ক্রীড়া ডেস্ক : নতুন কোচের ডাকে সাড়া দিয়ে কাম্প নউয়ের গ্যালারিতে ফিরল প্রাণ। ‘চাভি, চাভি, চাভি’ চিৎকারে গলা ফাটালেন দর্শকরা। মেমফিস-বুসকেতসরা খেললেন উজ্জীবিত ফুটবল। কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাওয়া বার্সেলোনা শিবিরে ফিরল জয়ের স্বস্তি। হাসি মুখে শুরু হলো বার্সেলোনার কোচ হিসেবে চাভি এরনান্দেসের পথচলা। জয়ের ব্যবধান যদিও বড় নয়। কাম্প নউয়ে শনিবার রাতে নগর প্রতিদ্বন্দ্বী এস্পানিওলের বিপক্ষে ১-০ গোলে জিতল তারা। জয় এনে দেওয়া গোলটি করেন মেমফিস ডিপাই। লা লিগায় চার ম্যাচ পর জয়ের স্বাদ পেল বার্সেলোনা। টানা দুই হারের পর দুটি ড্র করেছিল কাতালান দলটি। ম্যাচে ৬৫ শতাংশ সময় বল দখলে রেখে গোলের জন্য বার্সেলোনা ১৬টি শট নেয়, যার ৬টি ছিল লক্ষ্যে। আর এস্পানিওলের ১২ শটের ২টি লক্ষ্যে ছিল। ম্যাচটি এমনকি জিততেও পারত সফরকারীরা। তাদের দুটি প্রচেষ্টা পোস্টে লাগে। হাতছাড়া করে একাধিক সুযোগ। এস্পানিওলের বিপক্ষে লিগে এই নিয়ে টানা ২৩ ম্যাচে অপরাজিত রইল বার্সেলোনা। এর মধ্যে তাদের জয় ১৮টি।
দলের টানা ব্যর্থতার দায়ে চাকরি হারানো কোচ রোনাল্ড কুমানের জায়গায় শুরুতে অস্থায়ীভাবে দায়িত্ব পান বার্সেলোনা ‘বি’ দলের কোচ সের্হি বারজুয়ান। পরে গত ৬ নভেম্বর তারই স্থলাভিষিক্ত হন চাভি। আন্তর্জাতিক বিরতির পর অবশেষে ডাগআউটে অভিষেক হলো দলটির সাবেক এই মিডফিল্ডারের। স্পেনের বিশ্বকাপ জয়ী এই তারকার হাত ধরেই নতুন আশায় বুক বেঁধেছে বার্সেলোনা। আগের দিন মাঠে এসে দলকে সমর্থন দেওয়ার জন্য ভক্তদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন চাভি। সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে কাম্প নউয়ের গ্যালারিতে উপস্থিত ছিল ৭৪ হাজারের বেশি দর্শক। যেখানে এক ম্যাচ আগেও আলাভেসের বিপক্ষে ১-১ গোলে ড্রয়ের দিনে মাত্র ৩৭ হাজারের কিছু বেশি দর্শক এসেছিল মাঠে। এস্পানিওল ম্যাচ দিয়ে অভিষেক হয় আরও একজনের। মূল দলের হয়ে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামেন বার্সেলোনা ‘বি’ দলের ১৭ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড ইলিয়াস। শুরু থেকে একের পর এক আক্রমণে এস্পানিওলকে কাঁপিয়ে দেয় বার্সেলোনা। চতুর্থ মিনিটে প্রথম সুযোগ পায় তারা। ফ্রেংকি ডি ইয়ংয়ের লম্বা করা বাড়ানো বলে মেমফিসের ভলি ঠেকান গোলরক্ষক দিয়েগো লোপেস
