ডা. মো. মনিরুল ইসলাম ফাহিম : আমাদের নাকের ভেতরের অংশ একটি পাতলা সংবেদনশীল পর্দা দিয়ে আবৃত থাকে, যার নাম মিউকাস মেমব্রেন। কোনো অ্যালার্জিক কারণ, যেমন ঠান্ডা আবহাওয়া, ধুলাবালু বা মাইটের কারণে এই পর্দায় প্রদাহ হলে তাকে অ্যালার্জিক রাইনাইটিস বলে।
কী হয় ঃ আমাদের শরীর বিভিন্ন উপায়ে রোগ প্রতিরোধ করে, যার মূল কারিগর আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। অনেকের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা বেশি সংবেদনশীল থাকে। সে জন্য অনেক স্বাভাবিক জিনিসকেও ক্ষতিকারক মনে করে এবং তাদের বিপরীতে অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। এখান থেকেই অ্যালার্জিক রাইনাইটিসের উৎপত্তি।
কারণ ঃ প্রত্যেক মানুষের অ্যালার্জিক রাইনাইটিসের কারণ আলাদা আলাদা। একেকজনের একেকভাবে বিষয়টি প্রকাশিত হয়। মোটা দাগে
যে কারণগুলোর কথা বলা যায়, সেগুলো হলো:
ক্স শীতকালে ঠান্ডা আবহাওয়া বা গ্রীষ্মকালে শুষ্ক আবহাওয়া
ক্স অতিরিক্ত ধুলাবালু
ক্স তেলাপোকা, ছারপোকার মতো ঘরোয়া কীটপতঙ্গ
ক্স পশু-প্রাণীর পশম ও চামড়া থেকে ঝরে পড়া কোষ
ক্স বিভিন্ন সুগন্ধি ও পরিষ্কার সামগ্রী
ক্স ফুলের রেণু ইত্যাদি।
লক্ষণ
ক্স অতিরিক্ত হাঁচি ও শুকনো কাশি
ক্স নাক ও চোখ দিয়ে পানি পড়া
ক্স নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া
ক্স নাকের ভেতরের অংশের ঝিল্লি লালচে হয়ে যাওয়া
ক্স গলা বন্ধ ভাব হওয়া
ক্স কিছু ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট হওয়া।
রোগ নির্ণয় ঃ চিকিৎসক রোগীর লক্ষণ শুনে ও রোগী দেখে অ্যালার্জিক রাইনাইটিস নিশ্চিত করতে পারেন। এ ছাড়া কিছু পরীক্ষা করে আরও নিশ্চিত হওয়া যায়। যেমন-
ক্স নাকের ভেতর পলিপ
ক্স রক্তের আইজিই (ওমঊ) টেস্ট
ক্স স্ক্রিন প্রিক টেস্ট
ক্স নাকের হাড়ের এক্স-রে।
সুস্থ থাকার উপায় ঃ যেসব জিনিস থেকে অ্যালার্জি তৈরি হয়, সেগুলো বাদ দিতে হবে।
ক্স ঘরবাড়ি, বিছানা, আসবাব নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে
ক্স প্রতিকূল আবহাওয়া যথাসম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে
ক্স পোষা প্রাণী থেকে অ্যালার্জি হচ্ছে কি না, খেয়াল রাখতে হবে
ক্স ধুলাবালু ও সূক্ষ্ম গুঁড়ো তৈরি হয় এমন কাজ করার সময় মাস্ক ব্যবহার করতে হবে
ক্স নাকের ভেতরের অংশ নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে।
চিকিৎসা ঃ প্রতিরোধই অ্যালার্জিক রাইনাইটিস থেকে বাঁচার সবচেয়ে ভালো উপায়। আর যদি হয়েই যায়, তবে নিয়মিত কুসুম গরম পানিতে নাক পরিষ্কার করে ও চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিহিস্টামিনজাতীয় ওষুধ খেলে উপকার পাওয়া যাবে।
লেখক: রেসিডেন্ট, নেফ্রোলজি বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