ঢাকা ০৬:৪১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ অগাস্ট ২০২৫

গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের মহাপ্রয়াণ

  • আপডেট সময় : ০১:৫২:৫৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২২
  • ১২৪ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক : বাংলা আধুনিক গান নিয়ে মানুষের ঘরে ঘরে যিনি পৌঁছে গিয়েছিলেন, একটি প্রজন্ম যার গান এখনও গুনগুনিয়ে গেয়ে ওঠে, সেই সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় আর নেই। কিংবদন্তি লতা মঙ্গেশকরের বিদায় শোক কাটতে না কাটতেই মঙ্গলবার চিরবিদায় নিলেন ভারতের বাংলা গানের প্রবাদপ্রতিম এই শিল্পী, ৯০ বছর বয়সে।
বেশ কিছুদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন সন্ধ্যা, গত ২৬ জানুয়ারি জ্বর নিয়ে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর কোভিড সংক্রমণও ধরা পড়েছিল। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা পিটিআই। কলকাতার দৈনিক আনন্দবাজার জানিয়েছে, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শৌচাগারে পড়ে গিয়ে চোট পান সন্ধ্যা। এর পর বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। সেইসঙ্গে যোগ হয়েছিল শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা। তার দুটি ফুসফুসেই সংক্রমণ দেখা দেয়। সন্ধ্যার হৃদযন্ত্রে সমস্যার কথা জানান চিকিৎসকরা।
হাসপাতালে ভর্তির একদিন আগেই ভারতের রাষ্ট্রীয় সম্মান পদ্মশ্রী খেতাব প্রত্যাখ্যান করে আলোচনায় এসেছিলেন কিংবদন্তি এ সঙ্গীতশিল্পী।
সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে কলকাতায় নেমেছে শোকের ছায়া। শোক জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
শোক জানিয়ে মমতা বলেন, “উনি স্বর্ণালি সময়ের শিল্পী। সেই যুগের সকলেই চলে গিয়েছেন। উনি ছিলেন। উনিই শেষ সুরের ঝঙ্কার, সুরের স্পন্দন, গানের ইন্দ্রধনু। একটা শতাব্দীর আর কেউ রইলেন না। এ ক্ষতি অপূরণীয়। আমি মনে করি সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ভারতরতœ।”
মুখ্যমন্ত্রী জানান, বুধবার দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সন্ধ্যার কফিন কলকাতার রবীন্দ্র সদনে রাখা হবে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য। এর পর রাজ্যের সর্বোচ্চ সম্মান ‘গান স্যালুট’ দিয়ে শেষকৃত্য হবে।
জনপ্রিয় অনেক গানের জন্য বাংলাদেশেও পরিচিত সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের নাম জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের ইতিহাসেও। একাত্তরে শরণার্থী বাঙালিদের জন্য অর্থ তুলেছিলেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে তাকে নিয়ে একটি গান গেয়েছিলেন তিনি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর প্রথম একুশে ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় পল্টন ময়দানে একটি উন্মুক্ত কনসার্টে গাইতে এসেছিলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। সেই সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শোকবার্তায় শেখ হাসিনা বলেছেন, “উপমহাদেশে গানের মুগ্ধতা ছড়ানোর পাশাপাশি মহান মুক্তিযুদ্ধে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে।”
শাস্ত্রীয় সংগীত, রবীন্দ্র সংগীত, নজরুল গীতি, হিন্দি গানসহ উপমহাদেশের সংগীতের প্রায় সবকটি জায়গায় স্বাক্ষর রেখেছেন ‘গীতশ্রী’ উপাধি পাওয়া সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়।
তবে কলকাতার বাংলা সিনেমায় মহানায়িকা সুচিত্রা সেনকে যে গানগুলো গ্ইাতে দেখা যেত, সেসব গানের জন্যই সন্ধ্যা জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠেছিলেন।
পর্দার উত্তম কুমার-সুচিত্রা জুটির অনেক রোমান্টিক গানের নেপথ্যে সন্ধ্যার সঙ্গে ছিলেন প্রবাদপ্রতিম আরেক কণ্ঠশিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। এর মধ্যে রয়েছে ‘এ শুধু গানের দিন’, ‘এই পথ যদি না শেষ হয়’, ‘এই মধুরাত’, ‘গানে মোর কোন ইন্দ্রধনু’, ‘কে তুমি আমারে ডাক’, ‘মায়াবতী মেঘে এল যে তন্দ্রা’ এর মতো গান।

১৯৫৫ সালে মুপ্তি পাওয়া অগ্নিপরীক্ষায় ‘গানে মোর কোন ইন্দ্রধনু’ নিয়ে সন্ধ্যা এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “আমাদের (সুচিত্রা সেন ঠোঁট মিলিয়েছিলেন) প্রথম হিট গান ‘গানে মোর কোন ইন্দ্রধনু’। পর্দায় ওর (সুচিত্রা) লিপ দেওয়া দেখে আমি হাঁ হয়ে গেছিলাম। এত নির্ভুল! অমর হয়ে গিয়েছিল ওই গানটা।”
