ঢাকা ১১:০২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কাজী সাইফুল ইসলামের উপন্যাস ‘পাখিয়াল’

  • আপডেট সময় : ০৯:৩৭:২২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ মার্চ ২০২২
  • ৬৯ বার পড়া হয়েছে

সাহিত্য ডেস্ক : অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২২-এ প্রকাশিত হয়েছে কাজী সাইফুল ইসলামের উপন্যাস ‘পাখিয়াল’। বইটির কাহিনিসংক্ষেপ–
‘পাখিয়াল’ উপন্যাসের মূল বাহক মজিদ পাখিয়াল। এক সময় মজিদ ছিল স্বদেশি বিপ্লবী। তার বাড়ি পাহাড়তলি। অনুশীলন সমিতির সৈনিক হয়ে ইংরেজ-মুক্ত দেশ গড়ার শপথ নিয়েছিল। কিন্তু পাহাড়তলিতে ইউরোপিয় ক্লাব আক্রমণ হবার পরপরই মজিদের জীবন-ধারা পুরোপুরি বদলে গিয়েছিল।
ভাগ্য তাকে এমন এক যাযাবর জীবনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল, কোনদিন যা তার কল্পনাতেও আসেনি। মার্থিয়াসের সাথে মজিদের প্রথম দেখা হয়েছিল থানচিতে। একটি বটোবৃক্ষের মোটা শিকড়ে ছিল মার্থিয়াসের শুঁটকির দোকান। বহু রকম মাছ আর ব্যাঙের শুঁটকিও পাওয়া যেত সেখানে। মার্থিয়াস ওদের এক রাত থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিল একটি সরাইখানায়।
তার পরদিন এক সকালে ওরা একটি বাঁশের ভেলায় চড়ে বসেছিল সাঙ্গু নদীতে। পাহাড়ি এ পথে ওদের চলতে হয়েছিল দিনের পর দিন। এ যাত্রায় ওদের সাথে ছিল সুরমা!
ভালোবেসে একা সুরমাকে বিয়ে করে মজিদ। বিয়ের আগের রাতটি জেগে থাকতে হয়েছিল মজিদের। শেষে ফজরের আজান হলে সুরমাকে নিয়ে পাহাড়তলি থেকে হালিশহরে চলে আসে মজিদের বন্ধু সেলিমের বাসায়, সেখানেই ওদের বিয়ে হয়। ছোট একটি রুমের ভেতর ওদের বাসার হয়। বাসরে ছিল গাঁদা আর শিউলি ফুল। ওদের বাসর হয়েছিল ভরদুপুরে!
তার দু’দিন পরেই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ফৌজদের ভয়ে ঘর ছেড়ে যাযাবর জাদু করদের তাবুতে আশ্রয় নেয় মজিদ। সেখানে ছিল একজন বৃদ্ধ যাযাবর। যিনি অবাধ্য যাযাবার শিশুদের শোনাতেন মায়েরা কত কষ্ট করে সন্তানদের জন্য। একটি শুক্রাণু মায়ের গর্ভে স্থায়ী হলেই শুরু হয় তার কষ্ট। তার পর ভ্রুণ, ভ্রুণ থেকে পরিপূর্ণ একজন মানুষ জন্ম দিতে মায়ের খুব কষ্ট পেতে হয়।
এ বৃদ্ধ ওদের শিক্ষক। তারই সাহায্য নিয়ে সুরমাকে পাহাড়তলি থেকে তাবুতে নিয়ে আসে মজিদ। যাযাবার মেয়েদের একটি দল পাহাড়তলিতে জাদু র মজমা বসিয়েছিল। তাদের সাথেই পালিয়ে আসে সুরমা।
