ক্যাম্পাস ক্যারিয়ার ডেস্ক : দেড় দশকের বেশি সময় ধরে নারীদের আত্মনির্ভরশীল করতে কাজ করে যাচ্ছেন ঝরনা রায় (৫৩)। খাগড়াছড়ির দীঘিনালার পশ্চিম কাঁঠালতলী গ্রামের এই নারী এখন পর্যন্ত সাড়ে পাঁচ শ নারীকে বিনা মূল্যে সেলাই, নকশিকাঁথা সেলাই, পুতুল বানানো, পুঁতির বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরির প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। নারীদের অগ্রগতিতে অবদান রাখায় চট্টগ্রাম বিভাগীয় পর্যায়ে পেয়েছেন জয়িতা পুরস্কার, পেয়েছেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের পুরস্কারসহ অসংখ্য সম্মাননা।
২০০৬ সালের কথা। স্বামী মণিশংকর রায়কে হারিয়ে যশোরের অভয়নগর থেকে দীঘিনালার আলীনগরে চলে আসেন ঝরনা রায়। আলীনগরের মানুষদের আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ করেন অল্প সময়ে। এলাকার মানুষের কল্যাণে কাজ শুরু করেন। গ্রামের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার জন্য ২০০৭ সালে ঝরনাধারা বিদ্যানিকেতন নামে একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন ঝরনা রায়। তখন থেকেই শুরু নারীদের স্বাবলম্বী করার কাজ। ঝরনা রায়ের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, উঠানে নারী ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে আপেলের বর্জ্য ফোম ঝুড়ি দিয়ে পুতুল, কাঠের আঁশ দিয়ে শিল্পকর্ম, নকশিকাঁথা, পুঁতির ব্যাগ বানানো শেখানোতে ব্যস্ত ঝরনা রায়। কাজের ফাঁকে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। স্বামীকে হারানোর কথা উঠতেই কান্নাভেজা চোখে বললেন, ‘এখন আমার সবকিছুই সমাজের পিছিয়ে পড়া নারীদের নিয়ে। ওরাই আমার আপনজন, ওরাই আমার স্বজন।’
জানালেন, এখন বিভিন্ন গ্রামে সপ্তাহে সোম ও মঙ্গলবার দুই দিন সেলাই, বৃহস্পতি ও শুক্রবার গান এবং বুধবার, শনিবার ও রোববার আপেলের বর্জ্য ফোম ঝুড়ি দিয়ে পুতুল, নকশিকাঁথা সেলাই ও কাঠের আঁশ দিয়ে কারুকাজ শেখান। এ জন্য তিনি কোনো পারিশ্রমিক নেন না। ঝরনা বলেন, ‘ওদের শেখাই, ওরা আমাকে খেতে দেয়। এটাই আমার প্রশান্তি।’ ঝরনা রায়ের কাছে কাজ শেখা গৃহবধূ বিউটি শীল বলেন, ‘ঝরনা মাসির কাছে আমি বিনা মূল্যে সেলাই কাজ, নকশিকাঁথা সেলাইয়ের কাজ, পুতুল বানানোসহ বিভিন্ন কাজ শিখেছি। মাসি বাড়িতে এসে শিখিয়েছেন।’ হাচিনসনপুর উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী স্বর্ণা রানী গোমস্তা ও দীঘিনালা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী জয়ন্তী কর্মকার বলে, ‘করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ঝরনা দিদির কাছে আমরা পুতুল বানানো, গান, আবৃত্তি, সেলাই কাজ, পুঁতি দিয়ে বিভিন্ন জিনিসপত্র বানানো কাজ শিখছি। আমাদের থেকে দিদি কোনো টাকাপয়সা নেয় না।’
৫৫০ নারীকে স্বাবলম্বী হওয়ার পথ দেখিয়েছেন ঝরনা রায়
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