নিজস্ব প্রতিবেদক : গতকাল মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৪৩ জন। যা কিনা গত পাঁচ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। স্বাস্থ্য অধিদফতর জানাচ্ছে, ৪৩ জনকে নিয়ে দেশে করোনাতে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত মোট মারা গেছেন ২৮ হাজার ৬৭০ জন। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে ঢাকা বিভাগে। মারা যাওয়া ৪৩ জনের মধ্যে ঢাকা বিভাগের আছেন ১৫ জন। চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ জন, খুলনা বিভাগের ১৩, রাজশাহীর দুই এবং রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের একজন করে মারা গেছেন।
তাদের নিয়ে দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ঢাকা বিভাগে মোট মারা গেছেন ১২ হাজার ৫৬৯ জন। চট্টগ্রাম বিভাগে পাঁচ হাজার ৭৯১ জন, রাজশাহী বিভাগে দুই হাজার ১০৩ জন, খুলনা বিভাগে তিন হাজার ৬৭৮ জন, বরিশাল বিভাগে ৯৬৩ জন, সিলেট বিভাগে এক হাজার ৩০১ জন, রংপুর বিভাগে এক হাজার ৩৯২ জন ও ময়মনসিংহ বিভাগে মারা গেছেন ৮৭৩ জন। অধিদফতর জানাচ্ছে, ৪৩ জনের মধ্যে সরকারি হাসপাতালে মারা গেছেন ৩৫ জন। বেসরকারি হাসপাতালে সাতজন ও বাড়িতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর আরও জানাচ্ছে, মোট মারা যাওয়া ২৮ হাজার ৬৭০ জনের মধ্যে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ২৪ হাজার ৩১৯ জন, বেসরকারি হাসপাতালে তিন হাজার ৫৩৬ জন, বাড়িতে ৭৮০ জন ও হাসপাতালে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে ৩৫ জনকে।
দেশে একদিনে ৪৩ মৃত্যু, শনাক্তের হার ২০.০৩ : দেশে করোনার সংক্রমণে গত ২৪ ঘণ্টায় (সোমবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) আরও ৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর ৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ৮ হাজার ৩৫৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে টানা পাঁচ দিন করোনা শনাক্তের সংখ্যা ১০ হাজারের নিচে থাকল। এর আগে গত সোমবার ৯ হাজার ৩৬৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল। করোনায় মৃত্যু হয়েছিল ৩৮ জনের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৪১ হাজার ৬৯৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ২০ দশমিক শূন্য ৩। এ নিয়ে গত পাঁচ দিন পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ২৫-এর নিচে থাকল। গতকাল এ হার ছিল ২১ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। দেশে করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতি প্রায় সাড়ে তিন মাস নিয়ন্ত্রণে থাকার পর গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে রোগী বাড়তে শুরু করে। ৬ জানুয়ারি দৈনিক রোগী শনাক্ত হাজার ছাড়ায়। এর দুই সপ্তাহের মাথায় ২০ জানুয়ারি দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে যায়। ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তা ১০ হাজারের ওপরে ছিল।
গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ৪৩ জনের মধ্যে ১৫ জনই ঢাকা বিভাগের। খুলনা বিভাগের ১৩ জন, চট্টগ্রামে ১১, রাজশাহী বিভাগে ২ এবং রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগে ১ জন করে মারা গেছেন। বরিশাল ও সিলেট বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় কারও মৃত্যু হয়নি। করোনায় মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে ২৬ জন পুরুষ, ১৭ জন নারী।
শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সের মানুষেরই মৃত্যু হচ্ছে করোনায়। তবে বয়স্ক, হৃদ্রোগ, কিডনি রোগ, ডায়াবেটিসসহ অন্যান্য রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের করোনায় মৃত্যুঝুঁকি বেশি। দেশে এখন পর্যন্ত করোনায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে প্রায় ৫৬ শতাংশের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি। সংক্রমণের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দেশে মোট ১৮ লাখ ৭৯ হাজার ২৫৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১৬ লাখ ২২ হাজার ৮৫৭ জন। মৃত্যু হয়েছে ২৮ হাজার ৬৭০ জনের। ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ১০ হাজার ৮০০ জন। ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনার সংক্রমণ শনাক্তের ঘোষণা দেয় সরকার। এরপর দুই বছর ধরে চলা এই মহামারির সংক্রমণের চিত্রে কয়েক দফা ওঠানামা দেখা গেছে। এর মধ্যে পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ আকার ধারণ করেছিল গত বছরের জুন-জুলাইয়ে, করোনার ডেলটা ধরনের দাপটের সময়। গত বছরের আগস্টে সংক্রমণ কমতে শুরু করে। একপর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে বিদায়ী বছরের শেষ দিকে আবার সংক্রমণে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা দেয়। চলতি মাসের মাঝামাঝি পরিস্থিতি দ্রুত বদলাতে শুরু করে।
করোনায় ২৮ হাজার মৃত্যুর ১২ হাজারই ঢাকায়
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