ঢাকা ০৬:৩১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তাম্বুল রাতুল হৈল

  • আপডেট সময় : ১০:৩৫:১০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ নভেম্বর ২০২১
  • ৫০ বার পড়া হয়েছে

নাবিল মুহতাসিম : ফাহাদের মতো বন্ধুকে নিয়ে এত দরকারি একটা সফরে বেরোনোর আগেই আমার জানা ছিল, এর ফায়দা যেমন আছে, তেমনি খেসারতও কম দিতে হবে না। ফায়দা তো বুঝতেই পারছেন, ও এই এলাকার ছেলে। ভাষা-কালচার-রাস্তাঘাট—সব ওর নখদর্পণে। সিলেট থেকে বিনা পাসপোর্টে ভারতের মেঘালয়ে ঢুকেছি, সেটা কি আর ওকে ছাড়া সম্ভব হতো?
কিন্তু খেসারতটাও যে কম নয়।
এই যে আমরা বর্ডার থেকে কিলো দশেক ভেতরে বিদেশ–বিভুঁইয়ে আছি, একটা খাসিয়া ‘পুঞ্জি’ থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে একটা টিলার ঢালুতে বড় গাছটার নিচে ঘাপটি মেরে অপেক্ষা করছি এক অনিশ্চিত সাক্ষাতের, সেটা ফাহাদকে দেখে বোঝার কোনো উপায়ই নেই। আমি গাছপালার আড়াল থেকে বারবার তাকাচ্ছি পুঞ্জিটার দিকে, গরম নেই তবু ঘামছি। আর এদিকে আমার সিলেটি বন্ধু এতক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিল বলেই বোধ হয় বাথরুমে বসার মতো করে উবু হয়ে বসে থাকতে থাকতে হঠাৎ হেঁড়ে গলায় গেয়ে উঠছে, ‘যেন ঢাক আছে আর কাঠি-ই-ই-ই নাই, তোরে ছাড়া আমার হালটা যে তাই—’
আমি খানিকটা ভয় তাড়াতে আর খানিকটা গান থামাতে বললাম, ‘কই রে, তোর লোক কই?’
কাজ হলো। সংগীতচর্চা বন্ধ করে ফাহাদ গলা খুলল, ‘আরে, আসবে। বুঝিস না, প্রকৃতির কোলের লোক। এত ঘড়ি–টড়ি মেনে চললে সে আবার খাসিয়া কেন? তার ওপর সে হলো এই পুঞ্জির…ইয়ে।’
বুঝলাম, উপযুক্ত শব্দটা ভুলে গেছে।
ভরসা যা-ও ছিল, তা প্রতি সেকেন্ডেই কমছে আমার। পুঞ্জিটার পাশের টিলায় পানগাছের বরজের দিকে চোখ গেল। ঢ্যাঙা সুপারিগাছের ঘন বন, আলো ঢোকে না ভেতরে। গাছগুলোর গায়ে জড়িয়ে আছে পানের লতা। ওটাই নাকি পান চাষের শ্রেষ্ঠ ব্যবস্থা।
হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে কপালের ঘাম মুছতে গিয়ে আমার বোতাম-আঁটা শার্টের হাতাটা খানিকটা পিছলে সরে এসেছিল কবজির ওপর থেকে, তড়িঘড়ি করে সেটা আবার জায়গামতো ফেরত পাঠালাম। আড়চোখে তাকাচ্ছি ফাহাদের দিকে। ও কি কিছু দেখে ফেলেছে?

কিন্তু সে নিজের বৃত্তেই বন্দী আছে বলে মনে হলো। পানের ঘন সবুজ বরজটার দিকে একবার তাকিয়ে বলল, ‘সিএনজিতে আসার সময় পান নিয়ে কী যেন বলছিলি, রূপু?’
