ঢাকা ০১:২১ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মন নিয়ে খেলা

  • আপডেট সময় : ১০:৩৪:৪০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ নভেম্বর ২০২১
  • ৭৬ বার পড়া হয়েছে

তুহীন বিশ্বাস : কম্পিউটারটা অনেকদিন কাজ করছে না। সার্ভিসিং করাতে হবে। অনেক কাজ পেইন্ডিং আছে। আগে এসব কাজের জন্য চিন্তা করতে হোতো না। লিখন সব কাজ করে দিত। বেশ কয়েকদিন লিখন কোনো যোগাযোগ করছে না। নীলা ফোনটা হাতে তুলে নিয়ে ভাবছে ফোন দিবে না মেসেজ দিবে।
লিখন নীলার এক আত্মীয়’র অফিসের কাজের সাথে সংযুক্ত চৌকস ছেলে। অফিস স্টাফদের টিকেট বুকিং হোটেল বুকিং বা অন্য কোনো কাজের কাজী হলো এই লিখন। সে সুবাদে নীলাও তাদের বাসার বা নিজের কাজে লিখনের সাহায্য নিচ্ছে। মিষ্টি ভাষী লিখন নীলাদের বাসার সকলের পছন্দের একজন হয়ে গেছে। বলা যায় লিখন নীলাদের পরিবারের একজন হয়ে উঠেছে।
লিখনের সবকিছুই নীলার ভালো লাগে। এই ভালোলাগা থেকে নীলা নিজের অজান্তেই লিখনকে ভালোবেসে ফেলে। লিখনকে কথাটি বলতে পারে না নীলা। আজকাল লিখনের কথা ও চাহনি নীলার কাছে অন্যরকম মনে হয়। লিখনের বয়স নীলা থেকে অনেক কম। তাছাড়া লিখন অন্য ধর্মের। এসব ভেবে নীলা কিছু বলতে পারে না।
একদিন গভীর রাতে নীলার ঘুম ভাঙ্গে ফোন ম্যাসেজের শব্দে। মোবাইল হাতে নিয়েই হতবাক হয় নীলা। বিছানা ছেড়ে উঠে বসে। বারবার চোখ রাখছে মোবাইল ম্যাসেজের দিকে। লিখনের একটা ছোট্ট মেসেজ। সেখানে লেখা ছিল…

  • আই লাভ ইউ।
    নীলা আনন্দে আত্মহারা। যে কথাটি বুকের গভীরে লুকিয়ে রেখেছিল এতদিন। আজ সত্যি মনে হচ্ছে সেটির পূর্ণতা পেতে যাচ্ছে। এসব ভাবতেই আর একটা মেসেজ এলো…
  • সরি দিদি মেসেজটি ভুলে চলে গেছে। কিছু মনে করবেন না। ওটা আমি খালাতো বোন সুমা’কে লিখেছিলাম।
    নীলা বুঝে গেছে ওটা তার জন্যই লেখা। তাই লিখনকে আর সুযোগ না দিয়েই নীলা রিপ্লাই করলো…
  • জানি তুমি আমাকেই লিখেছ। ভণিতা ছাড়ো। আমিও যে মনে প্রানে তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি বহুদিন পূর্বেই সে তুমি জানো না।
    ওদিক থেকে লিখন উত্তরে শুধু লিখলো…
  • হা হা হা…
    নীলার আজ খুব ভালো লাগছে। আনন্দে একা একা মুচকি হাসছে ঠোটের কোনে। প্রেম এমনই হয় যেখানে মানেনা কোনো বাঁধন। মানেনা জাত, গোত্র, সময়। মানেনা কোনো বয়স। নীলা আর লিটনের এখন সেই অবস্থা। দু’জনের চোখে জোছনাস্নাত আলোর ঝলকানি। সেদিন বাকি রাতটুকু ফোন মেসেজেই কাটিয়ে দিলো। অবশেষে সিদ্ধান্ত হলো পরের দিন গোধূলি লগ্নে নদীর ধারে পার্কের বেঞ্চিতে দেখা হবে দু’জনার।
