নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশে করোনাভাইরাসের প্রথম টিকা পাওয়া রুনু ভেরোনিকা কস্তাকে তৃতীয় ডোজ টিকা দেওয়ার মাধ্যমে কোভিড টিকার বুস্টার ডোজ দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হলো। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক গতকাল রোববার মহাখালীর বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস (বিসিপিএসএ) মিলনায়তনে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।
যাদের বয়স ৬০ বছরের বেশি এবং যারা কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সামনের সারিতে আছেন, তাদের করোনাভাইরাসের টিকার বুস্টার ডোজ দেওয়া হবে। টিকার দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার ছয় মাস পরে তারা বুস্টার ডোজ বা তৃতীয় ডোজ নিতে পারবেন। সেজন্য নতুন করে নিবন্ধনের প্রয়োজন হবে না। যারা তৃতীয় ডোজ পাওয়ার যোগ্য, তাদের কাছে এসএমএস চলে যাবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রটোকল অনুসরণ করে দেশে বুস্টার ডোজ হিসেবে আপাতত ফাইজারের টিকাই দেওয়া হবে।
“বুস্টার ডোজ হিসেবে এখন ফাইজারের টিকা পাবেন সবাই। পরে মডার্নার টিকাও দেওয়া হবে যদি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদন করে।”
সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে কোভিড টিকার সুরক্ষা দুর্বল হয়ে আসায় কিছু দেশ বাড়তি আরেক ডোজ টিকা দিচ্ছে নাগরিকদের, যাকে বলা হচ্ছে বুস্টার ডোজ।
কয়েক সপ্তাহ আগে দক্ষিণ আফ্রিকায় করোনাভাইরাসের অতি সংক্রামক নতুন ধরন ওমিক্রন শনাক্ত হওয়ার পর বাংলাদেশেও বুস্টার ডোজ দেওয়ার পরামর্শ দেয় কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। এরই মধ্যে শতাধিত দেশে করোনাভাইরাসের এই নতুন ধরন ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশেও দুজনের মধ্যে এ ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ ধরা পড়ার খবর এসেছে গত সপ্তাহে। গবেষকরা বলছেন, দুই ডোজ টিকা ওমিক্রনের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে পারে না, সেজন্যই বুস্টার প্রয়োজন।
জাতীয় অধ্যাপক ডা. শাহলা খাতুন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবিএম খুরশীদ আলম, পররাষ্ট্র মন্ত্রী একে আবদুল মোমেন, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকও এদিন তৃতীয় ডোজ নিয়েছেন।
এছাড়া পুলিশ সদস্য সুলতান, সাংবাদিক ডলার মাহমুদ, আল মারকাজুল ইসলামীর কর্মকর্তা আমির হামজা, নার্সিং সুপারভাইজার খাদিজা বেগম, বিমান বাহিনীর স্কোয়াড্রন লিডার আশিফুলসহ কয়েকজনকে বুস্টার ডোজ দেওয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, রোববার পরীক্ষামূলকভাবে বুস্টার ডোজ দেওয়া শুরু হল। পুরোদমে এ কার্যক্রম শুরু করতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে।
“বুস্টার ডোজের জন্য সরকারের সুরক্ষা ওয়েবসাইটে আরও কিছু কাজ করতে হবে। সেটা এখনো শেষ হয়নি। আইসিটি বিভাগ আমাকে জানিয়েছে, সুরক্ষা ওয়েবসাইট আপগ্রেড করতে ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় লাগবে। এর মধ্যে আমাদের প্রস্তুতি শেষ হয়ে যাবে। এরপর সারাদেশে শুরু হবে।”
টিকা নেওয়ার পর নার্স রুনু ভেরোনিকা কস্তা বলেন, “দেশে করোনাভাইরাসের টিকার প্রথম ডোজ আমি নিয়েছিলাম। বুস্টার ডোজ নেওয়ার সুযোগও আমাকে দেওয়া হয়েছে। এজন্য নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি, ভালো লাগছে। স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে সবাইকে অনুরোধ করব বুস্টার ডোজ নিয়ে নিন এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন।”
টিকাদান কার্যক্রম শেষে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্রোরা সাংবাদিকদের বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী প্রথম দুই ডোজ একই টিকা নেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও তৃতীয় ডোজ হিসেবে যে কোনো টিকা নেওয়া যায়। দেশে ফাইজারের টিকা পর্যাপ্ত আছে, সবগুলো জেলায় এই টিকা পৌঁছে গেছে।
“দেশের ৬৪ জেলায় ফাইজারের টিকা চলে গেছে। আমরা এখন ফাইজারের টিকা দিচ্ছি, কারণ যাদের টিকা নেওয়ার ৬ মাস হয়েছে, তারা সবাই অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়েছিল। বুস্টার ডোজ হিসেবে ফাইজারের টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে টেকনিক্যালি কোনো বাধা নেই। এ কারণে ফাইজারের টিকা তৃতীয় ডোজ হিসেবে দেওয়া হচ্ছে।”
মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, আগে যে নিয়মে টিকা দেওয়া হয়েছে, বুস্টার ডোজও সেভাবেই দেওয়া হবে। প্রথমে বয়স্ক ও সম্মুখসারির যোদ্ধারা পাবেন, পর্যায়ক্রমে সবাইকে দেওয়া হবে। “যারা প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন, তারা ইতোমধ্যেই সুরক্ষা অ্যাপে নিবন্ধিত। যাদের ছয় মাস হয়েছে, তাদের তৃতীয় ডোজ দেব। যারা বুস্টার ডোজ পাওয়ার যোগ্য, তারা কখন কোথায় টিকা পাবেন তা মোবাইল এসএমএসের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে।”
২৮ ডিসেম্বরের পর অ্যাপের মাধ্যমে বুস্টার ডোজের নিবন্ধন
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