চতুর্দশ মিনিটে জর্দি আলবার নিচু ক্রস ডি-বক্সে ভালো পজিশনে পেয়ে উড়িয়ে মারেন অভিষিক্ত ইলিয়াস। যদিও অফসাইডের পতাকা তোলেন লাইন্সম্যান। পরের মিনিটে গোলরক্ষক লোপেস ডি-বক্সে বল তুলে দেন গাভির পায়ে। সঙ্গে লেগে থাকা ডিফেন্ডার দাভিদ লোপেসের চ্যালেঞ্জে শট নেওয়ার আগেই মাটিতে পড়ে যান বার্সেলোনা মিডফিল্ডার। পেনাল্টির আবেদনে সাড়া দেননি রেফারি। ২৫তম মিনিটে গোলরক্ষক বারাবর শট মারেন মেমফিস। তিন মিনিট পর ডি-বক্সের ভেতর থেকে সের্হিও বুসকেতসের শট ডান দিকে ঝাঁপিয়ে ঠেকান লোপেস। বিরতির আগে বিপদে পড়তে বসেছিল বার্সেলোনা। কাছ থেকে প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়ের শটে জেরার্দ পিকের পায়ে লেগে যাওয়া বল এক হাতে ক্রসবারের ওপর দিয়ে পাঠান মার্ক-আন্ড্রে টের স্টেগেন। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই এগিয়ে যায় স্বাগতিকরা। সফল স্পট-কিকে গোলটি করেন মেমফিস। এই ডাচ ফরোয়ার্ড নিজেই ফাউলের শিকার হলে পেনাল্টি পেয়েছিল বার্সেলোনা। ৬১তম মিনিটে ডান দিক থেকে দারুণ এক ক্রস বাড়ান দ্বিতীয়ার্ধে ইলিয়াসের বদলি নামা আরেক টিনএজার আব্দি। ছুটে গিয়ে কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন এস্পানিওলের ডিফেন্ডার আদ্রিয়া পেদ্রোসা। চার মিনিট পর ফ্রেংকি ডি ইয়ং জালে বল পাঠালেও অফসাইডের কারণে গোল মেলেনি।
৭০তম মিনিটে সমতা ফেরানোর সুবর্ণ সুযোগ পান রাউল দে তমাস। কিন্তু কাছ থেকে বল বাইরে মেরে বসেন এই স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড। শেষ ১০ মিনিটে বার্সেলোনার ওপর চায় বাড়ায় এস্পানিওল। ৮২তম মিনিটে দে তমাসের ফ্রি কিক পোস্টে লাগে। দুই মিনিট পর কাছ থেকে হেড লক্ষ্যে রাখতে পারেননি অরক্ষিত দিমাতা। নির্ধারিত সময়ের চার মিনিট বাকি থাকতে আবারও তাদের সামনে বাধ সাধে দুর্ভাগ্য। এবার সতীর্থের ক্রসে দে তমাসের হেড লাগে পোস্টে। স্বস্তির জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে স্বাগতিকরা। ১৩ ম্যাচে পাঁচটি করে জয় ও ড্রয়ে ২০ পয়েন্ট নিয়ে ষষ্ঠ স্থানে উঠেছে বার্সেলোনা। দুই ম্যাচ কম খেলা এস্পানিওল ১৭ পয়েন্ট নিয়ে ১১তম স্থানে আছে। বার্সেলোনার সমান ম্যাচে ২৮ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে সেভিয়া। তাদের সমান পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে রিয়াল সোসিয়েদাদ। ১ পয়েন্ট কম নিয়ে তিন নম্বরে রিয়াল মাদ্রিদ। একটি ম্যাচ কম খেলেছে কার্লো আনচেলত্তির দল। ১৩ ম্যাচে ২৬ পয়েন্ট নিয়ে আতলেতিকো মাদ্রিদ চারে, ২১ পয়েন্ট নিয়ে রিয়াল বেতিস পাঁচ নম্বরে আছে।
চাভির হাত ধরে জয়ে ফিরল বার্সেলোনা
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