ঢাকা ০৩:৩৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫

থমকে আছে মাইক ব্যবসা

  • আপডেট সময় : ১২:৩৪:৪২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২১
  • ৯৯ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনার কারণে আয় না থাকায় অনেকটাই পথে বসার উপক্রম হয়েছে মাইক ব্যবসায়ীদের। মাইক ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের প্রায় ১ লাখ মাইক ব্যবসায়ী এবং তাদের ৪ লাখ কর্মচারী এখন দুর্বিষহ জীবন যাপন করছেন। অর্থ কষ্টে মালিকদের অনেকে দিতে পারছেন না দোকান ভাড়া। অব্যহৃত অবস্থায় পড়ে থাকায় নষ্ট হচ্ছে যন্ত্রপাতি।মাইক ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের অনেকেই ভ্যানে করে কাঁচামাল বিক্রি শুরু করেছেন। এমনই একজন আকমাম হোসেন। তিনি বলেন, ‘ব্যবসা পরিস্থিতির কথা বলতে গেলে তো ভাষা হারিয়ে ফেলি। গ্রাম থেকে জায়গা জমি বিক্রি করে ৫-৭ লাখ টাকা আনলাম, ব্যবসা শুরু করলাম। গত দুই আড়াই বছর ধরে বসে আছি। আগে বড় বড় প্রোগ্রাম পাইতাম। এখন পরিস্থিতি এমন যে শুধু দোকান ভাড়াই দুই আড়াই লাখ টাকা বাকি পড়ে গেছে। না পারছি মালগুলো বিক্রি করতে, না পারতাছি কোনও প্রোগ্রাম ধরতে। এখন পথে বসার দশা।’ দোকানের কর্মচারীরা আরও আগে কাজ ছেড়ে চলে গেছেন উল্লেখ করে আকমাম হোসেন বলেন, ‘৯ জন ছিল কর্মচারী। তারা সবাই চলে গেছেন। একজনের বেতন দিতে পারছি। বাকিদের বেতন দিতে পারিনি। তাদের বলেছি, কাজ হলে দিয়ে দেবো।’ সামনে কী করবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখন তেমন কোনও পরিকল্পনা নেই। তাকিয়ে আছি, কেউ যদি সাহায্য সহোযোগিতা করে। যদি সরকার কিছু সাহায্য সহযোগিতা করে। এখন সংসার চালানোর জন্য কাঁচামালের ব্যবসা করছি। কোনও দিন ৫০০, কোনও দিন ৩০০ টাকা রোজগার হয়। তাই দিয়ে কোনও রকম টিকে আছি।’ মিরপুরের রাজ ডেকেরশনের মালিক আবদুল কুদ্দুস রনি বলেন, ‘করোনার আগে যে রকম ব্যবসা ছিল, এখন আর তা নেই। এখন মানুষ ওইভাবে আসে না, টুকটাক কিছু অনুষ্ঠান হয়, তা দিয়ে চলে না।’ তিনি বলেন, ‘আমার ১ কোটি টাকার ব্যবসা। করোনার আগে এ রকম দিন গেছে, দিনে ৫০ হাজার টাকার প্রোগ্রাম করতাম। গড়ে ৮-১০ লাখ টাকার কাজ পেতাম মাসে। এখন ১০ টাকাও ইনকাম নেই। মুজিববর্ষ উপলক্ষে নতুন করে ৩০ লাখ টাকার মাল কিনেছিলাম, এগুলো পড়ে নষ্ট হচ্ছে।’ দোকানের কর্মচারীদের কথা জিজ্ঞেস করলে আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ‘আমার দোকানে ২০ থেকে ১৮ জন কর্মী ছিল। প্রত্যেককে ১৫-২০ হাজার করে দিতাম। করোনা শুরু হওয়ার দুই মাস পর থেকে সবাইকে বিদায় দিতে হয়েছে। এখন কেউ অটোরিকশা চালান, কেউ বাসে হেলপারি করেন, আবার কেউ গ্রামে গিয়ে মাঠে কাজ করছেন।’ সাইফুল নামের এক মাইক কর্মচারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘লকডাউন শুরু হওয়ার পর আর রাখতে পারেনি মালিক। তাই চাকরি ছেড়ে এখন অটোরিকশা চালিয়ে জীবকা নির্বাহ করছি।’ বুধবার (১০ নভেম্বর) মাইক ব্যবসায়ীদের বর্তমান সার্বিক অবস্থা তুলে ধরতে সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশে মাইক মালিক ব্যবসায়ী সমিতি। সেখানে তারা জানায়, বিগত দুই বছর করোনা মহামারির কারণে এক লাখ মালিক ও ৪ লাখ কর্মচারী কাজ না থাকায় আর্থিক সংকটে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। করোনাকলে অনেকে সরকারি প্রণোদনা পেলেও মাইক মালিক সমিতি সম্পূর্ণভাবে বঞ্চিত। তারা ক্ষতিগ্রস্ত মাইক মালিক ও কর্মচারীদের জরুরি ভিত্তিতে আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ এবং স্বল্প মুনাফায় একশ’ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা প্রদানের দাবি জানান।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

