ঢাকা ০৯:৩৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫

সরস্বতীর কাছে স্বাভাবিক শিক্ষালয়ের প্রার্থনা ভক্তদের

  • আপডেট সময় : ১২:৪৩:৫০ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ ফেব্রুয়ারী ২০২২
  • ৮৭ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : মহামারী থেকে মুক্তি আর শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ ফেরার প্রার্থনায় বিদ্যার দেবী সরস্বতীর পূজা করলেন দেশের সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
গতকাল শনিবার সকাল থেকে রাজধানীসহ সারাদেশে বাণী অর্চনা, আরতি ও ভক্তদের পুষ্পাঞ্জলিতে সিক্ত হলেন শ্বেত পদ্মে আসীনা বীণাপাণি। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, দেবী সরস্বতী সত্য, ন্যায় ও জ্ঞানালোকের প্রতীক। দেবীর একহাতে পুস্তক, আর অন্য হাতে বীণা। এজন্য তাকে বীণাপাণিও বলা হয়। তার বাহন সাদা রাজহাঁস। মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে সাদা রাজহাঁসে চেপে দেবী ধরায় আসেন। মর্ত্যলোকে ভক্তরা অজ্ঞতার অন্ধকার দূর করতে কল্যাণময়ী দেবীর চরণে পূজার অর্ঘ্য নিবেদন করেন।
সারা দেশে বিভিন্ন মন্দিরের পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঐতিহ্যগতভাবে সরস্বতী পূজার আয়োজন করা হয় প্রতিবছর। দেশে করোনাভাইরাসের অতি সংক্রামক ধরন ওমিক্রন পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রীয় নানা বিধি-নিষেধ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় পূজার আনুষ্ঠানিকতায় সেই আড়ম্বর ছিল না।
ঐতিহ্যগতভাবে প্রতি বছর ঢাকায় সবচেয়ে বড় পরিসরে সরস্বতী পূজার আয়োজন হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে। বিদ্যা ও সংগীতের দেবী সরস্বতীর কৃপা-লাভের আশায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা জগন্নাথ হল মাঠে তৈরি করে আলাদা আলাদা পূজাম-প তৈরি করে থাকে। গত দু বছর ধরে মহামারীর বিধি-নিষেধের কারণে সেই আয়োজনে ছেদ পড়ে। তবে জগন্নাথ হলের উপাসনালয়ে হল কর্তৃপক্ষ কেন্দ্রীয়ভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সরস্বতী পূজার আয়োজন করেছে। সরস্বতী পূজা উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল ছাড়াও ছাত্রীদের জন্য রোকেয়া হল, শামসুন্নাহার হল, সুফিয়া কামাল হল, কুয়েত মৈত্রী হলেও বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
জগন্নাথ হলে সকাল ৯টায় বাণী অর্চনার মধ্যে দিয়ে শুরু হয় পূজা। পুরোহিত ‘সরস্বতী মহাভাগে বিদ্যে কমল লোচনে/বিশ্বরূপে বিশালাক্ষী বিদ্যংদেহী নমোহস্তুতে’ মন্ত্রপাঠ করে দেবীর আশীর্বাদ কামনা করেন। এরপর ভক্তরা দেবীকে পুষ্পাঞ্জলি দেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ নানা পেশার মানুষ সেখানে সরস্বতীর আরাধনা করেন। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এসেছিলেন সাবেক শিক্ষার্থীরাও।
জগন্নাথ হলের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী নীরুদ কুমার বর্মণ বলেন, “প্রতি বছর বিভ্ন্নি থিম ধরে প্রত্যেক বিভাগের উদ্যোগে আলাদাভাবে হলের মাঠে পূজাম-প তৈরি করা হত। গত দুবছর ধরে মহামারীর জন্য সেটি করা সম্ভব হচ্ছে না।
