উম্মে হাবীবা সিলভী : সব মা মুখোমুখি হয়েছেন এমন একটি সাধারণ চ্যালেঞ্জ হলো ঠান্ডা শীতের রাতে তাদের ছোট্ট সন্তানকে আরামদায়ক ও উষ্ণ রাখা। তিন বছরের শিশু-সন্তানের মা জেনিফার চৌধুরী শান্তা তার ফেইসবুকে লিখেছেন, “বিজ্ঞানীরা একটা মেশিন আবিষ্কার করে না কেন, যে মেশিনের কাজ হবে রাতে ১৫ মিনিট পর পর চেক করবে শিশুর গায়ে কাঁথা-কম্বল আছে কিনা! না থাকলে নিজে থেকে ঠিক করে দেবে!”
নিশ্চুপ রূপকথা নামে আরেকজন মা তার উত্তরে লিখেছেন, “মজার বিষয় হলো, আমার মেয়ের বয়স ৩ বছর ৩ মাস, এখন পর্যন্ত তাকে নিয়ে এ সমস্যায় পড়তে হয়নি। ঘেমে গেলে নিজেই বলে- আমিতো ঘেমে গেছি, কম্বল সরাও।”
শীতের মৌসুমে বিশেষ করে যখন রাতে বাইরে কনকনে বাতাস থাকে, তখন শিশুদের শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা সত্যিই কঠিন। কখনও এতে করে তারা কাশি, সর্দি ও ফ্লুতে আক্রান্ত হয়, পরিস্থিতি হতে পারে আরও ঝুঁকিপূর্ণ।
সুতরাং শীতকালে, বিশেষ করে রাতে আপনার শিশুর শরীরের তাপমাত্রা সামঞ্জস্যপূর্ণ রাখতে কী করবেন সে সম্পর্কে আপনার ধারণা থাকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। শীতের রাতে আপনার শিশুকে উষ্ণ ও আরামদায়ক রাখতে আপনার কী করা উচিত তা জানতে পড়ুন-
১. শিশুকে সঠিক পোশাক পরান : শীতকালে ঘুমের সময় আপনার ছোট্ট শিশুকে উষ্ণ রাখার সর্বোত্তম উপায় হলো তাকে সহজে পরা যায় ও খোলা যায় এমন পোশাক পরানো। শিশুকে ভারি বা পশমি কাপড়ের মতো অতিরিক্ত বোঝার পরিবর্তে কয়েকটি পাতলা গরম কাপড় পরান, যাতে ডায়াপার পরিবর্তনের সময় সহজেই খুলে ফেলতে পারেন।
২. ঘরের তাপমাত্রা ঠিক করুন : আপনার নবজাতক খুব বেশি গরম বা খুব ঠান্ডা অনুভব করে না তা নিশ্চিত করতে তার রুম ১৮ থেকে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে তাপমাত্রায় রাখার চেষ্টা করুন। শিশুর ঘর নিরাপদ, আরামদায়ক তাপমাত্রায় আছে কিনা তা পরীক্ষা করতে রুম থার্মোমিটার ব্যবহার করতে পারেন। সাধারণভাবে ঘরের তাপমাত্রা এমন হওয়া উচিত যেন হালকা পোশাক পরা যে কোন প্রাপ্তবয়স্ক আরাম বোধ করেন।
৩. রম্পাজ, জাম্পস্যুটস বা ওয়ানজিজ ব্যবহার করুন : কখনও কখনও যখন আবহাওয়া খুব ঠান্ডা হয়, তখন আপনার শিশুকে এক টুকরো কাপড় আর উষ্ণ রাখতে যথেষ্ট নয়। সেই ঠান্ডা রাতে আপনার সন্তানকে স্বস্তির ঘুম দেওয়ার জন্য একটি মোটা কম্বলে মুড়ে দিতে পারেন। যদি আপনার ছোট্টটি প্রায়ই কম্বল খুলে ফেলে, আপনি তার ঘুমানোর জন্য রম্পাজ, জাম্পস্যুটস বা ওয়ানজিজ ব্যবহার করতে পারেন। স্লিপিং ব্যাগ বা পরিধানযোগ্য কম্বলও ব্যবহার করতে পারেন।
৪. শিশুকে বাতাস থেকে দূরে রাখুন : শিশু ঘুমের সময় কতটা আরাম বোধ করবে তা অনেকটা নির্ভর করে রুমে শিশুর ঘুমানোর জায়গাটা কোথায় ও কেমন তার ওপর। যদি শিশু ক্রিব, বেসিনেট বা দোলনায় ঘুমায় তাহলে তা জানালা, ফ্যান ও দেয়াল থেকে কয়েক ফুট দূরে রাখুন। এছাড়া ঘরে ঠান্ডা বাতাস যাতে ঢুকতে না পারে সেজন্য জানালা ও দরজা বন্ধ রাখুন।
৫. ভালো তোশক বা ম্যাট্রেস ব্যবহার করুন : আপনার শিশুকে উষ্ণ রাখতে ভাল কাপড়ের তোশক বা দৃঢ় জাজিম বা ওয়াটারপ্রুফ ম্যাট্রেস ব্যবহার করুন। বেশি নরম তোশক আপনার ছোট্ট শিশুকে ঝুঁকিতে রাখে, তোশকে ঠান্ডা বাতাস প্রবেশের কারণে তার অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনাও বাড়িয়ে দেয়। তাই এগুলো এড়িয়ে চলাই ভালো।
৬. শিশুর মাথা ও হাত ঢেকে রাখুন : শিশুরা তাদের মাথা ও হাত দিয়ে প্রচুর তাপ হারায়, তাই আপনার সন্তানকে অতিরিক্ত উষ্ণতা দিতে নরম ক্যাপ এবং হালকা ওজনের হাতমোজা ব্যবহার করতে পারেন। যদি আপনার শিশু স্বভাবগতভাবে বুড়ো আঙুল চুষে, তাহলে অতিরিক্ত এক জোড়া হাতমোজা প্রস্তুত রাখতে পারেন। এমনকি, একজোড়া মোজা পরিয়ে তার পা উষ্ণ রাখতে পারেন।
৭. শিশুর বিছানা শুষ্ক রাখুন : শিশুর ঘুমানোর জায়গা দোলনা বা বিছানা সব সময় শুষ্ক রাখুন। প্রায় প্রতিদিন রোদ উঠলেই চাদর, লেপ-তোশক, বালিশ শুকাতে দিন। আপনি যদি দেখেন যে বাড়িতে খুব বেশি ঠান্ডা আছে, সন্তানের জন্য উষ্ণ ও আরামদায়ক ঘুমানোর জায়গা তৈরি করতে বিছানা আগে থেকে গরম করার কথা বিবেচনা করতে পারেন। ঘুমানোর অন্তত ৩০ মিনিট আগে ক্রিব শিটের উপর গরম পানির বোতল বা হিটিং প্যাড রাখতে পারেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, শিশুকে শুইয়ে দেওয়ার আগে এটি সরিয়ে ফেলুন।
শিশু গায়ে কাঁথা-কম্বল রাখে না, কী করবেন শীতের রাতে
ট্যাগস :
শিশু গায়ে কাঁথা-কম্বল রাখে না
জনপ্রিয় সংবাদ