ঢাকা ০৩:০০ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫

দুর্ঘটনায় থেমে গেল ফুড ব্লগারের জীবন

  • আপডেট সময় : ০১:১৮:৫৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ ফেব্রুয়ারী ২০২২
  • ৭৯ বার পড়া হয়েছে

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : মজাদার খাবারের খোঁজ পেলেই বেরিয়ে পড়তেন সিফাত রাব্বী। নজর রাখতেন বিভিন্ন অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী খাবারের। সেসব খাবার নিজে পরখ করতেন, আবার তার গুণাগুণ ভিডিও করে রাখতেন। পরে নিজের ইউটিউব চ্যানেলে দিতেন। এভাবে ভোজনরসিক মানুষের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন এই তরুণ। তবে যাত্রাপথ খুব একটা মসৃণ ছিল না। এ পর্যায়ে আসতে নানা বাধা, প্রতিবন্ধকতা পার হতে হয় তাঁকে।
ফুড ব্লগিংয়ে দিনে দিনে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা এই তরুণের প্রাণ গেল একটি দুর্ঘটনায়। গত বুধবার রাতে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার ওঠানো যন্ত্রের চাকার নিচে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়। সিফাত বন্দরের জুনিয়র আউটডোর অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
সিফাতের বাবা আবদুল আউয়ালও বন্দরে চাকরি করতেন। আড়াই বছর আগে মারা যান। মা-বাবার এক ছেলে আর এক মেয়ের মধ্যে সবার ছোট সিফাত। কলেজিয়েট স্কুলের প্রাক্তন এই ছাত্র পড়াশোনা করেছিলেন আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রামে (আইআইইউসি)। ২০১৯ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে চাকরিতে যোগ দেন।
চট্টগ্রামের বন্দরের হাইস্কুল কলোনিতে মা ও স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন সিফাত। মাত্র চার মাস আগে গত অক্টোবরে ফারহানা ইসলামকে বিয়ে করেছিলেন তিনি। সুখের সংসারে আঁধার নেমে এল অতিদ্রুত। এ রকম মর্মান্তিক মৃত্যুতে বন্দর কলোনিতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও চলছে ফুড ব্লগারকে হারানোর শোক। অনেকের কাছে এমন মৃত্যু এখনো অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে। ইউটিউবে তাঁর ‘ক্ষুধার্ত খাদক’ নামের একটি চ্যানেল রয়েছে।
কলেজশিক্ষক মনসুর নবী তাঁর ফেসবুকের পাতায় লেখেন, ‘মানুষটির নাম সিফাত রাব্বী। ফুড ব্লগার। আজ সমস্ত কিছুর ঊর্ধ্বে চলে গেলেন। ফেসবুকে আমি যাঁদের সব থেকে বেশি ট্রল করি তাঁদের মধ্যে অন্যতম ফুড ব্লগার। ফুড ব্লগারদের নিয়ে আমার ছোট্ট এক লাইনের একটা লেখা ভাইরাল হয়। সহস্রাধিক শেয়ার হয়। তো ওই পোস্টে সিফাত রাব্বী খুব সুন্দরভাবে জবাব দিয়েছিলেন। আমার লেখা নিয়ে তাঁর কোনো রাগ ছিল না, শুধু বিনীত জবাব ছিল। আমাকে বোঝাতে চেয়েছিলেন নিজের ফুড ব্লগিং নিয়ে। অপছন্দ থেকে পছন্দের মানুষে পরিণত হয়েছিলেন।’
নাফিসা রহমান নামের আরেকজন লেখেন, ‘এ পর্যায়ে আসতে সিফাতকে অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে। শরীর নিয়ে ব্যঙ্গবিদ্রূপের শিকার হতেন। নানা হতাশার মধ্যে যেতে হয়েছিল। কিন্তু হাল ছাড়েননি। সব বাধা পেরিয়ে যখন সবকিছু গুছিয়ে নিয়েছেন, তখনই পৃথিবী ছেড়ে যেতে হলো।’
সিফাতের প্রতিবেশী ও বন্দরের কর্মী মেহেদী হাসান বলেন, সিফাত খুব সহজ–সরল একটা ছেলে। ইউটিউব চ্যানেল, সাইক্লিং আর চাকরি নিয়ে ব্যস্ত থাকত সারাক্ষণ। তার এ রকম মৃত্যু খুব দুর্ভাগ্যজনক। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে মা জেবুন্নেসা খুব মুষড়ে পড়েছেন বলে জানান সিফাতের বোনের স্বামী শামসুজ্জামান। তিনি বলেন, দুই দিন আগেও সিফাতের সঙ্গে কথা হয়েছিল। অফিস থেকে ফেরার আগে স্ত্রীকে ফোন দিয়েছিল। কোনো কিছু লাগবে কি না, তা জানতে চেয়েছিল। কিন্তু সবকিছু এভাবে শেষ হয়ে যাবে, তা তো কল্পনায়ও ছিল না।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

