ঢাকা ১০:২৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫

অনুমতি ছাড়াই নতুন ইঞ্জিন

  • আপডেট সময় : ০২:০৩:২৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২১
  • ৯২ বার পড়া হয়েছে

ঝালকাঠি সংবাদদাতা : ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকা-ের ঘটনায় জানা গেছে, অনুমতি না নিয়ে ইঞ্জিন বদল করেছিলেন লঞ্চের মালিক। আগে এ লঞ্চে ৫৫০ হর্স পাওয়ারের দু’টি ইঞ্জিন থাকলেও তা পাল্টে ৭২০ হর্স পাওয়ারের দু’টি ইঞ্জিন লাগানো হয়েছিলো। নতুন ইঞ্জিন লাগানোর পর লঞ্চটির দ্বিতীয় যাত্রায় শুক্রবার (২৪ ডিসেম্বর) চলন্ত অবস্থায় আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। আগুন লাগলে তা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে, সে বিষয়ে লঞ্চের কর্মীদের প্রশিক্ষণের কোনো ব্যবস্থা ছিলনা। এমনকি অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র থাকলেও তা কীভাবে ব্যবহার করতে হবে, সেটিও জানতেন না লঞ্চের কর্মীরা। ফলে চলন্ত অবস্থায় লঞ্চে আগুন লাগলে হয় পানিতে ঝাঁপ, নয় তো উদ্ধারকারীদের জন্য অপেক্ষা ছাড়া বিকল্প ছিলনা। ফায়ার সার্ভিসের বরিশাল বিভাগীয় উপ-পরিচালক কামাল উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, লঞ্চের কর্মীদের অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রের ব্যবহার সম্পর্কে ধারণা নেই। এমনকি লঞ্চ ডুবে গেলে যাত্রীরা কীভাবে জীবন রক্ষাকারী বয়া (পানিতে ভেসে থাকার সরঞ্জাম) ব্যবহার করবেন, সে সম্পর্কেও তারা ভালোভাবে জানেন না। আর বেশির ভাগ লঞ্চের মধ্যে বয়া এতো শক্ত করে বাঁধা থাকে যে এগুলো প্রয়োজনের সময় ব্যবহার করার মতো অবস্থা থাকে না। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) তথ্য অনুযায়ী, সদরঘাট থেকে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন গন্তব্যে ২২১টির মতো যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচলের অনুমতি রয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ৮৫টি লঞ্চ ঢাকা থেকে ছাড়ে।
সদরঘাট টার্মিনালে কর্মরত বিআইডব্লিউটিএ’র কর্মচারীদের জন্য অগ্নি মহড়ার ব্যবস্থা রয়েছে। আর মালিকরা আবেদন না করলে লঞ্চের কর্মীদের জন্য অগ্নিনির্বাপণ বিষয়ে প্রশিক্ষণ বা মহড়ার ব্যবস্থা ফায়ার সার্ভিস করে না। গত দুই বছরের মধ্যে শুধু ঢাকা-বরিশাল নৌপথে চলা এমভি মানামী লঞ্চে একবার অগ্নিমহড়া করা হয়েছে বলে ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়। নৌ অগ্নিদুর্ঘটনা প্রতিরোধের মূল দায়িত্বে