ঢাকা ০৩:২৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫

ঢাকায় বায়ু দূষণে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি: মেয়র তাপস

  • আপডেট সময় : ১০:৪৩:৫৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২২
  • ৭৮ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা ‘বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত’ শহরে পরিণত হওয়ায় মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।
গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম জাতীয় সংক্রামক রোগ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের অধিবেশনে তিনি এ কথা বলেন।
ঢাকার সোনারগাঁও হোটেলে তিন দিনের এ সম্মেলন শেষ হবে ২৮ জানুয়ারি। বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামসহ ৩০টি দেশি বিদেশি প্রতিষ্ঠান এ সম্মেলনের আয়োজন করেছে।
মেয়র তাপস বলেন, বাংলাদেশে অসংক্রামক রোগ একটি নতুন ও চলমান বোঝা। ডায়বেটিস, হৃদরোগ, ক্যান্সারের মত অসংক্রামক রোগে আক্রান্তের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে।
“অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি কমানো এবং নগরবাসীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সিটি করপোরেশন ইতোমধ্যে উদ্যোগ নিয়েছে। পার্ক, হাঁটার জায়গা ও প্রশস্ত ফুটপাত তৈরি করা করছে। আমরা শহরে একটি স্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছি।
“কিন্তু দুভার্গ্যবশত বায়ুদূষণের দিক থেকে ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহর। বায়ুদূষণের কারণে শ্বাসতন্ত্রের নানা রোগসহ স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। আমরা আমাদের মাস্টার প্ল্যান অনুসারে কাজ করছি। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতায় দুটি হাসপাতাল আছে, সেগুলোর উন্নয়নে কাজ চলছে।”
বাতাসের মান নির্ভর করে ভাসমান সূক্ষ্ম ধূলিকণার পরিমাণ (পার্টিকুলেট ম্যাটার বা পিএম-১০) এবং অতি সূক্ষ্ম ধূলিকণার পরিমাণের (পিএম ২.৫) ওপর, যা পরিমাপ করা হয় প্রতি ঘনমিটারে মাইক্রোগ্রাম (পার্টস পার মিলিয়ন-পিপিএম) এককে।
পিএম ২.৫, পিএম ১০ ছাড়াও সালফার ডাই অক্সাইড, কার্বন মনো-অক্সাইড, নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড ও গ্রাউন্ড লেভেল ওজোনে সৃষ্ট বায়ুদূষণ বিবেচনা করে এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স বা একিউআই তৈরি হয়। একিউআই নম্বর যত বাড়তে থাকে, বায়ুমান তত ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচিত হয়।
একিউআই শূন্য থেকে ৫০ এর মধ্যে থাকলে সেই এলাকার বাতাসকে ভালো বলা যায়। ৫১ থেকে ১০০ হলে বাতাসের মান মডারেট বা মোটামুটি গ্রহণযোগ্য ধরা হয়।
একিউআই ১০১ থেকে ১৫০ হলে সেই বাতাস স্পর্শকাতর শ্রেণির মানুষের (শিশু, বৃদ্ধ, শ্বাসকষ্টের রোগী) জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং ১৫১ থেকে ২০০ হলে তা সবার জন্যই অস্বাস্থ্যকর বিবেচিত হয়। আর একিউআই ২০ থেকে ৩০০ হলে তা খুবই অস্বাস্থ্যকর এবং ৩০১ থেকে ৫০০ হলে সেই বাতাসকে বিপদজনক ধরা হয়।
একিউআই বিপদজনক পর্যায়ে পৌঁছালে পুরো জনগোষ্ঠীর গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়, যা স্বাস্থ্য সতর্কতা জারির পরিস্থিতি সৃষ্টি করে।
আন্তর্জাতিক বায়ুমান প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার এর তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকায় একিউআই ছিল ১৫৫, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বেঁধে দেওয়া গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে সাড়ে ১২ গুণ বেশি। ওই সময় বিশ্বের দূষিত বায়ুর শহরগুলোর তালিকায় ঢাকার অবস্থান ছিল পঞ্চম।
জানুয়ারি মাসের এই ২৭ দিনের মধ্যে কোনোদিনই ঢাকায় একিউআই ১৫০ এর নিচে নামেনি। ২২ জানুয়ারি তা ২৭৯ তে উঠেছিল, যা এ মাসের সর্বোচ্চ।
চিকিৎসকরা বলছেন, বায়ুদূষণ হলে শ্বাসতন্ত্রের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় এবং শ্বাসতন্ত্রের রোগ বেড়ে যায়। শিশু ও বয়স্কদের ঝুঁকি থাকে এ সময় সবচেয়ে বেশি।
বায়ুদূষণের ফলে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে হাজারো মানুষকে ডায়াবেটিক, উচ্চ রক্তচাপ ও ক্যান্সারসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগতে হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের মহাপরিচালক ডা. মোহাম্মদ শাহাদাত হোসাইন মাহমুদ, সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, ইন্টান্যাশনাল সোসাইটি ফর আরবান হেলথ (আইএসইউএইচ) এর প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক জো আইভি বাফর্ড, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এনসিডি টিম লিডার (বাংলাদেশ) সাধনা ভাগওয়াত, অরবিস ইন্টারন্যাশনালের কান্ট্রি ডিরেক্ট্রর ডা. মুনির আহমেদ, ইউনিভার্সেল মেডিকেল রিসার্স সেন্টারের রিসার্স প্রধান অধ্যাপক ডা. রেদওয়ানুর রহমান, বিএসএমএমইউর পাবলিক হেলথ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ফারিহা হোসেন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ঢাকায় বায়ু দূষণে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি: মেয়র তাপস

