ঢাকা ০৫:১৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

ভেঙে পড়েছে অর্থনীতি: দেশ ছেড়েছে ১০ লাখের বেশি আফগান

  • আপডেট সময় : ১১:২৮:২৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ ফেব্রুয়ারী ২০২২
  • ৮৬ বার পড়া হয়েছে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মরুর গিরিখাদে লুকিয়ে থাকার জায়গা থেকে দিগন্তে ইরান সীমান্তের আলোর আভাটুকুই শুধু দেখতে পাচ্ছে আফগান অভিবাসনপ্রত্যাশীদের দলটি।
বাতাস শীতল, তাদের ভারী নিঃশ্বাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে। অনেকেই খাবার কিনতে গিয়ে কয়েক সপ্তাহ আগে তাদের সঞ্চয়ের সবটুকু শেষ করে ফেলেছেন। আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে ধার করে সীমান্তের কাছে এসেছেন এই আশায় যে এবার হয়ত আফগানিস্তানের ভঙ্গুর অর্থনীতি থেকে মুক্তি মিলবে। সীমান্তের দিকে তাকিয়ে তারা স্বপ্ন দেখছেন কাজ, টাকা আর খাবারের।
২৬ বছর বয়সী নাজাফ আখলাকি এই দলের একজন। তার ভাষায়, “আমার জন্য আর কোনো বিকল্প নেই; আমার আর ফিরে যাওয়ার পথ নেই।”
আখলাকি যখন কথা বলছিলেন, পাচারচক্রের দালালরা তখন নজর রাখছে সীমান্তে। তালেবানের টহল দল সরে যেতেই দালালরা নির্দেশ দিল- ‘দৌঁড়াও’। আখলাকিও আর অপেক্ষা করলেন না।
আখলাকিদের এই গল্প তুলে ধরা হয়েছে নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে। সেখানে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার এবং তালেবান ক্ষমতা নেওয়ার পর ভেঙে পড়েছে দেশটির অর্থনীতি। আগে থেকেই চরম দারিদ্র্যের মধ্যে থাকা লাখ লাখ আফগানের এখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার অবস্থা হয়েছে।
ছবি: নিউ ইয়র্ক টাইমসছবি: নিউ ইয়র্ক টাইমসঅর্থনীতির চাকা থমকে যাওয়ায় আয়ের পথ বন্ধ হয়ে গেছে, দেশজুড়ে খাবারের অভাবে অনেকের বেঁচে থাকাই কঠিন হয়ে উঠেছে। তালেবান কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে আটকে আছে জরুরি সহায়তা।
গত মাসে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, আফগানিস্তানের অর্ধেকের বেশি বাসিন্দা ‘চরম ক্ষুধার ভেতর দিয়ে’ দিন পার করছে। আফগানিস্তানের জীবন তাদের জন্য একটি ‘শীতল নরকে’ পরিনত হয়েছে।
আর এই পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তনের আশা না দেখে হাজার হাজার আফগান নাগরিক প্রতিবেশী দেশগুলোতে পালাচ্ছেন।
আফগান অভিবাসন নিয়ে কর্মরত একজন গবেষক ডেভিড ম্যানসফিল্ড বলেন, “এই পথ দিয়ে আফগানিস্তান ছেড়ে যাওয়াদের সংখ্যা অস্বভাবিকভাবে বেড়ে গেছে, বিশেষ করে চরম ঠা-া আবহাওয়ার মধ্যেও।”
তার হিসাবে, এ বছর জানুয়ারিতে যত আফগান নাগরিক ইরান ও পাকিস্তানে প্রবেশ করেছে, তাদের সংখ্যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় চারগুন।
এই অভিবাসনের ঢল ওই অঞ্চলে এবং ইউরোপে সতর্কঘণ্টা বাজিয়ে দিয়েছে, রাজনীতিবিদরা আবারও ২০১৫ সালের মত অভিবাসন সংকট দেখা দেওয়ার আশঙ্কা করছেন। ওই সময় ১০ লাখের বেশি অভিবাসী, যাদের বেশিরভাগই সিরিয়ার নাগরিক, ইউরোপে আশ্রয়ের জন্য জড়ো হয়েছিল।
অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ওই অঞ্চলেই আটকে রাখতে বদ্ধপরিকর ইইউ আফগানিস্তান এবং এর প্রতিবেশী দেশগুলোকে ১০০ কোটি ডলারের মানবিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
কিন্তু পশ্চিমা দাতারা এখনও পথ খুঁজে বেড়াচ্ছেন, কীভাবে নতুন তালেবান সরকারকে এড়িয়ে সাধারণ আফগানদের কাছে ওই সহায়তা পৌঁছানো যায়।
তালেবান কর্মকর্তারা সাম্প্রতিক মাসগুলোতে পশ্চিমা কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে তাদের ‘গলাটিপে ধরা’ অর্থনীতিকে কিছুটা শ্বাস নিতে দেওয়া হয়। এজন্য তারা মেয়েদের শিক্ষা ও অন্যান্য শর্ত পূরণের বিষয়ে কিছু প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন আন্তর্জাতিক দাতাদের।
যুক্তরাষ্ট্রও নতুন করে ৩০ কোটি ৮০ লাখ ডলারের সহায়তা পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অর্থনীতি যেখানে ভঙ্গুর, সেখানে সহায়তা খুব বেশি কাজে আসবে না। পশ্চিমা দেশগুলো শেকল আলগা না করলে, এবং সেখানকার অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে চালু করতে না দিলে, কাজের খোঁজে থাকা নিরুপায় আফগানরা অন্য দেশে যাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাবে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