যাযাবর জাদুকররা অদ্ভুত সব খেলা দেখাত। মজমায় দাঁড়িয়ে থাকা পুরুষের লিঙ্গ উধাও করে দিত। আবার নিজেদের মধ্যে একটি ছেলের গলা কেঁটে দিত। রক্তের স্রোত দেখাত। ভয়ে সবাই পকেট থেকে সব পয়সা জাদুকরের হাতে দিয়ে নিজের লিঙ্গ ফিরে পেতে চেষ্টা করত।
এ দলটির সাথে মজিদ আর সুরমা গিয়েছিল বান্দরবান পার হয়ে থানচি পর্যন্ত। সেখানে দেখা হলো মার্থিয়াসের সাথে। সেখান থেকে সাঙ্গু নদীর উজান ঠেলে বাশেঁর ভেলায় তারা রওনা হলো (তিন্দু, রাজা পাথর, রেমাক্কি, নাফাখুম, জিন্নাপাড়া, দেবতা পাহাড়, থুইচাপাড়া) থুইচাপাড়া গিয়ে ওরা বসত গড়ে।
সেখানে একটি সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা যায় সুরমা। দুঃসহ এক কষ্টের জীবন শুরু হয় মজিদের। এবার পাখি শিকার বাদ দিয়ে দরবেশ হতে চায় সে। আর মজিদ পাখিয়াল লিখতে থাকে–
যদি মনই পুড়ে যায়–তাহলে দেহ পোড়ার কি আর বাকি থাকে।
যদি ভালোবাসা মরে যায়–তাহলে মন মরার কি আর বাকি থাকে।
মার্থিয়াসের স্ত্রী শৈমে, সুরমার শিশু ছেলেটির মা হলো। শৈমেই রান্না করে দিত। জুম চাষের চাল দিয়ে খিচুড়ি, অনেকটা আটার দলার মত হয়ে যেত। সাথে থাকত ডিম ভাজা আর বেগুন ভর্তা। বিশেষ আয়োজনে থাকত বাঁশের চোঙায় বন-মোরগ, ঝিঝি পোকা, হরিকেল পাখির মাংস পোড়া। খেতে দারুণ লাগত।
তখন পাহাড়ে ফাল্গুনের গন্ধ পাওয়া যেত। যে পাহাড়ে আমার বসতি ছিল, সে পাহাড়ের ওপর দাঁড়িয়ে দূরের অন্য কোন পাহাড়ে দেখতাম দুপুরের রোদে আগুন জ্বালা শিমুল ফুল। সে সৌন্দর্য বর্ণনা করতে পারে না মজিদ।
মজিদের ছেলে হাফিজ বড় হতে থাকে। মার্থিয়াসের স্ত্রী শৈমে হাফিজের মা হতে পেরেছিল। একদিন এক যাযাবর দলের সাথে মজিদ রওনা হয় মালভূমি দেখার জন্য। পামির মালভূমি।
পথে সে জানতে পারে দেশ স্বাধীন হয়েছে। একটি দেশ ভাগ হয়ে দুটি দেশ হয়েছে। ভারত আর পাকিস্তান। এখন ইচ্ছে করলেই বর্ডার ক্রস করা যায় না!
একদিন রাতে অদ্ভুত এক স্বপ্ন দেখে মজিদ। মালভূমিতে না গিয়ে ফিরে আসে সে। কিন্তু হাফিজের দিকে লক্ষ করে অবাক হয় তার ছেলে খিয়াং হয়ে উঠেছে। মুসলমানের কোনো ছাপ নেই তার মধ্যে ধর্ম নেই, পোড়া পাখির মাংস, জুম চাষ, তুরকুলা পুড়িয়ে খাওয়া, পাহাড়ের গায়ে আগুন দেয়া, বুনোমরোগ আর শুয়োরের খামার থেকে শুয়োর ধরে জবাই করে তা বাঁশের চোঙায় পুরে খাওয়া ছিল হাফিজের নিত্যদিনের কাজ।
একদিন হাফিজকে নিয়ে ঢাকায় চলে আসে মজিদ তার বোনের কাছে। হাফিজকে রেখে, সে আবার রওনা হয় অজানার উদ্দেশ্যে। একবার এসে দাঁড়ায় পাহাড়ে যেখানে অনন্ত কালের জন্য ঘুমিয়ে আছে সুরমা। মজিদের আত্মা বলে ওঠে– মৃত্যু হচ্ছে জীবনের সেই সৌন্দর্য, যে সৌন্দর্য মানুষকে মহৎ করে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

