ঢাকা ০৭:০৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫

বায়ুদূষণে ঢাকায় গড় আয়ু কমেছে সাড়ে সাত বছর

  • আপডেট সময় : ০১:৩৭:৪৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২১
  • ১০০ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : বায়ুদূষণের কারণে সারা দেশে মানুষের গড় আয়ু কমেছে প্রায় পাঁচ বছর চার মাস। তবে রাজধানী ঢাকায় কমেছে প্রায় সাত বছর সাত মাস বলে দাবি করেছে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো।
গতকাল শনিবার (২৭ নভেম্বর) ‘ধূলা দূষণে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি ও মৃত্যু- ধূলা দূষণ রোধে চাই কার্যকর পদক্ষেপ’ শীর্ষক মানববন্ধনে বক্তারা এ দাবি করেন। জাতীয় জাদুঘরের সামনে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) সহ সমমনা ৯টি সংগঠন এ মানববন্ধনের আয়োজন করে।
মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন পবার সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান। সংগঠনটির সম্পাদক এম এ ওয়াহেদের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, পুরান ঢাকা নাগরিক উদ্যোগের সভাপতি নাজিমউদ্দীন, বীর মুক্তিযোদ্ধা কে এম সিদ্দিক আলী, আইন বিষয়ক সম্পাদক মো. ওমর ফারুক প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, লাইফ ইনডেক্সের গবেষণা মতে, ১৯৯৮ সালে বায়ুদূষণের কারণে গড় আয়ু কমেছিল প্রায় দুই বছর আট মাস, ২০১৯ সালে সেটি পাঁচ বছর চার মাসে দাঁড়িয়েছে। গবেষণা বলছে, সারা দেশের ৬৪টি জেলার প্রত্যেকটিতেই বায়ুদূষণের হার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী অন্তত তিনগুণ বেশি। দূষিত বাতাসে কঠিন ও তরল পদার্থ উড়ে বেড়ায়, যার মধ্যে রয়েছে কাচ, ধোঁয়া বা ধূলা- যেগুলোকে ‘বস্তুকণা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, রাজধানী ঢাকা বিশ্বের দ্বিতীয় সবোর্চ্চ দূষিত বায়ুর শহর। ধূলার কারণে এই দূষণের মাত্রা এখন আরও ভয়াবহ। ঢাকা শহরের প্রায় দেড় কোটি মানুষ আসলে এক অবিশ্বাস্য বিষাক্ত গ্যাসের মধ্যে বাস করছে। নতুন নতুন অবকাঠামোর নামে প্রতিনিয়ত খোঁড়াখুঁড়ির হচ্ছে নগরের বিভিন্ন স্থানে। ফলে ধূলা হয়ে উঠেছে নিত্যসঙ্গী। শুষ্ক মৌসুমে ঢাকা মহানগরীতে ধূলা দূষণের প্রকোপ অত্যন্ত বেড়ে যায়। আমাদের দেশের বিশেষ করে ঢাকা শহরের বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ ইটভাটা, কলকারখানা, নির্মাণকাজ এবং যানবাহনের ধোঁয়া। এ অবস্থায় বায়ুদূষণে ঢাকায় গড় আয়ু কমেছে প্রায় সাত বছর সাত মাস।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, শীর্ষ দূষিত নগরীর মধ্যে ঢাকা মহানগরী অন্যতম। বায়ুদূষণের প্রধান উৎসগুলো প্রায় সকলেরই কমবেশী জানা। যন্ত্রচালিত যান থেকে উৎপন্ন ধোঁয়া, ইটভাটা থেকে নির্গত ধোঁয়া, বিভিন্ন শিল্প কারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়া, প্লাস্টিক ও ইলেকট্রনিক্স বর্জ্য প্রসেসিং/পোড়ানো থেকে উৎপন্ন ধোঁয়া- এগুলোর মধ্যে অন্যতম। বর্ষাকালে বৃষ্টির ফলে বায়ুদূষণ কমে যায়, বাতাস চলাচলে দূষিত বায়ু দূরে চলে যায়। ফলে সে সময় বায়ুদূষণ কিছুটা কম থাকে। শীতকালে ইটের ভাটার কার্যক্রমে দূষণ বৃদ্ধি পায়। নির্মাণকাজ ও রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কাজ অনেকাংশে বেড়ে যায়। এ সময় আবহাওয়া শুষ্ক থাকার কারণে ধূলা বাতাসে অনেকক্ষণ উড়ে বেড়ায়। ফলে ধূলা দূষণও বৃদ্ধি পায়।
বক্তারা আরও বলেন, অন্যান্য উৎস থেকে ধোঁয়া ও ধূলা একত্র হয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি করে এবং এই দূষিত বায়ু দীর্ঘক্ষণ একই জায়গায় অবস্থান করে। ফলে অন্যান্য উৎসের সঙ্গে ধূলা দূষণ একত্রিত হয়ে বাতাস দূষণের মাত্রা অত্যাধিক বৃদ্ধি পায়। সরকার ধূলা দূষণ রোধে অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও তা বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে পর্যাপ্ত নয়। সম্প্রতি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে বায়ুদূষণের কারণে এত ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে যে সেদেশের সরকার স্কুল কলেজ বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। ঢাকার পরিস্থিতি সেদিকে ধাবিত হচ্ছে বলে বক্তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেন। এ অবস্থায় বায়ুদূষণের হাত থেকে বাঁচার জন্য সরকারকে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানান তারা।
মানববন্ধনে বক্তারা আরও বলেন, অপরিকল্পিতভাবে গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি, ড্রেনেজ এবং রাস্তাঘাট উন্নয়ন, মেরামত ও সংস্কার কার্যক্রমের আওতায় রাস্তাঘাট খোঁড়াখুঁড়ির পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও মাটি, বালি, ইটসহ নির্মাণসামগ্রী আচ্ছাদনহীন ট্রাকে করে শহরে পরিবহন করা, ড্রেন পরিষ্কার করে ময়লা রাস্তার পাশে স্তুপ করে রাখা, দোকান পাট ও গৃহস্থালির আবর্জনা যেখানে সেখানে ফেলে রাখা, মেরামতহীন ভাঙাচোরা রাস্তায় যানবাহন চলাচল, পাকা ভবন নির্মাণের সময় মাটি, বালু, ইটসহ অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রী রাস্তা-ফুটপাতে ফেলে রাখা, পুরাতন ভবন ভাঙা, মেশিনে ইট ভাঙা, যানবাহনের কালো ধোঁয়া, শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ধোঁয়া ইত্যাদি ধূলা দূষণের অন্যতম উৎস। এসব উৎস থেকে বিপুল পরিমাণ ধূলা বাতাসে মিশে জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ ও অর্থনীতিতে বিরুপ প্রভাব ফেলছে। ঢাকার রাস্তায় চলাচলকারী অতিরিক্ত যানবাহন যানজট সৃষ্টির পাশাপাশি রাজধানীর বায়ুদূষণেও অন্যতম ভূমিকা পালন করছে বলেও উল্লেখ করেন বক্তারা। ঢাকা শহরে প্রতিদিন গড়ে প্রায় তিন লাখ যান্ত্রিক যানবাহন চলাচল করে। নগরীতে চলাচলকারী গণপরিবহনের প্রায় সবগুলো বাস-মিনিবাস, প্রাইভেটকার, সিএনজি অটোরিকশা, টেম্পোসহ গাড়িগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে পড়েছে। ফিটনেসবিহীন এসব গাড়ি থেকে নির্গত
৯ দফা দাবি পূরণে মঙ্গলবার পর্যন্ত সময় দিলো শিক্ষার্থীরা
নিজস্ব প্রতিবেদক : বাসে শিক্ষার্থীদের অর্ধেক ভাড়ার দাবি নিয়ে পরিবহন মালিকদের সঙ্গে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের দ্বিতীয় দিনের বৈঠকেও কোনো সমাধান আসেনি।
