ঢাকা ০৪:২১ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৮ জুন ২০২৫

মধুমতির তীব্র ভাঙনে দিশেহারা ২ গ্রামের মানুষ

  • আপডেট সময় : ০১:২৭:৪১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ নভেম্বর ২০২১
  • ৮৭ বার পড়া হয়েছে

মাগুরা প্রতিনিধি : মাগুরার মহম্মদপুরে মধুমতি নদীতে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। নদীর পানি কমতে শুরু করায় আচমকা এই ভাঙন দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। ভাঙনের কবলে পড়ে উপজেলার দুই গ্রামের অনেকে ফসলি জমি ও বাড়ি-ঘর হারিয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত ছয় দিনে উপজেলা সদর ইউনিয়নের ঢুষরাইল ও বালিদিয়া ইউনিয়নের হরেকৃষ্ণপুর দিয়ে প্রবাহিত মধুমতি নদীতে বিলীন হয়েছে ৪০টি পরিবারের বসতভিটা। ভাঙনের মুখে রয়েছে অন্তত ১০০ পরিবার। এছাড়া মহম্মদপুর সদর ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত রুইজানি, কাশিপুর, গোপালনগর এবং পলাশবাড়ী ইউনিয়নের ঝামা ও যশোবন্তপুর গ্রামেও নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে।
বুধবার (১৭ নভেম্বর) সকালে সরেজমিন ঢুষরাইল ও হরেকৃষ্ণপুর গ্রাম ঘুরে মধুমতির ভাঙনের ভয়াবহ চিত্র দেখা গেছে। এদিকে নদী পাড়ে বসবাসকারীদের পরিস্থিতি দেখতে বুধবার সকালে ভাঙন কবলিত দুটি গ্রাম পরিদর্শন করেছেন মাগুরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মেহেদী হাসান। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন মহম্মদপুর উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ আবু আব্দুল্লাহ কাফি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রামানন্দ পাল। গ্রামের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত তিন দশকে ৮০ ভাগ পরিবার ভাঙনের শিকার হয়েছে। অনেক পরিবার তিন-পাঁচবার ভাঙনের কবলে পড়েছেন। অনেকেই এলাকা ছেড়ে অন্য এলাকায় বসতি গড়েছেন। অসচ্ছলতার কারণে যারা শহরে বা অন্যত্র যেতে পারেনি তারা একবার নদীর এ পাড়ে এবং আরেকবার নদীর অন্য পাড়ে বসতি গড়ছেন। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে ভাঙন প্রতিরোধে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ এখনো নেওয়া হয়নি। ঢুষরাইল গ্রামের নূরুল ইসলাম চোখের পানি ফেলতে ফেলতে বলেন, ‘এ নিয়ে চারবার নদীতে বাড়ি ভাঙল। সবশেষ কয়েক দিন আগে পাকা বাড়িটি নদীতে গেছে। সব শেষ হয়ে গেছে। এখন আমি পথের ফকির।’
ঢুষরাইল গ্রামের নূরুল ইসলাম শেখের ৫ একর জমি গত বছর নদীতে বিলীন হয়েছে। প্রায় এক একর জমির ওপর ছিল তাঁর বসতবাড়ি। এবারের বর্ষায় বিলীন হয়েছে তাঁর বসতভিটা। জমিজমা ও বসতভিটা হারিয়ে তিনি এখন নিঃস্ব। স্থানীয় লোকজনের তথ্যমতে, পাঁচদিন ধরে নদী ভাঙন অব্যাহত আছে। গত দুই দিনে তা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। চলতি বর্ষা শেষে ঢুষরাইল ও হরেকৃষ্ণপুর গ্রামের শাহীদা বেগম, মনোয়ার হোসেন, ওলিয়ার মোল্যা, হালিমা বেগম, সুলতান মোল্যা, নূরুল ইসলাম, শাহাদত হোসেনসহ অন্তত ৪০টি পরিবারের বসতবাড়ি গ্রাস করেছে মধুমতী। হরেকৃষ্ণপুর গ্রামের সাবেক স্কুল শিক্ষক মনোয়ার হোসেন জানান, ভাঙনরোধে স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় নদীতে এলাকা বিলীন হচ্ছে। বিধবা শাহীদা বেগম কাদতে কাদতে বলেন, তার স্বামী নেই। বসত বাড়ির অর্ধেক নদীতে চলে গেছে। এখন তিনি কোথায় যাবেন জানেন না। অলিয়ার রহমান মোল্যা বলেন, বাড়ি এই নিয়ে তিনবার সরানো হলো। ভেঙে যাওয়ার আগে বনজ ফলদসহ ৩০টি গাছ পানির দামে বিক্রি করেছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) মাগুরার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মেহেদী হাসান বলেন, বর্ষা শেষে অসময়ে মধুমতি পাড়ের দুটি গ্রামে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। নদীর এমন আচরণ অস্বাভাবিক। সরেজমিন পরিদর্শন করেছি। প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে বস্তা ফেলার জন্য প্রকল্প পাঠানো হবে। ভাঙনরোধে এখানে স্থায়ী ব্যবস্থা দরকার। এ জন্য ডিপিপি তৈরি করে পাঠানো হবে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