একটা দীর্ঘশ্বাস গোপন করলাম। কত কিছুই তো বলার চেষ্টা করছিলাম সিএনজিতে করে বিছনাকান্দির কাছে বর্ডারের দিকটায় আসার সময়। হাজার হলেও ফাহাদ আমার ভার্সিটির পুরোনো রুমমেট। আলাপের জিনিসের অভাব নেই। আমার আবার জ্ঞান ঝাড়তেও ভালো লাগে। সিএনজির ইঞ্জিনের আওয়াজ ছাপিয়ে বলতে শুরু করেছিলাম পান নামের পাতা আর সুপারি নামের বাদামের ইতিহাস। ও কি জানে, ফিলিপাইনের এক গুহায় চার হাজার বছরের পুরোনো এক কঙ্কাল পাওয়া গেছে, যার দাঁতে পানের দাগ? ও কি জানে, প্রোটো-অস্ট্রোনেশিয়ান একটা শব্দ আছে, বোয়াক, যার অর্থ সুপারি? এর সঙ্গে মিল আছে দেশের অনেক এলাকায় চালু ‘গুয়া’ শব্দের। যেটার প্রমিত রূপ ‘গুবাক’। হালকা একটু আবৃত্তিও করেছিলাম নজরুলের কবিতা, ‘বাতায়ন পাশে গুবাক তরুর সারি…’। ফাহাদের ধাঁধায় পড়া চোখ দেখে আবার বুঝিয়েও বলেছিলাম, এর অর্থ হলো জানালার পাশে সুপারিগাছের সারি। হো হো করে হেসে উঠে নিজের স্বভাবমতো আবার নিজের বুদ্বুদে বন্দী হয়ে গিয়েছিল ছেলেটা, আনমনে বাইরে তাকিয়ে সেই যে ‘পান খাইয়া ঠোঁট লাল করিলাম…পান খাইয়া ঠোঁট…’ গুনগুন করতে শুরু করল, আর থামবার নামগন্ধ নেই।
এখন আবার সেগুলো রিক্যাপ করলাম। সীমান্তরক্ষীদের হাতে ধরা পড়ার ভয় ভুলতে এবং যে জিনিসের খোঁজে এখানে এসেছি, তা না পাওয়ার দুশ্চিন্তা কাটাতে বকবক করা একটা ভালো উপায় বটে। তা ছাড়া এইমাত্র চোখে পড়ল, যার অপেক্ষায় আছি, তার আসতে এত দেরি দেখে ফাহাদ নিজেও একটু ঘাবড়ে গেছে যেন। সব সময় নিজের বৃত্তে আটকে থাকা ছেলেটা বারবার খাসিয়া গ্রাম মানে পুঞ্জিটার দিকে চোখ ঘোরাচ্ছে। মাঝখানে কেবল একবার বলল, ‘তুই এত্তো জানিস, বাব্বা।’
মুহূর্তেই মুচড়ে উঠল বুকটা। কই, এত জেনেও একটা চাকরি তো জোগাড় করতে পারলাম না। আমি যে দুনিয়ার এত খবর রাখি, বিনীতার বাবা তো সেটা বুঝলেন না। বিনীতাও কি বুঝেছে?
পান খাওয়া লোকের মুখে লাল পিক দেখে ইবনে বতুতা কীভাবে ভড়কে গিয়েছিলেন, তা বলতে যাচ্ছিলাম, কিন্তু নিজের হাঁটুতে তবলা বাজাতে বাজাতে ফাহাদ বলল, ‘কালকে কি একটা কবিতা বলতেছিলি যেন? তাঁবু না কী যেন…রাতুল…।’
কাষ্ঠ হেসে বললাম, ‘”রক্ত উৎপল লাজে জলান্তরে বৈসে/ তাম্বুল রাতুল হৈল অধর পরশে।” আলাওলের লেখা। লাইনগুলোর ভাবার্থ হলো, ঠোঁটের পরশে পান লাল হয়ে গেল। মানুষ পান খেলে ঠোঁট লাল হয়, আর পদ্মাবতীর ঠোঁটের স্পর্শে খোদ পানই লাল হয়ে যাচ্ছে!’
ভাবলাম, বিনীতার ঠোঁটের স্পর্শে পান লাল হয় কি না জানি না, কিন্তু আমি তো লাল হয়ে গেছি। অঙ্গারের মতো। তবে মেয়েটাকে পুরোপুরি বশে আনতে পারলাম কই?
বাঁ হাতের কবজি জ্বলছে আমার। শার্টের হাতাটা আরও টেনে দিলাম। ফোন বের করে নেটওয়ার্ক দেখার চেষ্টা করলাম। ফক্কা। মেঘালয়ে এসে দেশের মোবাইল সার্ভিস পাওয়ার চিন্তা করাও অবশ্য বোকামি। তবু পেলে ভালো হতো। বিনীতার বাবার বন্ধুর আমেরিকায় পড়াশোনা করা ছেলের সঙ্গে আজকে ওর দেখা হবার কথা একটা পাঁচতারা হোটেলে। বিনীতার নাকি ইচ্ছে কম। শেষ পর্যন্ত ও কী ঠিক করল, এই বেকার আমি না আমেরিকান ড্রিম? শুনতে ইচ্ছে করছে ফোন দিয়ে।
হুট করে নিজেকে বদ্ধ পাগল মনে হলো আমার। প্রেমিকা হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে, আর আমি কিনা মাথায় ছিট আছে বলে খ্যাত ফাহাদের সঙ্গে লুকিয়ে ভারতে ঢুকেছি খাসিয়াদের থেকে প্রাচীন এক জাতের পান কিনতে! সেই পান আবার ঢাকায়ও নিয়ে যাব, প্রেমিকাকে খাওয়াতে! ভুডু পুতুলে পিন ফোটানো যদি হাস্যকর হয়, ‘কামাখ্যা ফেরত’ জ্যোতিষীর কাছ থেকে তাবিজ কেনা যদি বোকামি হয়, তাহলে আমি কী করছি!
