ঢাকা ০১:০৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

দুর্নীতির মূল উৎপাটনে হাইকোর্ট সাংবিধানিকভাবে বাধ্য’ : হাইকোট

  • আপডেট সময় : ০২:২২:৫৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২২
  • ১০৫ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : দুর্নীতির বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনার কারণেই দুর্নীতির মূল উৎপাটন করতে হাইকোর্ট সাংবিধানিকভাবে বাধ্য বলে হাজি সেলিমের মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে। হাইকোর্ট বলেছেন, দুর্নীতিতে অনেক বিশেষ ব্যক্তিবর্গ আসক্ত হয়ে পড়েছেন। জড়িতদের চিহ্নিত করে দুদক, বিচার বিভাগ, সরকারি-বেসরকারি ও আদালত সমন্বিতভাবে তাদের সতর্ক করে বার্তা দিতে হবে। যদিও এই কাজ কঠিন এবং ঝুঁকিপূর্ণ।
অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হাজী সেলিমকে আদালতের দেওয়া ১০ বছরের কারাদ-াদেশ বহাল রেখে পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপিতে এসব কথা বলেন হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের স্বাক্ষরের পর সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ৬৬ পৃষ্ঠার এই রায় প্রকাশ করা হয়।
প্রকাশিত রায়ের পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট বলেছেন, দুর্নীতি একটি মানসিক ব্যাধি, এর মূল উৎপাটন করতে হবে। দুদকের কাছে প্রত্যাশা, সাংবিধানিক পদধারী বা ননপদধারী যে-ই হোন, তাদের বিচারের আওতায় এনে দুর্নীতির মূল উৎপাটন করতে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। বঙ্গবন্ধুর দুর্নীতির বিরুদ্ধে নির্দেশনার কারণেই দুর্নীতির মূল উৎপাটন করতে আমরা সাংবিধানিকভাবে বাধ্য।
হাইকোর্ট বলেন, আমরা সচেতনভাবে পর্যবেক্ষণ করছি, দুদক এখন পর্যন্ত এই রকম হাজার দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিকে বিচারের আওতায় আনতে সক্ষম নয়। কিন্তু এর জন্য চেষ্টা থাকতে হবে। তবে দুর্ভাগ্য যে, এই জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের বিষয়ে দুদক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের ওপর নির্ভর করে আছে।’ ২০২০ সালের ৯ মার্চ অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় পুরান ঢাকার সাংসদ হাজী মোহাম্মদ সেলিমকে বিচারিক আদালতের দেওয়া ১০ বছরের কারাদ-াদেশ বহাল রাখেন হাইকোর্ট। তবে তিন বছরের দ- থেকে খালাস পান তিনি। পূর্নাঙ্গ রায়ে হাজী সেলিমকে ৩০ দিনের মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান জানান, বিচারিক আদালত রায়ের কপি পাওয়ার এক মাসের মধ্যে তাকে (হাজি সেলিম) আত্মসমর্পণ করতে হবে। আর ১০ বছরের কারাদ- বহাল থাকায় হাজী সেলিম সংসদ সদস্য পদ হারাবেন।
অন্যদিকে হাজী সেলিমের আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা বলেছেন, এই রায়ের বিরুদ্ধে তারা আপিল বিভাগে আবেদন করবেন। আর সংসদ সদস্য পদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার জাতীয় সংসদের স্পিকারের।
প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন এবং ৫৯ কোটি ৩৭ লাখ ২৬ হাজার ১৩২ টাকার তথ্য গোপনের অভিযোগে রাজধানীর লালবাগ থানায় মামলা করে দুদক। পরের বছর হাজী সেলিমকে দুদক আইনের দুটি ধারায় মোট ১৩ বছর কারাদ- দেন বিশেষ জজ আদালত।
২০০৯ সালে হাজী সেলিম বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে ২০১১ সালে ওই সাজা বাতিল করে রায় দেন হাইকোর্ট। এরপর হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করে দুদক। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালে হাইকোর্টের রায় বাতিল করে পুনরায় শুনানি করতে নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ।
আপিল বিভাগের নির্দেশ অনুযায়ী দুদক ২০২০ সালের মামলাটি শুনানির জন্য উদ্যোগ নেয়। শুনানিতে হাজী সেলিমের মামলার যাবতীয় নথি (এলসিআর) তলব করেন হাইকোর্ট। ওই নথি পাওয়ার পর ২০২০ সালের ৩১ জানুয়ারি মামলাটির পুনঃশুনানি শুরু হয়। এরপর গত বছরের ৯ মার্চ রায় ঘোষণা করেন আদালত। রায়ে আংশিক আপিল মঞ্জুর করে ১০ বছরের কারাদ-াদেশ বহাল রাখেন হাইকোর্ট।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