    খুব সকালেই বিছানা ছেড়ে নীলা ঘর গোছানো কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। বাসার সবাই আজ অবাক। নীলা নিজ হাতে একের পর এক কাজ করে যাচ্ছে আর গুনগুনিয়ে গান গাচ্ছে। সবাই খুশী নীলার কাজ দেখে। আজ লিখনকে দেখবে তার কাঙ্ক্ষিত প্রেমিক সুপুরুষ রূপে। যেদিকে তাকায় সবকিছু আজ নীলার দৃষ্টিতে রঙিন মনে হয়। মনের মাধুরীতে দেখতে পায় প্রকৃতি যেনো সেজেছে অপরূপ মহিমায়।
    নির্ধারিত সময় নীলা নদীর কাছে নির্দিষ্ট পার্কের বেঞ্চির কাছে উপস্থিত। গিয়েই চমকে যায় লিখনকে দেখে। অনেক আগেই লিখন এসেছে বুঝা গেলো। নীলা কাছে গিয়ে দুরুদুরু বুকে মাথা নিচু করে লিখনের সামনে দাঁড়িয়ে রইলো ঠায়। ভাষা নেই দু’জনের কারো মুখে। কিছুক্ষণ পরে নীরবতা ভেঙ্গে লিখন আজ প্রথমবার নাম ধরে ডাক দিলো- নীলা! আজ আজ দিদি নয়। মনের মাধুরীতে সরাসরি নাম ধরেই ডাকলো। নীলা সম্বিৎ ফিরে তাকিয়ে দেখে লিখন তার মুখের কাছে মুখ রেখে সোজা দাঁড়িয়ে হাসছে। হাতে হাত রেখে নিজেদের অনুভূতি,আবেগ, ভালোবাসায় ভরিয়ে দিলো সেদিনের আকাশ বাতাস।
    রাত প্রায় দশটা বেজে গেছে। কিভাবে এতোটা সময় চলে গেলো দুজনার বুঝতে পারেনি। দ্রুত বের হয়ে লিখন তার মটর বাইকে নীলাকে বাসার গেটে নামিয়ে চলে গেলো।
    নীলা ও লিখনের সময় কাটছে বেশ। প্রতিদিন তারা দেখা করে বিভিন্ন অজুহাতে ভিন্ন ভিন্ন যায়গায়। বাহিরে কোথাও অথবা সুযোগ বুঝে নীলার বাসায়। এভাবে কেটে গেলো বহু সময়। লিখন খেয়াল করলো, আজকাল নীলা কথা বলার মাঝে কোথায় যেনো হারিয়ে যায়। সম্পুর্ন অন্যমনস্ক হয়ে যায়। এটা অবশ্য প্রথম দিন থেকেই ছিলো তবে ইদানীং চোখে পড়ার মতো। নীলা লিখনকে প্রায়ই বলে লাল টি শার্ট ও নীল জিন্স পড়তে। এমনকি লিখনের বাইকও চেইঞ্জ করে লাল কালার নিতে বলে। এসব নাকি নীলার পছন্দের।
    নীলা নদী, সমুদ্র পছন্দ করে। তাই দুজনে মাঝে মাঝে জোছনাস্নাত সন্ধ্যায় নৌকা ভাড়া করে কয়েক ঘন্টা নদী ভ্রমণ করে।
    সারপ্রাইজ দিতে লিখন একদিন সন্ধ্যায় নীলার বাসায় হাজির। নীলা তখন বান্ধবীর বাসায় জরুরী কাজে গিয়েছিলো। নীলাকে ফোন দিলে অপেক্ষা করতে বললো। বাসার সবার সাথে গল্প করে ফাঁকে নীলার রুমে ঢুকে নীলার টেবিলে বসে একটা ডায়েরী দেখতে পেলো লিখন। ডায়রীটা নীলা যে পড়ছিল তা বুঝা যায়। লিখন ডায়েরীর পাতা উল্টাতেই ‘থ’ হয়ে গেলো। সেখানে অনিকেত নামের একজনের সাথে নীলার অতীতের অনেক স্মৃতি দেখতে পায়। বুঝে যায় লিখন, নীলা তার মাঝে অনিকেতকে খুঁজে বেড়ায় সারাক্ষণ। নীলার পছন্দ অপছন্দ সবকিছুই তো অনিকেতের নিজস্ব। আজো ভুলেনি অনিকেতকে। তাই লিখনের মাঝে অনিকেতকে আবিষ্কার করতে চায় নীলা। ডায়েরির শেষ অংশে যা লেখা ছিলো…
