ঢাকা ০৫:১৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

শিক্ষার মানোন্নয়ন ও শিক্ষকের দায়িত্ব

  • আপডেট সময় : ১০:৩১:১৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৭ নভেম্বর ২০২১
  • ১০১ বার পড়া হয়েছে

অধ্যাপক শেখ ইকরামুল কবির : জাতীয় উন্নয়নের জন্য অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন ও গতিশীল সমাজ সৃষ্টিতে দক্ষ মানবসম্পদের বিকল্প নেই। দেশের সব মানুষের শিক্ষার আয়োজন এবং জনসংখ্যাকে দক্ষ করে তোলার ভিত্তিমূল প্রাথমিক শিক্ষা। শিক্ষার এই স্তর পরবর্তী সকল স্তরের ভিত্তি সৃষ্টি করে বলে শিক্ষার্থীর নিজ স্তরের যথাযথ মানসম্পন্ন প্রান্তিক দক্ষতা নিশ্চিত করে তাকে উচ্চতর ধাপের শিক্ষা গ্রহণে উৎসাহী এবং উপযোগী করে তোলা অপরিহার্য। মানসম্পন্ন শিক্ষা বলতে শিক্ষার্থীকে টেকসই, নৈতিক মূল্যবোধ, জীবনযাপনের জন্য আবশ্যকীয় জ্ঞান, বিষয়ভিত্তিক দক্ষতা, জীবন-দক্ষতা, দৃষ্টিভঙ্গি, মূল্যবোধ, সামাজিক সচেতনতা অর্জনের মাধ্যমে মৌলিক শিখন চাহিদা পূরণে সমর্থ করে পরবর্তী স্তরের শিক্ষা লাভের উপযোগী করে গড়ে তোলাকে বোঝায়।
বাংলাদেশ সংবিধানের ১৭ ধারায় বলা হয়েছে-
(ক) একই পদ্ধতির গণমুখী ও সর্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য এবং আইনের দ্বারা নির্ধারিত স্তর পর্যন্ত সকল বালক-বালিকাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষাদানের জন্য, সমাজের প্রয়োজনের সহিত শিক্ষাকে সংগতিপূর্ণ করিবার জন্য এবং সেই প্রয়োজন সিদ্ধ করিবার উদ্দেশ্যে যথাযথ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও সদিচ্ছাপ্রণোদিত নাগরিক সৃষ্টির জন্য,
(গ) আইনের দ্বারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিরক্ষরতা দূর করিবার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।
জাতীয় শিক্ষনীতি ২০১০-এ মানসম্পন্ন প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যে বলা হয়েছে-
মানসম্পন্ন প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণের জন্য জাতিসত্তা, আর্থ-সামাজিক ও শারীরিক-মানসিক সীমাবদ্ধতা এবং ভৌগোলিক অবস্থান নির্বিশেষে দেশের সকল শিশুর জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করা। এ কাজ করা রাষ্ট্রের সাংবিধানিক দায়িত্ব।
সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা এবং সমাজের প্রয়োজনে জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০-এ প্রাথমিক শিক্ষার স্তর নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত এবং ৫+ বছর বয়সী শিশুদের জন্য ১ বছর মেয়াদি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু করা হয়েছে, যাকে পরবর্তীতে ৪+ বছর পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হবে। বর্তমান সরকারের ইতিবাচক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে ভর্তির হার প্রায় শতভাগ, ঝরে পড়ার হার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে। প্রাথমিক স্তরে বালক-বালিকা শিক্ষার্থী অনুপাত ১:১.০১ এবং শিক্ষক-শিক্ষিকা অনুপাত ১:১.৫। বর্তমানে শিক্ষানীতি-২০১০ এর বাস্তবায়ন চলছে। তবে পর্যাপ্ত অর্থের অভাবে এই গতিকে দ্রুততর করা সম্ভব হচ্ছে না এবং সবক্ষেত্রে শিক্ষার মানোন্নয়ন করাও সম্ভব হয়নি। তবে আমরা আশাবাদী শিক্ষাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে আমাদের সীমিত সম্পদের মধ্য থেকে প্রাথমিক শিক্ষা খাতকে পর্যাপ্ত বরাদ্দ দেওয়া হবে। যার ফলে শিক্ষার্থীকে মানসম্মত শিক্ষাদান করে প্রত্যেককে সফল শিক্ষার্থী হিসাবে গড়ে তোলা যায়।
