ঢাকা ০৮:১২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ জুলাই ২০২৫

পুরান বাসে নতুন সেবা: সাবধানের মার নেই

  • আপডেট সময় : ০৯:২১:০৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২১
  • ১০০ বার পড়া হয়েছে

মোস্তফা কামাল : রুটভিত্তিক কোম্পানির অধীনে বাস সেবা চলছে ঢাকায়। কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর থেকে রাজধানী হয়ে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর রুটে ৫০টি বাস দিয়ে শুরু হয়েছে সেবাটি। নাম দেয়া হয়েছে ঢাকা নগর পরিবহন। ঢাকা উত্তর সিটির প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের ২০১৫ সালে নেয়া উদ্যোগ বাস্তবতার দেখলো ৬ বছর পর গত বিদায়ী বছরের শেষ সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস রবিবার ২৬ ডিসেম্বর রবিবার।
ঢাকার পুরোনো, লক্কড়ঝক্কড় ও জীর্ণ বাসগুলোকে সরিয়ে চার হাজার নতুন বাস নামানোর ঘোষণা ছিল তার। ঘোষণা দৃষ্টে না হলেও, বাস পুরনো হলেও, আংশিক ও পরীক্ষামূলক হলেও নতুন সেবাটি আশা জাগিয়েছে জনমানুষের মধ্যে। পর্যায়ক্রমে ১০০টি বাস নামানো এবং ২০২৩ সালের মধ্যে পুরো ঢাকায় এই সেবা চালুর আশ্বাস দেয়া হয়েছে।
ঢাকার ছোটবড় ২৯১ টি রুটের মধ্যে মাত্র কয়েকটিতে ৫০টি বাস কিভাবে কুলাবে-প্রশ্নটি থেকেই যায়। তার চেয়েও বড় কথা এই সেবা ব্যর্থ বা লেজেগোবরে হয়ে পড়লে ঢাকায় গণপরিবহনে নৈরাজ্য কেবল ফিরেই আসবে না, তা যে কী জঘন্য পর্যায়ে যাবে- কল্পনাও করা যায় না। তাই সাবধানতা এবং ব্যবস্থাপনায় আন্তরিকতা লাগবে শতভাগ।
৫০টি বাসের মধ্যে বিআরটিসির দোতলা বাস ৩০টি। বেসরকারি কোম্পানি ট্রান্সসিলভার ২০টি। বেসরকারি বাসগুলো নতুন হবে জানালেও শেষ পর্যন্ত সবুজ রং লাগিয়ে পুরোনোই দেয়া হয়েছে। তারপরও মন্দের চেয়ে ঢের ভালো। লক্ষণও ভালো। কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর থেকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর, গুলিস্তান, মতিঝিল, সাইনবোর্ড হয়ে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার রুটে নির্ধারিত জায়গা ছাড়া কোথাও থামছে না বাসগুলো। টিকিট ছাড়া ওঠা যাচ্ছে না। কেউ সেই চেষ্টাও করছে না।
ঘাটারচর থেকে চিটাগং রোড পর্যন্ত ভাড়া ৫৫ টাকা। শিক্ষার্থী ছাড়া সর্বনি¤œ ভাড়া ১০ টাকা। প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে দুই টাকা ১৫ পয়সা। তবে কেউ এক স্টেশন থেকে ঠিক পরের স্টেশনেই নামলে দিতে হয় ১০ টাকা। একটি ডিজিটাল যন্ত্রে যাত্রীর গন্তব্য মতো বাটন চাপলেই টিকিট বেরিয়ে আসছে। অন্যান্য পরিবহনের মতো ভিড় নেই । ভাড়াও অন্যদের চেয়ে কম। কাউন্টারে টিকিট কাটার ব্যবস্থায় কিছুটা নতুনত্ব আছে। রুটের ডান পাশ দিয়ে চলে। জ্যামে পড়ে না, থামেও না।
