ঢাকা ১১:৩২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১১ জুন ২০২৫

ভেজাল গুড় ছড়াচ্ছে দেশে

  • আপডেট সময় : ০১:২৬:৫৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২২
  • ১০২ বার পড়া হয়েছে

সাভার সংবাদদাতা : ঢাকার সাভারের নামাবাজার পাইকারি গুড়ের আড়ৎয়ের জন্য বিখ্যাত অনেকদিন থেকেই। আর সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে এখানে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু ভেজাল গুড়ের কারখানা। যেখানে গোখাদ্য, গরুর চর্বি ও কাপড়ের রং, চুন ও আটা মিশিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ভেজাল আঁখ ও খেজুরের গুড়। এগুলোর মধ্যে নেই আঁখ কিংবা খেজুর রসের লেশমাত্র।
এমনই একটি কারখানা রুপা এন্টারপ্রাইজ। এখানে দিনের আলোয় গুড় উৎপাদন বন্ধ থাকলেও রাতের আঁধারে শুরু হয় ভেজাল গুড় তৈরি। শেষ রাতের মধ্যেই বিপুল পরিমান ভেজাল গুড় উৎপাদন করে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে সারাদেশের খোলা বাজারে। আর এসব গুড় কিনে নিজের অজান্তেই বিষ খাচ্ছেন ভোক্তারা। তবে জেনে বুঝে এমন গুড় বিক্রি থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন সাভারের স্থানীয় খুচরা ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি ভেজালের কারণে সাভারে উৎপাদিত গুড় তারা এখন বিক্রি করেন না। সরেজমিনে সাভার নামাবাজার এলাকার রুপা এন্টারপ্রাইজ নামে ওই গুড় তৈরির কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, সারি সারি আটার বস্তা, আরও সাজানো রয়েছে গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত চিটাগুড়, বিষাক্ত কাপড়ের রং, গরুর চর্বি আর কাগজে লাগানোর এক ধরনের আঠা। এসবের সংমিশ্রণে তারা তৈরি করছেন মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর ভেজাল গুড়। রাতের আধারে রুপা এন্টারপ্রাইজ নামে এই গুড় তৈরির কারখানায় নিয়মিত উৎপাদন করা হচ্ছে এসব ভেজাল গুড়। প্রতিষ্ঠানটির মালিকানায় রয়েছেন গৌতম সাহা নামে এক ব্যক্তি। স্থানীয়দের অভিযোগ তিনি প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে কিছু প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তিকে ম্যানেজ করে চালিয়ে যাচ্ছেন এই ভেজাল গুড়ের কারবার। দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে কিভাবে এমন খাদ্য