ভাববার সময় নেই এত। কারণ, ফাহাদ টাট্টিতে-বসার ভঙ্গি থেকে এক লাফে সোজা হয়ে দাঁড়িয়েছে, চোখ খাসিয়া গ্রামের দিকে। ঢোঁক গিলে দেখলাম, পাথর-কোঁদা চেহারার ছোট্টখাট্টো এক লোক হনহন করে এদিকেই আসছে। চেহারাই বলে দিচ্ছে, এ–ই আমাদের লোক।
হাতে হঠাৎ তুড়ি বাজিয়ে খুশি খুশি গলায় ফাহাদ বলল, ‘এই তো আমার লিংক। বেনিসন টংপে।’ তারপর অবধারিতভাবে ঢুকে গেল নিজের মধ্যে। বিড়বিড় করে বলছে, ‘টংপে। টংপে। তাইপে। তাইপে ১০১।’ একটু আগে বলছিলাম তাইওয়ানের লোকও পান খায়, সেটা ওর কানে গেছে তাহলে।
খাটো একটা লুঙ্গি আর ‘পাবজি’ লেখা একটা গেঞ্জি পরা বেনিসন ভাই খুব কম কথার লোক। আসলে, কোনো কথাই বলল না সে আমাদের দেখে। এমনকি ফাহাদের ‘কী খব্বোর বেনসন ভাই’ কথারও জবাব দিল না, অথচ ডাউকির বাজারে ওর বাবার পানের আড়তে পরিচয় হওয়া এই লোকের সঙ্গে নাকি ওর সেই রকম খাতির। চুপচাপ মাথা থেকে বাঁশের ঝাঁকাটা নামিয়ে রাখল সে। ওটায় থরে থরে সাজানো পান ঢেকে রাখা হয়েছে ভেজা কাপড় দিয়ে।
লোকটাকে খুশি করার জন্য বলতে যাচ্ছিলাম, এমন রসাল তাজা বড় বড় পান আমি বাপের জন্মে দেখিনি। কিন্তু রংপুরিয়া টানের বাংলা সে বুঝবে কি না—এই দ্বিধা কাটানোর আগেই ওপরের পানগুলো উল্টে একদম নিচ থেকে ভেজা কাপড়ের একটা পুঁটুলি বের করল লোকটা। গিঁট খুলে যখন মেলে ধরল আমার চোখের সামনে, ভুরু কপালে উঠল আমার। অপুষ্ট খর্বাকৃতির কয়েকটা পানপাতা পড়ে আছে ওখানে। কোঁচকানো এবড়োথেবড়ো গা, কালচে দাগওয়ালা এই ঘন সবুজ পাতাগুলো তো আমাদের পাড়ার পানের দোকানিও বিবেকের দংশনে বেচতে পারবে না। এই নাকি সেই মহার্ঘ পান, যার জন্য ছুটে এসেছি এত দূর!

নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বুদ্ধু মনে হচ্ছে। চোখের কোণে টের পেলাম, ফাহাদ যেন টেনিসের দর্শকের মতো একবার মাথা এদিকে আরেকবার ওদিকে ঘুরিয়ে আমাকে আর বেনিসনকে দেখল।
কী আর করব? কড়কড়ে নোটগুলো বাড়িয়ে দিয়ে পানের পুঁটুলিটা নিলাম। দুটো সুপারিও ফ্রি পেয়েছি। বেনিসন ভাঙা ভাঙা বাংলায় আশ্বস্ত করল আমাকে, ‘পৃথিবীর সবচেয়ে পুরাতন জাতের পান এটা। সবচেয়ে জাদুকরি পান। যে মেয়েকে খাওয়াবেন, আপনার ভালোবাসায় বুঁদ হয়ে থাকবে সারা জীবন…।’
জানি রে ভাই। আসার সময় ফাহাদকে তো এই নিয়েই জ্ঞান দিচ্ছিলাম। সঠিক শব্দটা হচ্ছে অ্যাফ্রোডিজিয়াক। অর্থাৎ যাহা দ্বারা কাউকে বশ করা যায়। শুধু নারীকে নয়, পুরুষকেও।

২.
