ঢাকা ০৩:০৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫

ইউপি নির্বাচন: নৌকার সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের দ্বিমুখী-ত্রিমুখী লড়াই

  • আপডেট সময় : ০১:১৭:৪০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ নভেম্বর ২০২১
  • ৭৩ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে ২৩ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণের তারিখ রেখে চতুর্থ ধাপের ইউপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলেও এইচএসসি পরীক্ষার কারণে ভোটগ্রহণের সেই তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ২৩ ডিসেম্বরের পরিবর্তে আগামী ২৬ ডিসেম্বর এসব ইউনিয়নে ভোট নেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
এর আগে, গত ১০ নভেম্বর দুপুরে নির্বাচন কমিশনের ৮৯তম কমিশন বৈঠক শেষে চতুর্থ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদে ভোটগ্রহণের তফসিল ঘোষণা করেছিল ইসি। তফসিল অনুযায়ী দেশের ৮৪০টি ইউপিতে ২৩ ডিসেম্বর ভোট নেওয়ার কথা ছিল।
এবারের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন বেশ প্রতিযোগিতামূলক হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা। বুধবার বেলা ১১টার দিকে নির্বাচন কমিশন ভবনে আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত বিশেষ সভার শুরুতে দেওয়া সূচনা বক্তব্যে এমন মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, এবারের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে ৭৪ শতাংশ ভোট পড়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে যে নির্বাচনগুলো হয়েছে, তাতে নির্বাচন প্রতিযোগিতামূলক ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে এবং যার কারণে ৭৪ শতাংশ লোক তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন।
সভার সূচনা বক্তব্যে সিইসি বলেন, ‘সামগ্রিক অর্থে নির্বাচন সফল হয়েছে। অল্প কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা, দুর্ঘটনা ও হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। যেগুলো কিছুতেই কাম্য নয়। তবুও নির্বাচনের মানদ- যদি ভোট প্রদান হয়, তাহলে আমি বলব, গত নির্বাচনগুলোতে গড়ে ৭৪ শতাংশ ভোট পড়েছে।’ তিনি আরও বলেন, স্থানীয় সরকার পর্যায়ের নির্বাচনগুলোতে উত্তেজনা ও উত্তাপ থাকে। সেই উত্তেজনা ও উত্তাপ কখনো কখনো সহিংসতায় পরিণত হয়, যা কখনোই আমাদের কাম্য নয়।
ইসি মহোদয় প্রত্যাশা করুক আর না করুক, সহিংসতা-সংঘাত কিন্তু থেমে নেই। জানা যায়, নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার মিঠাপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. ফিরোজ হোসেন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মো.আবদুর রাজ্জাকের নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার রাতে ওই ইউনিয়নের রুকনপুর দক্ষিণপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ভাঙচুরের ঘটনায় ওই দুই প্রার্থী পাল্টাপাল্টি দোষারোপ করছেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মঙ্গলবার রাত আটটার পর ফিরোজ হোসেন চারটি মোটরসাইকেল নিয়ে তাঁর নির্বাচনী ক্যাম্পে আসেন। ওই ক্যাম্প থেকে মাত্র ২০ গজ দূরেই আবদুর রাজ্জাকের নির্বাচনী ক্যাম্প। ওই সময় আবদুর রাজ্জাকের নির্বাচনী ক্যাম্পে কেউ ছিলেন না। কিছুক্ষণ পর আবদুর রাজ্জাকের নির্বাচনী ক্যাম্পের বৈদ্যুতিক বাতি বন্ধ হয়ে যায়। আলো নিভে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর নির্বাচনী ক্যাম্পের পেছনের বাসিন্দা আবুল কাশেমের বাড়ির লোকজন এসে দেখেন আবদুর রাজ্জাকের নির্বাচনী ক্যাম্পে ভাঙচুর চালানো হয়েছে।
সূত্র জানায়, খবর পেয়ে আবদুর রাজ্জাক ও তাঁর ১৫ থেকে ২০ জন কর্মী-সমর্থক সেখানে ছুটে আসেন। এরপর দুই পক্ষের কর্মী-সমর্থকের মধ্যে বাগ্বিত-া হয়। এরপর আওয়ামী লীগের ফিরোজ হোসেনের ক্যাম্পে ভাঙচুর করা হয়।
মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার চরকেওয়ার ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে দুই পক্ষের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার, দ্বন্দ্ব ও সহিংসতায় সম্প্রতি দুই ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের স্বজনেরা অভিযোগ করেছেন, প্রতিপক্ষের লোকজন তাঁদের হত্যা করেছেন। এ দুই হত্যাকা-ের ঘটনায় গোটা ইউনিয়নে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। হামলা-মামলার ভয়ে বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন গ্রামের পুরুষেরা। আতঙ্কে দিন পার করছেন বাড়ির নারীরা।
চরকেওয়ার ইউপিতে এবারের নির্বাচনে বিএনপি-জাতীয় পার্টির কোনো প্রার্থী নেই। লড়াইটা শুধু আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আফসার উদ্দিন ও বিদ্রোহী প্রার্থী আক্তারুজ্জামানের মধ্যে। নির্বাচনের শুরুর দিকে পরিবেশ কিছুটা শান্ত থাকলেও গত রোববার সহিংসতার ঘটনা ঘটে। দুই পক্ষের সংঘর্ষ, গোলাগুলি ও পাল্টাপাল্টি হামলা চলে। এসব ঘটনায় দুই পক্ষের শতাধিক কর্মী-সমর্থক আহত হন।
সূত্র জানায়, রোববার চরকেওয়ার ইউনিয়নের খাসকান্দি এলাকায় নির্বাচনী সহিংসতার সময় আবদুল হক (৫০) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। নিহত ব্যক্তির পরিবারের অভিযোগ, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আক্তারুজ্জামানের লোকজন তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করেন। এ ঘটনার এক দিন না পেরুতেই সোমবার সকালে ওই ইউনিয়নের নলবুনিয়াকান্দি এলাকার আবদুস সাত্তার সরকার (৪৫) নামের এক ব্যক্তির ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়।
আবদুস সাত্তারের স্ত্রী-সন্তানেরা দাবি করেন, এবার নির্বাচনে আক্তারুজ্জামানকে সমর্থন করার কারণে সাত্তারকে নৌকার প্রার্থীর লোকজন হত্যা করেন। এ দুটি ঘটনার পরপরই ইউনিয়নজুড়ে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়।
এদিকে, মাগুরার মহম্মদপুর ও শালিখা উপজেলায় ১৫টি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। এখানে নৌকার বিপরীতে প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের এক সাধারণ সম্পাদকসহ ২৪ জন বিদ্রোহী প্রার্থী। দলের মধ্যে বিভক্তি থাকায় তাঁদের নির্বাচনের মাঠ থেকে সরাতে পারেননি নেতারা।
দ্বিতীয় দফায় মাগুরা সদরে ১২টি ইউপিতে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হওয়ায় বিএনপিসহ অন্যান্য দলের প্রার্থীরাও নড়েচড়ে বসেছেন। এমন পরিস্থিতিতে দুই উপজেলার প্রতিটি ইউপিতেই হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীর কারণে অস্বস্তিতে রয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। তৃতীয় দফায় ২৮ নভেম্বর এই দুই উপজেলায় ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
সূত্র জানায়, বেশির ভাগ ইউপিতে নৌকার সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের দ্বিমুখী ও ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। কোথাও কোথাও আওয়ামী লীগের সমর্থকদের একটি অংশ দলের বিদ্রোহী প্রার্থীকে সমর্থন দিচ্ছে।
অন্যদিকে, সুনামগঞ্জের দুই উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পাঁচ বিদ্রোহী প্রার্থীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শতিউর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক এম এনামুল কবির স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বহিষ্কারের বিষয়টি জানানো হয়।
বহিষ্কার হওয়া নেতারা হলেন সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও জাহাঙ্গীরনগর ইউপির প্রার্থী আবদুল কাদির, সুরমা ইউপির প্রার্থী ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম, একই ইউনিয়নের আরেক বিদ্রোহী প্রার্থী আমির হোসেন রেজা, গৌরারং ইউপির প্রার্থী সারোয়ার আহমদ এবং শান্তিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসাংগঠনিক সম্পাদক ও জয়কলস ইউপির প্রার্থী আবদুল বাছিত সুজন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জ সদর ও শান্তিগঞ্জ উপজেলার ১৭টি ইউপিতে আওয়ামী লীগের অন্তত ২৩ জন বিদ্রোহী প্রার্থী আছেন। এর মধ্যে অনেকেই দলের পদে নেই। আবার কেউ কেউ দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনে আছেন।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ইউপি নির্বাচন: নৌকার সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের দ্বিমুখী-ত্রিমুখী লড়াই