উৎপাদন হচ্ছে এমন প্রশ্ন তুলছেন এলাকাবাসী। ইতিপূর্বে ২০১৭ সালে একবার র‌্যাব অভিযান চালায় এই কারখানায়। ওই সময় দুই লাখ টাকা জরিমানা করে কারখানার সমস্ত কাঁচামাল ও উৎপাদিত গুড় ফেলে দেয়া হয় নদীতে। পরবর্তীতে আবারও একই অভিযোগে এই কারখানায় সাভার উপজেলা রাজস্ব সার্কেল (ভূমি) অভিযান চালিয়ে জরিমানা করে। কিন্তু এতেও থেমে নেই তাদের ভেজাল গুড় উৎপাদন। সাভার নামাবাজারের খুচরা গুড় ব্যবসায়ী মৃদুল সাহা বলেন, ময়দা, চিনি, চিটাগুড় ও চর্বির সংমিশ্রণে নামাবাজারে গৌতম বাবু গুড় বানান বলে আমরা জানি। সাভারে এসব ভেজাল গুড় উৎপাদন হওয়ায় আমরা সাভারের কোনো গুড়ই বিক্রি করি না। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নির্ভেজাল গুড় সংগ্রহ করে বিক্রি করি। আরেকজন ব্যবসায়ী দুলাল দাশ ৩২ বছর ধরে সাভারে গুড় বিক্রি করেন। তিনি বলেন, ‘সাভারে গৌতমের গুড় চলে না। সাভারের বাইরে ওসব গুড় বিক্রি করেন গৌতম। আমরা জেনেশুনে এমন গুড় বিক্রি করি না।’ তবে তার দাবি বর্তমানে চিনির মিশ্রণ ছাড়া কোনো গুড়ই উৎপাদন হয় না। অভিযুক্ত রুপা এন্টারপ্রাইজের মালিক গৌতম সাহা বলেন, আমরা মূলত কারখানায় গোখাদ্য উৎপাদন করি। আমরা গুড় উৎপাদন করি না। এসব মিথ্যা কথা। তবে প্রতিবেদকের কাছে গুড় উৎপাদনের ভিডিও সংরক্ষিত আছে, এমন কথার জবাবে কিছু না বলে বিষয়টি এড়িয়ে যান যৌতম।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সায়েমুল হুদা বলেন, এ ধরনের খাদ্য মানবদেহে প্রবেশের ফলে ক্যানসারসহ নানা রোগের সৃষ্টি হতে পারে এমনকি মানুষের বিভিন্ন অর্গ্যান ড্যামেজ (ধ্বংস) হতে পারে। শিশুদের জন্য তো এমন খাদ্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এসব খাদ্য থেকে অব্যশ্যই বিরত থাকতে হবে। সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাজহারুল ইসলাম বলেন, নিরাপদ খাদ্য আইন-২০১৩ এর ২৩ ধারায় বিষাক্ত দ্রব্যের মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদন একই আইনের ২৫ ধারায় ভেজাল খাদ্য উৎপাদন এবং ৩৩ ধারায় মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর বিবেচনায় এ ধরনের খাদ্য উৎপাদন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর ব্যত্যয় হলে দ- আরোপের বিধান রয়েছে। ইউএনও বলেন, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ভেজাল গুড় ছড়াচ্ছে দেশে