সবার জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য নিচের পদক্ষেপগুলো জোরালোভাবে নেওয়া প্রয়োজন।
সুযোগ সম্প্রসারণ ও মানোন্নয়ন:
বিদ্যালয় কক্ষ নির্মাণ, পুনর্র্নিমাণ ও সম্প্রসারণ, বিদ্যালয় মেরামত ও সংস্কার, দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য উপবৃত্তি প্রদান, সকল শিক্ষার্থীর জন্য টিফিন কার্যক্রম, সুবিধাবঞ্চিত ও ঝরে পড়া রোধে ছাত্রদের জন্য শিক্ষাভাতা ও শিক্ষা অনুদান প্রদান, সকল ক্লাসরুমকে ছেলে, মেয়ে, শিশু ও প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য উপযোগী করে তোলা, দেশের সকল বিদ্যালয়ে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি চালু, জাতীয়করণকৃত বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহের প্রশাসনিক কার্যক্রম সম্পাদন, প্রাথমিক শিক্ষাকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত সম্প্রসারণ, প্রাথমিক পর্যায়ে আইসিটিভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম প্রচলন, প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে প্রশিক্ষণ অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষকদের মৌলিক প্রশিক্ষণ অর্থাৎ ১৮ মাস মেয়াদি ডিপিএড কোর্স সকল পিটিআইতে চালু করা এবং প্রয়োজন একাধিক শিফট চালু করা।
বিষয়ভিত্তিক (বাংলা, ইংরেজি, গণিত) প্রশিক্ষণ জোরদারকরণ, বর্তমানে যারা শিক্ষক/শিক্ষিকা হিসাবে কর্মরত আছেন তাঁদের অধিকাংশ ১৯৭৫ পরবর্তী সময়ে স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেছেন, যার ফলে তারা শিক্ষাজীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বিকৃত ইতিহাস অধ্যয়ন করেছেন। বাংলাদেশের সঠিক ইতিহাস সম্পর্কে পাঠদান করতে হলে প্রথমে শিক্ষক/শিক্ষিকাদের সঠিক ইতিহাস জানতে হবে এবং বিশ্বাস করতে হবে। এজন্য বিশেষ কর্মসূচির মাধ্যমে বাংলাদেশ পরিচিতি বিষয়ে তাদেরকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান করা প্রয়োজন। প্রাথমিক শিক্ষা সার্টিফিকেট পরীক্ষায় যোগ্যতাভিত্তিক প্রশ্নপত্র প্রণয়নের জন্য ব্যাপক প্রশিক্ষণ।
শিক্ষকশিক্ষিকার দক্ষতা উন্নয়ন, ছাত্র-শিক্ষকের অনুপাত হ্রাস, শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নে ছাত্র-শিক্ষকের অনুপাত ১:৩০ বজায় রাখা বাঞ্ছনীয়। বর্তমানে ছাত্র-শিক্ষকের অনুপাত হচ্ছে ৪৯:১। এই অনুপাতকে কমিয়ে আনার লক্ষ্যে বিপুল সংখ্যক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ প্রয়োজন।