নিয়োজিত ঢাকার শ্যামপুরের বিআইডব্লিউটিএ’র ঘাটে অবস্থিত ‘রিভার ফায়ার স্টেশন। বিশেষ এ ফায়ার স্টেশনের কর্মকর্তা মালেক মোল্লা গণমাধ্যমকে বলেন, লঞ্চে অগ্নিকা- যাতে না ঘটে, সে জন্য তারা সচেতনতামূলক প্রচার চালালেও কোনো মহড়া বা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন না। জানা গেছে, অভিযান-১০ লঞ্চের ইঞ্জিন রুমের সঙ্গেই ছিলো রান্না ঘর। নিয়ম না মেনে সেখানে রান্না ঘর স্থাপন করা হয়। সুন্দরবন-১১ লঞ্চের চালক আবদুস সালাম মৃধা বলেন, বড় লঞ্চের ইঞ্জিন রুম থেকে রান্না ঘরের দূরত্ব বেশি থাকলেও ছোট আকৃতির লঞ্চগুলোতে রান্না ঘর একদম লাগানো থাকে। রান্নার কাজে ব্যবহার করা গ্যাস সিলিন্ডার থেকে অগ্নিকা-ের ঝুঁকি বেড়ে যায়। সূত্র বলছে, এমভি অভিযান-১০ লঞ্চের মালিক অনুমতি না নিয়ে লঞ্চের ইঞ্জিন বদলেছেন। আগে এ লঞ্চে ৫৫০ হর্স পাওয়ারের দু’টি ইঞ্জিন থাকলেও তা পাল্টে ৭২০ হর্স পাওয়ারের দু’টি ইঞ্জিন লাগানো হয়। নতুন ইঞ্জিন লাগানোর পর লঞ্চটির দ্বিতীয় যাত্রা ছিল শুক্রবার। এটিকে ‘ট্রায়াল ট্রিপ’ (পরীক্ষামূলক যাত্রা) বলা যায়। বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় লঞ্চটি ঢাকার সদরঘাট টার্মিনাল ছাড়ার আগে বিআইডব্লিউটিএ যে ‘চেক লিস্ট’ তৈরি করেছিলো তাতে বলা হয়েছিলো লঞ্চে কোনো ত্রুটি নেই। চেক লিস্ট অনুযায়ী, লঞ্চের যাত্রী ধারণক্ষমতা দিবাভাগে ৭৫০ জন, যা রাতে ৪২০ জন। তবে লঞ্চ ছাড়ার আগে ২৫ জন স্টাফসহ যাত্রী সংখ্যা ৩১০ জন উল্লেখ করা হয়েছিলো। কিন্তু বাস্তবে যাত্রী ছিলো অনেক বেশি। নিয়ম অনুযায়ী লঞ্চে ১২৫টি বয়া এবং ২০টি অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র থাকার কথা থাকলেও বাস্তবে তা ছিলনা। যেগুলো ছিল আগুন লাগার পর সেসব অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র ব্যবহার করা হয়নি। বয়াগুলোও পুড়ে বিধ্বস্ত হয়েছে। এদিকে লঞ্চে অগ্নিকা-ে হতাহতের ঘটনায় অপমৃত্যুর (ইউডি) মামলা হয়েছে। শুক্রবার ভোরে ঝালকাঠি সদর থানায় মামলাটি হয়। পোনাবালিয়া ইউনিয়নের দিয়াকুল গ্রামের গ্রামপুলিশ জাহাঙ্গীর হোসেন একটি অপমৃত্যু মামলা (২৯/২১) দায়ের করেন। কিন্তু আইন অনুযায়ী নৌ দুর্ঘটনা বিষয়ক সব মামলা নৌ আদালতে দায়ের হতে হবে। নৌ আদালতে মামলার বাদী হবেন সংশ্লিষ্ট এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিদর্শক। গতকাল রোববার দুপুর পর্যন্ত নৌ আদালতে কোনো মামলা হয়নি বলে জানান নৌ আদালতের প্রসিকিউটিং অফিসার মুন্সী মো. বেল্লাল হোসাইন।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