আপডেট সময় : ০১:২৬:৫৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২২

সাভার সংবাদদাতা : ঢাকার সাভারের নামাবাজার পাইকারি গুড়ের আড়ৎয়ের জন্য বিখ্যাত অনেকদিন থেকেই। আর সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে এখানে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু ভেজাল গুড়ের কারখানা। যেখানে গোখাদ্য, গরুর চর্বি ও কাপড়ের রং, চুন ও আটা মিশিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ভেজাল আঁখ ও খেজুরের গুড়। এগুলোর মধ্যে নেই আঁখ কিংবা খেজুর রসের লেশমাত্র।
এমনই একটি কারখানা রুপা এন্টারপ্রাইজ। এখানে দিনের আলোয় গুড় উৎপাদন বন্ধ থাকলেও রাতের আঁধারে শুরু হয় ভেজাল গুড় তৈরি। শেষ রাতের মধ্যেই বিপুল পরিমান ভেজাল গুড় উৎপাদন করে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে সারাদেশের খোলা বাজারে। আর এসব গুড় কিনে নিজের অজান্তেই বিষ খাচ্ছেন ভোক্তারা। তবে জেনে বুঝে এমন গুড় বিক্রি থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন সাভারের স্থানীয় খুচরা ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি ভেজালের কারণে সাভারে উৎপাদিত গুড় তারা এখন বিক্রি করেন না। সরেজমিনে সাভার নামাবাজার এলাকার রুপা এন্টারপ্রাইজ নামে ওই গুড় তৈরির কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, সারি সারি আটার বস্তা, আরও সাজানো রয়েছে গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত চিটাগুড়, বিষাক্ত কাপড়ের রং, গরুর চর্বি আর কাগজে লাগানোর এক ধরনের আঠা। এসবের সংমিশ্রণে তারা তৈরি করছেন মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর ভেজাল গুড়। রাতের আধারে রুপা এন্টারপ্রাইজ নামে এই গুড় তৈরির কারখানায় নিয়মিত উৎপাদন করা হচ্ছে এসব ভেজাল গুড়। প্রতিষ্ঠানটির মালিকানায় রয়েছেন গৌতম সাহা নামে এক ব্যক্তি। স্থানীয়দের অভিযোগ তিনি প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে কিছু প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তিকে ম্যানেজ করে চালিয়ে যাচ্ছেন এই ভেজাল গুড়ের কারবার। দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে কিভাবে এমন খাদ্য উৎপাদন হচ্ছে এমন প্রশ্ন তুলছেন এলাকাবাসী। ইতিপূর্বে ২০১৭ সালে একবার র‌্যাব অভিযান চালায় এই কারখানায়। ওই সময় দুই লাখ টাকা জরিমানা করে কারখানার সমস্ত কাঁচামাল ও উৎপাদিত গুড় ফেলে দেয়া হয় নদীতে। পরবর্তীতে আবারও একই অভিযোগে এই কারখানায় সাভার উপজেলা রাজস্ব সার্কেল (ভূমি) অভিযান চালিয়ে জরিমানা করে। কিন্তু এতেও থেমে নেই তাদের ভেজাল গুড় উৎপাদন। সাভার নামাবাজারের খুচরা গুড় ব্যবসায়ী মৃদুল সাহা বলেন, ময়দা, চিনি, চিটাগুড় ও চর্বির সংমিশ্রণে নামাবাজারে গৌতম বাবু গুড় বানান বলে আমরা জানি। সাভারে এসব ভেজাল গুড় উৎপাদন হওয়ায় আমরা সাভারের কোনো গুড়ই বিক্রি করি না। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নির্ভেজাল গুড় সংগ্রহ করে বিক্রি করি। আরেকজন ব্যবসায়ী দুলাল দাশ ৩২ বছর ধরে সাভারে গুড় বিক্রি করেন। তিনি বলেন, ‘সাভারে গৌতমের গুড় চলে না। সাভারের বাইরে ওসব গুড় বিক্রি করেন গৌতম। আমরা জেনেশুনে এমন গুড় বিক্রি করি না।’ তবে তার দাবি বর্তমানে চিনির মিশ্রণ ছাড়া কোনো গুড়ই উৎপাদন হয় না। অভিযুক্ত রুপা এন্টারপ্রাইজের মালিক গৌতম সাহা বলেন, আমরা মূলত কারখানায় গোখাদ্য উৎপাদন করি। আমরা গুড় উৎপাদন করি না। এসব মিথ্যা কথা। তবে প্রতিবেদকের কাছে গুড় উৎপাদনের ভিডিও সংরক্ষিত আছে, এমন কথার জবাবে কিছু না বলে বিষয়টি এড়িয়ে যান যৌতম।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সায়েমুল হুদা বলেন, এ ধরনের খাদ্য মানবদেহে প্রবেশের ফলে ক্যানসারসহ নানা রোগের সৃষ্টি হতে পারে এমনকি মানুষের বিভিন্ন অর্গ্যান ড্যামেজ (ধ্বংস) হতে পারে। শিশুদের জন্য তো এমন খাদ্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এসব খাদ্য থেকে অব্যশ্যই বিরত থাকতে হবে। সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাজহারুল ইসলাম বলেন, নিরাপদ খাদ্য আইন-২০১৩ এর ২৩ ধারায় বিষাক্ত দ্রব্যের মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদন একই আইনের ২৫ ধারায় ভেজাল খাদ্য উৎপাদন এবং ৩৩ ধারায় মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর বিবেচনায় এ ধরনের খাদ্য উৎপাদন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর ব্যত্যয় হলে দ- আরোপের বিধান রয়েছে। ইউএনও বলেন, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।