অনুপম ঘটকের সুরে এই গান প্রকাশ পাওয়ার পরপরই সাড়া পড়েছিল শ্রোতার হৃদয়ে। এই গানের ‘মিতা মোর কাকলী কুহুৃ’ লাইনে ‘কুহু’ শব্দটা সন্ধ্যা যেভাবে গেয়েছেন, তাও সাড়া ফেলেছিল। ১৯৬৬ সালে কবি, গীতিকার শ্যামল গুপ্তের সঙ্গে বিয়ে হয় সন্ধ্যার। সন্ধ্যার বহু গানের গীতিকারও ছিলেন তিনি।
সন্ধ্যার জন্ম ১৯৩১ সালে কলকাতার ঢাকুরিয়ায়। নরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় এবং হেমপ্রভা দেবীর ছয় সন্তানের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন তিনি। বাবার কাছে ভক্তিমূলক গানের মাধ্যমে তার গানের রেয়াজ শুরু, তার মা-ও গান গাইতেন।
সন্ধ্যা ১২ বছর বয়সে কলকাতা আকাশবাণীর ‘গল্পদাদুর আসর’-এ প্রথম গেয়েছিলেন গীতিকার অজয় ভট্টাচার্যের লেখা একটি গান। ১৩ বছর ১০ মাস বয়সে প্রথম বেসিক রেকর্ড করেন গিরিন চক্রবর্তীর কথা ও সুরে। এইচএমভি থেকে প্রকাশিত হয় সেই রেকর্ড। এর এক পিঠে ছিল ‘তুমি ফিরায়ে দিয়ে যারে’, উল্টো পিঠে ‘তোমারো আকাশে ঝিলমিল করে চাঁদের আলো।’
এর বছর দুয়েক পরে কিংবদন্তি সুরকার রাইচাঁদ বড়ালের সুরে ‘অঞ্জনগড়’ ছবিতে এবং রবীন চট্টোপাধ্যায়ের সুরে ‘সমাপিকা’ সিনেমায় গান রেকর্ড করেন। সন্ধ্যা গান শিখেছেন যামিনী গঙ্গোপাধ্যায়, ওস্তাদ বড়ে গোলাম আলি, চিন্ময় লাহিড়ী, এ কানন, ডিটি যোগী, গণপত রাও, জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ, এবং সুরেশচন্দ্র চক্রবর্তীর কাছে।
শচীন দেব বর্মন, অনুপম ঘটক, রবীন চট্টোপাধ্যায়, নচিকেতা ঘোষ, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, সলিল চৌধুরীর মতো দিকপালদের সুরে যেমন গলা দিয়েছেন সন্ধ্যা, আবার নতুন প্রজন্মের সংগীতকার কবীর সুমনের কথা ও সুরেও গেয়েছেন।
১৯৫০ সালে শচীন দেব বর্মনের আহ্বানে মুম্বাইয়ে যাত্রা করেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়; গিয়ে ওঠেন শচীনদেবের আস্তানা এভারগ্রিন হোটেলে। শচীনদেব নিয়ে গেলেও মুম্বইয়ে প্রথম প্লেব্যাকের সুযোগ হল অনিল বিশ্বাসের সুরে। ‘তারানা’ সিনেমায়। সেখানে গাইতে গিয়েই লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। গানটা ছিল লতার সঙ্গে দ্বৈত কণ্ঠে— ‘বোল পাপিহে বোল রে, তু বোল পাপিহে বোল’।
সব মিলিয়ে ১৭টি হিন্দি চলচ্চিত্রের গানে নেপথ্যে কণ্ঠ দিয়েছেন সন্ধ্যা। তবে বলিউডে বেশিদিনের জন্য থিতু হননি তিনি। ব্যক্তিগত কারণে ১৯৫২ সালে তিনি কলকাতায় ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন।
আনন্দবাজার লিখেছে, সন্ধ্যার শিল্পী জীবনের অন্যতম মাইলফলক ‘মহিষাসুরমর্দ্দিনী’-তে অংশগ্রহণ। পঙ্কজকুমার মল্লিক, বাণীকুমার, বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র আর একঝাঁক শিল্পীর সঙ্গে সন্ধ্যাও ছিলেন।
‘বিমানে বিমানে আলোকের গানে জাগিল ধ্বনি’ গানটি এখনও সন্ধ্যার গলায় শোনা যায়। এই গানটি অবশ্য পরবর্তীকালে রেকর্ড করা হয়।
‘স্বর্ণযুগের’ এই গায়িকার হাতে উঠেছিল ভারতের ন্যাশনাল ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড, বিএফজেএ অ্যাওয়ার্ড-সহ বহু সম্মান। পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাকে ২০১১ সালে ‘বঙ্গবিভূষণ’, ২০১২ সালে ‘সঙ্গীত মহাসম্মান’ ও ২০১৫ সালে ‘উস্তাদ বড়ে গোলাম আলি বিশেষ সঙ্গীতসম্মান’দিয়েছিল। আমৃত্যু পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সঙ্গীত আকাদেমির সভাপতিও ছিলেন তিনি। তবে গান গেয়েই সন্ধ্যা পেয়েছেন মানুষের অফুরান ভালোবাসা। সেই শক্তিতেই চলে যাওয়ার কয়েক দিন আগে পাওয়া জাতীয় পুরস্কার পদ্মশ্রী প্রত্যাখ্যান করেছেন; শিল্পীর সম্মানের খাতিরে।
দৃঢ় কণ্ঠে বলেছিলেন, “কনিষ্ঠ শিল্পীদের এই পুরস্কার দেওয়া হোক। আমার দেশ আমাকে যেভাবে ভালবাসে, সেখানে আমার পদ্মশ্রী কিংবা কোনও শ্রীর-ই প্রয়োজন নেই।”
সন্ধ্যার কণ্ঠ জড়িয়ে বাঙালির অবিস্মরণীয় এক দিনে : দিনটি ছিল ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি, বাঙালির জন্য অবিস্মরণীয় এক দিন। পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে যুক্তরাজ্য থেকে ভারত হয়ে মুক্ত বাংলাদেশে ফিরেছিলেন বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিজয় লাভ করলেও জাতির পিতাকে না পেয়ে তাতে যে অপূর্ণতা ছিল, তা পূর্ণতা পেল ১০ জানুয়ারি। বাংলাদেশের জাতির পিতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের প্রতিক্ষণের ধারা বর্ণনা দেওয়া হচ্ছিল কলকাতার বেতার আকাশবাণী থেকে। দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওই ধারা বর্ণনার মধ্যেই অসাধারণ আবেগময় কণ্ঠে ইন্দ্রধনু ছড়িয়েছিলেন শিল্পী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, যাতে বাঙময় হয়ে উঠেছিল বাঙালির মনের কথা।
