নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ক্ষমা চেয়েছেন বিতর্কের মুখে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে সদ্য পদত্যাগ করা ডা. মুরাদ হাসান।
গতকাল বুধবার বিকেল ৩টার দিকে নিজের ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে ক্ষমা চান তিনি। ওই পোস্টে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নিজের একটি ছবি শেয়ার করেছেন মুরাদ হাসান। পোস্টে মুরাদ হাসান লিখেছেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, পরম শ্রদ্ধেয় মমতাময়ী মা, বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরতœ শেখ হাসিনা, আমি যে ভুল করেছি, তা আল্লাহর ওয়াস্তে আমাকে মাফ করে দেবেন। আপনি যে সিদ্ধান্ত দেবেন, তা আমি সবসময়ই মাথা পেতে নেবো আমার বাবার মতো।’
ফেসবুকে এক লাইভ অনুষ্ঠানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মেয়েকে নিয়ে অশালীন মন্তব্য এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ও ছাত্রলীগ নেত্রীদের নিয়ে বিভিন্ন আপত্তিকর মন্তব্য করেন ডা. মুরাদ হাসান। এরপরই চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির সঙ্গে তার একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফাঁস হয়। সেই অডিও ভাইরাল হলে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন মুরাদ হাসান। পরে মুরাদ হাসানকে ৭ ডিসেম্বরের মধ্যে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মেনে মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন মুরাদ হাসান। ওইদিন রাতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেন। একই দিন সন্ধ্যায় জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদকের পদ থেকেও মুরাদ হাসানকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করে জেলা আওয়ামী লীগ। ওই সুপারিশ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদে পাঠানো হয়। এদিকে রাজধানীর শাহবাগ থানায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পক্ষে এক শিক্ষার্থী মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন। পুলিশ ওই অভিযোগ খতিয়ে দেখছে। সত্যতা পেলে তা মামলা আকারে গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। গত মঙ্গলবার মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের পর ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে মুরাদ হাসান তার মন্তব্যের জন্য মা-বোনদের কাছেও ক্ষমা চান।
এমপি পদের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট : নানা কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য ও বিতর্কিত কর্মকা-ের কারণে সমালোচনার মধ্যে তথ্য প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগে বাধ্য হওয়া মুরাদ হাসানের এমপি পদের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে একটি রিট করা হয়েছে। গতকাল বুধবার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট আবেদনটি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ। রিটে মুরাদ হাসানের কর্মকা-ের বিচার বিভাগীয় তদন্ত চাওয়া হয়েছে। বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার হাইকোর্ট বেঞ্চে রিট আবেদনটি শুনানির জন্য উপস্থাপন করা হবে বলে জানান তিনি।
ঢাকায় ৪ কোটি টাকার ফ্ল্যাটে থাকেন ডা. মুরাদ : প্রতিমন্ত্রী পদ হারানো জামালপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য ডা. মুরাদ হাসান রাজধানী ঢাকায় যে ফ্ল্যাটে থাকেন তার বাজার মূল্য প্রায় চার কোটি টাকা। এক হাজার ৮০০ বর্গ ফুটের বিশাল আয়তনের ফ্ল্যাটটিতে সপরিবারে বসবাস করে আসছেন তিনি।
গতকাল বুধবার ধানমন্ডির ১৫ নম্বর (সাবেক ২৮ নম্বর) সড়কের ভবন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। ভবনটির নিরাপত্তাকর্মীরা জানান, পরিবার নিয়ে ভবনের চার তলায় থাকেন মুরাদ হাসান। এটি এক হাজার ৮০০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট। পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক ভবন সংশ্লিষ্ট এক ব্যক্তি জানান, ওই ভবনটির ফ্ল্যাট কিনতে খদ্দেরকে প্রতি বর্গ ফুটের জন্য গুনতে হয়েছে ২২ হাজার টাকা। সে হিসেবে এক হাজার ৮০০ বর্গ ফুটের ওই ফ্লাটটির দাম দাঁড়ায় তিন কোটি ৯৬ লাখ টাকা। ভবন সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, একই ভবনের দ্বিতীয় তলায় আরও একটি ফ্লাট রয়েছে মুরাদ হাসানের। যা তিনি নিজের অফিস হিসেবে ব্যবহার করেন। সেটির আকার এবং দামও একই।
বাসা-অফিসে সুনসান নীরবতা : বিতর্কিত নানা কর্মকা-ে মন্ত্রিত্ব ও দলীয় পদ হারানো ডা. মুরাদ হাসান সপরিবারে থাকেন ধানমন্ডির ১৫ নম্বর সড়কের একটি বাসায়। ভবনের চার তলায় তার বাসা, আর দোতলায় অফিস। অন্য সময় ভবনটিতে নেতাকর্মী এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের ব্যাপক আনাগোনা থাকলেও তিন দিন ধরে সেখানে সুনসান নীরবতা বিরাজ করছে। বুধবার ধানমন্ডির ১৫ নম্বর (সাবেক ২৮ নম্বর) সড়কের ৩০/এ ভবনটির সামনে গিয়ে দেখা যায় নিস্তব্ধ পরিবেশ। ভবনের নিচতলায় ঢুকেই দেখা গেল নিরাপত্তা প্রহরীর কক্ষ। বুধবার সকাল থেকে সেখানে দায়িত্ব পালন করছেন নিরাপত্তাকর্মী সুমন। আলাপকালে সুমন জানান, গত মঙ্গলবার দিনের বেলা তার ডিউটি ছিল। সে সময় পর্যন্ত ডা. মুরাদ হাসান বাসায় ফেরেননি। রাতে ফিরেছেন কি না তিনি জানেন না।
সুমন জানান, ডা. মুরাদ হাসান ওই ভবনের চারতলায় সপরিবারে থাকেন। এক হাজার ৮০০ বর্গফুটের বাসাটি তার কেনা। ভবনের দ্বিতীয় তলায় মুরাদ হাসানের অফিস। সেখানে অনেকের যাতায়াত ছিল। সোমবার থেকে সে যাতায়াত বন্ধ। গত দুদিন কেউ তার অফিস বা বাসায় আসেননি।
মুরাদ হাসান বাসা থেকে বের হওয়ার সময় তার ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে যাননি। তার ব্যবহৃত গাড়িটি ভবনের গ্যারেজেই রয়েছে বলে জানান নিরাপত্তাকর্মী। বিতর্কিত এই সাংসদ বাসায় না থাকলেও তার পরিবারের সদস্যরা বাসায় অবস্থান করছেন বলেও জানান নিরাপত্তা প্রহরী। সুমনের কক্ষের সামনেই চেয়ার পেতে বসে থাকতে দেখা গেল তিন পুলিশ সদস্যকে। তারা আগে থেকেই সাবেক এই প্রতিমন্ত্রীর নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে ক্ষমা চেয়ে মুরাদের পোস্ট
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