নিজস্ব প্রতিবেদক : উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। গড় পাসের হার ৯৫.২৬। মোট জিপিএ ফাইভ পেয়েছেন ১ লাখ ৭৮ হাজার ৫২২ জন।
গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ১১টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ফল ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। ঘোষিত ফল অনুযায়ী, এইচএসসিতে পাসের হার ৯৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ। আর নয়টি সাধারণ শিক্ষাবোর্ড, মাদ্রাসা ও কারিগরি বোর্ড মিলে সার্বিক পাসের হার ৯৫ দশমিক ২৬ শতাংশ।
ফলাফলে দেখা গেছে, রাজশাহী বোর্ডে পাসের হার ৯৭.২৯ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩২ হাজার ৮০০ শিক্ষার্থী; বরিশাল বোর্ডে পাসের হার ৯৫.৭৬ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯ হাজার ৯৭১ শিক্ষার্থী; কুমিল্লা বোর্ডে পাসের হার ৯৭.৪৯ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৪ হাজার ১৫৩ শিক্ষার্থী; দিনাজপুরে বোর্ডে পাসের হার ৯২.৪৩ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৫ হাজার ৩৪৯ শিক্ষার্থী। এছাড়া চট্টগ্রাম বোর্ডে পাসের হার ৮৯.৩৯ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৩ হাজার ৭২০ শিক্ষার্থী; সিলেট বোর্ডে পাসের হার ৯৪.৮০ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪ হাজার ৭৩১ শিক্ষার্থী; যশোর বোর্ডে পাসের হার ৯৮.১১ শতাংশ।
করোনা মহামারির কারণে এবারের এইচএসসি পরীক্ষা অন্যান্য বছরের মতো হয়নি। পরীক্ষা হয় শুধু নৈর্বাচনিক বিষয়ে। আর আবশ্যিক বিষয়ে আগের পাবলিক পরীক্ষার সাবজেক্ট ম্যাপিং করে মূল্যায়নের মাধ্যমে নম্বর দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বাদ দেয়া হয় চতুর্থ বিষয়ের পরীক্ষাও।
এবার ২ হাজার ৬২১টি কেন্দ্রে ৯ হাজার ১৮৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১৩ লাখ ৯৯ হাজার ৬৯০ জন পরীক্ষার্থী ছিলেন। এর মধ্যে নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে পরীক্ষার্থী ছিলেন ১১ লাখ ৩৮ হাজার ১৭ জন। এদের মধ্যে ২ লাখ ৫৪ হাজার ৮৩০ জন বিজ্ঞান, ৬ লাখ ৫৬ হাজার ১৩২ জন মানবিক এবং ২ লাখ ২৭ হাজার ৫৫ জন বাণিজ্য বিভাগের। এ ছাড়া ১ লাখ ১৩ হাজার ১৪৪ জন মাদ্রাসা ও ১ লাখ ৪৮ হাজার ৫০৩ জন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের শিক্ষার্থী। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে আয়োজিত এইচএসসির ও সমমানের ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি এবং শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী (নওফেল)।
১৯৩৪ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সবাই পাস : উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে আজ। এ বছর দেশের ১৯৩৪ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষার্থী পাস করেছেন। শতভাগ পাস করায় সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে মাদ্রাসা বোর্ড। এ ছাড়া সাধারণ নয় শিক্ষা বোর্ডের ৭৩৬ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছেন, আর কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ১৯৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা শতভাগ পাস করেছেন। এ বছর নয়টি সাধারণ শিক্ষাবোর্ড, মাদ্রাসা ও কারিগরি বোর্ড মিলে গড় পাসের হার ৯৫ দশমিক ২৬ শতাংশ।
