ঢাকা ০৩:২৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নৃগোষ্ঠীর ভাষাকে মর্যাদার আসনে রাখতে হবে: সেলিনা হোসেন

  • আপডেট সময় : ১০:৪২:৫৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২২
  • ৭৫ বার পড়া হয়েছে

সাহিত্য ডেস্ক : বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেছেন, নৃগোষ্ঠী ভাষা সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত হয়নি। আমাদের বাংলা ভাষা দেশ স্বাধীন হওয়ার পর রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা পেয়েছে। কিন্তু আমি মনে করি সাংবিধানিকভাবে আমাদের নৃগোষ্ঠীর যতরকম ভাষা আছে সব ভাষাকে সংবিধানে উল্লেখ করে তাদের মর্যাদার আসনে রাখতে হবে। মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বাংলা একাডেমির আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে ‘ঠার ভাষায়’ প্রকাশিত পুলিশের ডিআইজি হাবিবুর রহমানের ‘বেদে জনগোষ্ঠীর ভাষা’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
সেলিনা হোসেন বলেন, বইটি যেভাবে রচনা করেছেন, যে সমৃদ্ধ রচনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক যারা, গবেষকরাও পিএইচডি করেন একজন পুলিশের কর্মকর্তা হয়ে ধারণ করতে পেরেছেন লেখক এবং এভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের জ্ঞান-চেতনার জায়গা। এই জ্ঞান-চেতনার জায়গা এগিয়ে গেলে এটি যেন একটি দৃষ্টান্ত হয়। তাহলে এই দৃষ্টান্ত দিয়ে আমরা অন্য যেকোনো ক্ষেত্রের লেখকদের পাবো। যারা অন্য জায়গায় নিজেদের অবস্থানকে পূর্ণ করে আমাদের শিল্প-সাহিত্য ভাষা সবকিছু নিয়ে কাজ করবেন। আমাদের জগৎকে বর্ধিত করবেন। আমাদের প্রজন্মকে আলোকিত করবেন। তিনি বলেন, ‘ঠার, বেদে জনগোষ্ঠীর ভাষা’একটি অসাধারণ বই। বইটিতে লেখক জাতীয় সংগীতকেও ঠার ভাষায় লিখেছেন। পুরো বইটিকে ১১টি অধ্যায়ে নানা বিশ্লেষণ করে ঠার ভাষার দিকটি দেখিয়েছেন। নৃগোষ্ঠীর ভাষার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা তো আমাদের নৃগোষ্ঠীর ভাষার জন্য অনেক বড় কথা বলতে চাই। নৃগোষ্ঠীর মাতৃভাষা, মাতৃভাষার সমমর্যাদায় সমুন্নত হবে। শিক্ষাব্যবস্থায় আসবে ও সবকিছু মিলিয়ে এ জনগোষ্ঠীর ভাষা আমাদের সামনে আসুক। আমাদের লেখক হাবিবুর রহমান এরপর হয়তো অন্য নৃগোষ্ঠীর ভাষা ধরবেন। এভাবে সমৃদ্ধ হবে বাংলা ভাষার সাহিত্য।
