প্রত্যাশা ডেস্ক : ইউরোপে বিদ্যুৎগতিতে ছড়াতে থাকা ওমিক্রন আগামী বছরের শুরু থেকেই ফ্রান্সে কর্তৃত্ব করা শুরু করতে পারে বলে সতর্ক করেছেন ফরাসী প্রধানমন্ত্রী জ্যঁ কাসতেক্স।
গত শুক্রবার তার এ সতর্কবার্তার কয়েক ঘণ্টা পরই যুক্তরাজ্য থেকে ফ্রান্সে প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হয় বলে বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। ইউরোপে এখন পর্যন্ত যুক্তরাজ্যেই সবচেয়ে বেশি ওমিক্রনে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে; শুক্রবারও দেশটিতে প্রায় ১৫ হাজার মানুষের দেহে ভ্যারিয়েন্টটির উপস্থিতি মিলেছে।
সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে জার্মানি, রিপাবলিক অব আয়ারল্যান্ড এবং নেদারল্যান্ডসের সরকারও গত শুক্রবার নতুন বিধিনিষেধের ঘোষণা দিয়েছে। ইউরোপে এখন পর্যন্ত ৮ কোটি ৯০ লাখের বেশি কোভিড রোগী শনাক্ত হয়েছে, মৃত্যু ছাড়িয়েছে ১৫ লাখ। ফ্রান্স, নরওয়ে ও ডেনমার্কে দৈনিক শনাক্ত বাড়তে দেখে দেশগুলোকে ‘উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ’ অ্যাখ্যা দিয়েছে জার্মানির জনস্বাস্থ্য সংস্থা। শনিবার দেশটি আরও ৪২ হাজার মানুষের দেহে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়ার কথা জানালেও এই সংখ্যা আগের দিনের ৫০ হাজারের তুলনায় কম।
কয়েকদিন আগে ইতালি, গ্রিস ও পর্তুগাল ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে আগতদের ক্ষেত্রে শনাক্তকরণ পরীক্ষা নেগেটিভ ফল আসার প্রমাণপত্র দেখানো বাধ্যতামূলক করেছে। যারা টিকার ২ ডোজ নিয়েছে, তাদেরও এ প্রমাণপত্র দেখাতে হবে।
সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি মোকাবেলায় ফ্রান্স টিকার দ্বিতীয় ও তৃতীয় বা বুস্টার ডোজ দেওয়ার ব্যবধান কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রেস্তোরাঁ ও দূরপাল্লার পণপরিবহনে প্রবেশের ক্ষেত্রে টিকার সবগুলো ডোজ নেওয়ার প্রমাণপত্রও লাগবে।
নেদারল্যান্ডসের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে দেশে ‘কঠোর লকডাউন’ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো। দেশটির প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটে বলেছেন, ফান্সের মতো নেদারল্যান্ডসেও জানুয়ারির মধ্যেই ওমিক্রন অন্য ভ্যারিয়েন্টগুলোকে হটিয়ে নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে পারে।
নভেম্বর থেকেই নেদারল্যান্ডসে বাস, রেস্তোরাঁ ও বেশিরভাগ দোকানপাট বিকাল ৫টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত বন্ধ থাকে। বড়দিনের আগেই এ বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার কথা থাকলেও ইউরোপের সংক্রমণ পরিস্থিতি দেখে ওই বিধিনিষেধের মেয়াদ ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
বিশে^ আরও প্রায় ৭ হাজার মৃত্যু, শনাক্ত সোয়া ৭ লাখ : প্রাণঘাতী ভাইরাস করোনায় আক্রান্ত হয়ে সারা বিশ্বে আরও সাত হাজারের মতো মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তাদের নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৩ লাখ ৬০ হাজার ৪১০ জনে। একই সময়ে সোয়া সাত লাখেরও বেশি মানুষের দেহে অদৃশ্য ভাইরাসটি শনাক্ত হওয়ায় এই সংখ্যাটা ২৭ কোটি ৩৯ লাখ ৫৮ হাজার ১৩০ জনে পৌঁছেছে।
বিশ্বজুড়ে করোনায় আক্রান্ত, মৃত্যু ও সুস্থতার হালনাগাদ তথ্য প্রদানকারী ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটার্সের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় দৈনিক আক্রান্ত ও মৃত্যুর হিসেবে বিশ্বের দেশসমূহের মধ্যে শীর্ষে যুক্তরাষ্ট্র। এই দিন দেশটিতে এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৬২ হাজার ৬৯২ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৬০৫ জনের। এছাড়া গত ২৪ ঘন্টায় যুক্তরাজ্যে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৯৩ হাজার ৪৫। মারা গেছেন ১১১ জন। ফ্রান্সে নতুন আক্রান্ত হয়েছেন ৫৮ হাজার ১২৮ জন। মৃত্যু ১৬২ জন। জার্মানিতে নতুন আক্রান্ত ৪৮ হাজার ৩৭৫ জন। মৃত্যু ৪৫২ জন। স্পেনে নতুন আক্রান্ত ৩৩ হাজার ৩৫৯ জন। মৃত্যু ৪১ জন। এছাড়া রাশিয়ায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ২৭ হাজার ৭৪৩। মারা গেছেন মৃত্যু ১ হাজার ৮০ জন। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এরপর দ্রুতগতিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে ভাইরাসটি। পরিস্থিতি সামাল দিতে ২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি বিশ্বজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। বাংলাদেশেও গত বছরের মার্চে অদৃশ্য ভাইরাসটি শনাক্ত হয়।
ইউরোপে ওমিক্রন ছড়াচ্ছে বিদ্যুৎগতিতে
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