বর্ডার টপকে বাংলাদেশে ফেরত আসা গেল নিরাপদে। একটা রাস্তার দিকে এগোচ্ছি, টের পেলাম পকেটের ভেতরে টুংটুং করতে করতে বাজছে ফোনটা। নেটওয়ার্ক ফিরে পেয়েছে আবার।
ঢাকা ফিরছি—এই মেসেজ দিতে পারলাম না বিনীতাকে। মেসেঞ্জারে ওর উইন্ডোতে টাইপ করার অপশনের জায়গায় একটা নীল ব্যানারে লেখা, ইউ ক্যান্ট রিপ্লাই টু দিস কনভারসেশন।
নিজের বৃত্তে বাস করা ফাহাদ আনমনে ‘রবার্তো পানচিনি, রবার্তো পানচিনি’ বলে বিড়বিড় করছিল আর চোখ ঘুরিয়ে সিএনজি খুঁজছিল, আমি কীভাবে যে গলার কাঁপুনি থামিয়ে ওকে বললাম বিনীতার আইডিতে ঢুকতে, জানি না। আমার চোখে কিছু বোধ হয় দেখেছিল ও, কথা না বাড়িয়ে ফেসবুকে ঢুকে থমকে গেল একটু, তারপর অন্যদিকে তাকিয়ে আমার দিকে বাড়িয়ে দিল ফোনটা।
বাবার বন্ধুর আমেরিকাপ্রবাসী ছেলের সঙ্গে তোলা সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ছবিটা প্রোফাইল পিকচারে দিয়েছে বিনীতা।
সিএনজিতে উঠেছি। ওটা চলতে শুরু করেছে এবড়োখেবড়ো পাহাড়ি রাস্তায়। ভাবছি, মানুষের জীবনের চড়াই–উতরাইয়ের কাছে এগুলো কিছুই নয়। হঠাৎ দূরের সুউচ্চ নীল পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে মনে হলো, কী হবে আর…ঢাকায় গিয়ে এমন উঁচু দালানের ছাদ থেকে পা বাড়িয়ে দেব শূন্যে। নাকি ত্রিশটা ঘুমের ওষুধ ভালো হবে?
শার্টের হাতাটা সরিয়ে আধা শুকনা কাটা দাগটার দিকে তাকালাম নির্লিপ্ত চোখে। পুরোটা কাটার মুরোদ হয়নি সেদিন। কষ্ট পেতে বড় ভয় পাই আমি, কিন্তু বিনীতা ছেড়ে যাবার পরে সেটাও কেটে গেছে। ট্রাকের তলে শুয়ে পড়াও এখন আমার কাছে ডালভাত।
তবে এত হাঙ্গামা করার চেয়ে ঢাকায় ফিরেই রুমের দরজা লাগিয়ে ফ্যানের সঙ্গে লটকে পড়াটাই ভালো হবে…হয়তো নিজের পুরোটা তখনো হারাইনি আমি। ফাহাদ নিজের গ-ি থেকে পুরোপুরি বেরিয়ে এসে বড় বড় চোখ করে দেখছে আমাকে। সেসবও খেয়াল করার সময় নেই আমার। পকেট থেকে পুঁটুলিটা বের করে খুলে দুটো বেঁটে পান তুলে নিয়ে আস্ত একটা সুপারিসহ চালান করলাম মুখের ভেতরে।
কষ, কষ। তেতো, তেতো। এমন তীব্র কষালো সম্ভবত সবচেয়ে কম দামি কুলও হয় না, এতটা বিষতেতো কুইনাইনও নয়। ঠেলে বমি আসছে আমার। হায় খোদা, এই পান কীভাবে দুনিয়ার সেরা বশকারী, সবচেয়ে কার্যকর অ্যাফ্রোডিজিয়াক পান হয়! …পিকটা অম্লান বদনে গিলে নিয়ে ফাহাদের দিকে তাকিয়ে হাসলাম। ‘কি রে, সিএনজি কত দূর পর্যন্ত ঠিক করেছিস?’
‘একদম শহর।’ বিড়বিড়িয়ে বলল ফাহাদ।
‘ঘোরা।’ পান চিবুচ্ছি আর হাসছি আমি। হাসছি আর চিৎকার করছি। বললাম, ‘ঘোরা। লালাখাল যাব। সারা বিকেল পড়ে আছে। ঘুরব। পুরো সপ্তাহটা ঘুরে শেষ করব সিলেট।’
প্রাণখুলে হাসছি আমি। তাম্বুল রসে ঠোঁট লাল হয়ে যাচ্ছে আমার। হুট করে মনে হলো, নিজেকেই কি ভালোবাসতে শুরু করলাম?