“এবার বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও হল খোলা থাকায় কেন্দ্রীয় আয়োজনে আমরা বিদ্যাদেবীর আরাধন করতে পারছি। এটা আসলে আমাদের কাছে একটা উৎসবও বটে। জগন্নাথ হল ছাড়াও বিভিন্ন হলের বন্ধু-বান্ধবরা এসেছে, খুবই ভালো লাগছে।”
নিপু রায় নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, “বিদ্যাদেবীর কাছে প্রার্থনা তিনি যেন করোনা পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক করে দেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ালেখার পরিবেশ যাতে সুন্দর হয় এবং মহামারীতে যে ক্ষতি হয়েছে তা যেন রিকোভার করতে পারি, সেই প্রার্থনা করেছি।”
মেয়ে অনু মেঘা রায়কে নিয়ে রামপুরা থেকে জগন্নাথ হল এসেছিলেন শ্রাবন্তী রায়। স্কুল যাতে দ্রুত খুলে দেওয়া হয়, সেই প্রার্থনা করেছে অনু।
“আমার স্কুল বন্ধ। স্কুল বন্ধ থাকায় আমার বন্ধুদের সাথে দেখা হচ্ছে না। বাড়িতে পড়ালেখায়ও তেমন ভালো রাগে না। মা সরস্বতীর কাছে প্রার্থনা করছি, যাতে আমি স্কুলে গিয়ে পড়ালেখা করতে পারি।”
অনুর মা শ্রাবন্তী রায়ের প্রার্থনা, তার মেয়ে যেন বিদ্যায় বুদ্ধিতে আলোকিত মানুষ হতে পারে।
জগন্নাথ হলের পূজাপ-পে অঞ্জলি দিতে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস বলেন, সরস্বতী পূজা শিক্ষার্থীদের উৎসব। এই পূজাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নানা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু করোনা মহামারীর কারণে গত দু-বছর ধরে সীমিত পরিসরে পূজা হচ্ছে।
“আমাদের প্রার্থনা, করোনা থেকে মানুষ মুক্তি পাক, বাংলাদেশ অনেকে এগিয়ে যাক এবং শিক্ষার পরিবেশ সুন্দর ও স্বাভাবিক হোক। আর আগামী বছর থেকে আমরা যেন আগের মতো মহাসমারোহে পূজা করতে পারি।”
সরস্বতী পূজা উপলক্ষে সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মিহির লাল সাহা বলেন, “স্বাস্থ্যবিধি মানতে গিয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে একটি পূজাম-পে ধর্মীয় রীতি, আচার-অনুষ্ঠান সংক্ষিপ্তভাবে সম্পন্ন করা হচ্ছে।”
স্বাস্থ্যবিধি মেনে জগন্নাথ হলে সরস্বতী পূজার আয়োজন করা হলেও সকাল থেকেই ছিল মানুষের ঢল। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ জগন্নাথ হলে ঘুরতে আসেন।
এ বিষয়ে প্রাধ্যক্ষ বলেন, !স্বাস্থ্যবিধি মেনে পূজার আয়োজন করতে আমাদের চেষ্টার কোনো ত্রুটি ছিল না। কিন্তু দেখা গেল, সেই লোক সমাগম আমরা এড়াতে পারলাম না। পূজার সময় স্বাস্থ্যবিধি মানাটা কঠিন। তবে এখন প্রায় সবাই টিকার আওতায় আসছে বলে সাহস করে আসছে।
“আমরা আশা করছি দেবী সরস্বতী আমাদের করোনামুক্ত করবেন, শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে দেবেন, আমরা যাতে আগামী বছর আগের মত করে সেই উৎসবমুখর পরিবেশে পূজা পালন করতে পারি, সেই প্রার্থনা করছি।”
সরস্বতী পূজা উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান শনিবার বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল, রোকেয়া হল, শামসুন নাহার হল, বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হল এবং কবি সুফিয়া কামাল হলের পূজামন্ডপ পরিদর্শন করেন।
