ঢাকা ০৮:৪২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫

তিন মাসে সর্বোচ্চ সংক্রমণ চীনে

  • আপডেট সময় : ১২:৪২:৪৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩ নভেম্বর ২০২১
  • ৮৭ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক : কঠোর বিধিনিষেধ জারি থাকা সত্ত্বেও চীনে বেড়ে চলেছে প্রাণঘাতী রোগ করোনার দৈনিক সংক্রমণ। গত মঙ্গলবার দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৯৩ জন, যা গত তিন মাসে সর্বোচ্চ দৈনিক সংক্রমণের রেকর্ড।
চীনের সরকারি স্বাস্থ্য সেবা কর্তৃপক্ষ দ্য ন্যাশনাল হেলথ কমিশন (এনএইচসি) এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, গত মঙ্গলবারের আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ৯ জন রাজধানী বেইজিংয়ের।
এছাড়া, চীনের উত্তর, উত্তরপূর্ব ও উত্তরপশ্চিমাঞ্চলের প্রদেশ হেইলংজিয়ান, হেবেই, গানসু, ইনার মঙ্গোলিয়া, নিংজিয়া ও কিংহাই, দক্ষিণ ও দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ জিয়াংশি, সিচুয়ান ও ইউনান প্রদেশেও গত মঙ্গলবার করোনায় নতুন আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। সংক্রমণের বিস্তার রোধে কঠোর অবস্থানে আছে চীনের কমিউনিস্ট সরকার। তারপরও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রতিদিন কমবেশি করোনায় আক্রান্তের ঘটনা ঘটছে।
তবে রাজধানী বেইজিংকে বরাবারই বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আসছে দেশটির সরকার। ফলে, গত অক্টোবর পর্যন্ত বেইজিংয়ের করোনা পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে ছিল। কিন্তু সম্প্রতি বেইজিংয়ে সংক্রমণ বাড়তে থাকায় ফের নড়ে চড়ে বসেছে সরকার। রাজধানীর প্রতিটি শপিং মল, সুপার মার্কেট, হোটেল, সিনেমা হল ও মেট্রোরেলের স্টেশনগুলোতে আগত প্রতিটি মানুষের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা শুরু হয়েছে। দেশটির সেনা সদস্যরা পুরো প্রক্রিয়াটির দেখভাল করছেন।
পাশাপাশি, বেইজিংয়ের স্থানীয় সরকারের পক্ষ থেকে রাজধানীবাসীদের বিয়ের অনুষ্ঠান স্থগিত করাসহ অতি প্রয়োজনীয় কারণ ব্যতীত সামাজিক সম্মিলন (সোশ্যাল গ্যাদারিং) বন্ধ রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে। এমনকি, মৃতদেহের সৎকারেও সীমিতসংখ্যক মানুষের বাইরে অন্যান্যদের উপস্থিত না থাকতে বলা হয়েছে।
রাজধানীবাসীকে শহর থেকে আপাতত বের না হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে বেইজিং স্থানীয় সরকার। এক প্রতিবেদনে বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী বেইজিংয়ের প্রধান দুই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বেইজিং ডাক্সিং এয়ারপোর্টে ৬০ দশমিক ৪ শতাংশ এবং বেইজিং ক্যাপিটাল এয়ারপোর্টে ৪৯ দশমিক ৮ শতাংশ ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। দেশটির সরকারি বিমান পরিষেবা সংস্থা এয়ার চায়না ইতোমধ্যে জানিয়েছে, আগামী ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত যাবতীয় ফ্লাইট বন্ধ রাখবে সংস্থাটি।
গত দেড় বছর ধরে যে করোনা মহামারিতে বিশ্ব কাঁপছে, সেই রোগে আক্রান্ত রোগী প্রথম শনাক্ত হয়েছিল চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে। করোনায় প্রথম মৃতুর ঘটনাও ঘটেছিল উহানে।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে উহানে করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রথম যে ব্যক্তি মারা গিয়েছিলেন, তার বয়স ছিল ৬১ বছর। তখনও এ রোগের কোনো নাম দেওয়া হয়নি। চীনের সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল- ‘অপরিচিত ধরনের’ নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ওই ব্যক্তির।
পরে অবশ্য জানা যায়, সার্স গ্রুপের ভাইরাস সার্স-কোভ ২ এ আক্রান্ত হয়ে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। নতুন এই ভাইরাসটির বৈজ্ঞানিক নাম সার্স-কোভ ২ হলেও সাধারণভাবে এটি পরিচিতি পায় নভেল করোনাভাইরাস নামে।
করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পরপরই সরকারি আদেশে বন্ধ করে দেওয়া হয় উহানের কেন্দ্রে অবস্থিত সি ফুড মার্কেট, যেখানে সামুদ্রিক মাছ ও প্রাণীর পাশাপাশি জীবিত বন্যপ্রাণী ও বন্যপ্রাণীর মাংসও বিক্রি হতো।
চীনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সি ফুড মার্কেটে বিক্রির জন্য আনা বাদুড়, প্যাঙ্গোলিন বা অন্য কোনো প্রাণী থেকে মানবদেহে সংক্রমিত হয়েছে ভাইরাসটি। তবে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমের কয়েকটি দেশের অভিযোগ, উহানের গবেষণাগারে কৃত্রিমভাবে এই ভাইরাসটি প্রস্তুত করা হয়েছিল এবং গবেষণাকর্মীদের অসাবধানতার ফলে এটি ছড়িয়ে পড়েছে। চীন অবশ্য বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছে।
এদিকে করোনা মহামারি শুরুর প্রায় সঙ্গে সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী লকডাউন ও কঠোর বিধিনিষেধ জারির মাধ্যমে করোনা সংক্রমণ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল এই দেশটি।
চীনের সরকারি হিসেব অনুযায়ী, ২০২০ সালে মহামারি শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৯৭ হাজার ৪২৩ জন এবং এ রোগে দেশটিতে মৃত্যু হয়েছে মোট ৪ হাজার ৬৩৬ জনের।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

