ঢাকা ০২:০১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা ও চ্যালেঞ্জ

  • আপডেট সময় : ১০:১৬:৫১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ ফেব্রুয়ারী ২০২২
  • ৮৩ বার পড়া হয়েছে

ক্যাম্পাস ও ক্যারিয়ার ডেস্ক : দেশের বেশিরভাগ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার চর্চা রয়েছে। কিন্তু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এর সংখ্যা নগণ্য। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাংবাদিক সমিতি প্রতিষ্ঠা করাই বড় চ্যালেঞ্জ৷ প্রতিষ্ঠা লাভ করলেও যার প্রতিবন্ধকতার শেষ নেই।
একজন শিক্ষার্থী সাংবাদিকতার প্রতি ভালোবাসা থেকেই ক্যাম্পাস সাংবাদিকতায় যুক্ত হন। অনেকেরই থাকে না কোনো প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান। শিক্ষানবিশ পর্যায়ে আনাড়ি সাংবাদিকতায় ঝুলিতে তেমন কিছুই থাকে না। এত কষ্ট করে সাংবাদিকতার পাঠ নিয়ে ক্যাম্পাস জীবন শেষে অনেকেরই ভাগ্যে জোটে না মূলধারার গণমাধ্যমে কাজের সুযোগ। ক্যাম্পাস সাংবাদিকতায় যেমনি আনন্দ আছে, পাশাপাশি আছে অনেক কষ্ট ও শঙ্কা। এসব মাড়িয়ে ক্যাম্পাসে যারা সাংবাদিকতা করেন, তাদের হয় এক বিচিত্র অভিজ্ঞতা।
এসব সাংবাদিকরা যেমন ক্যাম্পাসের উন্নতি-অগ্রগতি তুলে ধরেন, ঠিক তেমনি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতিকেও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেন। এতেই আরম্ভ হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের যত বিপত্তি। এসব খবর বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য মঙ্গলকর হলেও নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তির জন্য অমঙ্গলজনক। এভাবে ব্যক্তি স্বার্থে বলি হয় অনেক ক্যাম্পাস সাংবাদিক। পড়ুয়া জীবনে নেমে আসে নানা জটিলতা।
অজান্তেই তৈরি হয় একাডেমিক রেজাল্ট বিপর্যয়ের শঙ্কা। ফ্যাকাল্টি মেম্বারদের দ্বারা করানো হয় অনৈতিক কার্যকলাপ। এতেও দমানো না গেলে করা হয় শোকজ কিংবা বহিষ্কার। হেনস্তার ঘটনাও কম নয়। শিক্ষক-শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মকর্তা, শিক্ষক-কর্মকর্তার কোন্দলেও বিপাকে পড়তে হয় সাংবাদিকদের।
দেশের বেশকিছু স্বনামধন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিক সমিতির অনুমোদন দিতেও নারাজ প্রাতিষ্ঠানিক দায়িত্বশীলরা। ক্যাম্পাস ভবনে সাংবাদিক সমিতি কার্যালয় পেতেও পোহাতে হয় নানা ভোগান্তি। কাঙ্ক্ষিত কার্যালয় বুঝে পেতে সময় লাগে মাসের পর মাস, কখনো বছরের পর বছর। আশার কথা; প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস আকারে ছোট হলেও কাজের অঙ্কে কম নয়। স্বল্প সময়ে চেনা যায়, অচেনা মুখগুলোও। যার সুবাদে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পাওয়া যায় সহজেই।
প্রায় ক্যাম্পাসে সাংবাদিকতার অনুমোদন দিলেও দেওয়া হয় না বাৎসরিক কোনো অর্থ বরাদ্দ। জাতীয় পত্রিকায় ছাপানো এক-একটি প্রতিবেদন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলে। যা ক্যাম্পাস সাংবাদিকরা প্রতিনিয়ত করে যাচ্ছেন। একটি সংগঠন পরিচালনায় (ফোনে যোগাযোগ-পরিবহন, অফিসের সাজ-সজ্জা, কর্মশালা, নাস্তা) কিংবা প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মতো আয়োজনে অনেক অর্থের প্রয়োজন হয়। যথাযথ অর্থ বরাদ্দ না থাকায় অধিকাংশ সমিতির সাংগঠনিক কার্যক্রমে বিপর্যয় ঘটে। কিছু সংগঠন সদস্যদের নিজস্ব অর্থায়নে কার্যক্রম সচল রাখে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সাংবাদিকতার অদ্বিতীয় প্রতিবন্ধকতা হলো পত্রিকা সংকট। অলিখিত কারণে জাতীয় দৈনিক পত্রিকাগুলোতে বেসরকারি বিদ্যাপীঠের প্রতিনিধি নেয় না৷ এতে মূলধারার সাংবাদিকতা থেকে ছিটকে পড়েন এই সাংবাদিকরা। মেধাবী-প্রতিভাবানরা মেধা যাচাইয়ের সুযোগটুকুও পায় না৷ প্রশ্ন রাখতে চাই—বেসরকারি পর্যায়ের ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের যতœ নেবে কে?