  • জানো অনিকেত! আমি যেখানে যাই যাকে দেখি তার মাঝে তোমার অস্তিত্ব খুঁজি। তুমি হয়ত আমাকে মনে রাখোনি। আমি আজও প্রতিক্ষণে তুমি ও তোমাকে সাথে নিয়ে পথ চলি। লিখনের সাথে সম্পর্ক করার কারণ ওর মাঝে তোমার কিছু বৈশিষ্ট্য খুঁজে পাই। মনে করি তুমি আছো এখনো আমার কাছে। জানো! তোমার পছন্দ অপছন্দ তোমার আদেশ অনুরোধ মেনেই আমি আজও চলি। লিখন এখন তোমার ছায়া হয়ে রয়েছে আমার কাছে।
    এক নিঃশ্বাসে লেখাটা পড়ে দ্রুত বাসা থেকে বেড়িয়ে গেলো লিখন। যেতে যেতে নীলার ফোনে মেসেজ করলো…
  • আমি কারো ছায়া হতে চাইনা। ভালো থেকো। শুভ কামনা।
    নীলা মেসেজ পেয়েই দ্রুত বাসায় চলে এলো। নিজের রুমে ঢুকেই বুঝতে পারলো লিখন তার গোপনীয় ডায়েরীটা দেখে ফেলেছে। কিংকর্তব্যবিমূঢ় নীলা শুধু মেসেজ করলো…
  • সরি লিখন। ওটা আমার অতীত। তুমি বর্তমান। ভুল বুঝোনা আমায়।
    দুজনের মাঝে আর দেখা হয়না। ফোনে নীলা ফোন দিলেও লিখন রিসিভ করেনা। নীলা কান্নায় ভেংগে পড়লো। নিজের ভাগ্যকে দায়ী করলো।
    মন ভালো নেই, তাই নীলা বাসে ঢাকায় এক আত্মীয়’র বাসায় বেড়াতে যাচ্ছিলো। পাশের সিটে এক ভদ্রলোকের সাথে পরিচয় হয়। নাম অয়ন। ঢাকায় থাকে। সারা পথে দুজনে বেশ আলাপ জমিয়ে ফেলেছে। একে অপরের কন্ট্যাক্ট নাম্বার নিয়ে নিলো। অয়নের কথার ধরন ও তার চিন্তা চেতনা দেখে নীলার ভালো লেগে গেলো। বাস স্ট্যান্ডে গাড়ী থামতেই। দুজনে বিদায় নিয়ে যে যার গন্তব্যে চলে গেলো।
    বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে রাতে ঘুমাতে যাবে এমন সময় অয়নের ফোন। সব খোঁজ খবর নেয়ার পরে বিভিন্ন গল্পে কেটে গেলো সারারাত। ইঙ্গিতে দুজনেই দুজনাকে পছন্দের কথা জানালো। এরপরে দুজনে ঢাকার বিভিন্ন স্থান ঘুরে বেড়িয়েছে। নীলা অয়নের মাঝে দ্রুত একটা সম্পর্ক গড়ে উঠে।
    প্রায় আড়াই বছর পরে অয়নের সাথে সম্পর্ক স্থগিত হয়। অবিশ্বাস, সন্দেহ আর লিখনের পুনরায় ফিরে আসার কারনে। অয়ন লিখনের কথা জেনে ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নেয়।
    লিখন ফিরে আসে নীলার অনুরোধেই। তবে লিখন আগের মতো নেই। শুধুমাত্র অফিসের কাজের জন্য বাধ্য হয়েই নামে মাত্র সম্পর্ক স্থাপন করে। লিখনকে সারাদিন অনেকবার ফোন দিলো নীলা। রিসিভ, কলব্যাক বা মেসেজ পর্যন্ত দেয়নি লিখন।
    রাতে নীলা ঘুমাতে পারে না। কেনো এমন হলো! অপেক্ষা করে নীলা। রাগে অভিমানে গভীর রাতে লিখনের ফোনে মেসেজ করে…
  • আমার জন্য এক মিনিট সময় হলো না তোমার! আমিন।
    কোনো রিপ্লাই না পেয়ে ঠিক দশ মিনিট পরে আবার মেসেজ করে লিখনের ফোনে…
  • অসভ্য, স্বার্থপর, মানুষের মন নিয়ে খেলা করা পাকা এক খেলোয়াড়, ঠকবাজ হ্যাঁ হ্যাঁ সব তুমি।
    লিখন এর কোনো জবাব দিয়েছে কিনা জানা নেই। তবে মন নিয়ে কে খেলছে? লিখন? অনিকেত? অয়ন? নাকি নীলাই খেলছে সবার সাথে!
ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

মন নিয়ে খেলা

আপডেট সময় : ১০:৩৪:৪০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ নভেম্বর ২০২১

তুহীন বিশ্বাস : কম্পিউটারটা অনেকদিন কাজ করছে না। সার্ভিসিং করাতে হবে। অনেক কাজ পেইন্ডিং আছে। আগে এসব কাজের জন্য চিন্তা করতে হোতো না। লিখন সব কাজ করে দিত। বেশ কয়েকদিন লিখন কোনো যোগাযোগ করছে না। নীলা ফোনটা হাতে তুলে নিয়ে ভাবছে ফোন দিবে না মেসেজ দিবে।
লিখন নীলার এক আত্মীয়’র অফিসের কাজের সাথে সংযুক্ত চৌকস ছেলে। অফিস স্টাফদের টিকেট বুকিং হোটেল বুকিং বা অন্য কোনো কাজের কাজী হলো এই লিখন। সে সুবাদে নীলাও তাদের বাসার বা নিজের কাজে লিখনের সাহায্য নিচ্ছে। মিষ্টি ভাষী লিখন নীলাদের বাসার সকলের পছন্দের একজন হয়ে গেছে। বলা যায় লিখন নীলাদের পরিবারের একজন হয়ে উঠেছে।
লিখনের সবকিছুই নীলার ভালো লাগে। এই ভালোলাগা থেকে নীলা নিজের অজান্তেই লিখনকে ভালোবেসে ফেলে। লিখনকে কথাটি বলতে পারে না নীলা। আজকাল লিখনের কথা ও চাহনি নীলার কাছে অন্যরকম মনে হয়। লিখনের বয়স নীলা থেকে অনেক কম। তাছাড়া লিখন অন্য ধর্মের। এসব ভেবে নীলা কিছু বলতে পারে না।
একদিন গভীর রাতে নীলার ঘুম ভাঙ্গে ফোন ম্যাসেজের শব্দে। মোবাইল হাতে নিয়েই হতবাক হয় নীলা। বিছানা ছেড়ে উঠে বসে। বারবার চোখ রাখছে মোবাইল ম্যাসেজের দিকে। লিখনের একটা ছোট্ট মেসেজ। সেখানে লেখা ছিল…

  • আই লাভ ইউ।
    নীলা আনন্দে আত্মহারা। যে কথাটি বুকের গভীরে লুকিয়ে রেখেছিল এতদিন। আজ সত্যি মনে হচ্ছে সেটির পূর্ণতা পেতে যাচ্ছে। এসব ভাবতেই আর একটা মেসেজ এলো…
  • সরি দিদি মেসেজটি ভুলে চলে গেছে। কিছু মনে করবেন না। ওটা আমি খালাতো বোন সুমা’কে লিখেছিলাম।
    নীলা বুঝে গেছে ওটা তার জন্যই লেখা। তাই লিখনকে আর সুযোগ না দিয়েই নীলা রিপ্লাই করলো…
  • জানি তুমি আমাকেই লিখেছ। ভণিতা ছাড়ো। আমিও যে মনে প্রানে তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি বহুদিন পূর্বেই সে তুমি জানো না।
    ওদিক থেকে লিখন উত্তরে শুধু লিখলো…
  • হা হা হা…
    নীলার আজ খুব ভালো লাগছে। আনন্দে একা একা মুচকি হাসছে ঠোটের কোনে। প্রেম এমনই হয় যেখানে মানেনা কোনো বাঁধন। মানেনা জাত, গোত্র, সময়। মানেনা কোনো বয়স। নীলা আর লিটনের এখন সেই অবস্থা। দু’জনের চোখে জোছনাস্নাত আলোর ঝলকানি। সেদিন বাকি রাতটুকু ফোন মেসেজেই কাটিয়ে দিলো। অবশেষে সিদ্ধান্ত হলো পরের দিন গোধূলি লগ্নে নদীর ধারে পার্কের বেঞ্চিতে দেখা হবে দু’জনার।