বুকের ভেতরে লাফিয়ে উঠল হৃৎপি-টা।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

তাম্বুল রাতুল হৈল

আপডেট সময় : ১০:৩৫:১০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ নভেম্বর ২০২১

নাবিল মুহতাসিম : ফাহাদের মতো বন্ধুকে নিয়ে এত দরকারি একটা সফরে বেরোনোর আগেই আমার জানা ছিল, এর ফায়দা যেমন আছে, তেমনি খেসারতও কম দিতে হবে না। ফায়দা তো বুঝতেই পারছেন, ও এই এলাকার ছেলে। ভাষা-কালচার-রাস্তাঘাট—সব ওর নখদর্পণে। সিলেট থেকে বিনা পাসপোর্টে ভারতের মেঘালয়ে ঢুকেছি, সেটা কি আর ওকে ছাড়া সম্ভব হতো?
কিন্তু খেসারতটাও যে কম নয়।
এই যে আমরা বর্ডার থেকে কিলো দশেক ভেতরে বিদেশ–বিভুঁইয়ে আছি, একটা খাসিয়া ‘পুঞ্জি’ থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে একটা টিলার ঢালুতে বড় গাছটার নিচে ঘাপটি মেরে অপেক্ষা করছি এক অনিশ্চিত সাক্ষাতের, সেটা ফাহাদকে দেখে বোঝার কোনো উপায়ই নেই। আমি গাছপালার আড়াল থেকে বারবার তাকাচ্ছি পুঞ্জিটার দিকে, গরম নেই তবু ঘামছি। আর এদিকে আমার সিলেটি বন্ধু এতক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিল বলেই বোধ হয় বাথরুমে বসার মতো করে উবু হয়ে বসে থাকতে থাকতে হঠাৎ হেঁড়ে গলায় গেয়ে উঠছে, ‘যেন ঢাক আছে আর কাঠি-ই-ই-ই নাই, তোরে ছাড়া আমার হালটা যে তাই—’
আমি খানিকটা ভয় তাড়াতে আর খানিকটা গান থামাতে বললাম, ‘কই রে, তোর লোক কই?’
কাজ হলো। সংগীতচর্চা বন্ধ করে ফাহাদ গলা খুলল, ‘আরে, আসবে। বুঝিস না, প্রকৃতির কোলের লোক। এত ঘড়ি–টড়ি মেনে চললে সে আবার খাসিয়া কেন? তার ওপর সে হলো এই পুঞ্জির…ইয়ে।’
বুঝলাম, উপযুক্ত শব্দটা ভুলে গেছে।
ভরসা যা-ও ছিল, তা প্রতি সেকেন্ডেই কমছে আমার। পুঞ্জিটার পাশের টিলায় পানগাছের বরজের দিকে চোখ গেল। ঢ্যাঙা সুপারিগাছের ঘন বন, আলো ঢোকে না ভেতরে। গাছগুলোর গায়ে জড়িয়ে আছে পানের লতা। ওটাই নাকি পান চাষের শ্রেষ্ঠ ব্যবস্থা।
হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে কপালের ঘাম মুছতে গিয়ে আমার বোতাম-আঁটা শার্টের হাতাটা খানিকটা পিছলে সরে এসেছিল কবজির ওপর থেকে, তড়িঘড়ি করে সেটা আবার জায়গামতো ফেরত পাঠালাম। আড়চোখে তাকাচ্ছি ফাহাদের দিকে। ও কি কিছু দেখে ফেলেছে?

কিন্তু সে নিজের বৃত্তেই বন্দী আছে বলে মনে হলো। পানের ঘন সবুজ বরজটার দিকে একবার তাকিয়ে বলল, ‘সিএনজিতে আসার সময় পান নিয়ে কী যেন বলছিলি, রূপু?’