শিক্ষামন্ত্রীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, শতভাগ পাস প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সাধারণ শিক্ষা বোর্ডগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে ঢাকা বোর্ড। এ বোর্ডে ১৭৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সবাই পাস করেছে। এছাড়াও সিলেট বোর্ডে ৫৩, যশোর বোর্ডে ১১৬, চট্টগ্রাম বোর্ডে ১৬, রাজশাহী বোর্ডে ১৬২, কুমিল্লা বোর্ডে ৭৫, বরিশাল বোর্ডে ৫৬, ময়মনসিংহ বোর্ডে ২৯ ও দিনাজপুর বোর্ডে ৫৩টি শতভাগ পাস প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এবছর ১ লাখ ৮৯ হাজার ১৬৯ জন জিপিএ ৫ পেয়েছেন, যা উত্তীর্ণের মোট সংখ্যার ১৩.৭৯ শতাংশ। মাদ্রাসা বোর্ডে এক হাজার ৩টি এবং কারিগরি বোর্ডে ১৯৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সবাই পাস করেছে। এবার পরীক্ষার্থী ছিলেন ১৪ লাখ ৩ হাজার ২৮৮ জন। এর মধ্যে অংশগ্রহণ করেন ১৩ লাখ ৭১ হাজার ৬৮১ জন। আর উত্তীর্ণ হন ১৩ লাখ ৬ হাজার ৭১৮ জন। ২০২১ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় ৯ হাজার ১১১টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে। এ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৫টি প্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হতে পারেনি।
বোর্ড অনুযায়ী ফলাফল বিশ্লেষণ : উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাস করেছে ৯৫ দশমিক ২৬ শতাংশ শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক লাখ ৮৯ হাজার ১৬৯ জন জিপিএ ৫ পেয়েছে, যা উত্তীর্ণের মোট সংখ্যার ১৩ দশমিক ৭৯ শতাংশ। ঘোষিত ফল অনুযায়ী, এইচএসসিতে পাসের হার ৯৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ। আর নয়টি সাধারণ শিক্ষাবোর্ড, মাদ্রসা ও কারিগরি বোর্ড মিলে সার্বিক পাসের হার ৯৫ দশমিক ২৬ শতাংশ। ফলাফলে দেখা গেছে, রাজশাহী বোর্ডে পাসের হার ৯৭ দশমিক ২৯ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩২ হাজার ৮০০ শিক্ষার্থী; বরিশাল বোর্ডে পাসের হার ৯৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯ হাজার ৯৭১ শিক্ষার্থী; কুমিল্লা বোর্ডে পাসের হার ৯৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৪ হাজার ১৫৩ শিক্ষার্থী; দিনাজপুরে বোর্ডে পাসের হার ৯২ দশমিক ৪৩ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৫ হাজার ৩৪৯ শিক্ষার্থী।
এছাড়া চট্টগ্রাম বোর্ডে পাসের হার ৮৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৩ হাজার ৭২০ শিক্ষার্থী; সিলেট বোর্ডে পাসের হার ৯৪ দশমিক ৮০ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছে চার হাজার ৭৩১ শিক্ষার্থী; যশোর বোর্ডে পাসের হার ৯৮ দশমিক ১১ শতাংশ।
জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১ লাখ ৮৯ হাজার ১৬৯ জন : উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাস করেছেন ৯৫ দশমিক ২৬ শতাংশ শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে ১ লাখ ৮৯ হাজার ১৬৯ জন জিপিএ ৫ পেয়েছেন, যা উত্তীর্ণের মোট সংখ্যার ১৩.৭৯ শতাংশ। এদিকে মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডসহ সকল বোর্ডের ২০২১ সালের উচ্চ মাধ্যমিক, আলিম ও উচ্চ মাধ্যমিক (ভোকেশনাল/বিএম/ডিপ্লোমা-ইন-কমার্স) পরীক্ষায় পাসের হার ৩৫.২৬ শতাংশ। আর আলাদাভাবে, ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের এ পরীক্ষার পাসের হার ৯৫.৫৭ শতাংশ।