গতকাল শনিবার ঢাকার বনানীতে বিআরটিএ কার্যালয়ে দুই ঘণ্টার এ বৈঠকে পরিবহন মালিকরা উল্টো ভর্তুকি দাবি করে বলছেন, ঢাকার বাস মালিকদের বেশিরভাগই ‘গরিব’। টাস্কফোর্স গঠন করে তাদের জন্য ভর্তুকি নির্ধারণ করা হোক। আর এসব বিষয়ে ফয়সালা করতে সময় লাগবে জানিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকতে আহ্বান জানিয়েছে বিআরটিএ।
বৈঠক শেষে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার সাংবাদিকদের বলেন, “২৫ নভেম্বরের বৈঠকের ধারাবাহিকতায় আজ এ বৈঠকহল। পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা অনেকগুলো প্রস্তাব দিয়েছেন। ঢাকা শহরে কত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কত শিক্ষার্থী, ইত্যাদি তথ্য তারা চেয়েছেন।
“হাফ ভাড়া নেওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের আলাদা কোনো পরিচয়পত্র দেওয়া হবে কিনা, সে বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে। পুরো বিষয়টি সুরাহা করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিআরটিএ এবং পরিবহন সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠনের প্রস্তাব এসেছে।”
অন্যদিকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির নেতা খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, “ঢাকায় নগর পরিবহনের যে বাসগুলো চলে, তার মালিকদের ৮০ শতাংশই গরিব। একটা বা দুটো বাস চালিয়ে তাদের সংসার চলে। তাদের বাচ্চারাও স্কুল কলেজে যায়। “এ কারণে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের প্রস্তাব হচ্ছে, বাস মালিকদের ক্ষতিপূরণ বা ভর্তুকির বিষয়টি নির্ধারণ করেই হাফ ভাড়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কোন তহবিল থেকে এই ভর্তুকি আসবে সেটিও নির্ধারণ করতে হবে।”
৯ দফা দাবি পূরণে মঙ্গলবার পর্যন্ত সময় দিলো শিক্ষার্থীরা : সড়ককে নিরাপদ করতে নয় দফা দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি পূরণে আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে। গতকাল শনিবার টানা তৃতীয় দিনের মত রাস্তা আটকে বিক্ষোভ দেখিয়ে তারা সড়ক ছেড়েছে আজ রোববার আবার ফিরে আসার ঘোষণা দিয়ে। আগের ঘোষণা অনুযায়ী শনিবার বেলা ১২টার দিকে রাজধানীর আসাদগেইট ও ধানম-ি ২৭ নম্বর এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীরা। এছাড়া উত্তরা হাউজ বিল্ডিং এলাকাতেও বেলা ১১টার দিকে বিক্ষোভ দেখায় একদল শিক্ষার্থী। তাদের পরে বুঝিয়ে সরিয়ে দেয় পুলিশ।
ধানম-ি ২৭ নম্বর মোড়ে সড়ক অবরোধ করা শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ চালিয়ে যায় বেলা আড়াইটা পর্যন্ত। বিক্ষোভ শেষ করে তারা হ্যান্ডমাইকে তাদের নয় দফা দাবি পড়ে শোনায়। আন্দোলনকারীদের একজন প্রতিনিধি পরে মাইকে বলেন, এই নয় দফা দাবি আদায়ে গত বৃহস্পতিবার সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কার্যালয়ে বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন তারা। বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ তাদের কাছে এক সপ্তাহ সময় চেয়েছিল। কিন্তু শিক্ষার্থীরা মঙ্গলবার পর্যন্ত সময় দেবে জানিয়ে আন্দোলনকারীদের ওই প্রতিনিধি বলেন, এই সময়ের মধ্যে তাদের দাবি পূরণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা না হলে ওই দিন দুপুরে রাজধানীর সব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিয়ে তারা বিআরটিএ কার্যালয় ঘেরাও করবে। তার আগে রবি ও সোমবার বিক্ষোভ চলবে এবং সড়কে গাড়ির ফিটনেস ও লাইসেন্স পরীক্ষা চলবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয় আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে।