কয়েকটি অনলাইন পোর্টাল ও টিভি চ্যানেল কাজের সুযোগ দেয়। কিন্তু সেখানেও তৈরি হয় পাবলিক-প্রাইভেট বৈষম্য। পাবলিকের প্রতিনিধিরা পায় বিশেষ ফায়দা, দেওয়া হয় বেতন-ভাতা। গণমাধ্যমের দায়িত্বশীলরা যদি এদিকে নজর দেন, তবেই এর উত্তরণ সম্ভব। একইসঙ্গে প্রয়োজন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আন্তরিক সহযোগিতা।
কতিপয় সমিতির ভেতরেও তৈরি হয় স্বজনপ্রীতি এবং ব্যক্তিকেন্দ্রিক শিষ্টাচার৷ প্রতিষ্ঠাকাল সীমিত সময়ের হওয়ায়, মানা হয় না যথাযথ নিয়মনীতি। জ্যেষ্ঠ সদস্যরা কার্যক্রম পরিচালনা করেন অনেকটা খেয়ালখুশি মতো। পত্রিকা বা দায়িত্ব বণ্টনে কিংবা আনুষাঙ্গিক কার্যক্রমে দেখা মেলে বিভেদ। এতে করে অনেকে সমিতি থেকে হারিয়ে যান।
বারবার বাধার সম্মুখীন হলেও সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলতে গিয়ে একসময় এদের মধ্য থেকেও দেশে খ্যাতনামা সাংবাদিক তৈরি হয়। ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা আগ্রহী ও পরিশ্রমীদের জন্য এক অপার সম্ভাবনার নাম। নিজেকে নানা দিকে প্রস্তুত করার হাতিয়ার।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে প্রথম প্রতিষ্ঠা লাভ করে গণ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (গবিসাস)। ২০১৩ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী আসিফ আল আজাদের হাত ধরে যার যাত্রা শুরু হয়। নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে ১০ম বর্ষে পা রাখতে চলছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে প্রথম সাংবাদিক সমিতি গবিসাস।
লেখক: শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমকর্মী, গণ বিশ্ববিদ্যালয়, সাভার।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা ও চ্যালেঞ্জ

আপডেট সময় : ১০:১৬:৫১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ ফেব্রুয়ারী ২০২২

ক্যাম্পাস ও ক্যারিয়ার ডেস্ক : দেশের বেশিরভাগ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার চর্চা রয়েছে। কিন্তু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এর সংখ্যা নগণ্য। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাংবাদিক সমিতি প্রতিষ্ঠা করাই বড় চ্যালেঞ্জ৷ প্রতিষ্ঠা লাভ করলেও যার প্রতিবন্ধকতার শেষ নেই।
একজন শিক্ষার্থী সাংবাদিকতার প্রতি ভালোবাসা থেকেই ক্যাম্পাস সাংবাদিকতায় যুক্ত হন। অনেকেরই থাকে না কোনো প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান। শিক্ষানবিশ পর্যায়ে আনাড়ি সাংবাদিকতায় ঝুলিতে তেমন কিছুই থাকে না। এত কষ্ট করে সাংবাদিকতার পাঠ নিয়ে ক্যাম্পাস জীবন শেষে অনেকেরই ভাগ্যে জোটে না মূলধারার গণমাধ্যমে কাজের সুযোগ। ক্যাম্পাস সাংবাদিকতায় যেমনি আনন্দ আছে, পাশাপাশি আছে অনেক কষ্ট ও শঙ্কা। এসব মাড়িয়ে ক্যাম্পাসে যারা সাংবাদিকতা করেন, তাদের হয় এক বিচিত্র অভিজ্ঞতা।
এসব সাংবাদিকরা যেমন ক্যাম্পাসের উন্নতি-অগ্রগতি তুলে ধরেন, ঠিক তেমনি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতিকেও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেন। এতেই আরম্ভ হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের যত বিপত্তি। এসব খবর বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য মঙ্গলকর হলেও নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তির জন্য অমঙ্গলজনক। এভাবে ব্যক্তি স্বার্থে বলি হয় অনেক ক্যাম্পাস সাংবাদিক। পড়ুয়া জীবনে নেমে আসে নানা জটিলতা।