এই রক্তস্রোত যেন বৃথা না যায়, ঐক্য বজায় রাখতে হবে: খালেদা জিয়া

তিন মাসে সর্বোচ্চ সংক্রমণ চীনে

আপডেট সময় : ১২:৪২:৪৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩ নভেম্বর ২০২১

প্রত্যাশা ডেস্ক : কঠোর বিধিনিষেধ জারি থাকা সত্ত্বেও চীনে বেড়ে চলেছে প্রাণঘাতী রোগ করোনার দৈনিক সংক্রমণ। গত মঙ্গলবার দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৯৩ জন, যা গত তিন মাসে সর্বোচ্চ দৈনিক সংক্রমণের রেকর্ড।
চীনের সরকারি স্বাস্থ্য সেবা কর্তৃপক্ষ দ্য ন্যাশনাল হেলথ কমিশন (এনএইচসি) এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, গত মঙ্গলবারের আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ৯ জন রাজধানী বেইজিংয়ের।
এছাড়া, চীনের উত্তর, উত্তরপূর্ব ও উত্তরপশ্চিমাঞ্চলের প্রদেশ হেইলংজিয়ান, হেবেই, গানসু, ইনার মঙ্গোলিয়া, নিংজিয়া ও কিংহাই, দক্ষিণ ও দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ জিয়াংশি, সিচুয়ান ও ইউনান প্রদেশেও গত মঙ্গলবার করোনায় নতুন আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। সংক্রমণের বিস্তার রোধে কঠোর অবস্থানে আছে চীনের কমিউনিস্ট সরকার। তারপরও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রতিদিন কমবেশি করোনায় আক্রান্তের ঘটনা ঘটছে।
তবে রাজধানী বেইজিংকে বরাবারই বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আসছে দেশটির সরকার। ফলে, গত অক্টোবর পর্যন্ত বেইজিংয়ের করোনা পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে ছিল। কিন্তু সম্প্রতি বেইজিংয়ে সংক্রমণ বাড়তে থাকায় ফের নড়ে চড়ে বসেছে সরকার। রাজধানীর প্রতিটি শপিং মল, সুপার মার্কেট, হোটেল, সিনেমা হল ও মেট্রোরেলের স্টেশনগুলোতে আগত প্রতিটি মানুষের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা শুরু হয়েছে। দেশটির সেনা সদস্যরা পুরো প্রক্রিয়াটির দেখভাল করছেন।
পাশাপাশি, বেইজিংয়ের স্থানীয় সরকারের পক্ষ থেকে রাজধানীবাসীদের বিয়ের অনুষ্ঠান স্থগিত করাসহ অতি প্রয়োজনীয় কারণ ব্যতীত সামাজিক সম্মিলন (সোশ্যাল গ্যাদারিং) বন্ধ রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে। এমনকি, মৃতদেহের সৎকারেও সীমিতসংখ্যক মানুষের বাইরে অন্যান্যদের উপস্থিত না থাকতে বলা হয়েছে।