লেখক সম্পর্কে সেলিনা হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হলে তিনি এই ভাষাটায় পিএইচডি ডিগ্রি পেতেন। কিন্তু যে অসাধারণ জ্ঞান দিয়ে শ্রম দিয়ে এটি রচনা করেছেন তা আমাদের নৃগোষ্ঠীর জন্য উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। নৃগোষ্ঠীর ভাষার মর্যাদা লেখকের এ বইটি তার বড় প্রমাণ। এভাবেই আমরা এই প্রমাণের জায়গা তৈরি হতে দেখলাম লেখকের কাছ থেকে। আমি মনে করি এ ধরনের বই আমাদের জানার জগৎকে প্রদীপ্ত করে। বইটি আমাদের নৃগোষ্ঠীর ভাষার জন্য একটি গৌরবময় অর্জন। আন্তার্জাতিক মাতৃভাষা শুধু নিজেদের ভাষা হবে না। নিজেদের জনগোষ্ঠীকে সম্মানিত করার জন্য আমাদের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস যেন অনুপ্রাণিত করে সেই জায়গাটি ধারণ করতে চাই। এটাই হোক আমাদের সবচেয়ে বড় অবদান।
তিনি বলেন, ৪৫টি জনগোষ্ঠীর ভাষা রয়েছে কিন্তু সবার বই আমি পাই না। বাংলা একাডেমির কাছে আমি যখন চাকরিতে ছিলাম নৃগোষ্ঠীর যারা কবি-লেখক আছেন আমি মহাপরিচালককে বলতাম তাদের বইমেলায় একটি স্টল দেন। ওদের সবাই, সব ভাষার কবিরা তাদের ভাষার বই নিয়ে আসুক, তাদের স্টল দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছি। এসব ভাষার বাঙালিরা পড়ুক, তাদের জনগোষ্ঠীরাও পড়ুক। কিন্তু সেই কাজটি এখন পর্যন্ত করতে পারিনি। আমি আহ্বান জানাই তাদের জন্য যেন একটা স্টল দেওয়া হয়। আমরা যেন নৃগোষ্ঠীর মানুষকে একটি মর্যাদার জায়গায় নিয়ে আসি, প্রতিষ্ঠিত করি এটাই হোক আমাদের আন্তরিক ধারণা। সেই আন্তরিকতা দিয়েই আমরা পৌঁছে যেতে চাই জনগোষ্ঠীর কাছে যারা এদেশের বাসিন্দা, এদেশের মানুষ। বাঙালি নয় কিন্তু যারা জাতিসত্তার পরিচয় দিয়ে তারা একটি বড় জায়গা ধরে আছে। তার সংস্কৃতি দিয়ে বড় জায়গায় রয়েছে। তাদের একটি স্টল দেওয়া হোক। মানুষ তাদের বিষয়ে জানুক। মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক কবি কামাল চৌধুরী, কথাসাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক কবি ও লেখক মিনার মনসুর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ও অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান প্রমুখ।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