মেয়েরাই এগিয়ে : এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাসের হার ও জিপিএ-৫ পাওয়ার দিক দিয়ে এবারও এগিয়ে আছে ছাত্রীরা। ২০২১ সালের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ৬ লাখ ৫৬ হাজার ১৬৫ জন ছাত্রী, তাদের মধ্যে পাস করেছে ৬ লাখ ৩৩ হাজার ১৩৮ জন। আর পরীক্ষা দেওয়া ৭ লাখ ১৫ হাজার ৫১৬ জন ছাত্রের মধ্যে ৬ লাখ ৭৩ হাজার ৫৮০ জন উত্তীর্ণ হয়েছে। ছাত্রীদের পাসের হার যেখানে ৯৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ, সেখানে ছাত্রদের মধ্যে পাস করেছে ৯৪ দশমিক ১৪ শতাংশ। এ বছর ছাত্রীদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ২ হাজার ৪০৬ জন। আর ছাত্রদের মধ্যে ৮৬ হাজার ৭৬৩ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। অর্থাৎ ছাত্রদের চেয়ে ১৫ হাজার ৬৪৩ জন বেশি ছাত্রী পূর্ণাঙ্গ জিপিএ পেয়েছে এবার। শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি রোববার ঢাকার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে ২০২১ সালের উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফলের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় এবার সব মিলিয়ে ৯৫ দশমিক ২৬ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে, জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৮৯ হাজার ১৬৯ জন। গত বছর মহামারীর কারণে উচ্চ মাধ্যমিকে পরীক্ষা না নিয়ে জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষা মিলিয়ে মূল্যায়ন ফল প্রকাশ করা হয়। তাতে শতভাগ ছাত্রছাত্রী পাস করে।তবে ছাত্রদের তুলনায় ৪ হাজার ৮৬৯ জন বেশি ছাত্রী জিপিএ-৫ পায়।
২০২০ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ৮৩ হাজার ৩৩৮ জন ছাত্রী জিপিএ-৫ পেয়েছিল, যেখানে ছাত্রদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৭৮ হাজার ৪৬৯ জন।
এইচএসসির ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করা যাবে যেভাবে : এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় প্রত্যাশিত ফলাফল না পাওয়া শিক্ষার্থীরা আগামী ১৪ থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ফল পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করতে পারবে। ঢাকা শিক্ষা বোর্ড এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ফল পুনঃনিরীক্ষণের জন্য শুধুমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল অপারেটর টেলিটকের মাধ্যমে আবেদন করা যাবে। আবেদন করতে মোবাইলের ম্যাসেজ অপশনে গিয়ে জঝঈ লিখে স্পেস দিয়ে বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে বিষয় কোড লিখে পাঠাতে হবে ১৬২২২ নম্বরে। ফিরতি এসএমএসে আবেদন বাবদ কত টাকা কেটে নেওয়া হবে তা জানিয়ে একটি পিন নম্বর দেয়া হবে। পরে জঝঈ লিখে স্পেস দিয়ে ণঊঝ লিখে স্পেস দিয়ে পিন নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে যোগাযোগের জন্য একটি মোবাইল নম্বর লিখে ১৬২২২ নম্বরে এসএমএস পাঠাতে হবে। ফলাফল পুনঃনিরীক্ষণের ক্ষেত্রে একই এসএমএসের মাধ্যমে একাধিক বিষয়ের একাধিক পত্রের (যে সব বিষয়ের পরীক্ষা হয়েছে) জন্য আবেদন
একই বিষয়ের দুই পত্রের মধ্যে একটি কিংবা দুটির জন্যই আবেদন করতে পারবে শিক্ষার্থীরা। প্রতি পত্রের জন্য ১৫০ টাকা করে ফি দিতে হবে। ১৪ থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা ফল পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করতে পারবে বলে আগেই জানিয়েছিল শিক্ষাবোর্ডগুলো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে ২০২১ সালের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশ করবেন। পরে ঢাকার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে ফলাফলের বিস্তারিত তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। শিক্ষাবোর্ডের ওয়েবসাইটে এবং এসএমএসের মাধ্যমে ফলাফল জানা যাচ্ছে। এবার পাস করেছে ৯৫ দশমিক ২৬ শতাংশ শিক্ষার্থী, তাদের মধ্যে ১ লাখ ৮৯ হাজার ১৬৯ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে।