নিজস্ব প্রতিবেদক : বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন, বিএনপি তাদের আন্দোলন সংগ্রামের অংশ হিসেবেই দেশের উন্নয়ন সহযোগীদের সমর্থন চায়, মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ চায়। একইসঙ্গে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে দেশি-বিদেশি অংশীদারদের এই সরকারের সব অপকর্ম সম্পর্কে অবগত করে রাখতে চায়।
গতকাল মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসন কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এসব কথা জানান। সোমবার (৩১ জানুয়ারি) রাতে অনুষ্ঠিত দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত ও আলোচনা সম্পর্কে জানাতে তিনি এই সংবাদ সম্মেলন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিত নিয়ে কথা বলেন। বিগত কয়েক দিন ধরে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী অভিযোগ করেন—‘মির্জা ফখরুল বিদেশে চিঠি লিখে লবিস্ট নিয়োগ করার পক্ষে কাজ করেছেন।’
এই অভিযোগের জবাবে লিখিত বক্তব্যে ফখরুল উল্লেখ করেন, ‘আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ নিয়ে কথা বলছেন সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী। এই চিঠি দেখিয়ে মিথ্যাচার করা হয়েছে। বিদেশে লেখা আমার ওই চিঠিগুলো কোনও লবিস্ট নিয়োগের বিষয়ে নয়, মানবাধিকার রক্ষায় আন্তর্জাতিক উন্নয়ন অংশীদারদের প্রতি আহ্বান মাত্র।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার সব ব্যক্তির সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য আশ্রয়স্থল, মানবাধিকার ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের সবচেয়ে বড় ভ্যানগার্ড। আর তাই বিএনপি আন্দোলন সংগ্রামের অংশ হিসেবেই দেশের ডেভেলপমেন্ট পার্টনারদের সমর্থন চায়, মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ চায়, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার সংগ্রামে দেশি-বিদেশি সব অংশীদারকে এই সরকারের সব অপকর্ম সম্পর্কে অবগত করে রাখতে চায়।’
লবিস্ট নিয়োগ প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র সরকার কর্তৃক গৃহীত ব্যবস্থাকে ধামাচাপা দিয়ে কর্তৃত্ববাদী অবৈধ সরকার জনগণের করের টাকায় আমেরিকায় লবিস্ট নিয়োগ করেছে, যা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের মাধ্যমে স্বীকৃত। তার ভাষ্যমতে, সরকারের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের জন্য তারা লবিস্ট নিয়োগ করেছে। খুন, গুমের মতো অপরাধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তির দায়, কিংবা ব্যক্তির স্বেচ্ছাচারিতায় নিমজ্জিত প্রতিষ্ঠানের দায়, রাষ্ট্র কিংবা সরকার কীভাবে জনগণের টাকায় ভাবমূর্তি রক্ষার নামে ব্যয় করে?’
তিনি জানান, বিএনপি মনে করে জনগণের টাকায় লবিস্ট নিয়োগ করে সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো গুরুতর অপরাধে নিজেদের জড়িত থাকার বিষয়টিই প্রমাণিতভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। বিএনপি মনে করে, সরকার জড়িত না থাকলে তা প্রমাণের জন্য তারা ওই সাত কর্মকর্তাকে আইনের আওতায় এনে বিচারের ব্যবস্থা করতো। খুন, গুম, গায়েবি মামলা দায়ের বন্ধ করে, নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথে হেঁটে সরকার পদত্যাগ করতো।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘২০০৫ থেকে ২০০৭ সালে তিন বছরে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সংশ্লিষ্টতায় ৯০ লাখ (৯ মিলিয়ন) ডলার খরচ করে লবিস্ট নিয়োগ করেছিল, বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে। যার প্রমাণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি ওয়েবপেজে আছে।’
তিনি উল্লেখ করেন, বিএনপি জানতে চায়—সজীব ওয়াজেদ জয়ের ওই টাকার উৎস কী ছিল, কীভাবে ওই টাকা বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় গিয়েছিল?
বিদেশে লবিস্ট নিয়োগ প্রসঙ্গে দলের অবস্থান তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘একজন প্রবাসী বাংলাদেশি কর্তৃক লবিস্ট নিয়োগের বিষয়টিও আজ আমাদের দলের ঘাড়ে চাপানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে এই সরকার। আমরা বলতে চাই, দেশের গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে যদি কোনও প্রবাসী কোনও পদক্ষেপ কোথাও নেয়, দেশের প্রতি তার ভালোবাসার জন্য যদি কিছু করে, সেই পদক্ষেপের দায়িত্ব তার, বিএনপির নয়। ওই পদক্ষেপকে নৈতিক সমর্থনের দায়িত্ব বাদে অন্য কোনও দায়-দায়িত্ব বিএনপি বহন করে না। তবে, বিশ্বের দেশে দেশে প্রবাসীদের গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার রক্ষার জন্য এ ধরনের দেশপ্রেমিক পদক্ষেপকে বিএনপি সাধুবাদ জানায় এবং তাদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে।’
দেশি-বিদেশি সবাইকে সরকারের অপকর্ম সম্পর্কে জানাতে চায় বিএনপি
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