কাজী সাইফুল ইসলামের উপন্যাস ‘পাখিয়াল’

আপডেট সময় : ০৯:৩৭:২২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ মার্চ ২০২২

সাহিত্য ডেস্ক : অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২২-এ প্রকাশিত হয়েছে কাজী সাইফুল ইসলামের উপন্যাস ‘পাখিয়াল’। বইটির কাহিনিসংক্ষেপ–
‘পাখিয়াল’ উপন্যাসের মূল বাহক মজিদ পাখিয়াল। এক সময় মজিদ ছিল স্বদেশি বিপ্লবী। তার বাড়ি পাহাড়তলি। অনুশীলন সমিতির সৈনিক হয়ে ইংরেজ-মুক্ত দেশ গড়ার শপথ নিয়েছিল। কিন্তু পাহাড়তলিতে ইউরোপিয় ক্লাব আক্রমণ হবার পরপরই মজিদের জীবন-ধারা পুরোপুরি বদলে গিয়েছিল।
ভাগ্য তাকে এমন এক যাযাবর জীবনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল, কোনদিন যা তার কল্পনাতেও আসেনি। মার্থিয়াসের সাথে মজিদের প্রথম দেখা হয়েছিল থানচিতে। একটি বটোবৃক্ষের মোটা শিকড়ে ছিল মার্থিয়াসের শুঁটকির দোকান। বহু রকম মাছ আর ব্যাঙের শুঁটকিও পাওয়া যেত সেখানে। মার্থিয়াস ওদের এক রাত থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিল একটি সরাইখানায়।
তার পরদিন এক সকালে ওরা একটি বাঁশের ভেলায় চড়ে বসেছিল সাঙ্গু নদীতে। পাহাড়ি এ পথে ওদের চলতে হয়েছিল দিনের পর দিন। এ যাত্রায় ওদের সাথে ছিল সুরমা!
ভালোবেসে একা সুরমাকে বিয়ে করে মজিদ। বিয়ের আগের রাতটি জেগে থাকতে হয়েছিল মজিদের। শেষে ফজরের আজান হলে সুরমাকে নিয়ে পাহাড়তলি থেকে হালিশহরে চলে আসে মজিদের বন্ধু সেলিমের বাসায়, সেখানেই ওদের বিয়ে হয়। ছোট একটি রুমের ভেতর ওদের বাসার হয়। বাসরে ছিল গাঁদা আর শিউলি ফুল। ওদের বাসর হয়েছিল ভরদুপুরে!
তার দু’দিন পরেই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ফৌজদের ভয়ে ঘর ছেড়ে যাযাবর জাদু করদের তাবুতে আশ্রয় নেয় মজিদ। সেখানে ছিল একজন বৃদ্ধ যাযাবর। যিনি অবাধ্য যাযাবার শিশুদের শোনাতেন মায়েরা কত কষ্ট করে সন্তানদের জন্য। একটি শুক্রাণু মায়ের গর্ভে স্থায়ী হলেই শুরু হয় তার কষ্ট। তার পর ভ্রুণ, ভ্রুণ থেকে পরিপূর্ণ একজন মানুষ জন্ম দিতে মায়ের খুব কষ্ট পেতে হয়।
এ বৃদ্ধ ওদের শিক্ষক। তারই সাহায্য নিয়ে সুরমাকে পাহাড়তলি থেকে তাবুতে নিয়ে আসে মজিদ। যাযাবার মেয়েদের একটি দল পাহাড়তলিতে জাদু র মজমা বসিয়েছিল। তাদের সাথেই পালিয়ে আসে সুরমা।