নৃগোষ্ঠীর ভাষাকে মর্যাদার আসনে রাখতে হবে: সেলিনা হোসেন

আপডেট সময় : ১০:৪২:৫৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২২

সাহিত্য ডেস্ক : বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেছেন, নৃগোষ্ঠী ভাষা সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত হয়নি। আমাদের বাংলা ভাষা দেশ স্বাধীন হওয়ার পর রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা পেয়েছে। কিন্তু আমি মনে করি সাংবিধানিকভাবে আমাদের নৃগোষ্ঠীর যতরকম ভাষা আছে সব ভাষাকে সংবিধানে উল্লেখ করে তাদের মর্যাদার আসনে রাখতে হবে। মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বাংলা একাডেমির আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে ‘ঠার ভাষায়’ প্রকাশিত পুলিশের ডিআইজি হাবিবুর রহমানের ‘বেদে জনগোষ্ঠীর ভাষা’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
সেলিনা হোসেন বলেন, বইটি যেভাবে রচনা করেছেন, যে সমৃদ্ধ রচনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক যারা, গবেষকরাও পিএইচডি করেন একজন পুলিশের কর্মকর্তা হয়ে ধারণ করতে পেরেছেন লেখক এবং এভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের জ্ঞান-চেতনার জায়গা। এই জ্ঞান-চেতনার জায়গা এগিয়ে গেলে এটি যেন একটি দৃষ্টান্ত হয়। তাহলে এই দৃষ্টান্ত দিয়ে আমরা অন্য যেকোনো ক্ষেত্রের লেখকদের পাবো। যারা অন্য জায়গায় নিজেদের অবস্থানকে পূর্ণ করে আমাদের শিল্প-সাহিত্য ভাষা সবকিছু নিয়ে কাজ করবেন। আমাদের জগৎকে বর্ধিত করবেন। আমাদের প্রজন্মকে আলোকিত করবেন। তিনি বলেন, ‘ঠার, বেদে জনগোষ্ঠীর ভাষা’একটি অসাধারণ বই। বইটিতে লেখক জাতীয় সংগীতকেও ঠার ভাষায় লিখেছেন। পুরো বইটিকে ১১টি অধ্যায়ে নানা বিশ্লেষণ করে ঠার ভাষার দিকটি দেখিয়েছেন। নৃগোষ্ঠীর ভাষার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা তো আমাদের নৃগোষ্ঠীর ভাষার জন্য অনেক বড় কথা বলতে চাই। নৃগোষ্ঠীর মাতৃভাষা, মাতৃভাষার সমমর্যাদায় সমুন্নত হবে। শিক্ষাব্যবস্থায় আসবে ও সবকিছু মিলিয়ে এ জনগোষ্ঠীর ভাষা আমাদের সামনে আসুক। আমাদের লেখক হাবিবুর রহমান এরপর হয়তো অন্য নৃগোষ্ঠীর ভাষা ধরবেন। এভাবে সমৃদ্ধ হবে বাংলা ভাষার সাহিত্য।
লেখক সম্পর্কে সেলিনা হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হলে তিনি এই ভাষাটায় পিএইচডি ডিগ্রি পেতেন। কিন্তু যে অসাধারণ জ্ঞান দিয়ে শ্রম দিয়ে এটি রচনা করেছেন তা আমাদের নৃগোষ্ঠীর জন্য উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। নৃগোষ্ঠীর ভাষার মর্যাদা লেখকের এ বইটি তার বড় প্রমাণ। এভাবেই আমরা এই প্রমাণের জায়গা তৈরি হতে দেখলাম লেখকের কাছ থেকে। আমি মনে করি এ ধরনের বই আমাদের জানার জগৎকে প্রদীপ্ত করে। বইটি আমাদের নৃগোষ্ঠীর ভাষার জন্য একটি গৌরবময় অর্জন। আন্তার্জাতিক মাতৃভাষা শুধু নিজেদের ভাষা হবে না। নিজেদের জনগোষ্ঠীকে সম্মানিত করার জন্য আমাদের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস যেন অনুপ্রাণিত করে সেই জায়গাটি ধারণ করতে চাই। এটাই হোক আমাদের সবচেয়ে বড় অবদান।
তিনি বলেন, ৪৫টি জনগোষ্ঠীর ভাষা রয়েছে কিন্তু সবার বই আমি পাই না। বাংলা একাডেমির কাছে আমি যখন চাকরিতে ছিলাম নৃগোষ্ঠীর যারা কবি-লেখক আছেন আমি মহাপরিচালককে বলতাম তাদের বইমেলায় একটি স্টল দেন। ওদের সবাই, সব ভাষার কবিরা তাদের ভাষার বই নিয়ে আসুক, তাদের স্টল দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছি। এসব ভাষার বাঙালিরা পড়ুক, তাদের জনগোষ্ঠীরাও পড়ুক। কিন্তু সেই কাজটি এখন পর্যন্ত করতে পারিনি। আমি আহ্বান জানাই তাদের জন্য যেন একটা স্টল দেওয়া হয়। আমরা যেন নৃগোষ্ঠীর মানুষকে একটি মর্যাদার জায়গায় নিয়ে আসি, প্রতিষ্ঠিত করি এটাই হোক আমাদের আন্তরিক ধারণা। সেই আন্তরিকতা দিয়েই আমরা পৌঁছে যেতে চাই জনগোষ্ঠীর কাছে যারা এদেশের বাসিন্দা, এদেশের মানুষ। বাঙালি নয় কিন্তু যারা জাতিসত্তার পরিচয় দিয়ে তারা একটি বড় জায়গা ধরে আছে। তার সংস্কৃতি দিয়ে বড় জায়গায় রয়েছে। তাদের একটি স্টল দেওয়া হোক। মানুষ তাদের বিষয়ে জানুক। মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক কবি কামাল চৌধুরী, কথাসাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক কবি ও লেখক মিনার মনসুর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ও অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান প্রমুখ।