একটা দীর্ঘশ্বাস গোপন করলাম। কত কিছুই তো বলার চেষ্টা করছিলাম সিএনজিতে করে বিছনাকান্দির কাছে বর্ডারের দিকটায় আসার সময়। হাজার হলেও ফাহাদ আমার ভার্সিটির পুরোনো রুমমেট। আলাপের জিনিসের অভাব নেই। আমার আবার জ্ঞান ঝাড়তেও ভালো লাগে। সিএনজির ইঞ্জিনের আওয়াজ ছাপিয়ে বলতে শুরু করেছিলাম পান নামের পাতা আর সুপারি নামের বাদামের ইতিহাস। ও কি জানে, ফিলিপাইনের এক গুহায় চার হাজার বছরের পুরোনো এক কঙ্কাল পাওয়া গেছে, যার দাঁতে পানের দাগ? ও কি জানে, প্রোটো-অস্ট্রোনেশিয়ান একটা শব্দ আছে, বোয়াক, যার অর্থ সুপারি? এর সঙ্গে মিল আছে দেশের অনেক এলাকায় চালু ‘গুয়া’ শব্দের। যেটার প্রমিত রূপ ‘গুবাক’। হালকা একটু আবৃত্তিও করেছিলাম নজরুলের কবিতা, ‘বাতায়ন পাশে গুবাক তরুর সারি…’। ফাহাদের ধাঁধায় পড়া চোখ দেখে আবার বুঝিয়েও বলেছিলাম, এর অর্থ হলো জানালার পাশে সুপারিগাছের সারি। হো হো করে হেসে উঠে নিজের স্বভাবমতো আবার নিজের বুদ্বুদে বন্দী হয়ে গিয়েছিল ছেলেটা, আনমনে বাইরে তাকিয়ে সেই যে ‘পান খাইয়া ঠোঁট লাল করিলাম…পান খাইয়া ঠোঁট…’ গুনগুন করতে শুরু করল, আর থামবার নামগন্ধ নেই।
এখন আবার সেগুলো রিক্যাপ করলাম। সীমান্তরক্ষীদের হাতে ধরা পড়ার ভয় ভুলতে এবং যে জিনিসের খোঁজে এখানে এসেছি, তা না পাওয়ার দুশ্চিন্তা কাটাতে বকবক করা একটা ভালো উপায় বটে। তা ছাড়া এইমাত্র চোখে পড়ল, যার অপেক্ষায় আছি, তার আসতে এত দেরি দেখে ফাহাদ নিজেও একটু ঘাবড়ে গেছে যেন। সব সময় নিজের বৃত্তে আটকে থাকা ছেলেটা বারবার খাসিয়া গ্রাম মানে পুঞ্জিটার দিকে চোখ ঘোরাচ্ছে। মাঝখানে কেবল একবার বলল, ‘তুই এত্তো জানিস, বাব্বা।’
মুহূর্তেই মুচড়ে উঠল বুকটা। কই, এত জেনেও একটা চাকরি তো জোগাড় করতে পারলাম না। আমি যে দুনিয়ার এত খবর রাখি, বিনীতার বাবা তো সেটা বুঝলেন না। বিনীতাও কি বুঝেছে?
পান খাওয়া লোকের মুখে লাল পিক দেখে ইবনে বতুতা কীভাবে ভড়কে গিয়েছিলেন, তা বলতে যাচ্ছিলাম, কিন্তু নিজের হাঁটুতে তবলা বাজাতে বাজাতে ফাহাদ বলল, ‘কালকে কি একটা কবিতা বলতেছিলি যেন? তাঁবু না কী যেন…রাতুল…।’
কাষ্ঠ হেসে বললাম, ‘”রক্ত উৎপল লাজে জলান্তরে বৈসে/ তাম্বুল রাতুল হৈল অধর পরশে।” আলাওলের লেখা। লাইনগুলোর ভাবার্থ হলো, ঠোঁটের পরশে পান লাল হয়ে গেল। মানুষ পান খেলে ঠোঁট লাল হয়, আর পদ্মাবতীর ঠোঁটের স্পর্শে খোদ পানই লাল হয়ে যাচ্ছে!’
ভাবলাম, বিনীতার ঠোঁটের স্পর্শে পান লাল হয় কি না জানি না, কিন্তু আমি তো লাল হয়ে গেছি। অঙ্গারের মতো। তবে মেয়েটাকে পুরোপুরি বশে আনতে পারলাম কই?
বাঁ হাতের কবজি জ্বলছে আমার। শার্টের হাতাটা আরও টেনে দিলাম। ফোন বের করে নেটওয়ার্ক দেখার চেষ্টা করলাম। ফক্কা। মেঘালয়ে এসে দেশের মোবাইল সার্ভিস পাওয়ার চিন্তা করাও অবশ্য বোকামি। তবু পেলে ভালো হতো। বিনীতার বাবার বন্ধুর আমেরিকায় পড়াশোনা করা ছেলের সঙ্গে আজকে ওর দেখা হবার কথা একটা পাঁচতারা হোটেলে। বিনীতার নাকি ইচ্ছে কম। শেষ পর্যন্ত ও কী ঠিক করল, এই বেকার আমি না আমেরিকান ড্রিম? শুনতে ইচ্ছে করছে ফোন দিয়ে।
হুট করে নিজেকে বদ্ধ পাগল মনে হলো আমার। প্রেমিকা হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে, আর আমি কিনা মাথায় ছিট আছে বলে খ্যাত ফাহাদের সঙ্গে লুকিয়ে ভারতে ঢুকেছি খাসিয়াদের থেকে প্রাচীন এক জাতের পান কিনতে! সেই পান আবার ঢাকায়ও নিয়ে যাব, প্রেমিকাকে খাওয়াতে! ভুডু পুতুলে পিন ফোটানো যদি হাস্যকর হয়, ‘কামাখ্যা ফেরত’ জ্যোতিষীর কাছ থেকে তাবিজ কেনা যদি বোকামি হয়, তাহলে আমি কী করছি!