আপডেট সময় : ০১:১৭:৪০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ নভেম্বর ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক : নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে ২৩ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণের তারিখ রেখে চতুর্থ ধাপের ইউপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলেও এইচএসসি পরীক্ষার কারণে ভোটগ্রহণের সেই তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ২৩ ডিসেম্বরের পরিবর্তে আগামী ২৬ ডিসেম্বর এসব ইউনিয়নে ভোট নেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
এর আগে, গত ১০ নভেম্বর দুপুরে নির্বাচন কমিশনের ৮৯তম কমিশন বৈঠক শেষে চতুর্থ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদে ভোটগ্রহণের তফসিল ঘোষণা করেছিল ইসি। তফসিল অনুযায়ী দেশের ৮৪০টি ইউপিতে ২৩ ডিসেম্বর ভোট নেওয়ার কথা ছিল।
এবারের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন বেশ প্রতিযোগিতামূলক হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা। বুধবার বেলা ১১টার দিকে নির্বাচন কমিশন ভবনে আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত বিশেষ সভার শুরুতে দেওয়া সূচনা বক্তব্যে এমন মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, এবারের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে ৭৪ শতাংশ ভোট পড়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে যে নির্বাচনগুলো হয়েছে, তাতে নির্বাচন প্রতিযোগিতামূলক ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে এবং যার কারণে ৭৪ শতাংশ লোক তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন।
সভার সূচনা বক্তব্যে সিইসি বলেন, ‘সামগ্রিক অর্থে নির্বাচন সফল হয়েছে। অল্প কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা, দুর্ঘটনা ও হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। যেগুলো কিছুতেই কাম্য নয়। তবুও নির্বাচনের মানদ- যদি ভোট প্রদান হয়, তাহলে আমি বলব, গত নির্বাচনগুলোতে গড়ে ৭৪ শতাংশ ভোট পড়েছে।’ তিনি আরও বলেন, স্থানীয় সরকার পর্যায়ের নির্বাচনগুলোতে উত্তেজনা ও উত্তাপ থাকে। সেই উত্তেজনা ও উত্তাপ কখনো কখনো সহিংসতায় পরিণত হয়, যা কখনোই আমাদের কাম্য নয়।
ইসি মহোদয় প্রত্যাশা করুক আর না করুক, সহিংসতা-সংঘাত কিন্তু থেমে নেই। জানা যায়, নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার মিঠাপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. ফিরোজ হোসেন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মো.আবদুর রাজ্জাকের নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার রাতে ওই ইউনিয়নের রুকনপুর দক্ষিণপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ভাঙচুরের ঘটনায় ওই দুই প্রার্থী পাল্টাপাল্টি দোষারোপ করছেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মঙ্গলবার রাত আটটার পর ফিরোজ হোসেন চারটি মোটরসাইকেল নিয়ে তাঁর নির্বাচনী ক্যাম্পে আসেন। ওই ক্যাম্প থেকে মাত্র ২০ গজ দূরেই আবদুর রাজ্জাকের নির্বাচনী ক্যাম্প। ওই সময় আবদুর রাজ্জাকের নির্বাচনী ক্যাম্পে কেউ ছিলেন না। কিছুক্ষণ পর আবদুর রাজ্জাকের নির্বাচনী ক্যাম্পের বৈদ্যুতিক বাতি বন্ধ হয়ে যায়। আলো নিভে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর নির্বাচনী ক্যাম্পের পেছনের বাসিন্দা আবুল কাশেমের বাড়ির লোকজন এসে দেখেন আবদুর রাজ্জাকের নির্বাচনী ক্যাম্পে ভাঙচুর চালানো হয়েছে।
সূত্র জানায়, খবর পেয়ে আবদুর রাজ্জাক ও তাঁর ১৫ থেকে ২০ জন কর্মী-সমর্থক সেখানে ছুটে আসেন। এরপর দুই পক্ষের কর্মী-সমর্থকের মধ্যে বাগ্বিত-া হয়। এরপর আওয়ামী লীগের ফিরোজ হোসেনের ক্যাম্পে ভাঙচুর করা হয়।
মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার চরকেওয়ার ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে দুই পক্ষের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার, দ্বন্দ্ব ও সহিংসতায় সম্প্রতি দুই ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের স্বজনেরা অভিযোগ করেছেন, প্রতিপক্ষের লোকজন তাঁদের হত্যা করেছেন। এ দুই হত্যাকা-ের ঘটনায় গোটা ইউনিয়নে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। হামলা-মামলার ভয়ে বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন গ্রামের পুরুষেরা। আতঙ্কে দিন পার করছেন বাড়ির নারীরা।
চরকেওয়ার ইউপিতে এবারের নির্বাচনে বিএনপি-জাতীয় পার্টির কোনো প্রার্থী নেই। লড়াইটা শুধু আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আফসার উদ্দিন ও বিদ্রোহী প্রার্থী আক্তারুজ্জামানের মধ্যে। নির্বাচনের শুরুর দিকে পরিবেশ কিছুটা শান্ত থাকলেও গত রোববার সহিংসতার ঘটনা ঘটে। দুই পক্ষের সংঘর্ষ, গোলাগুলি ও পাল্টাপাল্টি হামলা চলে। এসব ঘটনায় দুই পক্ষের শতাধিক কর্মী-সমর্থক আহত হন।
সূত্র জানায়, রোববার চরকেওয়ার ইউনিয়নের খাসকান্দি এলাকায় নির্বাচনী সহিংসতার সময় আবদুল হক (৫০) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। নিহত ব্যক্তির পরিবারের অভিযোগ, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আক্তারুজ্জামানের লোকজন তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করেন। এ ঘটনার এক দিন না পেরুতেই সোমবার সকালে ওই ইউনিয়নের নলবুনিয়াকান্দি এলাকার আবদুস সাত্তার সরকার (৪৫) নামের এক ব্যক্তির ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়।
আবদুস সাত্তারের স্ত্রী-সন্তানেরা দাবি করেন, এবার নির্বাচনে আক্তারুজ্জামানকে সমর্থন করার কারণে সাত্তারকে নৌকার প্রার্থীর লোকজন হত্যা করেন। এ দুটি ঘটনার পরপরই ইউনিয়নজুড়ে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়।
এদিকে, মাগুরার মহম্মদপুর ও শালিখা উপজেলায় ১৫টি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। এখানে নৌকার বিপরীতে প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের এক সাধারণ সম্পাদকসহ ২৪ জন বিদ্রোহী প্রার্থী। দলের মধ্যে বিভক্তি থাকায় তাঁদের নির্বাচনের মাঠ থেকে সরাতে পারেননি নেতারা।
দ্বিতীয় দফায় মাগুরা সদরে ১২টি ইউপিতে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হওয়ায় বিএনপিসহ অন্যান্য দলের প্রার্থীরাও নড়েচড়ে বসেছেন। এমন পরিস্থিতিতে দুই উপজেলার প্রতিটি ইউপিতেই হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীর কারণে অস্বস্তিতে রয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। তৃতীয় দফায় ২৮ নভেম্বর এই দুই উপজেলায় ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
সূত্র জানায়, বেশির ভাগ ইউপিতে নৌকার সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের দ্বিমুখী ও ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। কোথাও কোথাও আওয়ামী লীগের সমর্থকদের একটি অংশ দলের বিদ্রোহী প্রার্থীকে সমর্থন দিচ্ছে।
অন্যদিকে, সুনামগঞ্জের দুই উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পাঁচ বিদ্রোহী প্রার্থীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শতিউর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক এম এনামুল কবির স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বহিষ্কারের বিষয়টি জানানো হয়।
বহিষ্কার হওয়া নেতারা হলেন সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও জাহাঙ্গীরনগর ইউপির প্রার্থী আবদুল কাদির, সুরমা ইউপির প্রার্থী ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম, একই ইউনিয়নের আরেক বিদ্রোহী প্রার্থী আমির হোসেন রেজা, গৌরারং ইউপির প্রার্থী সারোয়ার আহমদ এবং শান্তিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসাংগঠনিক সম্পাদক ও জয়কলস ইউপির প্রার্থী আবদুল বাছিত সুজন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জ সদর ও শান্তিগঞ্জ উপজেলার ১৭টি ইউপিতে আওয়ামী লীগের অন্তত ২৩ জন বিদ্রোহী প্রার্থী আছেন। এর মধ্যে অনেকেই দলের পদে নেই। আবার কেউ কেউ দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনে আছেন।