রাজধানীবাসীকে শহর থেকে আপাতত বের না হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে বেইজিং স্থানীয় সরকার। এক প্রতিবেদনে বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী বেইজিংয়ের প্রধান দুই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বেইজিং ডাক্সিং এয়ারপোর্টে ৬০ দশমিক ৪ শতাংশ এবং বেইজিং ক্যাপিটাল এয়ারপোর্টে ৪৯ দশমিক ৮ শতাংশ ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। দেশটির সরকারি বিমান পরিষেবা সংস্থা এয়ার চায়না ইতোমধ্যে জানিয়েছে, আগামী ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত যাবতীয় ফ্লাইট বন্ধ রাখবে সংস্থাটি।
গত দেড় বছর ধরে যে করোনা মহামারিতে বিশ্ব কাঁপছে, সেই রোগে আক্রান্ত রোগী প্রথম শনাক্ত হয়েছিল চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে। করোনায় প্রথম মৃতুর ঘটনাও ঘটেছিল উহানে।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে উহানে করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রথম যে ব্যক্তি মারা গিয়েছিলেন, তার বয়স ছিল ৬১ বছর। তখনও এ রোগের কোনো নাম দেওয়া হয়নি। চীনের সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল- ‘অপরিচিত ধরনের’ নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ওই ব্যক্তির।
পরে অবশ্য জানা যায়, সার্স গ্রুপের ভাইরাস সার্স-কোভ ২ এ আক্রান্ত হয়ে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। নতুন এই ভাইরাসটির বৈজ্ঞানিক নাম সার্স-কোভ ২ হলেও সাধারণভাবে এটি পরিচিতি পায় নভেল করোনাভাইরাস নামে।
করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পরপরই সরকারি আদেশে বন্ধ করে দেওয়া হয় উহানের কেন্দ্রে অবস্থিত সি ফুড মার্কেট, যেখানে সামুদ্রিক মাছ ও প্রাণীর পাশাপাশি জীবিত বন্যপ্রাণী ও বন্যপ্রাণীর মাংসও বিক্রি হতো।
চীনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সি ফুড মার্কেটে বিক্রির জন্য আনা বাদুড়, প্যাঙ্গোলিন বা অন্য কোনো প্রাণী থেকে মানবদেহে সংক্রমিত হয়েছে ভাইরাসটি। তবে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমের কয়েকটি দেশের অভিযোগ, উহানের গবেষণাগারে কৃত্রিমভাবে এই ভাইরাসটি প্রস্তুত করা হয়েছিল এবং গবেষণাকর্মীদের অসাবধানতার ফলে এটি ছড়িয়ে পড়েছে। চীন অবশ্য বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছে।
এদিকে করোনা মহামারি শুরুর প্রায় সঙ্গে সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী লকডাউন ও কঠোর বিধিনিষেধ জারির মাধ্যমে করোনা সংক্রমণ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল এই দেশটি।
চীনের সরকারি হিসেব অনুযায়ী, ২০২০ সালে মহামারি শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৯৭ হাজার ৪২৩ জন এবং এ রোগে দেশটিতে মৃত্যু হয়েছে মোট ৪ হাজার ৬৩৬ জনের।