ভাববার সময় নেই এত। কারণ, ফাহাদ টাট্টিতে-বসার ভঙ্গি থেকে এক লাফে সোজা হয়ে দাঁড়িয়েছে, চোখ খাসিয়া গ্রামের দিকে। ঢোঁক গিলে দেখলাম, পাথর-কোঁদা চেহারার ছোট্টখাট্টো এক লোক হনহন করে এদিকেই আসছে। চেহারাই বলে দিচ্ছে, এ–ই আমাদের লোক।
হাতে হঠাৎ তুড়ি বাজিয়ে খুশি খুশি গলায় ফাহাদ বলল, ‘এই তো আমার লিংক। বেনিসন টংপে।’ তারপর অবধারিতভাবে ঢুকে গেল নিজের মধ্যে। বিড়বিড় করে বলছে, ‘টংপে। টংপে। তাইপে। তাইপে ১০১।’ একটু আগে বলছিলাম তাইওয়ানের লোকও পান খায়, সেটা ওর কানে গেছে তাহলে।
খাটো একটা লুঙ্গি আর ‘পাবজি’ লেখা একটা গেঞ্জি পরা বেনিসন ভাই খুব কম কথার লোক। আসলে, কোনো কথাই বলল না সে আমাদের দেখে। এমনকি ফাহাদের ‘কী খব্বোর বেনসন ভাই’ কথারও জবাব দিল না, অথচ ডাউকির বাজারে ওর বাবার পানের আড়তে পরিচয় হওয়া এই লোকের সঙ্গে নাকি ওর সেই রকম খাতির। চুপচাপ মাথা থেকে বাঁশের ঝাঁকাটা নামিয়ে রাখল সে। ওটায় থরে থরে সাজানো পান ঢেকে রাখা হয়েছে ভেজা কাপড় দিয়ে।
লোকটাকে খুশি করার জন্য বলতে যাচ্ছিলাম, এমন রসাল তাজা বড় বড় পান আমি বাপের জন্মে দেখিনি। কিন্তু রংপুরিয়া টানের বাংলা সে বুঝবে কি না—এই দ্বিধা কাটানোর আগেই ওপরের পানগুলো উল্টে একদম নিচ থেকে ভেজা কাপড়ের একটা পুঁটুলি বের করল লোকটা। গিঁট খুলে যখন মেলে ধরল আমার চোখের সামনে, ভুরু কপালে উঠল আমার। অপুষ্ট খর্বাকৃতির কয়েকটা পানপাতা পড়ে আছে ওখানে। কোঁচকানো এবড়োথেবড়ো গা, কালচে দাগওয়ালা এই ঘন সবুজ পাতাগুলো তো আমাদের পাড়ার পানের দোকানিও বিবেকের দংশনে বেচতে পারবে না। এই নাকি সেই মহার্ঘ পান, যার জন্য ছুটে এসেছি এত দূর!

নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বুদ্ধু মনে হচ্ছে। চোখের কোণে টের পেলাম, ফাহাদ যেন টেনিসের দর্শকের মতো একবার মাথা এদিকে আরেকবার ওদিকে ঘুরিয়ে আমাকে আর বেনিসনকে দেখল।
কী আর করব? কড়কড়ে নোটগুলো বাড়িয়ে দিয়ে পানের পুঁটুলিটা নিলাম। দুটো সুপারিও ফ্রি পেয়েছি। বেনিসন ভাঙা ভাঙা বাংলায় আশ্বস্ত করল আমাকে, ‘পৃথিবীর সবচেয়ে পুরাতন জাতের পান এটা। সবচেয়ে জাদুকরি পান। যে মেয়েকে খাওয়াবেন, আপনার ভালোবাসায় বুঁদ হয়ে থাকবে সারা জীবন…।’
জানি রে ভাই। আসার সময় ফাহাদকে তো এই নিয়েই জ্ঞান দিচ্ছিলাম। সঠিক শব্দটা হচ্ছে অ্যাফ্রোডিজিয়াক। অর্থাৎ যাহা দ্বারা কাউকে বশ করা যায়। শুধু নারীকে নয়, পুরুষকেও।

২.