অজান্তেই তৈরি হয় একাডেমিক রেজাল্ট বিপর্যয়ের শঙ্কা। ফ্যাকাল্টি মেম্বারদের দ্বারা করানো হয় অনৈতিক কার্যকলাপ। এতেও দমানো না গেলে করা হয় শোকজ কিংবা বহিষ্কার। হেনস্তার ঘটনাও কম নয়। শিক্ষক-শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মকর্তা, শিক্ষক-কর্মকর্তার কোন্দলেও বিপাকে পড়তে হয় সাংবাদিকদের।
দেশের বেশকিছু স্বনামধন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিক সমিতির অনুমোদন দিতেও নারাজ প্রাতিষ্ঠানিক দায়িত্বশীলরা। ক্যাম্পাস ভবনে সাংবাদিক সমিতি কার্যালয় পেতেও পোহাতে হয় নানা ভোগান্তি। কাঙ্ক্ষিত কার্যালয় বুঝে পেতে সময় লাগে মাসের পর মাস, কখনো বছরের পর বছর। আশার কথা; প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস আকারে ছোট হলেও কাজের অঙ্কে কম নয়। স্বল্প সময়ে চেনা যায়, অচেনা মুখগুলোও। যার সুবাদে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পাওয়া যায় সহজেই।
প্রায় ক্যাম্পাসে সাংবাদিকতার অনুমোদন দিলেও দেওয়া হয় না বাৎসরিক কোনো অর্থ বরাদ্দ। জাতীয় পত্রিকায় ছাপানো এক-একটি প্রতিবেদন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলে। যা ক্যাম্পাস সাংবাদিকরা প্রতিনিয়ত করে যাচ্ছেন। একটি সংগঠন পরিচালনায় (ফোনে যোগাযোগ-পরিবহন, অফিসের সাজ-সজ্জা, কর্মশালা, নাস্তা) কিংবা প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মতো আয়োজনে অনেক অর্থের প্রয়োজন হয়। যথাযথ অর্থ বরাদ্দ না থাকায় অধিকাংশ সমিতির সাংগঠনিক কার্যক্রমে বিপর্যয় ঘটে। কিছু সংগঠন সদস্যদের নিজস্ব অর্থায়নে কার্যক্রম সচল রাখে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সাংবাদিকতার অদ্বিতীয় প্রতিবন্ধকতা হলো পত্রিকা সংকট। অলিখিত কারণে জাতীয় দৈনিক পত্রিকাগুলোতে বেসরকারি বিদ্যাপীঠের প্রতিনিধি নেয় না৷ এতে মূলধারার সাংবাদিকতা থেকে ছিটকে পড়েন এই সাংবাদিকরা। মেধাবী-প্রতিভাবানরা মেধা যাচাইয়ের সুযোগটুকুও পায় না৷ প্রশ্ন রাখতে চাই—বেসরকারি পর্যায়ের ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের যতœ নেবে কে?
কয়েকটি অনলাইন পোর্টাল ও টিভি চ্যানেল কাজের সুযোগ দেয়। কিন্তু সেখানেও তৈরি হয় পাবলিক-প্রাইভেট বৈষম্য। পাবলিকের প্রতিনিধিরা পায় বিশেষ ফায়দা, দেওয়া হয় বেতন-ভাতা। গণমাধ্যমের দায়িত্বশীলরা যদি এদিকে নজর দেন, তবেই এর উত্তরণ সম্ভব। একইসঙ্গে প্রয়োজন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আন্তরিক সহযোগিতা।
কতিপয় সমিতির ভেতরেও তৈরি হয় স্বজনপ্রীতি এবং ব্যক্তিকেন্দ্রিক শিষ্টাচার৷ প্রতিষ্ঠাকাল সীমিত সময়ের হওয়ায়, মানা হয় না যথাযথ নিয়মনীতি। জ্যেষ্ঠ সদস্যরা কার্যক্রম পরিচালনা করেন অনেকটা খেয়ালখুশি মতো। পত্রিকা বা দায়িত্ব বণ্টনে কিংবা আনুষাঙ্গিক কার্যক্রমে দেখা মেলে বিভেদ। এতে করে অনেকে সমিতি থেকে হারিয়ে যান।
বারবার বাধার সম্মুখীন হলেও সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলতে গিয়ে একসময় এদের মধ্য থেকেও দেশে খ্যাতনামা সাংবাদিক তৈরি হয়। ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা আগ্রহী ও পরিশ্রমীদের জন্য এক অপার সম্ভাবনার নাম। নিজেকে নানা দিকে প্রস্তুত করার হাতিয়ার।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে প্রথম প্রতিষ্ঠা লাভ করে গণ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (গবিসাস)। ২০১৩ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী আসিফ আল আজাদের হাত ধরে যার যাত্রা শুরু হয়। নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে ১০ম বর্ষে পা রাখতে চলছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে প্রথম সাংবাদিক সমিতি গবিসাস।
লেখক: শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমকর্মী, গণ বিশ্ববিদ্যালয়, সাভার।