‘বঙ্গবন্ধু ফিরে এলে তোমার স্বপ্নের স্বাধীন বাংলায় তুমি আজ’ – বাংলাদেশের গৌরবময় বিজয়গাথার অনুরণন হয়ে ইতিহাসে ঠাঁই করে নেওয়া সেই গানটি লিখেছিলেন আবিদুর রহমান, সুর দিয়েছিলেন সুধীন দাশগুপ্ত।
মঙ্গলবার পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন কিংবদন্তি শিল্পী সন্ধ্যা; মুজিববর্ষের সূচনা লগ্নে দুই বছর আগে কলকাতায় বাংলাদেশ মিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সন্ধ্যা বলেছিলেন সেই গানটির কথা। তিনি বলেছিলেন, “১৯৭২ সালে (বঙ্গবন্ধুর) সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আমার দুটো গান রেকর্ড করেছিলাম গ্রামোফোন কোম্পানিতে। সুরকার ছিলেন সুধীন দাশগুপ্ত আর গীতিকার ছিলেন বাংলাদেশের একজন কবি।”
বাংলাদেশের জাতির পিতার সংগ্রামমুখর জীবন স্মরণ করে এই শিল্পী বলেন, “কত গভীরভাবে দেশকে ভালোবাসলে, ভাষাকে ভালোবাসলে- তবে এইভাবে লড়াই করা যায়। ইতিহাসে এ লড়াইয়ের কথা লেখা থাকবে। যুগ যুগ ধরে এ কথা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।”
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে উদ্বাস্তু বাঙালিদের জন্য অর্থ সংগ্রহে যোগ দিয়েছিলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। একাত্তরের স্মৃতি হাতড়ে সেসব কথা বলার পাশাপাশি রাজনৈতিক কারণে বাঙলা ভাগ হলেও দুপারের বাঙালি যে আত্মার বন্ধনে আবদ্ধ, নিজের সেই উপলব্ধির কথাও বলেছিলেন তিনি।
“আমার ভীষণভাবে মনে হয়, কারণ এখন আমরা বলি- বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশ। কিন্তু আমরা তো একসঙ্গে ছিলাম! আর আমার বলবার বিষয় এটাই যে আমার বাংলাদেশের ভাইবোন সবাইকে সশ্রদ্ধ প্রণাম। মঙ্গলকামনা ও ভালোবাসা জানাচ্ছি। আপনারা সবাই ভালো থাকুন শান্তিতে থাকুন।”
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের এ পরমহৈতিষী শিল্পীকে আমন্ত্রণ জানানো হলে বয়স ও অসুস্থতার জন্য তিনি আসতে পারেননি। তবে মুজিববর্ষের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যে তার গান বাজানো হয়েছিল, তা নিয়ে এবং তাকে স্মরণ করার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ দিতেও ভোলেননি সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়।
সন্ধ্যার গানগুলো : আধুনিক বাংলা গানের জগতে কিংবদন্তি হয়ে উঠেছিলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। তবে শাস্ত্রীয় সংগীত, রবীন্দ্র সংগীত, নজরুল গীতি, হিন্দি গানসহ উপমহাদেশের সংগীতের প্রায় সবকটি জায়গায় স্বাক্ষর রেখেছেন ‘গীতশ্রী’ উপাধি পাওয়া এই সংগীতশিল্পী। ৯০ বছর বয়সে মঙ্গলবার কলকাতার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। বাংলা সংগীত জগতের স্বর্ণযুগের প্রায় সব সুরকারের সুরে গান গেয়েছেন সন্ধ্যা। শচীন দেব বর্মন, অনুপম ঘটক, রবীন চট্টোপাধ্যায়, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, সলিল চৌধুরীর মতো দিকপালদের সুরে গলা দিয়েছেন যেমন, আবার নতুন প্রজন্মের সংগীতকার কবীর সুমনের কথা ও সুরেও গেয়েছেন। অসংখ্য জনপ্রিয় বাংলা গানের মধে শ্রোতাপ্রিয় কিছু গান ও টুকরো কথা পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল।
গানে মোর কোন ইন্দ্রধনু : সন্ধ্যা মুখার্জির নিজের ভাষায়, “আমাদের (সুচিত্রা সেন ঠোঁট মিলিয়েছিলেন) প্রথম হিট গান ‘গানে মোর কোন ইন্দ্রধনু’। পর্দায় ওর (সুচিত্রা) লিপ দেওয়া দেখে আমি হাঁ হয়ে গেছিলাম। এত নির্ভুল! অমর হয়ে গিয়েছিল ওই গানটা।”
অনুপম ঘটকের সুরে এই গান প্রকাশ পাওয়ার পরপরই সাড়া পড়েছিল শ্রোতার হৃদয়ে। এই গানের ‘মিতা মোর কাকলী কুহুৃ’ লাইনে ‘কুহু’ শব্দটা সন্ধ্যা যেভাবে গেয়েছেন তা সাড়া ফেলেছিল। ‘অগ্নিপরীক্ষা’ সিনেমার পরিচালক ছিলেন অগ্রদূত গোষ্ঠী। ১৯৫৫ সালে সিনেমাটি মুক্তি পায়।
সন্ধ্যার কথা, “অনুপম ঘটক যখন সুর করেছিলেন, তখন ডিরেক্টর বিভূতি লাহা একেবারেই খুশি হতে পারেননি। উনি রীতিমতো হম্বিতম্বি করে মিউজিক ডিরেক্টরকে বললেন, এটা কী গান হয়েছে? তখনকার দিনের মিউজিক ডিরেক্টরদের যথেষ্ট মেরুদ- ছিল। আজকালকার মতো নয়। উনি পাল্টা ডিরেক্টরকে বললেন, আপনি কী করবেন আপনি ভাবুন। আমি এটা নিয়ে যথেষ্ট কনফিডেন্ট। ছবির রেকর্ডিস্ট খুব সম্ভবত ছিলেন যতীন দত্ত। উনিও বললেন, ওঁর ভাল লেগেছে। গানের একটা জায়গায় ছিল ‘কুহু কুহু’। ওঁরা ডিরেক্টরকে বললেন, এই জায়গায় সন্ধ্যার গলার কাজটা দেখুন। কী করে বলছেন গানটা কিছু হয়নি? ডিরেক্টর শেষ পর্যন্ত মেনে নিলেন। বাকিটা ইতিহাস।”