নতুন আপদ ‘মব সন্ত্রাস’, আতঙ্কে সারা দেশ

ভেঙে পড়েছে অর্থনীতি: দেশ ছেড়েছে ১০ লাখের বেশি আফগান

আপডেট সময় : ১১:২৮:২৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ ফেব্রুয়ারী ২০২২

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মরুর গিরিখাদে লুকিয়ে থাকার জায়গা থেকে দিগন্তে ইরান সীমান্তের আলোর আভাটুকুই শুধু দেখতে পাচ্ছে আফগান অভিবাসনপ্রত্যাশীদের দলটি।
বাতাস শীতল, তাদের ভারী নিঃশ্বাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে। অনেকেই খাবার কিনতে গিয়ে কয়েক সপ্তাহ আগে তাদের সঞ্চয়ের সবটুকু শেষ করে ফেলেছেন। আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে ধার করে সীমান্তের কাছে এসেছেন এই আশায় যে এবার হয়ত আফগানিস্তানের ভঙ্গুর অর্থনীতি থেকে মুক্তি মিলবে। সীমান্তের দিকে তাকিয়ে তারা স্বপ্ন দেখছেন কাজ, টাকা আর খাবারের।
২৬ বছর বয়সী নাজাফ আখলাকি এই দলের একজন। তার ভাষায়, “আমার জন্য আর কোনো বিকল্প নেই; আমার আর ফিরে যাওয়ার পথ নেই।”
আখলাকি যখন কথা বলছিলেন, পাচারচক্রের দালালরা তখন নজর রাখছে সীমান্তে। তালেবানের টহল দল সরে যেতেই দালালরা নির্দেশ দিল- ‘দৌঁড়াও’। আখলাকিও আর অপেক্ষা করলেন না।
আখলাকিদের এই গল্প তুলে ধরা হয়েছে নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে। সেখানে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার এবং তালেবান ক্ষমতা নেওয়ার পর ভেঙে পড়েছে দেশটির অর্থনীতি। আগে থেকেই চরম দারিদ্র্যের মধ্যে থাকা লাখ লাখ আফগানের এখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার অবস্থা হয়েছে।
ছবি: নিউ ইয়র্ক টাইমসছবি: নিউ ইয়র্ক টাইমসঅর্থনীতির চাকা থমকে যাওয়ায় আয়ের পথ বন্ধ হয়ে গেছে, দেশজুড়ে খাবারের অভাবে অনেকের বেঁচে থাকাই কঠিন হয়ে উঠেছে। তালেবান কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে আটকে আছে জরুরি সহায়তা।
গত মাসে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, আফগানিস্তানের অর্ধেকের বেশি বাসিন্দা ‘চরম ক্ষুধার ভেতর দিয়ে’ দিন পার করছে। আফগানিস্তানের জীবন তাদের জন্য একটি ‘শীতল নরকে’ পরিনত হয়েছে।
আর এই পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তনের আশা না দেখে হাজার হাজার আফগান নাগরিক প্রতিবেশী দেশগুলোতে পালাচ্ছেন।
আফগান অভিবাসন নিয়ে কর্মরত একজন গবেষক ডেভিড ম্যানসফিল্ড বলেন, “এই পথ দিয়ে আফগানিস্তান ছেড়ে যাওয়াদের সংখ্যা অস্বভাবিকভাবে বেড়ে গেছে, বিশেষ করে চরম ঠা-া আবহাওয়ার মধ্যেও।”
তার হিসাবে, এ বছর জানুয়ারিতে যত আফগান নাগরিক ইরান ও পাকিস্তানে প্রবেশ করেছে, তাদের সংখ্যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় চারগুন।
এই অভিবাসনের ঢল ওই অঞ্চলে এবং ইউরোপে সতর্কঘণ্টা বাজিয়ে দিয়েছে, রাজনীতিবিদরা আবারও ২০১৫ সালের মত অভিবাসন সংকট দেখা দেওয়ার আশঙ্কা করছেন। ওই সময় ১০ লাখের বেশি অভিবাসী, যাদের বেশিরভাগই সিরিয়ার নাগরিক, ইউরোপে আশ্রয়ের জন্য জড়ো হয়েছিল।
অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ওই অঞ্চলেই আটকে রাখতে বদ্ধপরিকর ইইউ আফগানিস্তান এবং এর প্রতিবেশী দেশগুলোকে ১০০ কোটি ডলারের মানবিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
কিন্তু পশ্চিমা দাতারা এখনও পথ খুঁজে বেড়াচ্ছেন, কীভাবে নতুন তালেবান সরকারকে এড়িয়ে সাধারণ আফগানদের কাছে ওই সহায়তা পৌঁছানো যায়।
তালেবান কর্মকর্তারা সাম্প্রতিক মাসগুলোতে পশ্চিমা কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে তাদের ‘গলাটিপে ধরা’ অর্থনীতিকে কিছুটা শ্বাস নিতে দেওয়া হয়। এজন্য তারা মেয়েদের শিক্ষা ও অন্যান্য শর্ত পূরণের বিষয়ে কিছু প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন আন্তর্জাতিক দাতাদের।
যুক্তরাষ্ট্রও নতুন করে ৩০ কোটি ৮০ লাখ ডলারের সহায়তা পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অর্থনীতি যেখানে ভঙ্গুর, সেখানে সহায়তা খুব বেশি কাজে আসবে না। পশ্চিমা দেশগুলো শেকল আলগা না করলে, এবং সেখানকার অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে চালু করতে না দিলে, কাজের খোঁজে থাকা নিরুপায় আফগানরা অন্য দেশে যাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাবে।