ঢাকা ১১:১৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫

সংসদে শাবি ভিসির কড়া সমালোচনা, অপসারণ চাইলেন জাপার এমপিরা

  • আপডেট সময় : ০২:০২:২২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২২
  • ৮০ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে গত কয়েকদিন ধরে উত্তাল সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি)। দফায় দফায় আলোচনার জন্য শিক্ষার্থীদের আহ্বান জানালেও তা হয়নি। এমন অবস্থায় এবার সংসদে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিনের অপসারণের দাবি উঠেছে খোদ জাতীয় সংসদে। ছাত্রদের দাবি দাওয়া নিয়ে শুরু থেকে উপাচার্য ব্যবস্থা না নেয়াসহ শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার ঘটনায় উপাচার্যের কড়া সমালোচনা করে তাকে পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার দাবি করেন বিরোধী দলের একাধিক সংসদ সদস্য।
গতকাল রোববার সকালে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশন শুরু হলে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ ও পীর ফজলুর রহমান তার অপসারণ দাবি করেন। কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘ভিসি কোনো স্থায়ী পদ না যে একজন ভিসি চলে গেলে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাবে। ভিসিকে অপসারণের দাবিতে ছাত্ররা যদি অনশন করে এর চেয়ে দুঃখজনক আর কিছু নেই।’
গত ১৩ জানুয়ারি শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদ লিজার বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েক শ ছাত্রী।
১৬ জানুয়ারি বিকেলে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন। তখন শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করে উপাচার্যকে মুক্ত করে পুলিশ। যা নিয়ে সমালোচনা হয়েছে বিভিন্ন মহলে। এরপর পুলিশ ৩০০ জনকে আসামি করে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করে। সেদিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীরা তা উপেক্ষা করে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনে নামেন। গত বুধবার থেকে শিক্ষার্থীরা আমরণ অনশন শুরু করেন।
কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, ‘আজ ১১ দিন যাবৎ একটি খবর পত্রিকার পাতায় এবং টেলিভিশনে আসছে। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ভিসির বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন পদত্যাগের দাবিতে। ১১ দিন ধরে তারা অনশনে আছেন। ১৬ জন এরই মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। শুনলাম শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, তোমরা তোমাদের দাবিদাওয়া রেখে ঢাকায় আসো। আমরা সবাই ছাত্র আন্দোলন করেছি। আন্দোলনের মাঠ ছেড়ে ছাত্ররা কারও সঙ্গে দেখা করতে ঢাকায় আসবে না।’
