ঢাকা ০৪:৫৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ইবির সেই হাতিরঝিল এখন পচা বিল

  • আপডেট সময় : ১০:১০:০৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ ফেব্রুয়ারী ২০২২
  • ১১৪ বার পড়া হয়েছে

ক্যাম্পাস ও ক্যারিয়ার ডেস্ক : ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন কিন্তু মফিজ লেকে যাননি এমন শিক্ষার্থী খুঁজে পাওয়া যাবে না। ইবি ক্যাম্পাসের পশ্চিম পাশে প্রকৌশল ভবন এবং মেডিক্যালের পেছনে মফিজ লেক। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা লগ্নে এই লেকের নাম ইবি লেক থাকলেও পরবর্তী সময়ে এটি মফিজ লেক নামে পরিচিতি পায়। নাম পরিবর্তনের পেছনে অনেক জনশ্রুতিও শোনা যায়।
কয়েকবছর আগে আকিজ গ্রুপের অর্থায়নে লেকের উপর একটি দৃষ্টিনন্দন ব্রিজ, উত্তর-পশ্চিম পাশে একটি ওয়াচ টাওয়ার এবং লেকের পাশে বসার স্থান তৈরি করা হয়েছিল৷ এবং লেকটি পরিষ্কার করা হয়েছিল। ব্রিজে লাইটিংও করা হয়েছিল। যে কারণে সন্ধ্যার পর লেকের সৌন্দর্য আরও বেড়ে যেতো। তখন লেকের পরিষ্কার পানি, আশেপাশের পরিবেশ এবং রাতের সৌন্দর্য দেখে অনেকেই এই লেককে ইবির হাতিরঝিল নামে অবিহিত করেছে। বাস্তবেই রাতের বেলা লেকের সৌন্দর্য দেখে মনে হতো যেন হাতিরঝিলে অবস্থান করা হচ্ছে।
শীতকালে অতিথি পাখির আগমনে লেকের সৌন্দর্য আরও বেড়ে যেতো। পাখির কিচিরমিচিরে মুখরিত থাকতো লেকের আশপাশ। শিক্ষার্থীদের মূল আড্ডাস্থল ছিল লেক। প্রায়ই চড়ুইভাতি এবং পিকনিক হতো এখানে৷
দেখতে দেখতে সময়ের পরিক্রমায় ইবির সেই হাতিরঝিল এখন যেন পচা বিলে পরিণত হয়েছে। কচুরিপানায় ছেয়ে গেছে পুরো লেক। পরিষ্কার পানিতে মাছের সাঁতার কেটে বেড়ানোর মনোমুগ্ধকর দৃশ্য এখন আর দেখা যায় না কচুরিপানার জন্য। লেকের আশপাশও ঝোপঝাড়ে ভরে গেছে। সেখানে আস্তানা গেড়েছে বিষাক্ত সাপ। এসব কারণে লেকে এখন আর আগের সেই পরিবেশ নেই। এখন শিক্ষার্থীরা খুব একটা আসেন না, গানের আসরও খুব একটা বসতে দেখা যায় না। আগের মতো এখানে খুব একটা চড়ুইভাতি এবং পিকনিকও হয় না। বিশেষ করে সাপের ভয়ে।
করোনার কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ক্যাম্পাসে এসে লেকের এই অবস্থা দেখে শিক্ষার্থীরা প্রচন্ড হতাশ। শীতকালে এই লেকে প্রচুর অতিথি পাখির আগমন ঘটতো। কিন্তু এখন আগের চেয়ে কম পাখি আসে আর আসলেও চলে যায়। কারণ পাখিরা আসলে মফিজ লেকেই থাকতো। কিন্তু এখন কচুরিপানায় পরিপূর্ণ লেকে তাদের থাকার মতো কোনো অবস্থা নেই।