অগ্রাধিকারভিত্তিক কার্যক্রমসমূহ: প্রাথমিক শিক্ষাকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত সম্প্রসারণ ও এর জন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন, শিক্ষক-শিক্ষিকার দক্ষতা উন্নয়ন, নতুন বিদ্যালয় স্থাপন, বিদ্যমান অবকাঠামো সম্প্রসারণ, পুনর্র্নিমাণ, মেরামত ও সংস্কার, স্কুলে টিফিন কর্মসূচি, দরিদ্র শিক্ষার্থীদেরকে উপবৃত্তি শিক্ষা ভাতা প্রদান, সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার প্রচলন, নিরক্ষরতা দূরীকরণ ও সাক্ষরতা-উত্তর অব্যাহত শিক্ষা কার্যক্রম প্রচলন, নিরক্ষরতা দূরীকরণ ও সাক্ষরতা-উত্তর অব্যাহত শিক্ষা কার্যক্রম প্রচলন,
শিক্ষানীতি-২০১০ ও বাজেট বরাদ্দ: শিক্ষানীতি-২০১০ অনুসারে প্রাথমিক শিক্ষার স্তর প্রথম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি এবং প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি অতিরিক্ত চালু করা হয়েছে। সে হিসেবে প্রাথমিক শিক্ষার শ্রেণি বৃদ্ধি পেয়েছে ৪টি। যার শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ কোটিরও বেশি হবে। ২০১৩ সাল থেকে বিদ্যমান প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্রমান্বয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত চালু করা হচ্ছে। এর জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন। কিন্তু শিক্ষানীতি-২০১০ বাস্তবায়ন শুরু করার পরও গণশিক্ষার জন্য আনুপাতিক হারে বাজেট বরাদ্দের কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। তবে মোট জাতীয় বাজেটের আকার বৃদ্ধির ফলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষার জন্য মোট বরাদ্দও বৃদ্ধি পেয়েছে।
উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা: বয়স্ক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার লক্ষ্য হচ্ছে ২০১৪ সালের মধ্যে প্রাপ্ত বয়স্ক সকল নাগরিককে সাক্ষর করে তোলা। বর্তমানে পনের বছরের বেশি বয়সীদের সাক্ষরতার শতকরা ৫৭, অর্থাৎ পনের বছরের বেশির বয়সীদের শতকরা ৪৩ ভাগ এখনও নিরক্ষর। এই জনসংখ্যাকে সাক্ষর, লেখাপড়া ও হিসাব-নিকাশে ন্যূনতমভাবে দক্ষ, মানবিক গুণাবলীর চেতনায় উদ্দীপ্ত, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সচেতন এবং পেশাগত দক্ষতায় উন্নত করে তুলতে হবে। অর্জিত শিক্ষা ও দক্ষতাকে অটুট রাখার জন্য অব্যাহত শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করা, গ্রামে পাঠ-অনুশীলতা-চক্র ও গ্রাম শিক্ষা- মিলনকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন।
বিশ্লেষণ: উপরোক্ত টেবিল অবলোকন করলে দেখা যায়, ২০১৩-১৪ সালে লবণ ব্যয়ের মোট বাজেট ছিল ৩৭০৯ কোটি টাকা। কিন্তু ২০১৪-১৫ বাজেটে এই অঙ্ক বৃদ্ধির পরিবর্তে হ্রাস পেয়েছে এবং ২০১৫ সালের প্রক্ষেপণেও এই বাজেট ২০১৩-১৪ সালে অপেক্ষা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কম আছে। ২০১৩-১৪ সালের অনুপাতে বাজেট বৃদ্ধি পাবে প্রায় ৪০%। সেই হারে মূলধনী ব্যয় বৃদ্ধি পেলে মূলধনী ব্যয় বাজেট-প্রক্ষেপণ হওয়া উচিত ছিল ৩৭০৯ গুণ ১.৪= ৫১৯২ কোটি টাকা।
মধ্যমেয়াদি বাজেট অনুসারে দেখা যায় প্রাথমিক শিক্ষা খাতে ২০১৫-১৬ আর্থিক বছরের বাজেট নির্ধারণ করা আছে ১৪,৭৮৯ কোটি টাকা। কিন্তু এ সময়ের অনুমিত মোট বাজেট কম-বেশি ৩,০০,০০০ কোটি টাকা হবে। সেক্ষেত্রে মোট বাজেটের শতকরা হারে প্রাথমিক শিক্ষা বাজেট হবে ৪.৯৩ এবং মোট বাজেট বৃদ্ধি পাবে ১১১২ কোটি টাকা। ২০১৪-১৫ মোট বাজেটের ৫.৪৬% এই হার বর্তমান থাকলেও ২০১৫-১৬ সালের বাজেট বরাদ্দ পাওয়া যায় ১৬৩৮০ কোটি টাকা।