উজ্জ্বল এক ঝাঁক পায়রা : কবি বিমল ঘোষের লেখা আর সলিল চৌধুরীর সুরে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া ‘উজ্জ্বল এক ঝাঁক পায়রা’ গানটি নন-ফিল্ম গানের জগতে একটি অবিস্মরণীয় গান। ১৯৫৩ প্রকাশ হওয়া এই গান আজকের শ্রোতাদেরও মন ছুঁয়ে যায়।
আয় বৃষ্টি ঝেঁপে : সলিল চৌধুরীর লেখা ও সুরে সন্ধ্যার গাওয়া ‘আয় বৃষ্টি ঝেঁপে’ গানটি ১৯৫৩ সালে প্রকাশ পায়।
ঘুম ঘুম চাঁদ : ১৯৫৬ সালে মুক্তি পায় উত্তম-সুচিত্রা অভিনীত ‘সবার উপরে’ সিনেমা। এতে ছবি বিশ্বাসের অভিনয়ের প্রশংসার পাশাপশি জনপ্রিয় হয়েছিল সুচিত্রার ঠোঁটে সন্ধ্যার গান ‘ঘুম ঘুম চাঁদ/ ঝিকিমিকি তারাৃ।”
তুমি না হয় রহিতে কাছে : ‘পথে হলো দেরি’ সিনেমায় সুচিত্রা সেনের কণ্ঠে ‘তুমি না হয় রহিতে কাছে’ গান শোনেনি এমন শ্রোতা বোধহয় কমই পাওয়া যাবে। গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের লেখা আর রবীন চট্টোপাধ্যায়ের সুরে গানটি তুমুল জনপ্রিয় পায়। অগ্রদূত পরিচালিত ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৫৭ সালে।
এ শুধু গানের দিন : পথে হল দেরি সিনেমার ‘এ শুধু গানের দিন’ গানটিও তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। এখনকার শিল্পীদের মধ্যে অনেকেই এখনও এই গানটি গেয়ে থাকেন। অনেকের মতে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের এই গানটি শীর্ষ জনপ্রিয় গান।
হয়ত কিছুই নাহি পাব : শিল্পী শ্যামল মিত্রের সুরে এবং গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের লেখা ‘হয়ত কিছুই নাহি পাব’ গানটি সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের একটি অবিস্মরণীয় গান। বাংলা আধুনিক এই গানটি তৎকালীন এইচএমভি থেকে ১৯৫৫ সালে প্রকাশ পায়।
মধু মালতী ডাকে আয় : ১৯৫৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘হারজিৎ’ সিনেমার ‘মধু মালতী ডাকে আয়’ এখনও শ্রোতাদের মুখে মুখে ফেরে। প্রণব রায়ের লেখা আর রবীন চট্টোপাধ্যায়ের সুরে গানটি বাঙালির প্রেমের গানে শীর্ষে অবস্থান করছে এখনও। গানটিতে ঠোঁট মিলিয়েছিলেন অভিনেত্রী অনিতা গুহ।
চন্দন পালঙ্কে শুয়ে : সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের জনপ্রিয় এই গানটি লিখেছেন তার স্বামী শ্যামল গুপ্ত।
মায়াবতী মেঘে এল তন্দ্রা : কিংবদন্তি সুরকার নচিকেতা ঘোষের সুরে শিবদাস বন্দোপাধ্যায়ের লেখা ‘মায়াবতী মেঘে এল তন্দ্রা’ সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া অন্যতম জনপ্রিয় গান। ১৯৬৩ সালে আধুনিক এই গানটি প্রকাশিত হয়। এই গানে রাধাকান্ত নন্দীর তবলার ছন্দের মূর্ছনা শ্রোতাদের হৃদয়ে দোলা তোলে।
তুমি তোমার গল্প বলো : গত শতাব্দীর শেষ দিকে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় গান গেয়েছেন কবীর সুমনের সুরে। কবীর সুমনের লেখা ১২টি গান রেকর্ড করেছিলেন সন্ধ্যা। তার সুরে গাওয়া সম্পর্কে সুমন বিভিন্ন অনুষ্নঠানে স্মৃতিচারণ করে বলেছেন, “সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় আমাকে বলেছিলেন, ‘সুমন আমি আর সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় থাকতে চাই না। আমার ডিপার্চার করিয়ে দাও’। এরকম কথা বলতে গেলে একজন সন্ধ্যা মুখার্জি হওয়া লাগে।” ১৯৯৭ সালে এইচএমভি থেকে বেরোয় কবীর সুমনের কথা ও সুরে ‘তুমি তোমার গল্প বল’। ১৯৯৯ সালে প্রকাশিত হয় ‘আসছে শতাব্দীতে’ গানটি।
প্রজাপতি মন আমার পাখায় পাখায় : নচিকেতা ঘোষের সুরে আর গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের কথায় ‘প্রজাপতি মন আমার’ গানটি এখনও শ্রোতাপ্রিয়। বাংলা আধুনিক এই গানটি ১৯৫৭ সালে এইচএমভি থেকে প্রকাশ পায়।
এই পথ যদি না শেষ হয় : ১৯৬১ সালে মুক্তিপাওয়া ‘সপ্তপদী’ সিনেমার ‘এই গানটি বাংলা গানের জগতে অন্যতম জনপ্রিয় একটি গান। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সুরে তার সঙ্গেই দ্বৈত এই গানটি বাঙালির হৃদয়ে এখনও দোলা দেয়।
রাগ ভাটিয়ারে খেয়াল : সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের গুরুদের মধ্যে যামিনী গঙ্গোপাধ্যায়, ওস্তাদ বড়ে গোলাম আলি, চিন্ময় লাহিড়ী, এ কানন, ডিটি যোগী, গণপত রাও, জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ, এবং সুরেশচন্দ্র চক্রবর্তী। বড়ে গোলাম আলির কাছে জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষের বাড়িতে নাড়া বেঁধে শিষ্যা হয়েছিলেন সন্ধ্যা।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার নাম বদলে হলো ঢাকা বাণিজ্যমেলা

গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের মহাপ্রয়াণ

আপডেট সময় : ০১:৫২:৫৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২২

প্রত্যাশা ডেস্ক : বাংলা আধুনিক গান নিয়ে মানুষের ঘরে ঘরে যিনি পৌঁছে গিয়েছিলেন, একটি প্রজন্ম যার গান এখনও গুনগুনিয়ে গেয়ে ওঠে, সেই সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় আর নেই। কিংবদন্তি লতা মঙ্গেশকরের বিদায় শোক কাটতে না কাটতেই মঙ্গলবার চিরবিদায় নিলেন ভারতের বাংলা গানের প্রবাদপ্রতিম এই শিল্পী, ৯০ বছর বয়সে।
বেশ কিছুদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন সন্ধ্যা, গত ২৬ জানুয়ারি জ্বর নিয়ে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর কোভিড সংক্রমণও ধরা পড়েছিল। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা পিটিআই। কলকাতার দৈনিক আনন্দবাজার জানিয়েছে, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শৌচাগারে পড়ে গিয়ে চোট পান সন্ধ্যা। এর পর বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। সেইসঙ্গে যোগ হয়েছিল শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা। তার দুটি ফুসফুসেই সংক্রমণ দেখা দেয়। সন্ধ্যার হৃদযন্ত্রে সমস্যার কথা জানান চিকিৎসকরা।
হাসপাতালে ভর্তির একদিন আগেই ভারতের রাষ্ট্রীয় সম্মান পদ্মশ্রী খেতাব প্রত্যাখ্যান করে আলোচনায় এসেছিলেন কিংবদন্তি এ সঙ্গীতশিল্পী।
সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে কলকাতায় নেমেছে শোকের ছায়া। শোক জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
শোক জানিয়ে মমতা বলেন, “উনি স্বর্ণালি সময়ের শিল্পী। সেই যুগের সকলেই চলে গিয়েছেন। উনি ছিলেন। উনিই শেষ সুরের ঝঙ্কার, সুরের স্পন্দন, গানের ইন্দ্রধনু। একটা শতাব্দীর আর কেউ রইলেন না। এ ক্ষতি অপূরণীয়। আমি মনে করি সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ভারতরতœ।”
মুখ্যমন্ত্রী জানান, বুধবার দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সন্ধ্যার কফিন কলকাতার রবীন্দ্র সদনে রাখা হবে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য। এর পর রাজ্যের সর্বোচ্চ সম্মান ‘গান স্যালুট’ দিয়ে শেষকৃত্য হবে।
জনপ্রিয় অনেক গানের জন্য বাংলাদেশেও পরিচিত সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের নাম জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের ইতিহাসেও। একাত্তরে শরণার্থী বাঙালিদের জন্য অর্থ তুলেছিলেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে তাকে নিয়ে একটি গান গেয়েছিলেন তিনি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর প্রথম একুশে ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় পল্টন ময়দানে একটি উন্মুক্ত কনসার্টে গাইতে এসেছিলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। সেই সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শোকবার্তায় শেখ হাসিনা বলেছেন, “উপমহাদেশে গানের মুগ্ধতা ছড়ানোর পাশাপাশি মহান মুক্তিযুদ্ধে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে।”
শাস্ত্রীয় সংগীত, রবীন্দ্র সংগীত, নজরুল গীতি, হিন্দি গানসহ উপমহাদেশের সংগীতের প্রায় সবকটি জায়গায় স্বাক্ষর রেখেছেন ‘গীতশ্রী’ উপাধি পাওয়া সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়।
তবে কলকাতার বাংলা সিনেমায় মহানায়িকা সুচিত্রা সেনকে যে গানগুলো গ্ইাতে দেখা যেত, সেসব গানের জন্যই সন্ধ্যা জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠেছিলেন।
পর্দার উত্তম কুমার-সুচিত্রা জুটির অনেক রোমান্টিক গানের নেপথ্যে সন্ধ্যার সঙ্গে ছিলেন প্রবাদপ্রতিম আরেক কণ্ঠশিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। এর মধ্যে রয়েছে ‘এ শুধু গানের দিন’, ‘এই পথ যদি না শেষ হয়’, ‘এই মধুরাত’, ‘গানে মোর কোন ইন্দ্রধনু’, ‘কে তুমি আমারে ডাক’, ‘মায়াবতী মেঘে এল যে তন্দ্রা’ এর মতো গান।

১৯৫৫ সালে মুপ্তি পাওয়া অগ্নিপরীক্ষায় ‘গানে মোর কোন ইন্দ্রধনু’ নিয়ে সন্ধ্যা এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “আমাদের (সুচিত্রা সেন ঠোঁট মিলিয়েছিলেন) প্রথম হিট গান ‘গানে মোর কোন ইন্দ্রধনু’। পর্দায় ওর (সুচিত্রা) লিপ দেওয়া দেখে আমি হাঁ হয়ে গেছিলাম। এত নির্ভুল! অমর হয়ে গিয়েছিল ওই গানটা।”