প্রায় চার মাস হয়ে গেলো বিশ্ববিদ্যালয় খোলার। কিন্তু এখনো একই অবস্থায় পড়ে আছে লেকটি। অবহেলা এবং অব্যবস্থাপনার কারণে এক সময়ের দৃষ্টিনন্দন লেকের অবস্থা এমন হয়ে আছে। মফিজ লেক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটা আবেগের জায়গা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত লেকটি পরিষ্কার করে পূর্বের মতো দৃষ্টিনন্দন করা, বলছেন শিক্ষার্থীরা।
এবিষয়ে বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী অনি আতিকুর রহমান বলেন, একসময় লেকের সৌন্দর্য সবাইকে বিমোহিত করতো। আমরা মজা করে ইবির হাতিরঝিল ডাকতাম। মজার ছলে বললেও কথাটা সত্যি। রাতের লাল-নীল আলোয় সাজানো ব্রিজ, পরিষ্কার পানিতে মাছের সাঁতার কাটা, শীতের সময়ে অতিথি পাখির কিচিরমিচির শব্দ এসবে বিষাদগ্রস্ত মনও ভালো হয়ে যেতো। কিন্তু লেকের সেই অবস্থা এখন আর নেই। অবহেলা এবং অব্যবস্থাপনার কারণে একসময়ের দৃষ্টিনন্দন লেকের অবস্থা করুণ হয়ে গেছে। কচুরিপানায় ভরে গেছে লেক, ঝোপঝাড়ে ছেয়ে গেছে আশপাশ। কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানাই, লেকটির সঠিক পরিচর্যা করে শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দিন।
ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী মো. আশিকুর রহমান বলেন, মনোরম পরিবেশে নয়নাভিরাম দৃশ্য যেকোনো মানুষের অশান্ত মনকে শান্ত করে দেয়। চারদিকে ঝিরিঝিরি বাতাস আর ঝিলমিল স্বচ্ছ পানির নীলাভ আভায় রীতিমতো মুগ্ধ হয়ে যায় সবাই। ঠিক তেমনই একটি জায়গা হচ্ছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন লেক। কিন্তু অযতœ-অবহেলায় গরীবের হাতিরঝিল খ্যাত লেকটি এখন মৃতপ্রায়।
লেকের স্বচ্ছ পানি তো দূরের কথা, পানি পাওয়াই দুষ্কর। এ ছাড়া, লেকের ধারে অসংখ্য গাছ কাটার ফলে পরিবেশ বিপর্যয় হয়েছে। যেটা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের হতাশ করেছে। লেকে স্বচ্ছ পানি সরবরাহ করার পাশাপাশি পরিচ্ছন্নতা বৃদ্ধি করে মনোরম পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি, বলেন তিনি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী মুন্সী শহীদ উদ্দীন মো. তারেক বলেন, লেকের সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য টেন্ডার আহ্বানের সব প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন করেছি। শিগগিরই আমরা কাজ শুরু করবো এবং লেকের আগের সৌন্দর্য ফিরে আসবে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ফরিদপুর-৪ আসন থেকে ভাঙ্গাকে নিয়ে আলাদা আসন করতে হাইকোর্টের রুল