২০১৪-১৫ আর্থিক বছরে রাজস্ব বাজেট ১০,৫০০ কোটি টাকা যার অধিকাংশ বেতন ও ভাতাদি পরিশোধে ব্যয় হয়। ২০১৪-১৫ আর্থিক বছরে বেতন-ভাতাদি বাবদ ব্যয় হবে মোট বাজেটের ৭৬.৮০% অবশিষ্ট ৩১৭৩ কোটি টাকা অর্থাৎ ২৩.২০% অবকাঠামো উন্নয়ন ও সম্পদ সংগ্রহ কাজে ব্যয় হবে।
১ জুলাই ২০১৫ হতে নতুন বেতন কাঠামো কার্যকর হয়, যার ফলে নতুন কোনো নিয়োগে ব্যয় হবে কমপক্ষে ১০৫০০ গুণ ১.৫ = ১৫৭৫০ কোটি টাকা অর্থাৎ বর্তমান যুবস্থায় যে বাজেট প্রজন ১৫৭৫০+৩৪২৮=১৯১৭৮ কোটি টাকা। এই পরিমাণ বাজেট দ্বারা নতুন কোনো বড় পদক্ষেপ গ্রহণ করা যাবে না। নতুন নিয়োগ এবং নতুন অবকাঠামো নির্মাণের জন্য অবশ্যই অতিরিক্ত অর্থ প্রয়োজন। জাতীয় বাজেটে ৪টি মন্ত্রণালয় (প্রাথমিক ও গণশিক্ষা; শিক্ষা; বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়) একসঙ্গে শিক্ষা ও প্রযুক্তি নামে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বাজেট বরাদ্দ করা হয়।
জিডিপি ৬.৫% বৃদ্ধি হলে ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে জিডিপি হবে ১৪,০০,০০০ কোটি টাকা। সাধারণ হিসাবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রাপ্য বাজেট (১৫৭৫০ +৫১১২) কোটি টাকা =২০৯৪২ কোটি টাকা।
প্রস্তাবসমূহ: এখানে শুধু প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে বিবেচনায় আনা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মুদ্রাস্ফীতি বিবেচনা করলে এই বাজেট আরও বেশি হওয়া প্রয়োজন। তবে অন্যান্য অগ্রাধিকারযোগ্য বিষয়গুলোও বিবেচনায় আনা উচিত বিধায় শিক্ষায় বরাদ্দের জন্য নি¤œরূপ প্রস্তাব করছি- শিক্ষা ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের জন্য বাজেট বরাদ্দ একত্রে না দেখিয়ে শিক্ষাকে পৃথক করে দেখান হোক। ২০১৫-১৬ বাজেটে শিক্ষা খাতে কমপক্ষে মোট বাজেটের ১৪% (জিডিপি-এর ৩% )অর্থাৎ ৪২০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হোক। শিক্ষা খাতে মোট বাজেটের কমপক্ষে ৫০% অর্থাৎ ২১০০০ কোটি টাকা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা খাতে বরাদ্দ দেওয়া হোক।
বাজেট ব্যয়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠা : শুধুমাত্র বাজেট বরাদ্দর মাধ্যমে শিক্ষার মানোন্নয়ন করা সম্ভব বলে আমি মনে করি না। বাজেট বরাদ্দ ব্যয়ে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা অধিক গুরুত্বপূর্ণ। বাজেট বরাদ্দ ব্যয়ে শতভাগ স্বচ্ছতা বজায় রাখা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে শীর্ষ পর্যায় থেকে বাস্তবায়নকারী এবং স্থানীয় সমাজকে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। তথ্যপ্রাপ্তির সুযোগ অবারিত থাকা প্রয়োজন। যদি কোনো পর্যায়ে কোনো প্রকার দুর্নীতি হয় তাহলে জিরো টলারেন্স দেখাতে হবে। সরকারের বিভিন্ন প্রকাশনা পর্যালোচনা করে এ বিষয়ের জন্য প্রাসঙ্গিক অংশটুকু সংক্ষিপ্ত আকারে উপস্থাপন করা হলো। আপনাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং মতামত বাজেট বরাদ্দের প্রত্যাশাকে আরও জোরালো করবে বলে আমার বিশ্বাস।
লেখক : অধ্যাপক