অনুপম ঘটকের সুরে এই গান প্রকাশ পাওয়ার পরপরই সাড়া পড়েছিল শ্রোতার হৃদয়ে। এই গানের ‘মিতা মোর কাকলী কুহুৃ’ লাইনে ‘কুহু’ শব্দটা সন্ধ্যা যেভাবে গেয়েছেন, তাও সাড়া ফেলেছিল। ১৯৬৬ সালে কবি, গীতিকার শ্যামল গুপ্তের সঙ্গে বিয়ে হয় সন্ধ্যার। সন্ধ্যার বহু গানের গীতিকারও ছিলেন তিনি।
সন্ধ্যার জন্ম ১৯৩১ সালে কলকাতার ঢাকুরিয়ায়। নরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় এবং হেমপ্রভা দেবীর ছয় সন্তানের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন তিনি। বাবার কাছে ভক্তিমূলক গানের মাধ্যমে তার গানের রেয়াজ শুরু, তার মা-ও গান গাইতেন।
সন্ধ্যা ১২ বছর বয়সে কলকাতা আকাশবাণীর ‘গল্পদাদুর আসর’-এ প্রথম গেয়েছিলেন গীতিকার অজয় ভট্টাচার্যের লেখা একটি গান। ১৩ বছর ১০ মাস বয়সে প্রথম বেসিক রেকর্ড করেন গিরিন চক্রবর্তীর কথা ও সুরে। এইচএমভি থেকে প্রকাশিত হয় সেই রেকর্ড। এর এক পিঠে ছিল ‘তুমি ফিরায়ে দিয়ে যারে’, উল্টো পিঠে ‘তোমারো আকাশে ঝিলমিল করে চাঁদের আলো।’
এর বছর দুয়েক পরে কিংবদন্তি সুরকার রাইচাঁদ বড়ালের সুরে ‘অঞ্জনগড়’ ছবিতে এবং রবীন চট্টোপাধ্যায়ের সুরে ‘সমাপিকা’ সিনেমায় গান রেকর্ড করেন। সন্ধ্যা গান শিখেছেন যামিনী গঙ্গোপাধ্যায়, ওস্তাদ বড়ে গোলাম আলি, চিন্ময় লাহিড়ী, এ কানন, ডিটি যোগী, গণপত রাও, জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ, এবং সুরেশচন্দ্র চক্রবর্তীর কাছে।
শচীন দেব বর্মন, অনুপম ঘটক, রবীন চট্টোপাধ্যায়, নচিকেতা ঘোষ, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, সলিল চৌধুরীর মতো দিকপালদের সুরে যেমন গলা দিয়েছেন সন্ধ্যা, আবার নতুন প্রজন্মের সংগীতকার কবীর সুমনের কথা ও সুরেও গেয়েছেন।
১৯৫০ সালে শচীন দেব বর্মনের আহ্বানে মুম্বাইয়ে যাত্রা করেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়; গিয়ে ওঠেন শচীনদেবের আস্তানা এভারগ্রিন হোটেলে। শচীনদেব নিয়ে গেলেও মুম্বইয়ে প্রথম প্লেব্যাকের সুযোগ হল অনিল বিশ্বাসের সুরে। ‘তারানা’ সিনেমায়। সেখানে গাইতে গিয়েই লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। গানটা ছিল লতার সঙ্গে দ্বৈত কণ্ঠে— ‘বোল পাপিহে বোল রে, তু বোল পাপিহে বোল’।
সব মিলিয়ে ১৭টি হিন্দি চলচ্চিত্রের গানে নেপথ্যে কণ্ঠ দিয়েছেন সন্ধ্যা। তবে বলিউডে বেশিদিনের জন্য থিতু হননি তিনি। ব্যক্তিগত কারণে ১৯৫২ সালে তিনি কলকাতায় ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন।
আনন্দবাজার লিখেছে, সন্ধ্যার শিল্পী জীবনের অন্যতম মাইলফলক ‘মহিষাসুরমর্দ্দিনী’-তে অংশগ্রহণ। পঙ্কজকুমার মল্লিক, বাণীকুমার, বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র আর একঝাঁক শিল্পীর সঙ্গে সন্ধ্যাও ছিলেন।
‘বিমানে বিমানে আলোকের গানে জাগিল ধ্বনি’ গানটি এখনও সন্ধ্যার গলায় শোনা যায়। এই গানটি অবশ্য পরবর্তীকালে রেকর্ড করা হয়।
‘স্বর্ণযুগের’ এই গায়িকার হাতে উঠেছিল ভারতের ন্যাশনাল ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড, বিএফজেএ অ্যাওয়ার্ড-সহ বহু সম্মান। পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাকে ২০১১ সালে ‘বঙ্গবিভূষণ’, ২০১২ সালে ‘সঙ্গীত মহাসম্মান’ ও ২০১৫ সালে ‘উস্তাদ বড়ে গোলাম আলি বিশেষ সঙ্গীতসম্মান’দিয়েছিল। আমৃত্যু পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সঙ্গীত আকাদেমির সভাপতিও ছিলেন তিনি। তবে গান গেয়েই সন্ধ্যা পেয়েছেন মানুষের অফুরান ভালোবাসা। সেই শক্তিতেই চলে যাওয়ার কয়েক দিন আগে পাওয়া জাতীয় পুরস্কার পদ্মশ্রী প্রত্যাখ্যান করেছেন; শিল্পীর সম্মানের খাতিরে।
দৃঢ় কণ্ঠে বলেছিলেন, “কনিষ্ঠ শিল্পীদের এই পুরস্কার দেওয়া হোক। আমার দেশ আমাকে যেভাবে ভালবাসে, সেখানে আমার পদ্মশ্রী কিংবা কোনও শ্রীর-ই প্রয়োজন নেই।”
সন্ধ্যার কণ্ঠ জড়িয়ে বাঙালির অবিস্মরণীয় এক দিনে : দিনটি ছিল ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি, বাঙালির জন্য অবিস্মরণীয় এক দিন। পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে যুক্তরাজ্য থেকে ভারত হয়ে মুক্ত বাংলাদেশে ফিরেছিলেন বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিজয় লাভ করলেও জাতির পিতাকে না পেয়ে তাতে যে অপূর্ণতা ছিল, তা পূর্ণতা পেল ১০ জানুয়ারি। বাংলাদেশের জাতির পিতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের প্রতিক্ষণের ধারা বর্ণনা দেওয়া হচ্ছিল কলকাতার বেতার আকাশবাণী থেকে। দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওই ধারা বর্ণনার মধ্যেই অসাধারণ আবেগময় কণ্ঠে ইন্দ্রধনু ছড়িয়েছিলেন শিল্পী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, যাতে বাঙময় হয়ে উঠেছিল বাঙালির মনের কথা।