ইবির সেই হাতিরঝিল এখন পচা বিল

আপডেট সময় : ১০:১০:০৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ ফেব্রুয়ারী ২০২২

ক্যাম্পাস ও ক্যারিয়ার ডেস্ক : ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন কিন্তু মফিজ লেকে যাননি এমন শিক্ষার্থী খুঁজে পাওয়া যাবে না। ইবি ক্যাম্পাসের পশ্চিম পাশে প্রকৌশল ভবন এবং মেডিক্যালের পেছনে মফিজ লেক। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা লগ্নে এই লেকের নাম ইবি লেক থাকলেও পরবর্তী সময়ে এটি মফিজ লেক নামে পরিচিতি পায়। নাম পরিবর্তনের পেছনে অনেক জনশ্রুতিও শোনা যায়।
কয়েকবছর আগে আকিজ গ্রুপের অর্থায়নে লেকের উপর একটি দৃষ্টিনন্দন ব্রিজ, উত্তর-পশ্চিম পাশে একটি ওয়াচ টাওয়ার এবং লেকের পাশে বসার স্থান তৈরি করা হয়েছিল৷ এবং লেকটি পরিষ্কার করা হয়েছিল। ব্রিজে লাইটিংও করা হয়েছিল। যে কারণে সন্ধ্যার পর লেকের সৌন্দর্য আরও বেড়ে যেতো। তখন লেকের পরিষ্কার পানি, আশেপাশের পরিবেশ এবং রাতের সৌন্দর্য দেখে অনেকেই এই লেককে ইবির হাতিরঝিল নামে অবিহিত করেছে। বাস্তবেই রাতের বেলা লেকের সৌন্দর্য দেখে মনে হতো যেন হাতিরঝিলে অবস্থান করা হচ্ছে।
শীতকালে অতিথি পাখির আগমনে লেকের সৌন্দর্য আরও বেড়ে যেতো। পাখির কিচিরমিচিরে মুখরিত থাকতো লেকের আশপাশ। শিক্ষার্থীদের মূল আড্ডাস্থল ছিল লেক। প্রায়ই চড়ুইভাতি এবং পিকনিক হতো এখানে৷
দেখতে দেখতে সময়ের পরিক্রমায় ইবির সেই হাতিরঝিল এখন যেন পচা বিলে পরিণত হয়েছে। কচুরিপানায় ছেয়ে গেছে পুরো লেক। পরিষ্কার পানিতে মাছের সাঁতার কেটে বেড়ানোর মনোমুগ্ধকর দৃশ্য এখন আর দেখা যায় না কচুরিপানার জন্য। লেকের আশপাশও ঝোপঝাড়ে ভরে গেছে। সেখানে আস্তানা গেড়েছে বিষাক্ত সাপ। এসব কারণে লেকে এখন আর আগের সেই পরিবেশ নেই। এখন শিক্ষার্থীরা খুব একটা আসেন না, গানের আসরও খুব একটা বসতে দেখা যায় না। আগের মতো এখানে খুব একটা চড়ুইভাতি এবং পিকনিকও হয় না। বিশেষ করে সাপের ভয়ে।
করোনার কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ক্যাম্পাসে এসে লেকের এই অবস্থা দেখে শিক্ষার্থীরা প্রচন্ড হতাশ। শীতকালে এই লেকে প্রচুর অতিথি পাখির আগমন ঘটতো। কিন্তু এখন আগের চেয়ে কম পাখি আসে আর আসলেও চলে যায়। কারণ পাখিরা আসলে মফিজ লেকেই থাকতো। কিন্তু এখন কচুরিপানায় পরিপূর্ণ লেকে তাদের থাকার মতো কোনো অবস্থা নেই।
প্রায় চার মাস হয়ে গেলো বিশ্ববিদ্যালয় খোলার। কিন্তু এখনো একই অবস্থায় পড়ে আছে লেকটি। অবহেলা এবং অব্যবস্থাপনার কারণে এক সময়ের দৃষ্টিনন্দন লেকের অবস্থা এমন হয়ে আছে। মফিজ লেক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটা আবেগের জায়গা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত লেকটি পরিষ্কার করে পূর্বের মতো দৃষ্টিনন্দন করা, বলছেন শিক্ষার্থীরা।
এবিষয়ে বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী অনি আতিকুর রহমান বলেন, একসময় লেকের সৌন্দর্য সবাইকে বিমোহিত করতো। আমরা মজা করে ইবির হাতিরঝিল ডাকতাম। মজার ছলে বললেও কথাটা সত্যি। রাতের লাল-নীল আলোয় সাজানো ব্রিজ, পরিষ্কার পানিতে মাছের সাঁতার কাটা, শীতের সময়ে অতিথি পাখির কিচিরমিচির শব্দ এসবে বিষাদগ্রস্ত মনও ভালো হয়ে যেতো। কিন্তু লেকের সেই অবস্থা এখন আর নেই। অবহেলা এবং অব্যবস্থাপনার কারণে একসময়ের দৃষ্টিনন্দন লেকের অবস্থা করুণ হয়ে গেছে। কচুরিপানায় ভরে গেছে লেক, ঝোপঝাড়ে ছেয়ে গেছে আশপাশ। কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানাই, লেকটির সঠিক পরিচর্যা করে শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দিন।
ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী মো. আশিকুর রহমান বলেন, মনোরম পরিবেশে নয়নাভিরাম দৃশ্য যেকোনো মানুষের অশান্ত মনকে শান্ত করে দেয়। চারদিকে ঝিরিঝিরি বাতাস আর ঝিলমিল স্বচ্ছ পানির নীলাভ আভায় রীতিমতো মুগ্ধ হয়ে যায় সবাই। ঠিক তেমনই একটি জায়গা হচ্ছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন লেক। কিন্তু অযতœ-অবহেলায় গরীবের হাতিরঝিল খ্যাত লেকটি এখন মৃতপ্রায়।
লেকের স্বচ্ছ পানি তো দূরের কথা, পানি পাওয়াই দুষ্কর। এ ছাড়া, লেকের ধারে অসংখ্য গাছ কাটার ফলে পরিবেশ বিপর্যয় হয়েছে। যেটা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের হতাশ করেছে। লেকে স্বচ্ছ পানি সরবরাহ করার পাশাপাশি পরিচ্ছন্নতা বৃদ্ধি করে মনোরম পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি, বলেন তিনি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী মুন্সী শহীদ উদ্দীন মো. তারেক বলেন, লেকের সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য টেন্ডার আহ্বানের সব প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন করেছি। শিগগিরই আমরা কাজ শুরু করবো এবং লেকের আগের সৌন্দর্য ফিরে আসবে।