    খুব সকালেই বিছানা ছেড়ে নীলা ঘর গোছানো কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। বাসার সবাই আজ অবাক। নীলা নিজ হাতে একের পর এক কাজ করে যাচ্ছে আর গুনগুনিয়ে গান গাচ্ছে। সবাই খুশী নীলার কাজ দেখে। আজ লিখনকে দেখবে তার কাঙ্ক্ষিত প্রেমিক সুপুরুষ রূপে। যেদিকে তাকায় সবকিছু আজ নীলার দৃষ্টিতে রঙিন মনে হয়। মনের মাধুরীতে দেখতে পায় প্রকৃতি যেনো সেজেছে অপরূপ মহিমায়।
    নির্ধারিত সময় নীলা নদীর কাছে নির্দিষ্ট পার্কের বেঞ্চির কাছে উপস্থিত। গিয়েই চমকে যায় লিখনকে দেখে। অনেক আগেই লিখন এসেছে বুঝা গেলো। নীলা কাছে গিয়ে দুরুদুরু বুকে মাথা নিচু করে লিখনের সামনে দাঁড়িয়ে রইলো ঠায়। ভাষা নেই দু’জনের কারো মুখে। কিছুক্ষণ পরে নীরবতা ভেঙ্গে লিখন আজ প্রথমবার নাম ধরে ডাক দিলো- নীলা! আজ আজ দিদি নয়। মনের মাধুরীতে সরাসরি নাম ধরেই ডাকলো। নীলা সম্বিৎ ফিরে তাকিয়ে দেখে লিখন তার মুখের কাছে মুখ রেখে সোজা দাঁড়িয়ে হাসছে। হাতে হাত রেখে নিজেদের অনুভূতি,আবেগ, ভালোবাসায় ভরিয়ে দিলো সেদিনের আকাশ বাতাস।
    রাত প্রায় দশটা বেজে গেছে। কিভাবে এতোটা সময় চলে গেলো দুজনার বুঝতে পারেনি। দ্রুত বের হয়ে লিখন তার মটর বাইকে নীলাকে বাসার গেটে নামিয়ে চলে গেলো।
    নীলা ও লিখনের সময় কাটছে বেশ। প্রতিদিন তারা দেখা করে বিভিন্ন অজুহাতে ভিন্ন ভিন্ন যায়গায়। বাহিরে কোথাও অথবা সুযোগ বুঝে নীলার বাসায়। এভাবে কেটে গেলো বহু সময়। লিখন খেয়াল করলো, আজকাল নীলা কথা বলার মাঝে কোথায় যেনো হারিয়ে যায়। সম্পুর্ন অন্যমনস্ক হয়ে যায়। এটা অবশ্য প্রথম দিন থেকেই ছিলো তবে ইদানীং চোখে পড়ার মতো। নীলা লিখনকে প্রায়ই বলে লাল টি শার্ট ও নীল জিন্স পড়তে। এমনকি লিখনের বাইকও চেইঞ্জ করে লাল কালার নিতে বলে। এসব নাকি নীলার পছন্দের।
    নীলা নদী, সমুদ্র পছন্দ করে। তাই দুজনে মাঝে মাঝে জোছনাস্নাত সন্ধ্যায় নৌকা ভাড়া করে কয়েক ঘন্টা নদী ভ্রমণ করে।
    সারপ্রাইজ দিতে লিখন একদিন সন্ধ্যায় নীলার বাসায় হাজির। নীলা তখন বান্ধবীর বাসায় জরুরী কাজে গিয়েছিলো। নীলাকে ফোন দিলে অপেক্ষা করতে বললো। বাসার সবার সাথে গল্প করে ফাঁকে নীলার রুমে ঢুকে নীলার টেবিলে বসে একটা ডায়েরী দেখতে পেলো লিখন। ডায়রীটা নীলা যে পড়ছিল তা বুঝা যায়। লিখন ডায়েরীর পাতা উল্টাতেই ‘থ’ হয়ে গেলো। সেখানে অনিকেত নামের একজনের সাথে নীলার অতীতের অনেক স্মৃতি দেখতে পায়। বুঝে যায় লিখন, নীলা তার মাঝে অনিকেতকে খুঁজে বেড়ায় সারাক্ষণ। নীলার পছন্দ অপছন্দ সবকিছুই তো অনিকেতের নিজস্ব। আজো ভুলেনি অনিকেতকে। তাই লিখনের মাঝে অনিকেতকে আবিষ্কার করতে চায় নীলা। ডায়েরির শেষ অংশে যা লেখা ছিলো…