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমার সরকার, স্ব স্ব হলের প্রাধ্যক্ষসহ আবাসিক শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রেসক্লাবে ‘প্রথম’ সরস্বতী পূজা : প্রথমবারের মতো জাতীয় প্রেসক্লাবে সরস্বতী পূজার আয়োজন করেছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। সকাল ১০টায় প্রেসক্লাবের মিলনায়তনে বাণী অর্চনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় পূজার আনুষ্ঠানিকতা। এরপর একে একে সবাই দেবী সরস্বতীকে পুষ্পাঞ্জলি দিয়ে ভক্তি জানান। সেখানে দৈনিক সময়ের আলো পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক সমীরণ রায় তার চার বছরের মেয়ে শ্রদ্ধা রায়কে হাতেখড়ি দেন। সরস্বতীর পূজার দিন পুরোহিত মন্ত্র পাঠ করিয়ে শিশুদের হাতে কাশফুলের কলম ও রূপক দোয়াত তুলে দেন। ওই কলম দিয়ে একটি মাটির সরায় (পাত্র) লেখার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক লেখা-পড়া শুরু করে শিশু। একেই বলা হয় ‘হাতেখড়ি’।
সমীরণ রায় বলেন, “প্রেস ক্লাবের ইতিহাসে এবার প্রথমবারের মতো সরস্বতী পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এখানে আমার মেয়ের হাতেখড়ি হলো। খুবই ভালো লাগছে। মেয়ের জন্য প্রার্থনা করেছি, যাতে সে বিদ্যায় বুদ্ধিতে আলোকিত মানুষ হতে পারে।”
জাতীয় প্রেসক্লাবে সরস্বতী পূজার আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক সুভাষ চন্দ্র বাদল বলেন, “এই করোনা মহামারীতে বিশ্বের সকল শিক্ষার্থী মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা যারা সাংবাদিকতা করি, কলম নিয়ে কাজ করি, বিদ্যার সঙ্গে আমাদের একটা প্রফেশনাল সম্পর্ক রয়েছে। সেজন্য আমরা প্রেসক্লাবে বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকরা এই পূজার আয়োজন করেছি। পরবর্তী সময়েও এটা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করব।”

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ইউনূস-রুবিও ফোনালাপ, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নিরাপত্তা বাড়াতে জোর

সরস্বতীর কাছে স্বাভাবিক শিক্ষালয়ের প্রার্থনা ভক্তদের

আপডেট সময় : ১২:৪৩:৫০ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ ফেব্রুয়ারী ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক : মহামারী থেকে মুক্তি আর শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ ফেরার প্রার্থনায় বিদ্যার দেবী সরস্বতীর পূজা করলেন দেশের সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
গতকাল শনিবার সকাল থেকে রাজধানীসহ সারাদেশে বাণী অর্চনা, আরতি ও ভক্তদের পুষ্পাঞ্জলিতে সিক্ত হলেন শ্বেত পদ্মে আসীনা বীণাপাণি। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, দেবী সরস্বতী সত্য, ন্যায় ও জ্ঞানালোকের প্রতীক। দেবীর একহাতে পুস্তক, আর অন্য হাতে বীণা। এজন্য তাকে বীণাপাণিও বলা হয়। তার বাহন সাদা রাজহাঁস। মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে সাদা রাজহাঁসে চেপে দেবী ধরায় আসেন। মর্ত্যলোকে ভক্তরা অজ্ঞতার অন্ধকার দূর করতে কল্যাণময়ী দেবীর চরণে পূজার অর্ঘ্য নিবেদন করেন।
সারা দেশে বিভিন্ন মন্দিরের পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঐতিহ্যগতভাবে সরস্বতী পূজার আয়োজন করা হয় প্রতিবছর। দেশে করোনাভাইরাসের অতি সংক্রামক ধরন ওমিক্রন পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রীয় নানা বিধি-নিষেধ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় পূজার আনুষ্ঠানিকতায় সেই আড়ম্বর ছিল না।
