নিজস্ব প্রতিবেদক : দুর্নীতি মামলার তদন্তকারীকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে নিজেই সে কথা সাংবাদমাধ্যমে ফাঁস করেছিলেন পুলিশের বরখাস্ত উপ-মহাপরিদর্শক মিজানুর রহমান; সেই অপরাধে ৩ বছর সাজার রায়ের পরও তাকে আদালতে দেখা গেল খোশ মেজাজে, দুই আঙুল তুলে বিজয়ের চিহ্নও দেখালেন।
আর যাকে মিজান ঘুষ দিয়েছিলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের সেই পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরকে দুই ধারায় মোট আট বছরের সাজার রায় দিয়েছে আদালত। রায় শুনে তার মধ্যে তেমন কোনো বিকার দেখা যায়নি। ঢাকার ৪ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক শেখ নাজমুল আলম বুধবার আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। দুই আসামি মিজান ও বাছির তখন কাঠগড়ায়।
মিজানের গায়ে ছিল সাদা চেক শার্টের ওপরে কোট, গলায় মাফলার। আর কালো-কমলা চেক শার্ট পরা বাছিরের মাথায় ছিল টুপি। তার পকেটে একটি কলমও দেখা যায়।
দুর্নীতি দমন কমিশনের পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরের সাজা ঘোষণার পর বুধবার তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। ৪০ লাখ টাকা ঘুষ লেনদেনের মামলায় ৩ বছর বিনাশ্রম কারাদ-ের পাশাপাশি মুদ্রা পাচার আইনে ৫ বছরের বিনাশ্রম কারাদ-, ৮০ লাখ জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৬ মাসের সাজা দেওয়া হয়। ছবি: মাহমুদ জামান অভিরায় ঘোষণার পর এজলাস থেকে নিয়ে যাওয়ার সময় হাস্যোজ্জ্বল মিজান বলেন, এনামুল বাছির তাকে ঘুষ দিতে ‘বাধ্য করেছিলেন’।
“দুদকে বাছির একজন না, আরও বাছির আছে। তাদের খুঁজে বের করুন।” মিজান বলেন, তার বিচারে ‘ভালো রায়’ হয়েছে। এতে প্রমাণ হয়েছে যে তিনি যা বলেছেন, সেটা সঠিক।
তবে যেহেতু এটা ‘মান সম্মানের’ বিষয়, আর ঘুষ যেহেতু ‘স্বেচ্ছায় দেননি’, সেহেতু তিনি উচ্চ আদালতে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন।
রায়ের পর কাঠগড়া থেকে আইনজীবীদের কাছে চলে যান মিজান। নির্ভার চেহারায় তাকে বিস্কুট আর পানি খেতে দেখা যায়। আত্মীয়-স্বজনের সাথে কথাও বলেন। আরেক আসামি এনামুল বাছিরকেও এজলাসে কেক খেতে দেখা যায়। রায়ের পর তিনিও পরিবারের সাথে কথা বলেন। তিনিও এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার কথা বলেছেন। এক নারীকে জোর করে বিয়ের পর নির্যাতন চালানোর অভিযোগ ওঠায় ২০১৯ সালে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনারের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল মিজানকে। পরে তার সম্পদের অনুসন্ধানে নামে দুদক; সেই অনুসন্ধানের দায়িত্ব পান কমিশনের তৎকালীন পরিচালক এনামুল বাছির। ঢাকার ৪ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে বুধবার ৩ বছরের সাজা ঘোষণার পর প্রিজন ভ্যানে তোলার আগ পর্যন্ত ডিআইজি মিজানকে দেখা গেছে খোশ মেজাজে। দুর্নীতি মামলার তদন্তকারীকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে নিজেই সে কথা সাংবাদমাধ্যমে ফাঁস করেছিলেন পুলিশের বরখাস্ত এই উপ-মহাপরিদর্শক । ছবি: মাহমুদ জামান অভিসেই অনুসন্ধান চলার মধ্যেই ডিআইজি মিজান দাবি করেন, তার কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন দুদক কর্মকর্তা বাছির। এর পক্ষে তাদের কথপোকথনের কয়েকটি অডিও ক্লিপ একটি টেলিভিশনকে দেন তিনি। ওই অডিও প্রচার হওয়ার পর দেশজুড়ে শুরু হয় আলোচনা।
অভিযোগটি অস্বীকার করে বাছির তখন দাবি করেছিলেন, তার কণ্ঠ নকল করে ডিআইজি মিজান কিছু ‘বানোয়াট’ রেকর্ড একটি টেলিভিশনকে সরবরাহ করেছেন। অন্যদিকে ডিআইজি মিজান বলেন, সব জেনেশুনেই তিনি কাজটি করেছেন ‘বাধ্য হয়ে’।
এ নিয়ে আলাদা মামলা করে দুদক। তদন্ত শেষে ২০১৯ সালের ১৬ জুলাই দুজনকে আসামি করেই অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। তার একবছর পর তাদের বিচার শুরু করে আদালত। আদালতে সাক্ষীদের কথাতেও তাদের ঘুষ লেনদেনের বিষয়টি আসে।
ঘুষের অভিযোগ ওঠার পর তাদের দুজনকেই সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল। ২০২০ বছরের ২২ জুলাই এনামুল বাছিরকে গ্রেপ্তার করে দুদকের একটি দল। আরেক মামলায় গ্রেপ্তার ডিআইজি মিজানকেও পরে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিচারক শেখ নাজমুল আলম বুধবার তার রায়ে সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মিজানকে দ-বিধির ১৬৫ এ ধারায় ৩ বছরের বিনাশ্রম কারাদ- দিয়েছেন। আর দুদকের বরখাস্ত পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরকে দ-বিধির ১৬১ ধারায় ৩ বছর বিনাশ্রম কারাদ-ের পাশাপাশি মুদ্রা পাচার আইনে ৫ বছরের বিনাশ্রম কারাদ-, ৮০ লাখ জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৬ মাসের সাজা দেওয়া হয়। তবে দুই ধারার সাজা একসঙ্গে খাটতে হবে বলে বাছিরকে সব মিলিয়ে ৫ বছর জেল খাটতে হবে। দুজনের ক্ষেত্রেই হাজতবাসের সময় বাদ যাবে।
ঘুষ লেনদেনের মামলায় ডিআইজি মিজানের ৩ বছর সাজা, দুদকের বাছিরের ৮ বছর
জনপ্রিয় সংবাদ