২০১৮ সালে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের নজিরবিহীন আন্দোলনে যে নয় দফা দাবি ছিল, সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা বাস্তবায়ন করেনি জানিয়ে শিক্ষার্থীদের ওই প্রতিনিধি বলেন, এবার দাবি আদায় না হলে মঙ্গলবার তারা নতুন কর্মসূচি দেবেন।
ডিজেলের দাম ২৩ শতাংশ বাড়ানোর পর পরিবহন মালিকদের চাপে সরকার বাসের ভাড়া ২৭ শতাংশ বাড়ায়। এর পর থেকেই বাসে অর্ধেক ভাড়া দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন করে আসছে শিক্ষার্থীরা।
গত বুধবার সড়কে সিটি করপোরেশনের গাড়ির ধাক্কায় নটর ডেম কলেজের এক শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর সেই আন্দোলন আরও গতি পায়। বৃহস্পতিবার পথে পথে তাদের বিক্ষোভ-অবরোধে রাজধানী ঢাকা কার্যত অচল হয়ে পড়ে। সেদিন দাবি পূরণের জন্য শনিবার পর্যন্ত সময় দিয়ে রাস্তা ছাড়ে আন্দোলনকারীরা। এরপর শুক্রবার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, ১ ডিসেম্বর থেকেই বিআরটিসির বাসে শিক্ষার্থীদের জন্য ‘হাফ’ ভাড়া চালু হবে।
বেসরকারি বাসেও একই নিয়ম চালুর জন্য শনিবার বেলা ১১টার পর পরিবহন মালিক এবং শ্রমিক ফেডারেশনের নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ-বিআরটিএ। তবে কোনো সিদ্ধান্তে তারা আসতে পারেননি।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনবহুল এলাকায় যুদ্ধবিমানের প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রশ্ন

বায়ুদূষণে ঢাকায় গড় আয়ু কমেছে সাড়ে সাত বছর

আপডেট সময় : ০১:৩৭:৪৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক : বায়ুদূষণের কারণে সারা দেশে মানুষের গড় আয়ু কমেছে প্রায় পাঁচ বছর চার মাস। তবে রাজধানী ঢাকায় কমেছে প্রায় সাত বছর সাত মাস বলে দাবি করেছে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো।
গতকাল শনিবার (২৭ নভেম্বর) ‘ধূলা দূষণে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি ও মৃত্যু- ধূলা দূষণ রোধে চাই কার্যকর পদক্ষেপ’ শীর্ষক মানববন্ধনে বক্তারা এ দাবি করেন। জাতীয় জাদুঘরের সামনে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) সহ সমমনা ৯টি সংগঠন এ মানববন্ধনের আয়োজন করে।
মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন পবার সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান। সংগঠনটির সম্পাদক এম এ ওয়াহেদের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, পুরান ঢাকা নাগরিক উদ্যোগের সভাপতি নাজিমউদ্দীন, বীর মুক্তিযোদ্ধা কে এম সিদ্দিক আলী, আইন বিষয়ক সম্পাদক মো. ওমর ফারুক প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, লাইফ ইনডেক্সের গবেষণা মতে, ১৯৯৮ সালে বায়ুদূষণের কারণে গড় আয়ু কমেছিল প্রায় দুই বছর আট মাস, ২০১৯ সালে সেটি পাঁচ বছর চার মাসে দাঁড়িয়েছে। গবেষণা বলছে, সারা দেশের ৬৪টি জেলার প্রত্যেকটিতেই বায়ুদূষণের