরঝরে একটি জীবন নিশ্চিত তাকে দিয়ে সম্ভব। তার সংসারেও থাকবে সুষ্ঠু পরিবেশ। তিনি নিজে যেমন সুখী হবেন। অপরকেও সুখী করতে সামর্থ হবেন। তাই তার জীবন নিঃসন্দেহে ধন্য ও পরিপূর্ণ হবে।
তবুও প্রশ্ন থাকে। আমরা কি সত্যি সত্যি বই পড়ি? যদি বলি পড়ি, ভুল হবে না। যদি বলি পড়ি না, তাতেও ভুল নেই। তবে এ কথা মিথ্যা নয়, বই ছাড়া আমাদের জীবনে কিছুই সম্ভব নয়। এই যে জীবনের প্রতি এত অনিহা, চারিদিকে এত অন্যায় এও কিন্তু বই পড়ি না বলেই। জ্ঞানের অভাবেই অজ্ঞানতা। জ্ঞানের অভাবই আমাদের সব অশান্তির মূল। বই পড়লে সমাজের সব অশোভন দূর হবে। তাই আমাদের সবার বেলায়ই বই চাই। ‘শরীর ভালো রাখতে যেমন খাদ্য চাই; মন ভালো রাখতে হলেও বই চাই’। শরীর এবং মন মিলেই মানুষের পূর্ণাঙ্গ রুচি সম্মত আবির্ভাব, পূর্ণাঙ্গ জীবন। প্রযোজ্য তাই এই প্রবাদ:
‘জোটে যদি মোটে একটি পয়সা
খাদ্য কিনিও ক্ষুধার লাগি
দু’টি যদি হয় অর্ধেক দিয়ে
বই কিনো হে অনুরাগী’।
বই মানুষের সবচেয়ে বড় বন্ধু এবং চির বন্ধু। এই বন্ধু উপকার ছাড়া অপকার করতে জানে না। কোনো দিন শত্রুও বনে যায় না। তাই আমাদের প্রত্যেকের বই পড়া দরকার। তা ছাড়াও কেন পড়বেন না? লেখালেখি সম্পর্কে জানারও তো দরকার। সেই বাংলা সাহিত্যের প্রথম উপন্যাস বা সাহিত্য চর্যাপদ থেকে আজকের ২০২২ সাল নাগাদ কী আমরা পেয়েছি।
কতদূর এগিয়েছি। কুসংস্কারগুলোকে কতদূরে পেছনে রেখে চলেছি। সীমা পরিসীমা কতদূর পেরিয়ে এসেছি। বুদ্ধদেবের সময়ে, মোঘল যুগে, ইংরেজ শাসনামল; গৌতম বুদ্ধ থেকে মুসলিম লীগ অবধি এবং আজকের বাংলাদেশ। ভারতবর্ষ, পূর্ব পাকিস্তান, পশ্চিম পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ। বাংলা ভাষাভাষির কী তারতম্য এসেছে। তখনো নারী লেখক ছিলেন, সমাজদ্রোহী-রাজনৈতিক রাজদ্রোহী, নারীও ছিলেন। এখনো আছে। হয়েছে-হচ্ছে-হবে। নারীরা এগিয়ে যাবে।
৫০ বছর আগে পুরুষ অপেক্ষা কতভাগ, ১০০ বছর আগে কতভাগ, ২০০ বছর, ৪০০ বছর, ১০০০ বছর এবং এখন ২০২২ সালে কতভাগ হয়েছে? শিক্ষার সাথে জাতীয়তা ও রাজনৈতিক ক্ষেত্র, বেগম রোকেয়ার অনুসৃত পথ পরিক্রমায় সাহিত্য কেমন সমৃদ্ধ হলো। সুলতানা রাজিয়া, গুলবাহার সুলতান, নূর জাহান, মমতাজ, লুৎফুননেসা বেগম, বেগম ফয়েজুন নেসা চৌধুরানী, দেওয়ান ছহিফা বানু চৌধুরানী, মৃণালিনী দেবী, বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন, ননীবালা দেবী, নীলা নাগ, প্রমীলা নজরুল, সৈয়দা সেলিমা নূরজাহান বেগম, মাদার তেরেসা, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, ইলা মিত্র, সুচিত্রা সেন, জাহানারা হক নীলু, তসলিমা নাসরিনরা দুর্বল, ভীরু না সমৃদ্ধশালী? দেখুন বইপত্র না পড়লে তো আর জানা যাবে না। এই জানতে জানতেই হয়তো বা আপনিও একদিন হয়ে যাবেন বেশ ভালো একজন গবেষক। হয়তো ডি-লিট ডিগ্রিও পেতে পারেন। বলা তো যায় না।
পড়ে দেখুন বেগম রোকেয়ার ‘চাঁদ’ কবিতা। মাত্র এক শতাব্দী যাওয়ার মুখেই কত তারতম্যের জীবনাবাস আর লেখালেখি। খনার বচন থেকে আজকের বাংলাদেশের ছড়া ও কবিতার ধরন কত অগ্রগতি নিয়েছে। আপনি পড়ে পড়ে বিচার বিশ্লেষণ করলে তবেই তো হবেন জ্ঞানী থেকে মহাজ্ঞানী।