আপডেট সময় : ১০:৪৩:৫৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা ‘বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত’ শহরে পরিণত হওয়ায় মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।
গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম জাতীয় সংক্রামক রোগ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের অধিবেশনে তিনি এ কথা বলেন।
ঢাকার সোনারগাঁও হোটেলে তিন দিনের এ সম্মেলন শেষ হবে ২৮ জানুয়ারি। বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামসহ ৩০টি দেশি বিদেশি প্রতিষ্ঠান এ সম্মেলনের আয়োজন করেছে।
মেয়র তাপস বলেন, বাংলাদেশে অসংক্রামক রোগ একটি নতুন ও চলমান বোঝা। ডায়বেটিস, হৃদরোগ, ক্যান্সারের মত অসংক্রামক রোগে আক্রান্তের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে।
“অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি কমানো এবং নগরবাসীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সিটি করপোরেশন ইতোমধ্যে উদ্যোগ নিয়েছে। পার্ক, হাঁটার জায়গা ও প্রশস্ত ফুটপাত তৈরি করা করছে। আমরা শহরে একটি স্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছি।
“কিন্তু দুভার্গ্যবশত বায়ুদূষণের দিক থেকে ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহর। বায়ুদূষণের কারণে শ্বাসতন্ত্রের নানা রোগসহ স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। আমরা আমাদের মাস্টার প্ল্যান অনুসারে কাজ করছি। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতায় দুটি হাসপাতাল আছে, সেগুলোর উন্নয়নে কাজ চলছে।”
বাতাসের মান নির্ভর করে ভাসমান সূক্ষ্ম ধূলিকণার পরিমাণ (পার্টিকুলেট ম্যাটার বা পিএম-১০) এবং অতি সূক্ষ্ম ধূলিকণার পরিমাণের (পিএম ২.৫) ওপর, যা পরিমাপ করা হয় প্রতি ঘনমিটারে মাইক্রোগ্রাম (পার্টস পার মিলিয়ন-পিপিএম) এককে।
পিএম ২.৫, পিএম ১০ ছাড়াও সালফার ডাই অক্সাইড, কার্বন মনো-অক্সাইড, নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড ও গ্রাউন্ড লেভেল ওজোনে সৃষ্ট বায়ুদূষণ বিবেচনা করে এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স বা একিউআই তৈরি হয়। একিউআই নম্বর যত বাড়তে থাকে, বায়ুমান তত ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচিত হয়।
একিউআই শূন্য থেকে ৫০ এর মধ্যে থাকলে সেই এলাকার বাতাসকে ভালো বলা যায়। ৫১ থেকে ১০০ হলে বাতাসের মান মডারেট বা মোটামুটি গ্রহণযোগ্য ধরা হয়।
একিউআই ১০১ থেকে ১৫০ হলে সেই বাতাস স্পর্শকাতর শ্রেণির মানুষের (শিশু, বৃদ্ধ, শ্বাসকষ্টের রোগী) জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং ১৫১ থেকে ২০০ হলে তা সবার জন্যই অস্বাস্থ্যকর বিবেচিত হয়। আর একিউআই ২০ থেকে ৩০০ হলে তা খুবই অস্বাস্থ্যকর এবং ৩০১ থেকে ৫০০ হলে সেই বাতাসকে বিপদজনক ধরা হয়।
একিউআই বিপদজনক পর্যায়ে পৌঁছালে পুরো জনগোষ্ঠীর গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়, যা স্বাস্থ্য সতর্কতা জারির পরিস্থিতি সৃষ্টি করে।
আন্তর্জাতিক বায়ুমান প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার এর তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকায় একিউআই ছিল ১৫৫, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বেঁধে দেওয়া গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে সাড়ে ১২ গুণ বেশি। ওই সময় বিশ্বের দূষিত বায়ুর শহরগুলোর তালিকায় ঢাকার অবস্থান ছিল পঞ্চম।
জানুয়ারি মাসের এই ২৭ দিনের মধ্যে কোনোদিনই ঢাকায় একিউআই ১৫০ এর নিচে নামেনি। ২২ জানুয়ারি তা ২৭৯ তে উঠেছিল, যা এ মাসের সর্বোচ্চ।
চিকিৎসকরা বলছেন, বায়ুদূষণ হলে শ্বাসতন্ত্রের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় এবং শ্বাসতন্ত্রের রোগ বেড়ে যায়। শিশু ও বয়স্কদের ঝুঁকি থাকে এ সময় সবচেয়ে বেশি।
বায়ুদূষণের ফলে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে হাজারো মানুষকে ডায়াবেটিক, উচ্চ রক্তচাপ ও ক্যান্সারসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগতে হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের মহাপরিচালক ডা. মোহাম্মদ শাহাদাত হোসাইন মাহমুদ, সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, ইন্টান্যাশনাল সোসাইটি ফর আরবান হেলথ (আইএসইউএইচ) এর প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক জো আইভি বাফর্ড, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এনসিডি টিম লিডার (বাংলাদেশ) সাধনা ভাগওয়াত, অরবিস ইন্টারন্যাশনালের কান্ট্রি ডিরেক্ট্রর ডা. মুনির আহমেদ, ইউনিভার্সেল মেডিকেল রিসার্স সেন্টারের রিসার্স প্রধান অধ্যাপক ডা. রেদওয়ানুর রহমান, বিএসএমএমইউর পাবলিক হেলথ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ফারিহা হোসেন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।