শাহবাগে একই মঞ্চে ৩০ রাজনৈতিক দলের নেতারা

দুর্নীতির মূল উৎপাটনে হাইকোর্ট সাংবিধানিকভাবে বাধ্য’ : হাইকোট

আপডেট সময় : ০২:২২:৫৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক : দুর্নীতির বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনার কারণেই দুর্নীতির মূল উৎপাটন করতে হাইকোর্ট সাংবিধানিকভাবে বাধ্য বলে হাজি সেলিমের মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে। হাইকোর্ট বলেছেন, দুর্নীতিতে অনেক বিশেষ ব্যক্তিবর্গ আসক্ত হয়ে পড়েছেন। জড়িতদের চিহ্নিত করে দুদক, বিচার বিভাগ, সরকারি-বেসরকারি ও আদালত সমন্বিতভাবে তাদের সতর্ক করে বার্তা দিতে হবে। যদিও এই কাজ কঠিন এবং ঝুঁকিপূর্ণ।
অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হাজী সেলিমকে আদালতের দেওয়া ১০ বছরের কারাদ-াদেশ বহাল রেখে পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপিতে এসব কথা বলেন হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের স্বাক্ষরের পর সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ৬৬ পৃষ্ঠার এই রায় প্রকাশ করা হয়।
প্রকাশিত রায়ের পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট বলেছেন, দুর্নীতি একটি মানসিক ব্যাধি, এর মূল উৎপাটন করতে হবে। দুদকের কাছে প্রত্যাশা, সাংবিধানিক পদধারী বা ননপদধারী যে-ই হোন, তাদের বিচারের আওতায় এনে দুর্নীতির মূল উৎপাটন করতে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। বঙ্গবন্ধুর দুর্নীতির বিরুদ্ধে নির্দেশনার কারণেই দুর্নীতির মূল উৎপাটন করতে আমরা সাংবিধানিকভাবে বাধ্য।
হাইকোর্ট বলেন, আমরা সচেতনভাবে পর্যবেক্ষণ করছি, দুদক এখন পর্যন্ত এই রকম হাজার দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিকে বিচারের আওতায় আনতে সক্ষম নয়। কিন্তু এর জন্য চেষ্টা থাকতে হবে। তবে দুর্ভাগ্য যে, এই জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের বিষয়ে দুদক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের ওপর নির্ভর করে আছে।’ ২০২০ সালের ৯ মার্চ অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় পুরান ঢাকার সাংসদ হাজী মোহাম্মদ সেলিমকে বিচারিক আদালতের দেওয়া ১০ বছরের কারাদ-াদেশ বহাল রাখেন হাইকোর্ট। তবে তিন বছরের দ- থেকে খালাস পান তিনি। পূর্নাঙ্গ রায়ে হাজী সেলিমকে ৩০ দিনের মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান জানান, বিচারিক আদালত রায়ের কপি পাওয়ার এক মাসের মধ্যে তাকে (হাজি সেলিম) আত্মসমর্পণ করতে হবে। আর ১০ বছরের কারাদ- বহাল থাকায় হাজী সেলিম সংসদ সদস্য পদ হারাবেন।
অন্যদিকে হাজী সেলিমের আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা বলেছেন, এই রায়ের বিরুদ্ধে তারা আপিল বিভাগে আবেদন করবেন। আর সংসদ সদস্য পদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার জাতীয় সংসদের স্পিকারের।
প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন এবং ৫৯ কোটি ৩৭ লাখ ২৬ হাজার ১৩২ টাকার তথ্য গোপনের অভিযোগে রাজধানীর লালবাগ থানায় মামলা করে দুদক। পরের বছর হাজী সেলিমকে দুদক আইনের দুটি ধারায় মোট ১৩ বছর কারাদ- দেন বিশেষ জজ আদালত।
২০০৯ সালে হাজী সেলিম বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে ২০১১ সালে ওই সাজা বাতিল করে রায় দেন হাইকোর্ট। এরপর হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করে দুদক। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালে হাইকোর্টের রায় বাতিল করে পুনরায় শুনানি করতে নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ।
আপিল বিভাগের নির্দেশ অনুযায়ী দুদক ২০২০ সালের মামলাটি শুনানির জন্য উদ্যোগ নেয়। শুনানিতে হাজী সেলিমের মামলার যাবতীয় নথি (এলসিআর) তলব করেন হাইকোর্ট। ওই নথি পাওয়ার পর ২০২০ সালের ৩১ জানুয়ারি মামলাটির পুনঃশুনানি শুরু হয়। এরপর গত বছরের ৯ মার্চ রায় ঘোষণা করেন আদালত। রায়ে আংশিক আপিল মঞ্জুর করে ১০ বছরের কারাদ-াদেশ বহাল রাখেন হাইকোর্ট।