মোটামুটি মিটিট দশেক পরপরই কাউন্টারে বাস এসে থামছে। তবে রিকশা ও অন্যান্য গণপরিবহনের কাউন্টারের সামনে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে বিশৃঙ্খলা জিইয়ে রাখার একটি দুষ্টুচেষ্টা লক্ষণীয়। এতে বাস দাঁড়াতে ও যাত্রীদের উঠা-নামায় সমস্যা হচ্ছে। নতুন বলে সেবাটি সম্পর্কে অনেকে এখনো তেমন জানেন না। অন্য পরিবহনের মতো কাউন্টার ছাড়া যাত্রী না ওঠানামা না করায় লোকজন কিছুটা কম।
নতুন সেবাটিতে পুরনো পরিবহন ব্যবসায়ীদের সমস্যা হতে শুরু করেছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। দীর্ঘদিনের অনিয়মের বেনিফিসিয়ারি তারা। নতুন এ সেবাটি ঠিকঠাক মতো এগুলে তাদের ঝরে যেতে হতে পারে। তাই বলে তারা ঝরে যাবেন? চলে যাবেন এমন একটি ব্যবসার খনি ছেড়ে? কিছু ব্যক্তি বা হাত বদল হতে পারে। শঙ্কা এখানেই। নতুন যারা নিয়ন্ত্রণে এসেছেন তাদের অনেকেই রাজনীতি সংশ্লিষ্ট এবং পুরনোদের ছা-পোনা, শীষ্য-সামন্ত। মালিকদের বেশিরভাগই হয় রাজনৈতিক দলের সাথে সংযুক্ত নইলে প্রভাবশালী নেতাদের ঘনিষ্ঠ।
বলার অপেক্ষা রাখে না তারা অবশ্যই ক্ষমতাসীন দলেরই। অন্য দলেরও যে নেই এমন নয়। সেখানে ভাগে-যোগে একটা বাণিজ্যিক ক্রিয়াকর্ম চলে। ভাগে বা যোগে গোলমাল হলেই বাঁধে গ-গোল। স্বার্থগতভাবে তারা এক হয়ে যান। তাদের সম্মিলিত অ্যাকশনে সরকারের নাস্তানাবুদ হওয়ার ঘটনা বার বার দেখেছে মানুষ। ঢাকাসহ সারা দেশে চলাচল করা বাসগুলো চলে কয়েকটি কোম্পানির অধীনে। এসব কোম্পানির নিয়ন্ত্রকরা বাস মালিকদেরও জিম্মি করে ফেলে। রাজনীতি বা এই জগতের বাইরের কেউ বাস বা পরিবহন ব্যবসায় এলে লাভ দূরে থাক পুঁজি নিয়েও যেতে পারেন না। কারো কারো জীবনটাও যায়।
এ রকম অবস্থায় ঢাকার ছোটবড় ২৯১ টি রুটের মধ্যে মাত্র কয়েকটিতে ৫০টি বাস কিভাবে কুলাবে-প্রশ্নটি থেকেই যায়। তার চেয়েও বড় কথা এই সেবা ব্যর্থ বা লেজেগোবরে হয়ে পড়লে ঢাকায় গণপরিবহনে নৈরাজ্য কেবল ফিরেই আসবে না, তা যে কী জঘন্য পর্যায়ে যাবে- কল্পনাও করা যায় না। তাই সাবধানতা এবং ব্যবস্থাপনায় আন্তরিকতা লাগবে শতভাগ। একভাগ কম হলেও শঙ্কা থাকবে অন্তহীন।
লেখক: সাংবাদিক-কলামিস্ট; বার্তা সম্পাদক, বাংলাভিশন।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