হার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী অন্তত তিনগুণ বেশি। দূষিত বাতাসে কঠিন ও তরল পদার্থ উড়ে বেড়ায়, যার মধ্যে রয়েছে কাচ, ধোঁয়া বা ধূলা- যেগুলোকে ‘বস্তুকণা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, রাজধানী ঢাকা বিশ্বের দ্বিতীয় সবোর্চ্চ দূষিত বায়ুর শহর। ধূলার কারণে এই দূষণের মাত্রা এখন আরও ভয়াবহ। ঢাকা শহরের প্রায় দেড় কোটি মানুষ আসলে এক অবিশ্বাস্য বিষাক্ত গ্যাসের মধ্যে বাস করছে। নতুন নতুন অবকাঠামোর নামে প্রতিনিয়ত খোঁড়াখুঁড়ির হচ্ছে নগরের বিভিন্ন স্থানে। ফলে ধূলা হয়ে উঠেছে নিত্যসঙ্গী। শুষ্ক মৌসুমে ঢাকা মহানগরীতে ধূলা দূষণের প্রকোপ অত্যন্ত বেড়ে যায়। আমাদের দেশের বিশেষ করে ঢাকা শহরের বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ ইটভাটা, কলকারখানা, নির্মাণকাজ এবং যানবাহনের ধোঁয়া। এ অবস্থায় বায়ুদূষণে ঢাকায় গড় আয়ু কমেছে প্রায় সাত বছর সাত মাস।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, শীর্ষ দূষিত নগরীর মধ্যে ঢাকা মহানগরী অন্যতম। বায়ুদূষণের প্রধান উৎসগুলো প্রায় সকলেরই কমবেশী জানা। যন্ত্রচালিত যান থেকে উৎপন্ন ধোঁয়া, ইটভাটা থেকে নির্গত ধোঁয়া, বিভিন্ন শিল্প কারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়া, প্লাস্টিক ও ইলেকট্রনিক্স বর্জ্য প্রসেসিং/পোড়ানো থেকে উৎপন্ন ধোঁয়া- এগুলোর মধ্যে অন্যতম। বর্ষাকালে বৃষ্টির ফলে বায়ুদূষণ কমে যায়, বাতাস চলাচলে দূষিত বায়ু দূরে চলে যায়। ফলে সে সময় বায়ুদূষণ কিছুটা কম থাকে। শীতকালে ইটের ভাটার কার্যক্রমে দূষণ বৃদ্ধি পায়। নির্মাণকাজ ও রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কাজ অনেকাংশে বেড়ে যায়। এ সময় আবহাওয়া শুষ্ক থাকার কারণে ধূলা বাতাসে অনেকক্ষণ উড়ে বেড়ায়। ফলে ধূলা দূষণও বৃদ্ধি পায়।
বক্তারা আরও বলেন, অন্যান্য উৎস থেকে ধোঁয়া ও ধূলা একত্র হয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি করে এবং এই দূষিত বায়ু দীর্ঘক্ষণ একই জায়গায় অবস্থান করে। ফলে অন্যান্য উৎসের সঙ্গে ধূলা দূষণ একত্রিত হয়ে বাতাস দূষণের মাত্রা অত্যাধিক বৃদ্ধি পায়। সরকার ধূলা দূষণ রোধে অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও তা বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে পর্যাপ্ত নয়। সম্প্রতি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে বায়ুদূষণের কারণে এত ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে যে সেদেশের সরকার স্কুল কলেজ বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। ঢাকার পরিস্থিতি সেদিকে ধাবিত হচ্ছে বলে বক্তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেন। এ অবস্থায় বায়ুদূষণের হাত থেকে বাঁচার জন্য সরকারকে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানান তারা।