ঐতিহ্যগতভাবে প্রতি বছর ঢাকায় সবচেয়ে বড় পরিসরে সরস্বতী পূজার আয়োজন হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে। বিদ্যা ও সংগীতের দেবী সরস্বতীর কৃপা-লাভের আশায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা জগন্নাথ হল মাঠে তৈরি করে আলাদা আলাদা পূজাম-প তৈরি করে থাকে। গত দু বছর ধরে মহামারীর বিধি-নিষেধের কারণে সেই আয়োজনে ছেদ পড়ে। তবে জগন্নাথ হলের উপাসনালয়ে হল কর্তৃপক্ষ কেন্দ্রীয়ভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সরস্বতী পূজার আয়োজন করেছে। সরস্বতী পূজা উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল ছাড়াও ছাত্রীদের জন্য রোকেয়া হল, শামসুন্নাহার হল, সুফিয়া কামাল হল, কুয়েত মৈত্রী হলেও বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
জগন্নাথ হলে সকাল ৯টায় বাণী অর্চনার মধ্যে দিয়ে শুরু হয় পূজা। পুরোহিত ‘সরস্বতী মহাভাগে বিদ্যে কমল লোচনে/বিশ্বরূপে বিশালাক্ষী বিদ্যংদেহী নমোহস্তুতে’ মন্ত্রপাঠ করে দেবীর আশীর্বাদ কামনা করেন। এরপর ভক্তরা দেবীকে পুষ্পাঞ্জলি দেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ নানা পেশার মানুষ সেখানে সরস্বতীর আরাধনা করেন। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এসেছিলেন সাবেক শিক্ষার্থীরাও।
জগন্নাথ হলের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী নীরুদ কুমার বর্মণ বলেন, “প্রতি বছর বিভ্ন্নি থিম ধরে প্রত্যেক বিভাগের উদ্যোগে আলাদাভাবে হলের মাঠে পূজাম-প তৈরি করা হত। গত দুবছর ধরে মহামারীর জন্য সেটি করা সম্ভব হচ্ছে না।
“এবার বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও হল খোলা থাকায় কেন্দ্রীয় আয়োজনে আমরা বিদ্যাদেবীর আরাধন করতে পারছি। এটা আসলে আমাদের কাছে একটা উৎসবও বটে। জগন্নাথ হল ছাড়াও বিভিন্ন হলের বন্ধু-বান্ধবরা এসেছে, খুবই ভালো লাগছে।”
নিপু রায় নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, “বিদ্যাদেবীর কাছে প্রার্থনা তিনি যেন করোনা পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক করে দেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ালেখার পরিবেশ যাতে সুন্দর হয় এবং মহামারীতে যে ক্ষতি হয়েছে তা যেন রিকোভার করতে পারি, সেই প্রার্থনা করেছি।”
মেয়ে অনু মেঘা রায়কে নিয়ে রামপুরা থেকে জগন্নাথ হল এসেছিলেন শ্রাবন্তী রায়। স্কুল যাতে দ্রুত খুলে দেওয়া হয়, সেই প্রার্থনা করেছে অনু।
“আমার স্কুল বন্ধ। স্কুল বন্ধ থাকায় আমার বন্ধুদের সাথে দেখা হচ্ছে না। বাড়িতে পড়ালেখায়ও তেমন ভালো রাগে না। মা সরস্বতীর কাছে প্রার্থনা করছি, যাতে আমি স্কুলে গিয়ে পড়ালেখা করতে পারি।”
অনুর মা শ্রাবন্তী রায়ের প্রার্থনা, তার মেয়ে যেন বিদ্যায় বুদ্ধিতে আলোকিত মানুষ হতে পারে।
জগন্নাথ হলের পূজাপ-পে অঞ্জলি দিতে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস বলেন, সরস্বতী পূজা শিক্ষার্থীদের উৎসব। এই পূজাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নানা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু করোনা মহামারীর কারণে গত দু-বছর ধরে সীমিত পরিসরে পূজা হচ্ছে।
“আমাদের প্রার্থনা, করোনা থেকে মানুষ মুক্তি পাক, বাংলাদেশ অনেকে এগিয়ে যাক এবং শিক্ষার পরিবেশ সুন্দর ও স্বাভাবিক হোক। আর আগামী বছর থেকে আমরা যেন আগের মতো মহাসমারোহে পূজা করতে পারি।”