পুরান বাসে নতুন সেবা: সাবধানের মার নেই

আপডেট সময় : ০৯:২১:০৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২১

মোস্তফা কামাল : রুটভিত্তিক কোম্পানির অধীনে বাস সেবা চলছে ঢাকায়। কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর থেকে রাজধানী হয়ে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর রুটে ৫০টি বাস দিয়ে শুরু হয়েছে সেবাটি। নাম দেয়া হয়েছে ঢাকা নগর পরিবহন। ঢাকা উত্তর সিটির প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের ২০১৫ সালে নেয়া উদ্যোগ বাস্তবতার দেখলো ৬ বছর পর গত বিদায়ী বছরের শেষ সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস রবিবার ২৬ ডিসেম্বর রবিবার।
ঢাকার পুরোনো, লক্কড়ঝক্কড় ও জীর্ণ বাসগুলোকে সরিয়ে চার হাজার নতুন বাস নামানোর ঘোষণা ছিল তার। ঘোষণা দৃষ্টে না হলেও, বাস পুরনো হলেও, আংশিক ও পরীক্ষামূলক হলেও নতুন সেবাটি আশা জাগিয়েছে জনমানুষের মধ্যে। পর্যায়ক্রমে ১০০টি বাস নামানো এবং ২০২৩ সালের মধ্যে পুরো ঢাকায় এই সেবা চালুর আশ্বাস দেয়া হয়েছে।
ঢাকার ছোটবড় ২৯১ টি রুটের মধ্যে মাত্র কয়েকটিতে ৫০টি বাস কিভাবে কুলাবে-প্রশ্নটি থেকেই যায়। তার চেয়েও বড় কথা এই সেবা ব্যর্থ বা লেজেগোবরে হয়ে পড়লে ঢাকায় গণপরিবহনে নৈরাজ্য কেবল ফিরেই আসবে না, তা যে কী জঘন্য পর্যায়ে যাবে- কল্পনাও করা যায় না। তাই সাবধানতা এবং ব্যবস্থাপনায় আন্তরিকতা লাগবে শতভাগ।
৫০টি বাসের মধ্যে বিআরটিসির দোতলা বাস ৩০টি। বেসরকারি কোম্পানি ট্রান্সসিলভার ২০টি। বেসরকারি বাসগুলো নতুন হবে জানালেও শেষ পর্যন্ত সবুজ রং লাগিয়ে পুরোনোই দেয়া হয়েছে। তারপরও মন্দের চেয়ে ঢের ভালো। লক্ষণও ভালো। কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর থেকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর, গুলিস্তান, মতিঝিল, সাইনবোর্ড হয়ে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার রুটে নির্ধারিত জায়গা ছাড়া কোথাও থামছে না বাসগুলো। টিকিট ছাড়া ওঠা যাচ্ছে না। কেউ সেই চেষ্টাও করছে না।
ঘাটারচর থেকে চিটাগং রোড পর্যন্ত ভাড়া ৫৫ টাকা। শিক্ষার্থী ছাড়া সর্বনি¤œ ভাড়া ১০ টাকা। প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে দুই টাকা ১৫ পয়সা। তবে কেউ এক স্টেশন থেকে ঠিক পরের স্টেশনেই নামলে দিতে হয় ১০ টাকা। একটি ডিজিটাল যন্ত্রে যাত্রীর গন্তব্য মতো বাটন চাপলেই টিকিট বেরিয়ে আসছে। অন্যান্য পরিবহনের মতো ভিড় নেই । ভাড়াও অন্যদের চেয়ে কম। কাউন্টারে টিকিট কাটার ব্যবস্থায় কিছুটা নতুনত্ব আছে। রুটের ডান পাশ দিয়ে চলে। জ্যামে পড়ে না, থামেও না।
মোটামুটি মিটিট দশেক পরপরই কাউন্টারে বাস এসে থামছে। তবে রিকশা ও অন্যান্য গণপরিবহনের কাউন্টারের সামনে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে বিশৃঙ্খলা জিইয়ে রাখার একটি দুষ্টুচেষ্টা লক্ষণীয়। এতে বাস দাঁড়াতে ও যাত্রীদের উঠা-নামায় সমস্যা হচ্ছে। নতুন বলে সেবাটি সম্পর্কে অনেকে এখনো তেমন জানেন না। অন্য পরিবহনের মতো কাউন্টার ছাড়া যাত্রী না ওঠানামা না করায় লোকজন কিছুটা কম।
নতুন সেবাটিতে পুরনো পরিবহন ব্যবসায়ীদের সমস্যা হতে শুরু করেছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। দীর্ঘদিনের অনিয়মের বেনিফিসিয়ারি তারা। নতুন এ সেবাটি ঠিকঠাক মতো এগুলে তাদের ঝরে যেতে হতে পারে। তাই বলে তারা ঝরে যাবেন? চলে যাবেন এমন একটি ব্যবসার খনি ছেড়ে? কিছু ব্যক্তি বা হাত বদল হতে পারে। শঙ্কা এখানেই। নতুন যারা নিয়ন্ত্রণে এসেছেন তাদের অনেকেই রাজনীতি সংশ্লিষ্ট এবং পুরনোদের ছা-পোনা, শীষ্য-সামন্ত। মালিকদের বেশিরভাগই হয় রাজনৈতিক দলের সাথে সংযুক্ত নইলে প্রভাবশালী নেতাদের ঘনিষ্ঠ।
বলার অপেক্ষা রাখে না তারা অবশ্যই ক্ষমতাসীন দলেরই। অন্য দলেরও যে নেই এমন নয়। সেখানে ভাগে-যোগে একটা বাণিজ্যিক ক্রিয়াকর্ম চলে। ভাগে বা যোগে গোলমাল হলেই বাঁধে গ-গোল। স্বার্থগতভাবে তারা এক হয়ে যান। তাদের সম্মিলিত অ্যাকশনে সরকারের নাস্তানাবুদ হওয়ার ঘটনা বার বার দেখেছে মানুষ। ঢাকাসহ সারা দেশে চলাচল করা বাসগুলো চলে কয়েকটি কোম্পানির অধীনে। এসব কোম্পানির নিয়ন্ত্রকরা বাস মালিকদেরও জিম্মি করে ফেলে। রাজনীতি বা এই জগতের বাইরের কেউ বাস বা পরিবহন ব্যবসায় এলে লাভ দূরে থাক পুঁজি নিয়েও যেতে পারেন না। কারো কারো জীবনটাও যায়।
এ রকম অবস্থায় ঢাকার ছোটবড় ২৯১ টি রুটের মধ্যে মাত্র কয়েকটিতে ৫০টি বাস কিভাবে কুলাবে-প্রশ্নটি থেকেই যায়। তার চেয়েও বড় কথা এই সেবা ব্যর্থ বা লেজেগোবরে হয়ে পড়লে ঢাকায় গণপরিবহনে নৈরাজ্য কেবল ফিরেই আসবে না, তা যে কী জঘন্য পর্যায়ে যাবে- কল্পনাও করা যায় না। তাই সাবধানতা এবং ব্যবস্থাপনায় আন্তরিকতা লাগবে শতভাগ। একভাগ কম হলেও শঙ্কা থাকবে অন্তহীন।
লেখক: সাংবাদিক-কলামিস্ট; বার্তা সম্পাদক, বাংলাভিশন।