‘বঙ্গবন্ধু ফিরে এলে তোমার স্বপ্নের স্বাধীন বাংলায় তুমি আজ’ – বাংলাদেশের গৌরবময় বিজয়গাথার অনুরণন হয়ে ইতিহাসে ঠাঁই করে নেওয়া সেই গানটি লিখেছিলেন আবিদুর রহমান, সুর দিয়েছিলেন সুধীন দাশগুপ্ত।
মঙ্গলবার পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন কিংবদন্তি শিল্পী সন্ধ্যা; মুজিববর্ষের সূচনা লগ্নে দুই বছর আগে কলকাতায় বাংলাদেশ মিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সন্ধ্যা বলেছিলেন সেই গানটির কথা। তিনি বলেছিলেন, “১৯৭২ সালে (বঙ্গবন্ধুর) সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আমার দুটো গান রেকর্ড করেছিলাম গ্রামোফোন কোম্পানিতে। সুরকার ছিলেন সুধীন দাশগুপ্ত আর গীতিকার ছিলেন বাংলাদেশের একজন কবি।”
বাংলাদেশের জাতির পিতার সংগ্রামমুখর জীবন স্মরণ করে এই শিল্পী বলেন, “কত গভীরভাবে দেশকে ভালোবাসলে, ভাষাকে ভালোবাসলে- তবে এইভাবে লড়াই করা যায়। ইতিহাসে এ লড়াইয়ের কথা লেখা থাকবে। যুগ যুগ ধরে এ কথা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।”
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে উদ্বাস্তু বাঙালিদের জন্য অর্থ সংগ্রহে যোগ দিয়েছিলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। একাত্তরের স্মৃতি হাতড়ে সেসব কথা বলার পাশাপাশি রাজনৈতিক কারণে বাঙলা ভাগ হলেও দুপারের বাঙালি যে আত্মার বন্ধনে আবদ্ধ, নিজের সেই উপলব্ধির কথাও বলেছিলেন তিনি।
“আমার ভীষণভাবে মনে হয়, কারণ এখন আমরা বলি- বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশ। কিন্তু আমরা তো একসঙ্গে ছিলাম! আর আমার বলবার বিষয় এটাই যে আমার বাংলাদেশের ভাইবোন সবাইকে সশ্রদ্ধ প্রণাম। মঙ্গলকামনা ও ভালোবাসা জানাচ্ছি। আপনারা সবাই ভালো থাকুন শান্তিতে থাকুন।”
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের এ পরমহৈতিষী শিল্পীকে আমন্ত্রণ জানানো হলে বয়স ও অসুস্থতার জন্য তিনি আসতে পারেননি। তবে মুজিববর্ষের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যে তার গান বাজানো হয়েছিল, তা নিয়ে এবং তাকে স্মরণ করার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ দিতেও ভোলেননি সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়।
সন্ধ্যার গানগুলো : আধুনিক বাংলা গানের জগতে কিংবদন্তি হয়ে উঠেছিলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। তবে শাস্ত্রীয় সংগীত, রবীন্দ্র সংগীত, নজরুল গীতি, হিন্দি গানসহ উপমহাদেশের সংগীতের প্রায় সবকটি জায়গায় স্বাক্ষর রেখেছেন ‘গীতশ্রী’ উপাধি পাওয়া এই সংগীতশিল্পী। ৯০ বছর বয়সে মঙ্গলবার কলকাতার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। বাংলা সংগীত জগতের স্বর্ণযুগের প্রায় সব সুরকারের সুরে গান গেয়েছেন সন্ধ্যা। শচীন দেব বর্মন, অনুপম ঘটক, রবীন চট্টোপাধ্যায়, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, সলিল চৌধুরীর মতো দিকপালদের সুরে গলা দিয়েছেন যেমন, আবার নতুন প্রজন্মের সংগীতকার কবীর সুমনের কথা ও সুরেও গেয়েছেন। অসংখ্য জনপ্রিয় বাংলা গানের মধে শ্রোতাপ্রিয় কিছু গান ও টুকরো কথা পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল।
গানে মোর কোন ইন্দ্রধনু : সন্ধ্যা মুখার্জির নিজের ভাষায়, “আমাদের (সুচিত্রা সেন ঠোঁট মিলিয়েছিলেন) প্রথম হিট গান ‘গানে মোর কোন ইন্দ্রধনু’। পর্দায় ওর (সুচিত্রা) লিপ দেওয়া দেখে আমি হাঁ হয়ে গেছিলাম। এত নির্ভুল! অমর হয়ে গিয়েছিল ওই গানটা।”
অনুপম ঘটকের সুরে এই গান প্রকাশ পাওয়ার পরপরই সাড়া পড়েছিল শ্রোতার হৃদয়ে। এই গানের ‘মিতা মোর কাকলী কুহুৃ’ লাইনে ‘কুহু’ শব্দটা সন্ধ্যা যেভাবে গেয়েছেন তা সাড়া ফেলেছিল। ‘অগ্নিপরীক্ষা’ সিনেমার পরিচালক ছিলেন অগ্রদূত গোষ্ঠী। ১৯৫৫ সালে সিনেমাটি মুক্তি পায়।
সন্ধ্যার কথা, “অনুপম ঘটক যখন সুর করেছিলেন, তখন ডিরেক্টর বিভূতি লাহা একেবারেই খুশি হতে পারেননি। উনি রীতিমতো হম্বিতম্বি করে মিউজিক ডিরেক্টরকে বললেন, এটা কী গান হয়েছে? তখনকার দিনের মিউজিক ডিরেক্টরদের যথেষ্ট মেরুদ- ছিল। আজকালকার মতো নয়। উনি পাল্টা ডিরেক্টরকে বললেন, আপনি কী করবেন আপনি ভাবুন। আমি এটা নিয়ে যথেষ্ট কনফিডেন্ট। ছবির রেকর্ডিস্ট খুব সম্ভবত ছিলেন যতীন দত্ত। উনিও বললেন, ওঁর ভাল লেগেছে। গানের একটা জায়গায় ছিল ‘কুহু কুহু’। ওঁরা ডিরেক্টরকে বললেন, এই জায়গায় সন্ধ্যার গলার কাজটা দেখুন। কী করে বলছেন গানটা কিছু হয়নি? ডিরেক্টর শেষ পর্যন্ত মেনে নিলেন। বাকিটা ইতিহাস।”