সরস্বতী পূজা উপলক্ষে সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মিহির লাল সাহা বলেন, “স্বাস্থ্যবিধি মানতে গিয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে একটি পূজাম-পে ধর্মীয় রীতি, আচার-অনুষ্ঠান সংক্ষিপ্তভাবে সম্পন্ন করা হচ্ছে।”
স্বাস্থ্যবিধি মেনে জগন্নাথ হলে সরস্বতী পূজার আয়োজন করা হলেও সকাল থেকেই ছিল মানুষের ঢল। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ জগন্নাথ হলে ঘুরতে আসেন।
এ বিষয়ে প্রাধ্যক্ষ বলেন, !স্বাস্থ্যবিধি মেনে পূজার আয়োজন করতে আমাদের চেষ্টার কোনো ত্রুটি ছিল না। কিন্তু দেখা গেল, সেই লোক সমাগম আমরা এড়াতে পারলাম না। পূজার সময় স্বাস্থ্যবিধি মানাটা কঠিন। তবে এখন প্রায় সবাই টিকার আওতায় আসছে বলে সাহস করে আসছে।
“আমরা আশা করছি দেবী সরস্বতী আমাদের করোনামুক্ত করবেন, শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে দেবেন, আমরা যাতে আগামী বছর আগের মত করে সেই উৎসবমুখর পরিবেশে পূজা পালন করতে পারি, সেই প্রার্থনা করছি।”
সরস্বতী পূজা উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান শনিবার বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল, রোকেয়া হল, শামসুন নাহার হল, বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হল এবং কবি সুফিয়া কামাল হলের পূজামন্ডপ পরিদর্শন করেন।
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমার সরকার, স্ব স্ব হলের প্রাধ্যক্ষসহ আবাসিক শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রেসক্লাবে ‘প্রথম’ সরস্বতী পূজা : প্রথমবারের মতো জাতীয় প্রেসক্লাবে সরস্বতী পূজার আয়োজন করেছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। সকাল ১০টায় প্রেসক্লাবের মিলনায়তনে বাণী অর্চনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় পূজার আনুষ্ঠানিকতা। এরপর একে একে সবাই দেবী সরস্বতীকে পুষ্পাঞ্জলি দিয়ে ভক্তি জানান। সেখানে দৈনিক সময়ের আলো পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক সমীরণ রায় তার চার বছরের মেয়ে শ্রদ্ধা রায়কে হাতেখড়ি দেন। সরস্বতীর পূজার দিন পুরোহিত মন্ত্র পাঠ করিয়ে শিশুদের হাতে কাশফুলের কলম ও রূপক দোয়াত তুলে দেন। ওই কলম দিয়ে একটি মাটির সরায় (পাত্র) লেখার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক লেখা-পড়া শুরু করে শিশু। একেই বলা হয় ‘হাতেখড়ি’।
সমীরণ রায় বলেন, “প্রেস ক্লাবের ইতিহাসে এবার প্রথমবারের মতো সরস্বতী পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এখানে আমার মেয়ের হাতেখড়ি হলো। খুবই ভালো লাগছে। মেয়ের জন্য প্রার্থনা করেছি, যাতে সে বিদ্যায় বুদ্ধিতে আলোকিত মানুষ হতে পারে।”
জাতীয় প্রেসক্লাবে সরস্বতী পূজার আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক সুভাষ চন্দ্র বাদল বলেন, “এই করোনা মহামারীতে বিশ্বের সকল শিক্ষার্থী মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা যারা সাংবাদিকতা করি, কলম নিয়ে কাজ করি, বিদ্যার সঙ্গে আমাদের একটা প্রফেশনাল সম্পর্ক রয়েছে। সেজন্য আমরা প্রেসক্লাবে বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকরা এই পূজার আয়োজন করেছি। পরবর্তী সময়েও এটা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করব।”