মানববন্ধনে বক্তারা আরও বলেন, অপরিকল্পিতভাবে গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি, ড্রেনেজ এবং রাস্তাঘাট উন্নয়ন, মেরামত ও সংস্কার কার্যক্রমের আওতায় রাস্তাঘাট খোঁড়াখুঁড়ির পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও মাটি, বালি, ইটসহ নির্মাণসামগ্রী আচ্ছাদনহীন ট্রাকে করে শহরে পরিবহন করা, ড্রেন পরিষ্কার করে ময়লা রাস্তার পাশে স্তুপ করে রাখা, দোকান পাট ও গৃহস্থালির আবর্জনা যেখানে সেখানে ফেলে রাখা, মেরামতহীন ভাঙাচোরা রাস্তায় যানবাহন চলাচল, পাকা ভবন নির্মাণের সময় মাটি, বালু, ইটসহ অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রী রাস্তা-ফুটপাতে ফেলে রাখা, পুরাতন ভবন ভাঙা, মেশিনে ইট ভাঙা, যানবাহনের কালো ধোঁয়া, শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ধোঁয়া ইত্যাদি ধূলা দূষণের অন্যতম উৎস। এসব উৎস থেকে বিপুল পরিমাণ ধূলা বাতাসে মিশে জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ ও অর্থনীতিতে বিরুপ প্রভাব ফেলছে। ঢাকার রাস্তায় চলাচলকারী অতিরিক্ত যানবাহন যানজট সৃষ্টির পাশাপাশি রাজধানীর বায়ুদূষণেও অন্যতম ভূমিকা পালন করছে বলেও উল্লেখ করেন বক্তারা। ঢাকা শহরে প্রতিদিন গড়ে প্রায় তিন লাখ যান্ত্রিক যানবাহন চলাচল করে। নগরীতে চলাচলকারী গণপরিবহনের প্রায় সবগুলো বাস-মিনিবাস, প্রাইভেটকার, সিএনজি অটোরিকশা, টেম্পোসহ গাড়িগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে পড়েছে। ফিটনেসবিহীন এসব গাড়ি থেকে নির্গত
৯ দফা দাবি পূরণে মঙ্গলবার পর্যন্ত সময় দিলো শিক্ষার্থীরা
নিজস্ব প্রতিবেদক : বাসে শিক্ষার্থীদের অর্ধেক ভাড়ার দাবি নিয়ে পরিবহন মালিকদের সঙ্গে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের দ্বিতীয় দিনের বৈঠকেও কোনো সমাধান আসেনি।
গতকাল শনিবার ঢাকার বনানীতে বিআরটিএ কার্যালয়ে দুই ঘণ্টার এ বৈঠকে পরিবহন মালিকরা উল্টো ভর্তুকি দাবি করে বলছেন, ঢাকার বাস মালিকদের বেশিরভাগই ‘গরিব’। টাস্কফোর্স গঠন করে তাদের জন্য ভর্তুকি নির্ধারণ করা হোক। আর এসব বিষয়ে ফয়সালা করতে সময় লাগবে জানিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকতে আহ্বান জানিয়েছে বিআরটিএ।
বৈঠক শেষে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার সাংবাদিকদের বলেন, “২৫ নভেম্বরের বৈঠকের ধারাবাহিকতায় আজ এ বৈঠকহল। পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা অনেকগুলো প্রস্তাব দিয়েছেন। ঢাকা শহরে কত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কত শিক্ষার্থী, ইত্যাদি তথ্য তারা চেয়েছেন।
“হাফ ভাড়া নেওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের আলাদা কোনো পরিচয়পত্র দেওয়া হবে কিনা, সে বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে। পুরো বিষয়টি সুরাহা করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিআরটিএ এবং পরিবহন সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠনের প্রস্তাব এসেছে।”
অন্যদিকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির নেতা খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, “ঢাকায় নগর পরিবহনের যে বাসগুলো চলে, তার মালিকদের ৮০ শতাংশই গরিব। একটা বা দুটো বাস চালিয়ে তাদের সংসার চলে। তাদের বাচ্চারাও স্কুল কলেজে যায়। “এ কারণে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের প্রস্তাব হচ্ছে, বাস মালিকদের ক্ষতিপূরণ বা ভর্তুকির বিষয়টি নির্ধারণ করেই হাফ ভাড়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কোন তহবিল থেকে এই ভর্তুকি আসবে সেটিও নির্ধারণ করতে হবে।”