উজ্জ্বল এক ঝাঁক পায়রা : কবি বিমল ঘোষের লেখা আর সলিল চৌধুরীর সুরে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া ‘উজ্জ্বল এক ঝাঁক পায়রা’ গানটি নন-ফিল্ম গানের জগতে একটি অবিস্মরণীয় গান। ১৯৫৩ প্রকাশ হওয়া এই গান আজকের শ্রোতাদেরও মন ছুঁয়ে যায়।
আয় বৃষ্টি ঝেঁপে : সলিল চৌধুরীর লেখা ও সুরে সন্ধ্যার গাওয়া ‘আয় বৃষ্টি ঝেঁপে’ গানটি ১৯৫৩ সালে প্রকাশ পায়।
ঘুম ঘুম চাঁদ : ১৯৫৬ সালে মুক্তি পায় উত্তম-সুচিত্রা অভিনীত ‘সবার উপরে’ সিনেমা। এতে ছবি বিশ্বাসের অভিনয়ের প্রশংসার পাশাপশি জনপ্রিয় হয়েছিল সুচিত্রার ঠোঁটে সন্ধ্যার গান ‘ঘুম ঘুম চাঁদ/ ঝিকিমিকি তারাৃ।”
তুমি না হয় রহিতে কাছে : ‘পথে হলো দেরি’ সিনেমায় সুচিত্রা সেনের কণ্ঠে ‘তুমি না হয় রহিতে কাছে’ গান শোনেনি এমন শ্রোতা বোধহয় কমই পাওয়া যাবে। গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের লেখা আর রবীন চট্টোপাধ্যায়ের সুরে গানটি তুমুল জনপ্রিয় পায়। অগ্রদূত পরিচালিত ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৫৭ সালে।
এ শুধু গানের দিন : পথে হল দেরি সিনেমার ‘এ শুধু গানের দিন’ গানটিও তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। এখনকার শিল্পীদের মধ্যে অনেকেই এখনও এই গানটি গেয়ে থাকেন। অনেকের মতে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের এই গানটি শীর্ষ জনপ্রিয় গান।
হয়ত কিছুই নাহি পাব : শিল্পী শ্যামল মিত্রের সুরে এবং গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের লেখা ‘হয়ত কিছুই নাহি পাব’ গানটি সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের একটি অবিস্মরণীয় গান। বাংলা আধুনিক এই গানটি তৎকালীন এইচএমভি থেকে ১৯৫৫ সালে প্রকাশ পায়।
মধু মালতী ডাকে আয় : ১৯৫৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘হারজিৎ’ সিনেমার ‘মধু মালতী ডাকে আয়’ এখনও শ্রোতাদের মুখে মুখে ফেরে। প্রণব রায়ের লেখা আর রবীন চট্টোপাধ্যায়ের সুরে গানটি বাঙালির প্রেমের গানে শীর্ষে অবস্থান করছে এখনও। গানটিতে ঠোঁট মিলিয়েছিলেন অভিনেত্রী অনিতা গুহ।
চন্দন পালঙ্কে শুয়ে : সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের জনপ্রিয় এই গানটি লিখেছেন তার স্বামী শ্যামল গুপ্ত।
মায়াবতী মেঘে এল তন্দ্রা : কিংবদন্তি সুরকার নচিকেতা ঘোষের সুরে শিবদাস বন্দোপাধ্যায়ের লেখা ‘মায়াবতী মেঘে এল তন্দ্রা’ সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া অন্যতম জনপ্রিয় গান। ১৯৬৩ সালে আধুনিক এই গানটি প্রকাশিত হয়। এই গানে রাধাকান্ত নন্দীর তবলার ছন্দের মূর্ছনা শ্রোতাদের হৃদয়ে দোলা তোলে।
তুমি তোমার গল্প বলো : গত শতাব্দীর শেষ দিকে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় গান গেয়েছেন কবীর সুমনের সুরে। কবীর সুমনের লেখা ১২টি গান রেকর্ড করেছিলেন সন্ধ্যা। তার সুরে গাওয়া সম্পর্কে সুমন বিভিন্ন অনুষ্নঠানে স্মৃতিচারণ করে বলেছেন, “সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় আমাকে বলেছিলেন, ‘সুমন আমি আর সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় থাকতে চাই না। আমার ডিপার্চার করিয়ে দাও’। এরকম কথা বলতে গেলে একজন সন্ধ্যা মুখার্জি হওয়া লাগে।” ১৯৯৭ সালে এইচএমভি থেকে বেরোয় কবীর সুমনের কথা ও সুরে ‘তুমি তোমার গল্প বল’। ১৯৯৯ সালে প্রকাশিত হয় ‘আসছে শতাব্দীতে’ গানটি।
প্রজাপতি মন আমার পাখায় পাখায় : নচিকেতা ঘোষের সুরে আর গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের কথায় ‘প্রজাপতি মন আমার’ গানটি এখনও শ্রোতাপ্রিয়। বাংলা আধুনিক এই গানটি ১৯৫৭ সালে এইচএমভি থেকে প্রকাশ পায়।
এই পথ যদি না শেষ হয় : ১৯৬১ সালে মুক্তিপাওয়া ‘সপ্তপদী’ সিনেমার ‘এই গানটি বাংলা গানের জগতে অন্যতম জনপ্রিয় একটি গান। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সুরে তার সঙ্গেই দ্বৈত এই গানটি বাঙালির হৃদয়ে এখনও দোলা দেয়।
রাগ ভাটিয়ারে খেয়াল : সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের গুরুদের মধ্যে যামিনী গঙ্গোপাধ্যায়, ওস্তাদ বড়ে গোলাম আলি, চিন্ময় লাহিড়ী, এ কানন, ডিটি যোগী, গণপত রাও, জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ, এবং সুরেশচন্দ্র চক্রবর্তী। বড়ে গোলাম আলির কাছে জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষের বাড়িতে নাড়া বেঁধে শিষ্যা হয়েছিলেন সন্ধ্যা।