দুর্ঘটনায় থেমে গেল ফুড ব্লগারের জীবন

আপডেট সময় : ০১:১৮:৫৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ ফেব্রুয়ারী ২০২২

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : মজাদার খাবারের খোঁজ পেলেই বেরিয়ে পড়তেন সিফাত রাব্বী। নজর রাখতেন বিভিন্ন অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী খাবারের। সেসব খাবার নিজে পরখ করতেন, আবার তার গুণাগুণ ভিডিও করে রাখতেন। পরে নিজের ইউটিউব চ্যানেলে দিতেন। এভাবে ভোজনরসিক মানুষের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন এই তরুণ। তবে যাত্রাপথ খুব একটা মসৃণ ছিল না। এ পর্যায়ে আসতে নানা বাধা, প্রতিবন্ধকতা পার হতে হয় তাঁকে।
ফুড ব্লগিংয়ে দিনে দিনে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা এই তরুণের প্রাণ গেল একটি দুর্ঘটনায়। গত বুধবার রাতে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার ওঠানো যন্ত্রের চাকার নিচে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়। সিফাত বন্দরের জুনিয়র আউটডোর অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
সিফাতের বাবা আবদুল আউয়ালও বন্দরে চাকরি করতেন। আড়াই বছর আগে মারা যান। মা-বাবার এক ছেলে আর এক মেয়ের মধ্যে সবার ছোট সিফাত। কলেজিয়েট স্কুলের প্রাক্তন এই ছাত্র পড়াশোনা করেছিলেন আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রামে (আইআইইউসি)। ২০১৯ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে চাকরিতে যোগ দেন।
চট্টগ্রামের বন্দরের হাইস্কুল কলোনিতে মা ও স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন সিফাত। মাত্র চার মাস আগে গত অক্টোবরে ফারহানা ইসলামকে বিয়ে করেছিলেন তিনি। সুখের সংসারে আঁধার নেমে এল অতিদ্রুত। এ রকম মর্মান্তিক মৃত্যুতে বন্দর কলোনিতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও চলছে ফুড ব্লগারকে হারানোর শোক। অনেকের কাছে এমন মৃত্যু এখনো অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে। ইউটিউবে তাঁর ‘ক্ষুধার্ত খাদক’ নামের একটি চ্যানেল রয়েছে।
কলেজশিক্ষক মনসুর নবী তাঁর ফেসবুকের পাতায় লেখেন, ‘মানুষটির নাম সিফাত রাব্বী। ফুড ব্লগার। আজ সমস্ত কিছুর ঊর্ধ্বে চলে গেলেন। ফেসবুকে আমি যাঁদের সব থেকে বেশি ট্রল করি তাঁদের মধ্যে অন্যতম ফুড ব্লগার। ফুড ব্লগারদের নিয়ে আমার ছোট্ট এক লাইনের একটা লেখা ভাইরাল হয়। সহস্রাধিক শেয়ার হয়। তো ওই পোস্টে সিফাত রাব্বী খুব সুন্দরভাবে জবাব দিয়েছিলেন। আমার লেখা নিয়ে তাঁর কোনো রাগ ছিল না, শুধু বিনীত জবাব ছিল। আমাকে বোঝাতে চেয়েছিলেন নিজের ফুড ব্লগিং নিয়ে। অপছন্দ থেকে পছন্দের মানুষে পরিণত হয়েছিলেন।’
নাফিসা রহমান নামের আরেকজন লেখেন, ‘এ পর্যায়ে আসতে সিফাতকে অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে। শরীর নিয়ে ব্যঙ্গবিদ্রূপের শিকার হতেন। নানা হতাশার মধ্যে যেতে হয়েছিল। কিন্তু হাল ছাড়েননি। সব বাধা পেরিয়ে যখন সবকিছু গুছিয়ে নিয়েছেন, তখনই পৃথিবী ছেড়ে যেতে হলো।’
সিফাতের প্রতিবেশী ও বন্দরের কর্মী মেহেদী হাসান বলেন, সিফাত খুব সহজ–সরল একটা ছেলে। ইউটিউব চ্যানেল, সাইক্লিং আর চাকরি নিয়ে ব্যস্ত থাকত সারাক্ষণ। তার এ রকম মৃত্যু খুব দুর্ভাগ্যজনক। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে মা জেবুন্নেসা খুব মুষড়ে পড়েছেন বলে জানান সিফাতের বোনের স্বামী শামসুজ্জামান। তিনি বলেন, দুই দিন আগেও সিফাতের সঙ্গে কথা হয়েছিল। অফিস থেকে ফেরার আগে স্ত্রীকে ফোন দিয়েছিল। কোনো কিছু লাগবে কি না, তা জানতে চেয়েছিল। কিন্তু সবকিছু এভাবে শেষ হয়ে যাবে, তা তো কল্পনায়ও ছিল না।