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

নতুন আপদ ‘মব সন্ত্রাস’, আতঙ্কে সারা দেশ

শিক্ষার মানোন্নয়ন ও শিক্ষকের দায়িত্ব

আপডেট সময় : ১০:৩১:১৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৭ নভেম্বর ২০২১

অধ্যাপক শেখ ইকরামুল কবির : জাতীয় উন্নয়নের জন্য অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন ও গতিশীল সমাজ সৃষ্টিতে দক্ষ মানবসম্পদের বিকল্প নেই। দেশের সব মানুষের শিক্ষার আয়োজন এবং জনসংখ্যাকে দক্ষ করে তোলার ভিত্তিমূল প্রাথমিক শিক্ষা। শিক্ষার এই স্তর পরবর্তী সকল স্তরের ভিত্তি সৃষ্টি করে বলে শিক্ষার্থীর নিজ স্তরের যথাযথ মানসম্পন্ন প্রান্তিক দক্ষতা নিশ্চিত করে তাকে উচ্চতর ধাপের শিক্ষা গ্রহণে উৎসাহী এবং উপযোগী করে তোলা অপরিহার্য। মানসম্পন্ন শিক্ষা বলতে শিক্ষার্থীকে টেকসই, নৈতিক মূল্যবোধ, জীবনযাপনের জন্য আবশ্যকীয় জ্ঞান, বিষয়ভিত্তিক দক্ষতা, জীবন-দক্ষতা, দৃষ্টিভঙ্গি, মূল্যবোধ, সামাজিক সচেতনতা অর্জনের মাধ্যমে মৌলিক শিখন চাহিদা পূরণে সমর্থ করে পরবর্তী স্তরের শিক্ষা লাভের উপযোগী করে গড়ে তোলাকে বোঝায়।
বাংলাদেশ সংবিধানের ১৭ ধারায় বলা হয়েছে-
(ক) একই পদ্ধতির গণমুখী ও সর্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য এবং আইনের দ্বারা নির্ধারিত স্তর পর্যন্ত সকল বালক-বালিকাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষাদানের জন্য, সমাজের প্রয়োজনের সহিত শিক্ষাকে সংগতিপূর্ণ করিবার জন্য এবং সেই প্রয়োজন সিদ্ধ করিবার উদ্দেশ্যে যথাযথ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও সদিচ্ছাপ্রণোদিত নাগরিক সৃষ্টির জন্য,
(গ) আইনের দ্বারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিরক্ষরতা দূর করিবার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।
জাতীয় শিক্ষনীতি ২০১০-এ মানসম্পন্ন প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যে বলা হয়েছে-
মানসম্পন্ন প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণের জন্য জাতিসত্তা, আর্থ-সামাজিক ও শারীরিক-মানসিক সীমাবদ্ধতা এবং ভৌগোলিক অবস্থান নির্বিশেষে দেশের সকল শিশুর জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করা। এ কাজ করা রাষ্ট্রের সাংবিধানিক দায়িত্ব।
সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা এবং সমাজের প্রয়োজনে জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০-এ প্রাথমিক শিক্ষার স্তর নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত এবং ৫+ বছর বয়সী শিশুদের জন্য ১ বছর মেয়াদি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু করা হয়েছে, যাকে পরবর্তীতে ৪+ বছর পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হবে। বর্তমান সরকারের ইতিবাচক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে ভর্তির হার প্রায় শতভাগ, ঝরে পড়ার হার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে। প্রাথমিক স্তরে বালক-বালিকা শিক্ষার্থী অনুপাত ১:১.০১ এবং শিক্ষক-শিক্ষিকা অনুপাত ১:১.৫। বর্তমানে শিক্ষানীতি-২০১০ এর বাস্তবায়ন চলছে। তবে পর্যাপ্ত অর্থের অভাবে এই গতিকে দ্রুততর করা সম্ভব হচ্ছে না এবং সবক্ষেত্রে শিক্ষার মানোন্নয়ন করাও সম্ভব হয়নি। তবে আমরা আশাবাদী শিক্ষাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে আমাদের সীমিত সম্পদের মধ্য থেকে প্রাথমিক শিক্ষা খাতকে পর্যাপ্ত বরাদ্দ দেওয়া হবে। যার ফলে শিক্ষার্থীকে মানসম্মত শিক্ষাদান করে প্রত্যেককে সফল শিক্ষার্থী হিসাবে গড়ে তোলা যায়।