এক নারীকে দুই ভাই বিয়ে করে বললেন- আমরা গর্বিত

অনুমতি ছাড়াই নতুন ইঞ্জিন

আপডেট সময় : ০২:০৩:২৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২১

ঝালকাঠি সংবাদদাতা : ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকা-ের ঘটনায় জানা গেছে, অনুমতি না নিয়ে ইঞ্জিন বদল করেছিলেন লঞ্চের মালিক। আগে এ লঞ্চে ৫৫০ হর্স পাওয়ারের দু’টি ইঞ্জিন থাকলেও তা পাল্টে ৭২০ হর্স পাওয়ারের দু’টি ইঞ্জিন লাগানো হয়েছিলো। নতুন ইঞ্জিন লাগানোর পর লঞ্চটির দ্বিতীয় যাত্রায় শুক্রবার (২৪ ডিসেম্বর) চলন্ত অবস্থায় আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। আগুন লাগলে তা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে, সে বিষয়ে লঞ্চের কর্মীদের প্রশিক্ষণের কোনো ব্যবস্থা ছিলনা। এমনকি অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র থাকলেও তা কীভাবে ব্যবহার করতে হবে, সেটিও জানতেন না লঞ্চের কর্মীরা। ফলে চলন্ত অবস্থায় লঞ্চে আগুন লাগলে হয় পানিতে ঝাঁপ, নয় তো উদ্ধারকারীদের জন্য অপেক্ষা ছাড়া বিকল্প ছিলনা। ফায়ার সার্ভিসের বরিশাল বিভাগীয় উপ-পরিচালক কামাল উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, লঞ্চের কর্মীদের অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রের ব্যবহার সম্পর্কে ধারণা নেই। এমনকি লঞ্চ ডুবে গেলে যাত্রীরা কীভাবে জীবন রক্ষাকারী বয়া (পানিতে ভেসে থাকার সরঞ্জাম) ব্যবহার করবেন, সে সম্পর্কেও তারা ভালোভাবে জানেন না। আর বেশির ভাগ লঞ্চের মধ্যে বয়া এতো শক্ত করে বাঁধা থাকে যে এগুলো প্রয়োজনের সময় ব্যবহার করার মতো অবস্থা থাকে না। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) তথ্য অনুযায়ী, সদরঘাট থেকে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন গন্তব্যে ২২১টির মতো যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচলের অনুমতি রয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ৮৫টি লঞ্চ ঢাকা থেকে ছাড়ে।
সদরঘাট টার্মিনালে কর্মরত বিআইডব্লিউটিএ’র কর্মচারীদের জন্য অগ্নি মহড়ার ব্যবস্থা রয়েছে। আর মালিকরা আবেদন না করলে লঞ্চের কর্মীদের জন্য অগ্নিনির্বাপণ বিষয়ে প্রশিক্ষণ বা মহড়ার ব্যবস্থা ফায়ার সার্ভিস করে না। গত দুই বছরের মধ্যে শুধু ঢাকা-বরিশাল নৌপথে চলা এমভি মানামী লঞ্চে একবার অগ্নিমহড়া করা হয়েছে বলে ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়। নৌ অগ্নিদুর্ঘটনা প্রতিরোধের মূল দায়িত্বে নিয়োজিত ঢাকার শ্যামপুরের বিআইডব্লিউটিএ’র ঘাটে অবস্থিত ‘রিভার ফায়ার স্টেশন। বিশেষ এ ফায়ার স্টেশনের কর্মকর্তা মালেক মোল্লা গণমাধ্যমকে বলেন, লঞ্চে অগ্নিকা- যাতে না ঘটে, সে জন্য তারা সচেতনতামূলক প্রচার চালালেও কোনো মহড়া বা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন না। জানা গেছে, অভিযান-১০ লঞ্চের ইঞ্জিন রুমের সঙ্গেই ছিলো রান্না ঘর। নিয়ম না মেনে সেখানে রান্না ঘর স্থাপন করা হয়। সুন্দরবন-১১ লঞ্চের চালক আবদুস সালাম মৃধা বলেন, বড় লঞ্চের ইঞ্জিন রুম থেকে রান্না ঘরের দূরত্ব বেশি থাকলেও ছোট আকৃতির লঞ্চগুলোতে রান্না ঘর একদম লাগানো থাকে। রান্নার কাজে ব্যবহার করা গ্যাস সিলিন্ডার থেকে অগ্নিকা-ের ঝুঁকি বেড়ে যায়। সূত্র বলছে, এমভি অভিযান-১০ লঞ্চের মালিক অনুমতি না নিয়ে লঞ্চের ইঞ্জিন বদলেছেন। আগে এ লঞ্চে ৫৫০ হর্স পাওয়ারের দু’টি ইঞ্জিন থাকলেও তা পাল্টে ৭২০ হর্স পাওয়ারের দু’টি ইঞ্জিন লাগানো হয়। নতুন ইঞ্জিন লাগানোর পর লঞ্চটির দ্বিতীয় যাত্রা ছিল শুক্রবার। এটিকে ‘ট্রায়াল ট্রিপ’ (পরীক্ষামূলক যাত্রা) বলা যায়। বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় লঞ্চটি ঢাকার সদরঘাট টার্মিনাল ছাড়ার আগে বিআইডব্লিউটিএ যে ‘চেক লিস্ট’ তৈরি করেছিলো তাতে বলা হয়েছিলো লঞ্চে কোনো ত্রুটি নেই। চেক লিস্ট অনুযায়ী, লঞ্চের যাত্রী ধারণক্ষমতা দিবাভাগে ৭৫০ জন, যা রাতে ৪২০ জন। তবে লঞ্চ ছাড়ার আগে ২৫ জন স্টাফসহ যাত্রী সংখ্যা ৩১০ জন উল্লেখ করা হয়েছিলো। কিন্তু বাস্তবে যাত্রী ছিলো অনেক বেশি। নিয়ম অনুযায়ী লঞ্চে ১২৫টি বয়া এবং ২০টি অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র থাকার কথা থাকলেও বাস্তবে তা ছিলনা। যেগুলো ছিল আগুন লাগার পর সেসব অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র ব্যবহার করা হয়নি। বয়াগুলোও পুড়ে বিধ্বস্ত হয়েছে। এদিকে লঞ্চে অগ্নিকা-ে হতাহতের ঘটনায় অপমৃত্যুর (ইউডি) মামলা হয়েছে। শুক্রবার ভোরে ঝালকাঠি সদর থানায় মামলাটি হয়। পোনাবালিয়া ইউনিয়নের দিয়াকুল গ্রামের গ্রামপুলিশ জাহাঙ্গীর হোসেন একটি অপমৃত্যু মামলা (২৯/২১) দায়ের করেন। কিন্তু আইন অনুযায়ী নৌ দুর্ঘটনা বিষয়ক সব মামলা নৌ আদালতে দায়ের হতে হবে। নৌ আদালতে মামলার বাদী হবেন সংশ্লিষ্ট এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিদর্শক। গতকাল রোববার দুপুর পর্যন্ত নৌ আদালতে কোনো মামলা হয়নি বলে জানান নৌ আদালতের প্রসিকিউটিং অফিসার মুন্সী মো. বেল্লাল হোসাইন।