  • জানো অনিকেত! আমি যেখানে যাই যাকে দেখি তার মাঝে তোমার অস্তিত্ব খুঁজি। তুমি হয়ত আমাকে মনে রাখোনি। আমি আজও প্রতিক্ষণে তুমি ও তোমাকে সাথে নিয়ে পথ চলি। লিখনের সাথে সম্পর্ক করার কারণ ওর মাঝে তোমার কিছু বৈশিষ্ট্য খুঁজে পাই। মনে করি তুমি আছো এখনো আমার কাছে। জানো! তোমার পছন্দ অপছন্দ তোমার আদেশ অনুরোধ মেনেই আমি আজও চলি। লিখন এখন তোমার ছায়া হয়ে রয়েছে আমার কাছে।
    এক নিঃশ্বাসে লেখাটা পড়ে দ্রুত বাসা থেকে বেড়িয়ে গেলো লিখন। যেতে যেতে নীলার ফোনে মেসেজ করলো…
  • আমি কারো ছায়া হতে চাইনা। ভালো থেকো। শুভ কামনা।
    নীলা মেসেজ পেয়েই দ্রুত বাসায় চলে এলো। নিজের রুমে ঢুকেই বুঝতে পারলো লিখন তার গোপনীয় ডায়েরীটা দেখে ফেলেছে। কিংকর্তব্যবিমূঢ় নীলা শুধু মেসেজ করলো…
  • সরি লিখন। ওটা আমার অতীত। তুমি বর্তমান। ভুল বুঝোনা আমায়।
    দুজনের মাঝে আর দেখা হয়না। ফোনে নীলা ফোন দিলেও লিখন রিসিভ করেনা। নীলা কান্নায় ভেংগে পড়লো। নিজের ভাগ্যকে দায়ী করলো।
    মন ভালো নেই, তাই নীলা বাসে ঢাকায় এক আত্মীয়’র বাসায় বেড়াতে যাচ্ছিলো। পাশের সিটে এক ভদ্রলোকের সাথে পরিচয় হয়। নাম অয়ন। ঢাকায় থাকে। সারা পথে দুজনে বেশ আলাপ জমিয়ে ফেলেছে। একে অপরের কন্ট্যাক্ট নাম্বার নিয়ে নিলো। অয়নের কথার ধরন ও তার চিন্তা চেতনা দেখে নীলার ভালো লেগে গেলো। বাস স্ট্যান্ডে গাড়ী থামতেই। দুজনে বিদায় নিয়ে যে যার গন্তব্যে চলে গেলো।
    বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে রাতে ঘুমাতে যাবে এমন সময় অয়নের ফোন। সব খোঁজ খবর নেয়ার পরে বিভিন্ন গল্পে কেটে গেলো সারারাত। ইঙ্গিতে দুজনেই দুজনাকে পছন্দের কথা জানালো। এরপরে দুজনে ঢাকার বিভিন্ন স্থান ঘুরে বেড়িয়েছে। নীলা অয়নের মাঝে দ্রুত একটা সম্পর্ক গড়ে উঠে।
    প্রায় আড়াই বছর পরে অয়নের সাথে সম্পর্ক স্থগিত হয়। অবিশ্বাস, সন্দেহ আর লিখনের পুনরায় ফিরে আসার কারনে। অয়ন লিখনের কথা জেনে ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নেয়।
    লিখন ফিরে আসে নীলার অনুরোধেই। তবে লিখন আগের মতো নেই। শুধুমাত্র অফিসের কাজের জন্য বাধ্য হয়েই নামে মাত্র সম্পর্ক স্থাপন করে। লিখনকে সারাদিন অনেকবার ফোন দিলো নীলা। রিসিভ, কলব্যাক বা মেসেজ পর্যন্ত দেয়নি লিখন।
    রাতে নীলা ঘুমাতে পারে না। কেনো এমন হলো! অপেক্ষা করে নীলা। রাগে অভিমানে গভীর রাতে লিখনের ফোনে মেসেজ করে…
  • আমার জন্য এক মিনিট সময় হলো না তোমার! আমিন।
    কোনো রিপ্লাই না পেয়ে ঠিক দশ মিনিট পরে আবার মেসেজ করে লিখনের ফোনে…
  • অসভ্য, স্বার্থপর, মানুষের মন নিয়ে খেলা করা পাকা এক খেলোয়াড়, ঠকবাজ হ্যাঁ হ্যাঁ সব তুমি।
    লিখন এর কোনো জবাব দিয়েছে কিনা জানা নেই। তবে মন নিয়ে কে খেলছে? লিখন? অনিকেত? অয়ন? নাকি নীলাই খেলছে সবার সাথে!