মধুমতির তীব্র ভাঙনে দিশেহারা ২ গ্রামের মানুষ

আপডেট সময় : ০১:২৭:৪১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ নভেম্বর ২০২১

মাগুরা প্রতিনিধি : মাগুরার মহম্মদপুরে মধুমতি নদীতে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। নদীর পানি কমতে শুরু করায় আচমকা এই ভাঙন দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। ভাঙনের কবলে পড়ে উপজেলার দুই গ্রামের অনেকে ফসলি জমি ও বাড়ি-ঘর হারিয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত ছয় দিনে উপজেলা সদর ইউনিয়নের ঢুষরাইল ও বালিদিয়া ইউনিয়নের হরেকৃষ্ণপুর দিয়ে প্রবাহিত মধুমতি নদীতে বিলীন হয়েছে ৪০টি পরিবারের বসতভিটা। ভাঙনের মুখে রয়েছে অন্তত ১০০ পরিবার। এছাড়া মহম্মদপুর সদর ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত রুইজানি, কাশিপুর, গোপালনগর এবং পলাশবাড়ী ইউনিয়নের ঝামা ও যশোবন্তপুর গ্রামেও নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে।
বুধবার (১৭ নভেম্বর) সকালে সরেজমিন ঢুষরাইল ও হরেকৃষ্ণপুর গ্রাম ঘুরে মধুমতির ভাঙনের ভয়াবহ চিত্র দেখা গেছে। এদিকে নদী পাড়ে বসবাসকারীদের পরিস্থিতি দেখতে বুধবার সকালে ভাঙন কবলিত দুটি গ্রাম পরিদর্শন করেছেন মাগুরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মেহেদী হাসান। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন মহম্মদপুর উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ আবু আব্দুল্লাহ কাফি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রামানন্দ পাল। গ্রামের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত তিন দশকে ৮০ ভাগ পরিবার ভাঙনের শিকার হয়েছে। অনেক পরিবার তিন-পাঁচবার ভাঙনের কবলে পড়েছেন। অনেকেই এলাকা ছেড়ে অন্য এলাকায় বসতি গড়েছেন। অসচ্ছলতার কারণে যারা শহরে বা অন্যত্র যেতে পারেনি তারা একবার নদীর এ পাড়ে এবং আরেকবার নদীর অন্য পাড়ে বসতি গড়ছেন। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে ভাঙন প্রতিরোধে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ এখনো নেওয়া হয়নি। ঢুষরাইল গ্রামের নূরুল ইসলাম চোখের পানি ফেলতে ফেলতে বলেন, ‘এ নিয়ে চারবার নদীতে বাড়ি ভাঙল। সবশেষ কয়েক দিন আগে পাকা বাড়িটি নদীতে গেছে। সব শেষ হয়ে গেছে। এখন আমি পথের ফকির।’
ঢুষরাইল গ্রামের নূরুল ইসলাম শেখের ৫ একর জমি গত বছর নদীতে বিলীন হয়েছে। প্রায় এক একর জমির ওপর ছিল তাঁর বসতবাড়ি। এবারের বর্ষায় বিলীন হয়েছে তাঁর বসতভিটা। জমিজমা ও বসতভিটা হারিয়ে তিনি এখন নিঃস্ব। স্থানীয় লোকজনের তথ্যমতে, পাঁচদিন ধরে নদী ভাঙন অব্যাহত আছে। গত দুই দিনে তা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। চলতি বর্ষা শেষে ঢুষরাইল ও হরেকৃষ্ণপুর গ্রামের শাহীদা বেগম, মনোয়ার হোসেন, ওলিয়ার মোল্যা, হালিমা বেগম, সুলতান মোল্যা, নূরুল ইসলাম, শাহাদত হোসেনসহ অন্তত ৪০টি পরিবারের বসতবাড়ি গ্রাস করেছে মধুমতী। হরেকৃষ্ণপুর গ্রামের সাবেক স্কুল শিক্ষক মনোয়ার হোসেন জানান, ভাঙনরোধে স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় নদীতে এলাকা বিলীন হচ্ছে। বিধবা শাহীদা বেগম কাদতে কাদতে বলেন, তার স্বামী নেই। বসত বাড়ির অর্ধেক নদীতে চলে গেছে। এখন তিনি কোথায় যাবেন জানেন না। অলিয়ার রহমান মোল্যা বলেন, বাড়ি এই নিয়ে তিনবার সরানো হলো। ভেঙে যাওয়ার আগে বনজ ফলদসহ ৩০টি গাছ পানির দামে বিক্রি করেছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) মাগুরার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মেহেদী হাসান বলেন, বর্ষা শেষে অসময়ে মধুমতি পাড়ের দুটি গ্রামে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। নদীর এমন আচরণ অস্বাভাবিক। সরেজমিন পরিদর্শন করেছি। প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে বস্তা ফেলার জন্য প্রকল্প পাঠানো হবে। ভাঙনরোধে এখানে স্থায়ী ব্যবস্থা দরকার। এ জন্য ডিপিপি তৈরি করে পাঠানো হবে।