প্রত্যাশা ডেস্ক : ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের তা-বে বাঁধ ভেঙে খুলনার কয়রা উপজেলার অন্তত ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়। সরকারি উদ্যাগ না থাকায় স্থানীয়রা স্বপ্রণোদিত হয়ে বাঁধ নির্মাণ করছেন। গতকাল মঙ্গলবার সকালে সেই বাঁধের নির্মাণকাজ চলা অবস্থায় কয়রার মহারাজপুর ইউনিয়নের দশহালিয়া এলাকায় ট্রলারে করে উপস্থিত হন খুলনা-৬ (পাইকগাছা-কয়রা) আসনের সংসদ সদস্য মো. আক্তারুজ্জামান। এ সময় সাংসদকে বহনকারী ট্রলার লক্ষ্য করে কাঁদা ছুড়তে থাকেন বাঁধ নির্মাণকারীরা। উত্তেজিত জনতার রোষানলে পড়ে ট্রলার ঘুরিয়ে ফিরে আসতে হয় সাংসদকে। পরে অবশ্য পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার পর সাংসদ পুনরায় সেখানে যান।
গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কপোতাক্ষ নদের তীরে দশহালিয়া এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
তবে সাংসদ আক্তারুজ্জামান দাবি করেছেন, স্থানীয়রা তার ট্রলার লক্ষ্য করে কাঁদা ছোঁড়েনি। বিকাল চারটায় তার সঙ্গে একাধিক সংবাদসংস্থা কথা বলে।
সাংসদ বলেন, ‘কোনো ভুল বোঝাবুঝি হয়নি। মুশকিল হচ্ছে, হাজার হাজার মানুষ কাজ করছে। তাদের তো কষ্ট। মানুষের ঘর-দুয়ারে পানি উঠে গেছে। তারা আমার কাছে দাবি করেছে, আপনার মতো একটা মানুষ থাকতে দ্রুত বাঁধটা হয় না কেন? তারপর আমি নেমে তাদের খিচুড়ি, চিড়া-গুড় এসব খাওয়াইয়ে ওদের সঙ্গে একটু কোদাল ধরলাম, মাটি কেটে দিলাম। কিছুক্ষণ আগে চলে এলাম।’
ইতিমধ্যে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন প্রসঙ্গে সাংসদ বলেন, ‘ওই নিউজ সঠিক না। তারা বলেছেন আমরা পেয়েছি। আমি বললাম, পাইলেই যে নিউজ করতে হয়, এটা কি সঠিক?’
আখতারুজ্জামান বলেন, ‘তারা আমাকে তাড়াবে কেন? এখানকার লোক আমাকে তাড়ানোর লোক নাকি? এখন আমি আবার আরেকটা সাইটে যাব।’
টেকসই বাঁধ নির্মাণের প্রকল্পটি এখন একনেকের অনুমোদনের জন্য অপেক্ষমাণ জানিয়ে সাংসদ বলেন, ‘যে টাকাটা পাস হচ্ছে, একনেকে আছে। একনেক মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ারভুক্ত। এই বাঁধ নিয়ে অনেকে রাজনীতি করে। কিন্তু মানুষের জীবন নিয়ে তো আর রাজনীতি করা ঠিক না।’
বাঁধ নির্মাণকারীরা জানান, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের সময় গত বুধবার জলোচ্ছ্বাসে ভেঙে যায় কয়রার বাঁধ। এতে ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে সাগরের লোনাজলে। নিয়মিত জোয়ারভাটা আসা-যাওয়া করছে গ্রামগুলোর মধ্য দিয়ে। এর আগে ঘূর্ণিঝড় আইলার সময়ও একই দুর্ভোগে পড়েছিলেন তারা। কিন্তু টেকসই বাঁধ নির্মাণে সরকারের তেমন কোনো চেষ্টা নেই বলে দাবি তাদের। ফলে গত চার দিন ধরে স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ মেরামত করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সাংসদ একটি ট্রলারে করে নির্মাণাধীন বাঁধ এলাকায় যান। তাকে দেখে চটে যান স্থানীয়রা। সাংসদকে লক্ষ্য করে কাঁদা ছুড়তে শুরু করেন তারা। ট্রলার থেকে বারবার মাইকিং করা হলেও সাংসদের উপর কাঁদা ছোড়া বন্ধ হয়নি। টানা প্রায় ১০ মিনিট স্থানীয়দের এই প্রতিবাদের মুখে ঘটনাস্থল ছাড়তে হয় এমপিকে।
প্রায় আধা ঘণ্টা পর স্থানীয়দের শান্ত করা সম্ভব হয়। তখন আবার ঘটনাস্থলে ফিরে যান সাংসদ মো. আক্তারুজ্জামান।
পরে সাংসদ মাইকে স্থায়ী বাঁধ না করতে পারায় নিজের ব্যর্থতার কথা স্বীকার করেন এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে বাঁধ মেরামতের কাজে লেগে পড়েন সাংসদ। তবে তা পছন্দ হয়নি স্থানীয়দের। সাংসদ কাজে নামার পর অধিকাংশ মানুষ কাজ ছেড়ে দিয়ে চলে যান।
স্থানীয়রা বলছেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বেড়িবাঁধের কাজ নিয়ন্ত্রণ করেন সাংসদ। তার আত্মীয়-স্বজন ও ঘনিষ্ঠজনদের ওই ঠিকাদারির কাজ দেয়া হয়। এ কারণে বাঁধের কাজের মান ভালো হয় না। তাই জোয়ারের পানি সামান্য বাড়লেই ভেঙে যায় বাঁধ। আর দুর্ভোগে পড়ে সাধারণ মানুষ।
সাংসদের ট্রলারে কাঁদা ছোড়ার একটি ভিডিও চিত্র প্রকাশ পেয়েছে। ১৭ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, বাঁধের কাছে কেবল ট্রলার ভিড়েছে, এমন সময় সাংসদের ট্রলারকে লক্ষ্য করে বৃষ্টির মতো কাঁদা ছোড়া হচ্ছে। পরে সেখান থেকে পিছু হটে ট্রলারটি। মাইকে উত্তেজিত মানুষকে শান্ত হওয়ার আকুতি জানাচ্ছেন একজন। সাংসদের ট্রলার ফিরে যেতে দেখে হাততালি দেয়ার শব্দও শোনা যায় ভিডিওতে।
সকাল থেকে ভাঙা বাঁধের কাছে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কাজ করছিলেন কয়রা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জি এম মোহসিন রেজা, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম, বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির ছোট ভাই জি এম আবদুল্লাহ আল মামুন, বর্তমান নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী আবদুল্লাহ আল মাহমুদসহ আরও অনেকেই। ঘটনাটি তাদের সামনেই ঘটছে এবং এ ঘটনায় বিস্মিত হয়েছেন তারা।
এস এম শফিকুল ইসলাম জানান, স্থানীয়দের সঙ্গে তারা কাজ করছিলেন, এমন সময় সাংসদ এসেছেন শুনেই দেখতে পান সাধারণ মানুষ কাঁদা ছুড়ে মারছে। এতে সাংসদের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কাঁদা লাগে। চেষ্টা করেও সাধারণ মানুষকে নিবৃত্ত করা যায়নি।
দুপুরে কয়রা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রবিউল ইসলাম বলেন, ‘ভুল–বোঝাবুঝির কারণে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই ভুল–বোঝাবুঝির অবসান হয়েছে। সাংসদ বাঁধের কাছেই আছেন।’
জনতার রোষানলে পাইকগাছা-কয়রার এমপি
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