সবার জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য নিচের পদক্ষেপগুলো জোরালোভাবে নেওয়া প্রয়োজন।
সুযোগ সম্প্রসারণ ও মানোন্নয়ন:
বিদ্যালয় কক্ষ নির্মাণ, পুনর্র্নিমাণ ও সম্প্রসারণ, বিদ্যালয় মেরামত ও সংস্কার, দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য উপবৃত্তি প্রদান, সকল শিক্ষার্থীর জন্য টিফিন কার্যক্রম, সুবিধাবঞ্চিত ও ঝরে পড়া রোধে ছাত্রদের জন্য শিক্ষাভাতা ও শিক্ষা অনুদান প্রদান, সকল ক্লাসরুমকে ছেলে, মেয়ে, শিশু ও প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য উপযোগী করে তোলা, দেশের সকল বিদ্যালয়ে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি চালু, জাতীয়করণকৃত বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহের প্রশাসনিক কার্যক্রম সম্পাদন, প্রাথমিক শিক্ষাকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত সম্প্রসারণ, প্রাথমিক পর্যায়ে আইসিটিভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম প্রচলন, প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে প্রশিক্ষণ অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষকদের মৌলিক প্রশিক্ষণ অর্থাৎ ১৮ মাস মেয়াদি ডিপিএড কোর্স সকল পিটিআইতে চালু করা এবং প্রয়োজন একাধিক শিফট চালু করা।
বিষয়ভিত্তিক (বাংলা, ইংরেজি, গণিত) প্রশিক্ষণ জোরদারকরণ, বর্তমানে যারা শিক্ষক/শিক্ষিকা হিসাবে কর্মরত আছেন তাঁদের অধিকাংশ ১৯৭৫ পরবর্তী সময়ে স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেছেন, যার ফলে তারা শিক্ষাজীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বিকৃত ইতিহাস অধ্যয়ন করেছেন। বাংলাদেশের সঠিক ইতিহাস সম্পর্কে পাঠদান করতে হলে প্রথমে শিক্ষক/শিক্ষিকাদের সঠিক ইতিহাস জানতে হবে এবং বিশ্বাস করতে হবে। এজন্য বিশেষ কর্মসূচির মাধ্যমে বাংলাদেশ পরিচিতি বিষয়ে তাদেরকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান করা প্রয়োজন। প্রাথমিক শিক্ষা সার্টিফিকেট পরীক্ষায় যোগ্যতাভিত্তিক প্রশ্নপত্র প্রণয়নের জন্য ব্যাপক প্রশিক্ষণ।
শিক্ষকশিক্ষিকার দক্ষতা উন্নয়ন, ছাত্র-শিক্ষকের অনুপাত হ্রাস, শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নে ছাত্র-শিক্ষকের অনুপাত ১:৩০ বজায় রাখা বাঞ্ছনীয়। বর্তমানে ছাত্র-শিক্ষকের অনুপাত হচ্ছে ৪৯:১। এই অনুপাতকে কমিয়ে আনার লক্ষ্যে বিপুল সংখ্যক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ প্রয়োজন।