যাযাবর জাদুকররা অদ্ভুত সব খেলা দেখাত। মজমায় দাঁড়িয়ে থাকা পুরুষের লিঙ্গ উধাও করে দিত। আবার নিজেদের মধ্যে একটি ছেলের গলা কেঁটে দিত। রক্তের স্রোত দেখাত। ভয়ে সবাই পকেট থেকে সব পয়সা জাদুকরের হাতে দিয়ে নিজের লিঙ্গ ফিরে পেতে চেষ্টা করত।
এ দলটির সাথে মজিদ আর সুরমা গিয়েছিল বান্দরবান পার হয়ে থানচি পর্যন্ত। সেখানে দেখা হলো মার্থিয়াসের সাথে। সেখান থেকে সাঙ্গু নদীর উজান ঠেলে বাশেঁর ভেলায় তারা রওনা হলো (তিন্দু, রাজা পাথর, রেমাক্কি, নাফাখুম, জিন্নাপাড়া, দেবতা পাহাড়, থুইচাপাড়া) থুইচাপাড়া গিয়ে ওরা বসত গড়ে।
সেখানে একটি সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা যায় সুরমা। দুঃসহ এক কষ্টের জীবন শুরু হয় মজিদের। এবার পাখি শিকার বাদ দিয়ে দরবেশ হতে চায় সে। আর মজিদ পাখিয়াল লিখতে থাকে–
যদি মনই পুড়ে যায়–তাহলে দেহ পোড়ার কি আর বাকি থাকে।
যদি ভালোবাসা মরে যায়–তাহলে মন মরার কি আর বাকি থাকে।
মার্থিয়াসের স্ত্রী শৈমে, সুরমার শিশু ছেলেটির মা হলো। শৈমেই রান্না করে দিত। জুম চাষের চাল দিয়ে খিচুড়ি, অনেকটা আটার দলার মত হয়ে যেত। সাথে থাকত ডিম ভাজা আর বেগুন ভর্তা। বিশেষ আয়োজনে থাকত বাঁশের চোঙায় বন-মোরগ, ঝিঝি পোকা, হরিকেল পাখির মাংস পোড়া। খেতে দারুণ লাগত।
তখন পাহাড়ে ফাল্গুনের গন্ধ পাওয়া যেত। যে পাহাড়ে আমার বসতি ছিল, সে পাহাড়ের ওপর দাঁড়িয়ে দূরের অন্য কোন পাহাড়ে দেখতাম দুপুরের রোদে আগুন জ্বালা শিমুল ফুল। সে সৌন্দর্য বর্ণনা করতে পারে না মজিদ।
মজিদের ছেলে হাফিজ বড় হতে থাকে। মার্থিয়াসের স্ত্রী শৈমে হাফিজের মা হতে পেরেছিল। একদিন এক যাযাবর দলের সাথে মজিদ রওনা হয় মালভূমি দেখার জন্য। পামির মালভূমি।
পথে সে জানতে পারে দেশ স্বাধীন হয়েছে। একটি দেশ ভাগ হয়ে দুটি দেশ হয়েছে। ভারত আর পাকিস্তান। এখন ইচ্ছে করলেই বর্ডার ক্রস করা যায় না!
একদিন রাতে অদ্ভুত এক স্বপ্ন দেখে মজিদ। মালভূমিতে না গিয়ে ফিরে আসে সে। কিন্তু হাফিজের দিকে লক্ষ করে অবাক হয় তার ছেলে খিয়াং হয়ে উঠেছে। মুসলমানের কোনো ছাপ নেই তার মধ্যে ধর্ম নেই, পোড়া পাখির মাংস, জুম চাষ, তুরকুলা পুড়িয়ে খাওয়া, পাহাড়ের গায়ে আগুন দেয়া, বুনোমরোগ আর শুয়োরের খামার থেকে শুয়োর ধরে জবাই করে তা বাঁশের চোঙায় পুরে খাওয়া ছিল হাফিজের নিত্যদিনের কাজ।
একদিন হাফিজকে নিয়ে ঢাকায় চলে আসে মজিদ তার বোনের কাছে। হাফিজকে রেখে, সে আবার রওনা হয় অজানার উদ্দেশ্যে। একবার এসে দাঁড়ায় পাহাড়ে যেখানে অনন্ত কালের জন্য ঘুমিয়ে আছে সুরমা। মজিদের আত্মা বলে ওঠে– মৃত্যু হচ্ছে জীবনের সেই সৌন্দর্য, যে সৌন্দর্য মানুষকে মহৎ করে।