আপনি কি হিটলারের জীবনী পড়েছেন? মহাভারত, রামায়ণ, শাহনামা, গীতাঞ্জলি, সঞ্চিতা? কী তবে পড়েছেন? নিশ্চয়ই উইলিয়াম গোল্ডিংয়ের ‘লর্ড অব দ্য ফ্লাইজ’, দ্য কোরআন, বাইবেল, শ্রী গীতা, ত্রিপিটক? নাকি বিষাদ সিন্ধু? অসুবিধা নেই। সব বই-ই মানুষকে জ্ঞান দেয়। সব ফুলই ভ্রমরকে সৌরভ আনন্দ দেয়। তবে ওই পড়ার সাথে আজকের লেখাপড়ার একটি মিলনকেন্দ্র গড়ুন। কিছু পেলেন? বুঝলেন? আপনি তো সেই যে পড়লেন জসীম উদদীনের ‘কবর’ ও ‘নিমন্ত্রণ’। যোগেন্দ্রনাথ বাগচীর ‘কাজলা দিদি’। নবকৃষ্ণ ভট্টাচার্যের ‘কাজের লোক’। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘তালগাছ’। এসব কবিতা আপনাকে আনন্দ দেয়নি? নাকি শুধু কাঁদিয়েছে। আনন্দও পেয়েছেন তাই না? কান্নার সাথে আনন্দও ছিল। আর তা ছাড়া দেখুন তো কাজের লোক কবিতায় কীভাবেই না আপনার পথ চিনিয়েছে। আপনি কি কারো সাথে এখন আর সময় দেন? আপনার নিজের কাজ ছাড়া। অথচ এ কথাটিই সেদিন বলে দিয়েছিল। কখনো পিপীলিকা, কখনো ছোট পাখি, কখনো মৌমাছি হয়ে তাই না? কাজলা দিদি নিশ্চয়ই আপনার মনের কথাই বলতেন? মা কি তখন বাইরে হই-হুল্লোড় করে সময় কাটালে রাগ করেননি? যদি মটরের শাক, চুলা জালাবার খড়ি ঘুস পেতেন, নিশ্চয়ই সব ভুলে আদর করেছেন। আর দিদি ‘কাজলা দিদি’ কবিতা শুনিয়েছেন, কোলে নিয়ে চুমা খেয়েছেন তাই না? চাঁদও দেখিয়েছেন বাঁশ বাগানের মাথার উপরের।
নজরুলের ‘চল্ চল্ চল্’ অথবা ‘অগ্রপথিক’ কেমন লাগত, খুব ভালো তাই না? না ভালো লাগলে দলবলসহ অভিনয় করে গাইলেন কী করে? আপনার এখনো ভালো লাগবে। পড়েই দেখুন, যে কোনো বই। তবে মনোযোগ না দিলে ভালো লাগবে কেন? যদি ভালো না লাগে, বুঝবেন আপনার পড়া সঠিকরূপে হচ্ছে না। বই পড়তে মনের যে আবেদন সেটা নেই। দোষ আপনাতেই। অন্তর্দৃষ্টি না মেললে পড়ার সদ্ভাব জন্মে না। আর সদ্ভাব না জন্মালে ভালোও লাগে না। এ তো গেল কবিতা। ছোটবেলায় টুনটুনির রান্না, কিশোরকালের পদ্ম গোখরো নাটক, বিলাসী, হৈমন্তী কিংবা ডাক হরকরার গল্প মনে করুন তো; ভালো লাগেনি? আনন্দ দেয়নি আপনাকে? যৌবনে লুকিয়ে পড়লেন ‘দেবদাস’, ‘গোরা’, ‘শিউলীমালা’, ‘পথের পাঁচালি’, ‘পদ্মরাগ’ ও ‘মতিচূর’। তখন কেমন লাগলো? ভালো লাগেনি? মনে হয়নি, আরও পড়ি। খেয়ে না খেয়ে পড়ি। ঘরের দরজা বন্ধ করে অথবা বাঁশবনে গিয়ে। মশার কামড় তখন কিছুই মনে হয়নি, তাই না?
আপনি তো তখন বই চুরিও করতেন। ভাইয়ের বন্ধুর বই চুরি করেননি? ভাবির ভাইয়ের বই চুরি করেননি? বোনের দেবরের বইও তো চুরি করেছিলেন, তাই না? তারপর লোভে লুকিয়েও রেখেছিলেন। তবে এখন পড়বেন না কেন? এখন আরও আধুনিক; আধুনিক যুগের আধুনিক লেখক, তাই আরও সুন্দর সুন্দর বই বেরিয়েছে। নতুন প্রজন্মের বই আরও রোমান্টিক এবং আরও জ্ঞানে পরিপূর্ণ। একদম আপনার মনের কথাটাই বলে। আপনার মন, চিন্তা, চেতনা, পছন্দ সব মিলিয়ে ভীষণ ভালো লাগবে। ভালো লাগার চেতনা, পছন্দ সব মিলিয়ে ভীষণ ভালো লাগবে। ভালো লাগার ছোঁয়ায় আপনি এক অজানা সুখের আনন্দরাজ্যে হারিয়ে যাবেন।
একই সাথে মেলাতে পারবেন ভাষাগত দিক, সমাজতান্ত্রিকতা, রাজনৈতিক পটভূমি। শিক্ষার হার, নীতিজ্ঞান, কল্যাণ, বিভিন্ন তথ্য ও নিদর্শন। দেখবেন কত মহান হবে আপনার চেতনাশক্তি ও বোধ। অবলীলায় আপনি হবেন ধন্য। আপনি বীর পুরুষ, বীর নারী, বীর মানুষ বনে যাবেন। মন্দ আপনার ধারে-কাছেও আসবে না। অশান্তি আপনায় উঁকি মেরেও দেখবে না। অকল্যাণ ও অমঙ্গল কোনো কালেও হবে না। আপনি পূর্ণ সুখী, সুস্থ ও সমৃদ্ধশালী জীবন পাবেন। থাকবেন মহাসুখে, যতদিন বাঁচবেন।