থমকে আছে মাইক ব্যবসা

আপডেট সময় : ১২:৩৪:৪২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনার কারণে আয় না থাকায় অনেকটাই পথে বসার উপক্রম হয়েছে মাইক ব্যবসায়ীদের। মাইক ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের প্রায় ১ লাখ মাইক ব্যবসায়ী এবং তাদের ৪ লাখ কর্মচারী এখন দুর্বিষহ জীবন যাপন করছেন। অর্থ কষ্টে মালিকদের অনেকে দিতে পারছেন না দোকান ভাড়া। অব্যহৃত অবস্থায় পড়ে থাকায় নষ্ট হচ্ছে যন্ত্রপাতি।মাইক ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের অনেকেই ভ্যানে করে কাঁচামাল বিক্রি শুরু করেছেন। এমনই একজন আকমাম হোসেন। তিনি বলেন, ‘ব্যবসা পরিস্থিতির কথা বলতে গেলে তো ভাষা হারিয়ে ফেলি। গ্রাম থেকে জায়গা জমি বিক্রি করে ৫-৭ লাখ টাকা আনলাম, ব্যবসা শুরু করলাম। গত দুই আড়াই বছর ধরে বসে আছি। আগে বড় বড় প্রোগ্রাম পাইতাম। এখন পরিস্থিতি এমন যে শুধু দোকান ভাড়াই দুই আড়াই লাখ টাকা বাকি পড়ে গেছে। না পারছি মালগুলো বিক্রি করতে, না পারতাছি কোনও প্রোগ্রাম ধরতে। এখন পথে বসার দশা।’ দোকানের কর্মচারীরা আরও আগে কাজ ছেড়ে চলে গেছেন উল্লেখ করে আকমাম হোসেন বলেন, ‘৯ জন ছিল কর্মচারী। তারা সবাই চলে গেছেন। একজনের বেতন দিতে পারছি। বাকিদের বেতন দিতে পারিনি। তাদের বলেছি, কাজ হলে দিয়ে দেবো।’ সামনে কী করবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখন তেমন কোনও পরিকল্পনা নেই। তাকিয়ে আছি, কেউ যদি সাহায্য সহোযোগিতা করে। যদি সরকার কিছু সাহায্য সহযোগিতা করে। এখন সংসার চালানোর জন্য কাঁচামালের ব্যবসা করছি। কোনও দিন ৫০০, কোনও দিন ৩০০ টাকা রোজগার হয়। তাই দিয়ে কোনও রকম টিকে আছি।’ মিরপুরের রাজ ডেকেরশনের মালিক আবদুল কুদ্দুস রনি বলেন, ‘করোনার আগে যে রকম ব্যবসা ছিল, এখন আর তা নেই। এখন মানুষ ওইভাবে আসে না, টুকটাক কিছু অনুষ্ঠান হয়, তা দিয়ে চলে না।’ তিনি বলেন, ‘আমার ১ কোটি টাকার ব্যবসা। করোনার আগে এ রকম দিন গেছে, দিনে ৫০ হাজার টাকার প্রোগ্রাম করতাম। গড়ে ৮-১০ লাখ টাকার কাজ পেতাম মাসে। এখন ১০ টাকাও ইনকাম নেই। মুজিববর্ষ উপলক্ষে নতুন করে ৩০ লাখ টাকার মাল কিনেছিলাম, এগুলো পড়ে নষ্ট হচ্ছে।’ দোকানের কর্মচারীদের কথা জিজ্ঞেস করলে আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ‘আমার দোকানে ২০ থেকে ১৮ জন কর্মী ছিল। প্রত্যেককে ১৫-২০ হাজার করে দিতাম। করোনা শুরু হওয়ার দুই মাস পর থেকে সবাইকে বিদায় দিতে হয়েছে। এখন কেউ অটোরিকশা চালান, কেউ বাসে হেলপারি করেন, আবার কেউ গ্রামে গিয়ে মাঠে কাজ করছেন।’ সাইফুল নামের এক মাইক কর্মচারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘লকডাউন শুরু হওয়ার পর আর রাখতে পারেনি মালিক। তাই চাকরি ছেড়ে এখন অটোরিকশা চালিয়ে জীবকা নির্বাহ করছি।’ বুধবার (১০ নভেম্বর) মাইক ব্যবসায়ীদের বর্তমান সার্বিক অবস্থা তুলে ধরতে সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশে মাইক মালিক ব্যবসায়ী সমিতি। সেখানে তারা জানায়, বিগত দুই বছর করোনা মহামারির কারণে এক লাখ মালিক ও ৪ লাখ কর্মচারী কাজ না থাকায় আর্থিক সংকটে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। করোনাকলে অনেকে সরকারি প্রণোদনা পেলেও মাইক মালিক সমিতি সম্পূর্ণভাবে বঞ্চিত। তারা ক্ষতিগ্রস্ত মাইক মালিক ও কর্মচারীদের জরুরি ভিত্তিতে আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ এবং স্বল্প মুনাফায় একশ’ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা প্রদানের দাবি জানান।