তিনি বলেন, ‘মন্ত্রীর উচিত ছিল ওখানে যাওয়া। মোনায়েম খান বহুবার আমাদের বঙ্গভবনে ডেকেছেন, আমরা যখন ছাত্র ছিলাম বঙ্গভবনের দাওয়াত আমরা প্রত্যাখ্যান করেছি। আমরা কখনো কোনো আন্দোলন করতে গিয়ে বঙ্গভবনে দাওয়াত খেতে যাইনি। ছাত্ররা কেন আসবে আপনার কাছে? প্রত্যেকটা ছাত্র আন্দোলন এ দেশে হয়েছে যৌক্তিকভাবে। যখনই যারা সরকারে থাকে, তারা আন্দোলনকে অযৌক্তিক মনে করে।
উপাচার্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘ভিসি কোনো স্থায়ী পদ না যে একজন ভিসি চলে গেলে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাবে। ভিসিকে অপসারণের দাবিতে ছাত্ররা যদি অনশন করে এর চেয়ে দুঃখজনক আর কিছু নেই। তাহলে বুঝতে হবে, এই ভিসির ওপর তাদের কোনো বিশ্বাস নেই, আস্থা নেই, ভালোবাসা নেই, শ্রদ্ধাবোধ নেই। এটা থাকাও উচিত না। ওনার যদি বিন্দুমাত্র আত্মসম্মানবোধ থাকত, তাহলে উনি এভাবে বসে থাকতেন না।’
কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, ‘দাবি নিয়ে ছাত্ররা ভিসির কাছে গিয়েছিল, তিনি তাদের কথা শোনেননি। শিক্ষার্থীরা তখন আন্দোলনে এলো। এই আন্দোলনে পুলিশ ডেকে আনল। এটা কি আইয়ুব খান, মোনায়েম খানের যুগ নাকি যে কথায় কথায় পুলিশ আনবেন। ভিসি ছাত্র-ছাত্রীদের মারল, আমরা দেখলাম। লাঠিপেটা করল। কেন এটা করল? কোনো ছাত্র আন্দোলনকেই ছোট করে দেখা উচিত না। আমি মনে করি, অবিলম্বে আর কোনো তদন্ত রিপোর্ট নয়, আলাপ-আলোচনা নয়, শিক্ষামন্ত্রী আছেন, প্রধানমন্ত্রী আছেন। ভিসিকে আজকের মধ্যে ওখান থেকে উইথড্র করে নিয়ে আসেন। ছাত্রদের ক্লাসে ফিরে যেতে সাহায্য করেন।’
জাতীয় পার্টির আরেক সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান বলেন, ‘সিলেটের সর্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে লাগাতার আন্দোলন চলছে। ভিসির পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু হওয়ার পরও তিনি অভিভাবক হিসেবে ছাত্রদের সঙ্গে কোনো আলাপ-আলোচনা না করার কারণে একপর্যায়ে আমরণ অনশন কর্মসূচিতে যায়।
‘শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে আছেন। কিন্তু এই ভিসি নির্লজ্জের মতো, সব আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে বসে আছেন। প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা তাকে চায় না, কিন্তু তিনি একটি লক্ষ্মীন্দরের বাসার মতো তার বাসাকে বানিয়ে সেখানে আছেন। তিনি পদত্যাগ করবেন না। এ অবস্থায় শিক্ষামন্ত্রীও আলোচনার চেষ্টা করেছেন। শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হচ্ছে। ভিসি কীভাবে বাসায় থাকেন? তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ না করলে সরকারের উচিত তাকে আজকের মধ্যে অপসারণ করে শিক্ষার্থীদের হলে ফিরে যেতে সাহায্য করা।

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

সংসদে শাবি ভিসির কড়া সমালোচনা, অপসারণ চাইলেন জাপার এমপিরা

আপডেট সময় : ০২:০২:২২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক : উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে গত কয়েকদিন ধরে উত্তাল সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি)। দফায় দফায় আলোচনার জন্য শিক্ষার্থীদের আহ্বান জানালেও তা হয়নি। এমন অবস্থায় এবার সংসদে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিনের অপসারণের দাবি উঠেছে খোদ জাতীয় সংসদে। ছাত্রদের দাবি দাওয়া নিয়ে শুরু থেকে উপাচার্য ব্যবস্থা না নেয়াসহ শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার ঘটনায় উপাচার্যের কড়া সমালোচনা করে তাকে পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার দাবি করেন বিরোধী দলের একাধিক সংসদ সদস্য।
গতকাল রোববার সকালে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশন শুরু হলে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ ও পীর ফজলুর রহমান তার অপসারণ দাবি করেন। কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘ভিসি কোনো স্থায়ী পদ না যে একজন ভিসি চলে গেলে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাবে। ভিসিকে অপসারণের দাবিতে ছাত্ররা যদি অনশন করে এর চেয়ে দুঃখজনক আর কিছু নেই।’
গত ১৩ জানুয়ারি শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদ লিজার বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েক শ ছাত্রী।
১৬ জানুয়ারি বিকেলে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন। তখন শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করে উপাচার্যকে মুক্ত করে পুলিশ। যা নিয়ে সমালোচনা হয়েছে বিভিন্ন মহলে। এরপর পুলিশ ৩০০ জনকে আসামি করে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করে। সেদিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীরা তা উপেক্ষা করে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনে নামেন। গত বুধবার থেকে শিক্ষার্থীরা আমরণ অনশন শুরু করেন।
কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, ‘আজ ১১ দিন যাবৎ একটি খবর পত্রিকার পাতায় এবং টেলিভিশনে আসছে। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ভিসির বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন পদত্যাগের দাবিতে। ১১ দিন ধরে তারা অনশনে আছেন। ১৬ জন এরই মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। শুনলাম শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, তোমরা তোমাদের দাবিদাওয়া রেখে ঢাকায় আসো। আমরা সবাই ছাত্র আন্দোলন করেছি। আন্দোলনের মাঠ ছেড়ে ছাত্ররা কারও সঙ্গে দেখা করতে ঢাকায় আসবে না।’
তিনি বলেন, ‘মন্ত্রীর উচিত ছিল ওখানে যাওয়া। মোনায়েম খান বহুবার আমাদের বঙ্গভবনে ডেকেছেন, আমরা যখন ছাত্র ছিলাম বঙ্গভবনের দাওয়াত আমরা প্রত্যাখ্যান করেছি। আমরা কখনো কোনো আন্দোলন করতে গিয়ে বঙ্গভবনে দাওয়াত খেতে যাইনি। ছাত্ররা কেন আসবে আপনার কাছে? প্রত্যেকটা ছাত্র আন্দোলন এ দেশে হয়েছে যৌক্তিকভাবে। যখনই যারা সরকারে থাকে, তারা আন্দোলনকে অযৌক্তিক মনে করে।
উপাচার্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘ভিসি কোনো স্থায়ী পদ না যে একজন ভিসি চলে গেলে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাবে। ভিসিকে অপসারণের দাবিতে ছাত্ররা যদি অনশন করে এর চেয়ে দুঃখজনক আর কিছু নেই। তাহলে বুঝতে হবে, এই ভিসির ওপর তাদের কোনো বিশ্বাস নেই, আস্থা নেই, ভালোবাসা নেই, শ্রদ্ধাবোধ নেই। এটা থাকাও উচিত না। ওনার যদি বিন্দুমাত্র আত্মসম্মানবোধ থাকত, তাহলে উনি এভাবে বসে থাকতেন না।’
কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, ‘দাবি নিয়ে ছাত্ররা ভিসির কাছে গিয়েছিল, তিনি তাদের কথা শোনেননি। শিক্ষার্থীরা তখন আন্দোলনে এলো। এই আন্দোলনে পুলিশ ডেকে আনল। এটা কি আইয়ুব খান, মোনায়েম খানের যুগ নাকি যে কথায় কথায় পুলিশ আনবেন। ভিসি ছাত্র-ছাত্রীদের মারল, আমরা দেখলাম। লাঠিপেটা করল। কেন এটা করল? কোনো ছাত্র আন্দোলনকেই ছোট করে দেখা উচিত না। আমি মনে করি, অবিলম্বে আর কোনো তদন্ত রিপোর্ট নয়, আলাপ-আলোচনা নয়, শিক্ষামন্ত্রী আছেন, প্রধানমন্ত্রী আছেন। ভিসিকে আজকের মধ্যে ওখান থেকে উইথড্র করে নিয়ে আসেন। ছাত্রদের ক্লাসে ফিরে যেতে সাহায্য করেন।’
জাতীয় পার্টির আরেক সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান বলেন, ‘সিলেটের সর্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে লাগাতার আন্দোলন চলছে। ভিসির পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু হওয়ার পরও তিনি অভিভাবক হিসেবে ছাত্রদের সঙ্গে কোনো আলাপ-আলোচনা না করার কারণে একপর্যায়ে আমরণ অনশন কর্মসূচিতে যায়।
‘শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে আছেন। কিন্তু এই ভিসি নির্লজ্জের মতো, সব আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে বসে আছেন। প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা তাকে চায় না, কিন্তু তিনি একটি লক্ষ্মীন্দরের বাসার মতো তার বাসাকে বানিয়ে সেখানে আছেন। তিনি পদত্যাগ করবেন না। এ অবস্থায় শিক্ষামন্ত্রীও আলোচনার চেষ্টা করেছেন। শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হচ্ছে। ভিসি কীভাবে বাসায় থাকেন? তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ না করলে সরকারের উচিত তাকে আজকের মধ্যে অপসারণ করে শিক্ষার্থীদের হলে ফিরে যেতে সাহায্য করা।