রংপুর সংবাদদাতা : রংপুর নগরীতে দেড়শ বছর আগে খনন করা হয় খালটি। শোনা যায়, ২৫ ফুট গভীর খালের দুই পাড় ছিল সবুজে ভরা। স্বচ্ছ পানির প্রবাহ ছিল উপচেপড়া। যে কারণে নাম রাখা হয় শ্যামাসুন্দরী। যুগে যুগে মানুষের খামখেয়ালিপনা ও দখলের মানসিকতায় সেই খাল আজ বর্জ্যের ভাগাড়। যে খালের কারণে একসময় নগরীর জলাবদ্ধতা দূর হতো, এখন সেটাই হয়ে দাঁড়িয়েছে জলাবদ্ধতার কারণ। কারখানা থেকে বাসাবাড়ির বর্জ্য আর মল-মূত্রের নির্যাতনে খালটির পাশে দাঁড়ানো দায়। নগরীর একশ’ কিলোমিটার এলাকার বাসাবাড়ির আবর্জনা ও মলমূত্রে ইতোমধ্যে ভরাট হয়ে গেছে খালটি। গভীরতা বড়জোর ৫-৭ ফুট। আগে যে খালে নিয়মিত মাছ ধরতো মানুষ, এখন সেখানে মাছ ছাড়া হলে মুহূর্তে মরে সেটা ভেসে উঠবে। এমনকি হাঁসরাও এখানে চরতে নামে না। ভুল করে কোনওটা নামলেই মারা যায় ওটা। অথচ প্রশাসন একটু কঠোর হলেই দ্রুত ফিরিয়ে আনতে পারে ঐতিহাসিক শ্যামাসুন্দরীর হারানো রূপ-জৌলুস। তথাপি খালটি সংস্কারে কোনও উদ্যোগ নেই রংপুর সিটি করপোরেশনের। এমনকি দূষণ কমানোর ন্যূনতম ব্যবস্থাও নেয়নি সংস্থাটি। সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, রংপুর নগরীর সিও বাজার এলাকা থেকে শুরু হয়ে মাহিগঞ্জ পর্যন্ত প্রায় ১০ মাইল লম্বা খালটি খনন করা হয়েছিল জলাবদ্ধতা দূর করার উদ্দেশ্যে। ২০-২৫ বছর আগেও বৃষ্টি হলে নগরীতে যে জলাবদ্ধতা হতো সেই পানি পড়তো শ্যামাসুন্দরীতে। শ্যামাসুন্দরী সেই পানি নিয়ে ফেলতো ঘাঘট নদীতে। কিন্তু অপরিকল্পিত রাস্তাঘাট, ড্রেনেজ, দূষণ ও দখলের কারণে শ্যামাসুন্দরী এখন আর কাজে আসছে না। সামান্য বৃষ্টিতেই নগরীর মূল সড়ক তলিয়ে যাচ্ছে। নগরীর মুন্সিপাড়া ঘুরে দেখা গেছে, সেখান থেকে মুলাটোল হয়ে প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকায় খালের দুপাশের বাড়িগুলোর বেশিরভাগেরই সেফটি ট্যাংক নেই। হাজার হাজার বাড়ির মলমূত্র ও গৃহস্থালীর বর্জ্য সরাসরি পাইপের মাধ্যমে পড়ছে ওই খালে। প্রচ- দুর্গন্ধে খালের পাশে কেউ দাঁড়াতেই পারে না। ঐতিহাসিক শ্যামাসুন্দরী খাল রক্ষার দাবিতে নগরীতে অনেক আন্দোলন-বিক্ষোভ-মানববন্ধন হয়েছে। কিন্তু কাজ হয়নি। সম্প্রতি খালের দুই ধারে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু হলেও তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। মুন্সিপাড়ার সালেহা বেগম ও আফজাল হোসেন অভিযোগ করেন, শ্যামাসুন্দরী এতটাই দূষিত যে, এটাকে এখন মশা ও মাছি আর জীবাণুর ফ্যাক্টরি বলা যায়। পানি এতই বিষাক্ত যে জ্যান্ত মাছ ছেড়ে দিলে ৫ মিনিটে মারা যাবে। একই কথা বললেন নিউ ইঞ্জিনিয়ার মহল্লার আফরোজা আব্বাসও। পরিবেশ নিয়ে কাজ করেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. তুহিন ওয়াদুদ। তিনি বলেন, শ্যামাসুন্দরীকে বাঁচাতে হলে আগে অবৈধ স্থাপনা সরাতে হবে। তারপর গৃহস্থালীর বর্জ্য ফেলা বন্ধ করে খালটি আবার খনন করতে হবে। দুপাশে নিরাপত্তা বেষ্টনী বসাতে হবে। এই খাল পুরোপুরি বন্ধ হলে গোটা নগরীই বিপদে পড়বে।
রংপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আজম আলী জানান শ্যামাসুন্দরী খাল পুনঃখননসহ এর উন্নয়নে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে কনসালটিং নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা কাজ করছে। তাদের দেওয়া পরিকল্পনা অনুযায়ী অর্থ বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করা হ
রংপুর বিভাগীয় কমিশনার আব্দুল ওহাব মিয়া বলেন, শ্যামাসুন্দরী পুনঃখননসহ এর উন্নয়নে প্রকল্প তৈরির কাজ চলছে।
বর্জ্যরে ভাগাড় দেড়শ বছরের খাল
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