নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশে বর্তমানে করোনায় নতুন রোগী ও রোগী শনাক্তের হার কমছে। গত সাত দিনে রোগী শনাক্তের হার পাঁচ শতাংশের সামান্য ওপরে অথবা চার কিংবা তিন শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, বর্তমানে করোনার স্বাভাবিক পরিস্থিতির কাছাকাছি রয়েছে বাংলাদেশ।
গতকাল বুধবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনলাইন বুলেটিনে এ কথা বলেন অধিদফতরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল হক। তিনি বলেন, সপ্তাহের শুরুতে ২৩ ফেব্রুয়ারিতে যেখানে ১ হাজার ২৯৮ জন শনাক্ত হয়েছিলেন সেখানে ১ মার্চ শনাক্ত হয়েছেন ৭৯৯ জন। সংক্রমণের হার যেখানে পাঁচ দশমিক ৫১ শতাংশ ছিল সেটা ১ মার্চে তিন দশমিক ৩৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। আর এখন পর্যন্ত দেশে যত নমুনা পরীক্ষা হয়েছে সে অনুযায়ী শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ। এসব বিবেচনায় স্বস্তিকর অবস্থাতে আছি। এ অবস্থা ধরে রাখতে হলে আত্মতুষ্টিতে ভুগলে চলবে না।
করোনা সংক্রমণ হার কমে আসায় দেশের করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোতে শয্যা খালি থাকছে জানিয়ে অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম বলেন, রাজধানী ঢাকার পাঁচ হাজার ২১টি শয্যার বিপরীতে চার হাজার ৫৯৭টি শয্যা খালি রয়েছে। দেশে এখন পর্যন্ত যে হারে মানুষ টিকা নিয়েছেন তাকে অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক চিত্র আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ভাসমান জনগোষ্ঠীর যারা এতদিন টিকার আওতায় ছিলেন না, তারাও এখন টিকা পাচ্ছেন। সে সংখ্যাটিও ইতোমধ্যে ১৮ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। তিনি বলেন, সবমিলিয়ে আমরা এখন পর্যন্ত মনে করি, যতটুকু অগ্রগতি হয়েছে তা ধরে রাখতে হলে যারা এখনও টিকা গ্রহণ করেননি, যারা টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন কিন্তু টিকা পাননি বা টিকা নিতে চেয়েও নিতে পারেননি, তাদের যে কোনও মূল্যে এখন টিকা দিয়ে দিতে হবে। অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম বলেন, শনাক্ত কম এসেছে। মৃত্যু কমে এসছে। সামগ্রিকভাবে স্বাভাবিক পরিস্থিতির কাছাকাছি একটি পরিস্থিতি আমরা দেখছি। এ অবস্থাকে অব্যাহতভাবে ধরে রাখতে হলে আমাদের টিকা গ্রহণ করা উচিত। সে সঙ্গে অবশ্যই স্বাস্থবিধি মানতে হবে। প্রসঙ্গত, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারণ করা মানদ- অনুযায়ী, কোনও দেশে রোগী শনাক্তের হার টানা দুই সপ্তাহের বেশি সময় ৫ শতাংশের নিচে থাকলে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে বলে ধরা যায়।
টিকার আওতায় ১২ কোটি ৪৭ লাখ মানুষ : দেশে শুরু থেকে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকার আওতায় এসেছে ১২ কোটি ৪৭ লাখ মানুষ। কেবল গত ১৩ দিনেই টিকা দেওয়া হয়েছে দুই কোটি ৩২ লাখ মানুষকে। বুধবার (২ মার্চ) স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত অনলাইন বুলেটিনে এ তথ্য জানান কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনা টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য সচিব ডা. মো. শামসুল হক। ডা. শামসুল হক বলেন, ‘গত ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে আমরা একটা বিশেষ ক্যাম্পেইনের আয়োজন করি। ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ১ মার্চ পর্যন্ত বিশেষভাবেই এটার দিকে নজর দেওয়া হয়, ক্যাম্পেইন এবং ক্যাম্পেইনের সময় বেশি মানুষকে টিকার আওতায় আনার জন্য। আর এই ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ১ মার্চ পর্যন্ত প্রথম ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে দুই কোটি ৩২ লাখ মানুষকে। দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে এক কোটি সাত লাখ মানুষকে। সঙ্গে বুস্টার ডোজ দেওয়া হয়েছে ১০ লাখ মানুষকে।’ তিনি বলেন, ‘সেই হিসাবে ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ১ মার্চ পর্যন্ত মোট তিন কোটি ৪৯ লাখ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে পেরেছি বিভিন্ন ডোজে।’ দেশে এখন পর্যন্ত ২৯ কোটি ৬৪ লাখ টিকা পাওয়া গেছে জানিয়ে ডা. শামসুল হক বলেন, ‘এর মধ্যে প্রথম ডোজ দিয়েছি ১২ কোটি ৪৭ লাখ মানুষকে, দ্বিতীয় ডোজ দিয়েছি ৮ কোটি ৪৮ লাখ মানুষকে এবং বুস্টার ডোজ পেয়েছেন ৩৯ লাখ মানুষ।’ আর স্কুলের ১ কোটি ৬৯ লাখ শিক্ষার্থীও পেয়েছেন টিকা। প্রসঙ্গত, দেশে গত বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়।
সংক্রমণ আরও কমেছে : দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের নি¤œমুখী ধারায় দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা আরও কমেছে, সেই সঙ্গে কমেছে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্ত রোগীর হার।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, বুধবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে পৌনে ২৩ হাজার নমুনা পরীক্ষা করে ৭৩২ জনের শরীরে সংক্রমণ ধরা পড়েছে, মৃত্যু হয়েছে ৮ জনের। তাতে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ২২ শতাংশে। আগের দিন সোমবার এই হার ৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ ছিল। নতুন রোগীদের নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত ১৯ লাখ ৪৫ হাজার ১০৮ জন কোভিড রোগী শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৫৩ জনের। সরকারি হিসাবে এই সময়ে সেরে উঠেছেন ৪ হাজার ৮২৪ জন। তাদের নিয়ে এ পর্যন্ত ১৮ লাখ ২৬ হাজার ৯৪৯ জন সুস্থ হয়ে উঠলেন। বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল ২০২০ সালের ৮ মার্চ। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের ব্যাপক বিস্তারের মধ্যে গত বছরের ২৮ জুলাই দেশে রেকর্ড ১৬ হাজার ২৩০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়। প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর ২০২০ সালের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ৫ আগস্ট ও ১০ অগাস্ট ২৬৪ জন করে মৃত্যুর খবর আসে, যা মহামারীর মধ্যে এক দিনের সর্বোচ্চ সংখ্যা।
করোনার স্বাভাবিক পরিস্থিতির কাছাকাছি বাংলাদেশ
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