অগ্রাধিকারভিত্তিক কার্যক্রমসমূহ: প্রাথমিক শিক্ষাকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত সম্প্রসারণ ও এর জন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন, শিক্ষক-শিক্ষিকার দক্ষতা উন্নয়ন, নতুন বিদ্যালয় স্থাপন, বিদ্যমান অবকাঠামো সম্প্রসারণ, পুনর্র্নিমাণ, মেরামত ও সংস্কার, স্কুলে টিফিন কর্মসূচি, দরিদ্র শিক্ষার্থীদেরকে উপবৃত্তি শিক্ষা ভাতা প্রদান, সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার প্রচলন, নিরক্ষরতা দূরীকরণ ও সাক্ষরতা-উত্তর অব্যাহত শিক্ষা কার্যক্রম প্রচলন, নিরক্ষরতা দূরীকরণ ও সাক্ষরতা-উত্তর অব্যাহত শিক্ষা কার্যক্রম প্রচলন,
শিক্ষানীতি-২০১০ ও বাজেট বরাদ্দ: শিক্ষানীতি-২০১০ অনুসারে প্রাথমিক শিক্ষার স্তর প্রথম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি এবং প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি অতিরিক্ত চালু করা হয়েছে। সে হিসেবে প্রাথমিক শিক্ষার শ্রেণি বৃদ্ধি পেয়েছে ৪টি। যার শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ কোটিরও বেশি হবে। ২০১৩ সাল থেকে বিদ্যমান প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্রমান্বয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত চালু করা হচ্ছে। এর জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন। কিন্তু শিক্ষানীতি-২০১০ বাস্তবায়ন শুরু করার পরও গণশিক্ষার জন্য আনুপাতিক হারে বাজেট বরাদ্দের কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। তবে মোট জাতীয় বাজেটের আকার বৃদ্ধির ফলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষার জন্য মোট বরাদ্দও বৃদ্ধি পেয়েছে।
উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা: বয়স্ক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার লক্ষ্য হচ্ছে ২০১৪ সালের মধ্যে প্রাপ্ত বয়স্ক সকল নাগরিককে সাক্ষর করে তোলা। বর্তমানে পনের বছরের বেশি বয়সীদের সাক্ষরতার শতকরা ৫৭, অর্থাৎ পনের বছরের বেশির বয়সীদের শতকরা ৪৩ ভাগ এখনও নিরক্ষর। এই জনসংখ্যাকে সাক্ষর, লেখাপড়া ও হিসাব-নিকাশে ন্যূনতমভাবে দক্ষ, মানবিক গুণাবলীর চেতনায় উদ্দীপ্ত, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সচেতন এবং পেশাগত দক্ষতায় উন্নত করে তুলতে হবে। অর্জিত শিক্ষা ও দক্ষতাকে অটুট রাখার জন্য অব্যাহত শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করা, গ্রামে পাঠ-অনুশীলতা-চক্র ও গ্রাম শিক্ষা- মিলনকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন।
বিশ্লেষণ: উপরোক্ত টেবিল অবলোকন করলে দেখা যায়, ২০১৩-১৪ সালে লবণ ব্যয়ের মোট বাজেট ছিল ৩৭০৯ কোটি টাকা। কিন্তু ২০১৪-১৫ বাজেটে এই অঙ্ক বৃদ্ধির পরিবর্তে হ্রাস পেয়েছে এবং ২০১৫ সালের প্রক্ষেপণেও এই বাজেট ২০১৩-১৪ সালে অপেক্ষা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কম আছে। ২০১৩-১৪ সালের অনুপাতে বাজেট বৃদ্ধি পাবে প্রায় ৪০%। সেই হারে মূলধনী ব্যয় বৃদ্ধি পেলে মূলধনী ব্যয় বাজেট-প্রক্ষেপণ হওয়া উচিত ছিল ৩৭০৯ গুণ ১.৪= ৫১৯২ কোটি টাকা।
মধ্যমেয়াদি বাজেট অনুসারে দেখা যায় প্রাথমিক শিক্ষা খাতে ২০১৫-১৬ আর্থিক বছরের বাজেট নির্ধারণ করা আছে ১৪,৭৮৯ কোটি টাকা। কিন্তু এ সময়ের অনুমিত মোট বাজেট কম-বেশি ৩,০০,০০০ কোটি টাকা হবে। সেক্ষেত্রে মোট বাজেটের শতকরা হারে প্রাথমিক শিক্ষা বাজেট হবে ৪.৯৩ এবং মোট বাজেট বৃদ্ধি পাবে ১১১২ কোটি টাকা। ২০১৪-১৫ মোট বাজেটের ৫.৪৬% এই হার বর্তমান থাকলেও ২০১৫-১৬ সালের বাজেট বরাদ্দ পাওয়া যায় ১৬৩৮০ কোটি টাকা।