৯ দফা দাবি পূরণে মঙ্গলবার পর্যন্ত সময় দিলো শিক্ষার্থীরা : সড়ককে নিরাপদ করতে নয় দফা দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি পূরণে আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে। গতকাল শনিবার টানা তৃতীয় দিনের মত রাস্তা আটকে বিক্ষোভ দেখিয়ে তারা সড়ক ছেড়েছে আজ রোববার আবার ফিরে আসার ঘোষণা দিয়ে। আগের ঘোষণা অনুযায়ী শনিবার বেলা ১২টার দিকে রাজধানীর আসাদগেইট ও ধানম-ি ২৭ নম্বর এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীরা। এছাড়া উত্তরা হাউজ বিল্ডিং এলাকাতেও বেলা ১১টার দিকে বিক্ষোভ দেখায় একদল শিক্ষার্থী। তাদের পরে বুঝিয়ে সরিয়ে দেয় পুলিশ।
ধানম-ি ২৭ নম্বর মোড়ে সড়ক অবরোধ করা শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ চালিয়ে যায় বেলা আড়াইটা পর্যন্ত। বিক্ষোভ শেষ করে তারা হ্যান্ডমাইকে তাদের নয় দফা দাবি পড়ে শোনায়। আন্দোলনকারীদের একজন প্রতিনিধি পরে মাইকে বলেন, এই নয় দফা দাবি আদায়ে গত বৃহস্পতিবার সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কার্যালয়ে বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন তারা। বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ তাদের কাছে এক সপ্তাহ সময় চেয়েছিল। কিন্তু শিক্ষার্থীরা মঙ্গলবার পর্যন্ত সময় দেবে জানিয়ে আন্দোলনকারীদের ওই প্রতিনিধি বলেন, এই সময়ের মধ্যে তাদের দাবি পূরণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা না হলে ওই দিন দুপুরে রাজধানীর সব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিয়ে তারা বিআরটিএ কার্যালয় ঘেরাও করবে। তার আগে রবি ও সোমবার বিক্ষোভ চলবে এবং সড়কে গাড়ির ফিটনেস ও লাইসেন্স পরীক্ষা চলবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয় আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে।
২০১৮ সালে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের নজিরবিহীন আন্দোলনে যে নয় দফা দাবি ছিল, সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা বাস্তবায়ন করেনি জানিয়ে শিক্ষার্থীদের ওই প্রতিনিধি বলেন, এবার দাবি আদায় না হলে মঙ্গলবার তারা নতুন কর্মসূচি দেবেন।
ডিজেলের দাম ২৩ শতাংশ বাড়ানোর পর পরিবহন মালিকদের চাপে সরকার বাসের ভাড়া ২৭ শতাংশ বাড়ায়। এর পর থেকেই বাসে অর্ধেক ভাড়া দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন করে আসছে শিক্ষার্থীরা।
গত বুধবার সড়কে সিটি করপোরেশনের গাড়ির ধাক্কায় নটর ডেম কলেজের এক শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর সেই আন্দোলন আরও গতি পায়। বৃহস্পতিবার পথে পথে তাদের বিক্ষোভ-অবরোধে রাজধানী ঢাকা কার্যত অচল হয়ে পড়ে। সেদিন দাবি পূরণের জন্য শনিবার পর্যন্ত সময় দিয়ে রাস্তা ছাড়ে আন্দোলনকারীরা। এরপর শুক্রবার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, ১ ডিসেম্বর থেকেই বিআরটিসির বাসে শিক্ষার্থীদের জন্য ‘হাফ’ ভাড়া চালু হবে।
বেসরকারি বাসেও একই নিয়ম চালুর জন্য শনিবার বেলা ১১টার পর পরিবহন মালিক এবং শ্রমিক ফেডারেশনের নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ-বিআরটিএ। তবে কোনো সিদ্ধান্তে তারা আসতে পারেননি।