বর্ডার টপকে বাংলাদেশে ফেরত আসা গেল নিরাপদে। একটা রাস্তার দিকে এগোচ্ছি, টের পেলাম পকেটের ভেতরে টুংটুং করতে করতে বাজছে ফোনটা। নেটওয়ার্ক ফিরে পেয়েছে আবার।
ঢাকা ফিরছি—এই মেসেজ দিতে পারলাম না বিনীতাকে। মেসেঞ্জারে ওর উইন্ডোতে টাইপ করার অপশনের জায়গায় একটা নীল ব্যানারে লেখা, ইউ ক্যান্ট রিপ্লাই টু দিস কনভারসেশন।
নিজের বৃত্তে বাস করা ফাহাদ আনমনে ‘রবার্তো পানচিনি, রবার্তো পানচিনি’ বলে বিড়বিড় করছিল আর চোখ ঘুরিয়ে সিএনজি খুঁজছিল, আমি কীভাবে যে গলার কাঁপুনি থামিয়ে ওকে বললাম বিনীতার আইডিতে ঢুকতে, জানি না। আমার চোখে কিছু বোধ হয় দেখেছিল ও, কথা না বাড়িয়ে ফেসবুকে ঢুকে থমকে গেল একটু, তারপর অন্যদিকে তাকিয়ে আমার দিকে বাড়িয়ে দিল ফোনটা।
বাবার বন্ধুর আমেরিকাপ্রবাসী ছেলের সঙ্গে তোলা সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ছবিটা প্রোফাইল পিকচারে দিয়েছে বিনীতা।
সিএনজিতে উঠেছি। ওটা চলতে শুরু করেছে এবড়োখেবড়ো পাহাড়ি রাস্তায়। ভাবছি, মানুষের জীবনের চড়াই–উতরাইয়ের কাছে এগুলো কিছুই নয়। হঠাৎ দূরের সুউচ্চ নীল পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে মনে হলো, কী হবে আর…ঢাকায় গিয়ে এমন উঁচু দালানের ছাদ থেকে পা বাড়িয়ে দেব শূন্যে। নাকি ত্রিশটা ঘুমের ওষুধ ভালো হবে?
শার্টের হাতাটা সরিয়ে আধা শুকনা কাটা দাগটার দিকে তাকালাম নির্লিপ্ত চোখে। পুরোটা কাটার মুরোদ হয়নি সেদিন। কষ্ট পেতে বড় ভয় পাই আমি, কিন্তু বিনীতা ছেড়ে যাবার পরে সেটাও কেটে গেছে। ট্রাকের তলে শুয়ে পড়াও এখন আমার কাছে ডালভাত।
তবে এত হাঙ্গামা করার চেয়ে ঢাকায় ফিরেই রুমের দরজা লাগিয়ে ফ্যানের সঙ্গে লটকে পড়াটাই ভালো হবে…হয়তো নিজের পুরোটা তখনো হারাইনি আমি। ফাহাদ নিজের গ-ি থেকে পুরোপুরি বেরিয়ে এসে বড় বড় চোখ করে দেখছে আমাকে। সেসবও খেয়াল করার সময় নেই আমার। পকেট থেকে পুঁটুলিটা বের করে খুলে দুটো বেঁটে পান তুলে নিয়ে আস্ত একটা সুপারিসহ চালান করলাম মুখের ভেতরে।
কষ, কষ। তেতো, তেতো। এমন তীব্র কষালো সম্ভবত সবচেয়ে কম দামি কুলও হয় না, এতটা বিষতেতো কুইনাইনও নয়। ঠেলে বমি আসছে আমার। হায় খোদা, এই পান কীভাবে দুনিয়ার সেরা বশকারী, সবচেয়ে কার্যকর অ্যাফ্রোডিজিয়াক পান হয়! …পিকটা অম্লান বদনে গিলে নিয়ে ফাহাদের দিকে তাকিয়ে হাসলাম। ‘কি রে, সিএনজি কত দূর পর্যন্ত ঠিক করেছিস?’
‘একদম শহর।’ বিড়বিড়িয়ে বলল ফাহাদ।
‘ঘোরা।’ পান চিবুচ্ছি আর হাসছি আমি। হাসছি আর চিৎকার করছি। বললাম, ‘ঘোরা। লালাখাল যাব। সারা বিকেল পড়ে আছে। ঘুরব। পুরো সপ্তাহটা ঘুরে শেষ করব সিলেট।’
প্রাণখুলে হাসছি আমি। তাম্বুল রসে ঠোঁট লাল হয়ে যাচ্ছে আমার। হুট করে মনে হলো, নিজেকেই কি ভালোবাসতে শুরু করলাম?
বুকের ভেতরে লাফিয়ে উঠল হৃৎপি-টা।