২০১৪-১৫ আর্থিক বছরে রাজস্ব বাজেট ১০,৫০০ কোটি টাকা যার অধিকাংশ বেতন ও ভাতাদি পরিশোধে ব্যয় হয়। ২০১৪-১৫ আর্থিক বছরে বেতন-ভাতাদি বাবদ ব্যয় হবে মোট বাজেটের ৭৬.৮০% অবশিষ্ট ৩১৭৩ কোটি টাকা অর্থাৎ ২৩.২০% অবকাঠামো উন্নয়ন ও সম্পদ সংগ্রহ কাজে ব্যয় হবে।
১ জুলাই ২০১৫ হতে নতুন বেতন কাঠামো কার্যকর হয়, যার ফলে নতুন কোনো নিয়োগে ব্যয় হবে কমপক্ষে ১০৫০০ গুণ ১.৫ = ১৫৭৫০ কোটি টাকা অর্থাৎ বর্তমান যুবস্থায় যে বাজেট প্রজন ১৫৭৫০+৩৪২৮=১৯১৭৮ কোটি টাকা। এই পরিমাণ বাজেট দ্বারা নতুন কোনো বড় পদক্ষেপ গ্রহণ করা যাবে না। নতুন নিয়োগ এবং নতুন অবকাঠামো নির্মাণের জন্য অবশ্যই অতিরিক্ত অর্থ প্রয়োজন। জাতীয় বাজেটে ৪টি মন্ত্রণালয় (প্রাথমিক ও গণশিক্ষা; শিক্ষা; বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়) একসঙ্গে শিক্ষা ও প্রযুক্তি নামে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বাজেট বরাদ্দ করা হয়।
জিডিপি ৬.৫% বৃদ্ধি হলে ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে জিডিপি হবে ১৪,০০,০০০ কোটি টাকা। সাধারণ হিসাবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রাপ্য বাজেট (১৫৭৫০ +৫১১২) কোটি টাকা =২০৯৪২ কোটি টাকা।
প্রস্তাবসমূহ: এখানে শুধু প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে বিবেচনায় আনা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মুদ্রাস্ফীতি বিবেচনা করলে এই বাজেট আরও বেশি হওয়া প্রয়োজন। তবে অন্যান্য অগ্রাধিকারযোগ্য বিষয়গুলোও বিবেচনায় আনা উচিত বিধায় শিক্ষায় বরাদ্দের জন্য নি¤œরূপ প্রস্তাব করছি- শিক্ষা ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের জন্য বাজেট বরাদ্দ একত্রে না দেখিয়ে শিক্ষাকে পৃথক করে দেখান হোক। ২০১৫-১৬ বাজেটে শিক্ষা খাতে কমপক্ষে মোট বাজেটের ১৪% (জিডিপি-এর ৩% )অর্থাৎ ৪২০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হোক। শিক্ষা খাতে মোট বাজেটের কমপক্ষে ৫০% অর্থাৎ ২১০০০ কোটি টাকা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা খাতে বরাদ্দ দেওয়া হোক।
বাজেট ব্যয়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠা : শুধুমাত্র বাজেট বরাদ্দর মাধ্যমে শিক্ষার মানোন্নয়ন করা সম্ভব বলে আমি মনে করি না। বাজেট বরাদ্দ ব্যয়ে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা অধিক গুরুত্বপূর্ণ। বাজেট বরাদ্দ ব্যয়ে শতভাগ স্বচ্ছতা বজায় রাখা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে শীর্ষ পর্যায় থেকে বাস্তবায়নকারী এবং স্থানীয় সমাজকে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। তথ্যপ্রাপ্তির সুযোগ অবারিত থাকা প্রয়োজন। যদি কোনো পর্যায়ে কোনো প্রকার দুর্নীতি হয় তাহলে জিরো টলারেন্স দেখাতে হবে। সরকারের বিভিন্ন প্রকাশনা পর্যালোচনা করে এ বিষয়ের জন্য প্রাসঙ্গিক অংশটুকু সংক্ষিপ্ত আকারে উপস্থাপন করা হলো। আপনাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং মতামত বাজেট বরাদ্দের প্রত্যাশাকে আরও জোরালো করবে বলে আমার বিশ্বাস।
লেখক : অধ্যাপক