নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের সাবেক আহ্বায়ক হাসান আল মামুন ধর্ষণের মামলায় আত্মসমর্পণ করার পর জামিন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। ঢাকার ২ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান সিদ্দিকী মঙ্গলবার এই আদেশ দেন।
লালবাগ থানায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর দায়ের করা এ মামলায় শুধু মামুনকে আসামি করেই গত জুন মাসে অভিযোগপত্র দিয়েছিল পুলিশ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি নুরুল হক নূরসহ এজাহারের পাঁচ আসামিকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছিল সেখানে।
মামুন গতকাল মঙ্গলবার আদালতে উপস্থিত হয়ে জামিনের আবেদন করেন। তার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী জোবায়ের আহমেদ। এসময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মো. আলী আকবর তার বিরোধিতা করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে মামুনের জামিন আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয় আদালত। কারাগারে যাওয়ার আগে ছাত্র অধিকার পরিষদের সাবেক এই নেতা সাংবাদিকদের কাছে নিজেকে ‘নির্দোষ’ দাবি করেন।
তিনি বলেন, “আমাকে এই মামলায় পরিকল্পিতভাবে জড়ানো হয়েছে। এই বাদীর সাথে মূলত কোতোয়ালি থানার মামলার ১ নম্বর আসামি নাজমুল হাসান সোহাগের প্রেমের সম্পর্ক ছিল।
“আমি এদেশের মানুষের কাছে এবং আদালতের কাছে পূর্ণ তদন্তের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রার্থনা করছি। এই মামলার মাস্টার মাইন্ড কোতোয়ালি থানার মামলার ১ নম্বর আসামি সোহাগ এবং বাদী।”
ধর্ষণ ও তাতে সহযোগিতার অভিযোগে গতবছরের ২১ সেপ্টেম্বর লালবাগ থানায় ছাত্র অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন, নাজমুল হাসান সোহাগ ও নুরুল হক নূরসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের এক ছাত্রী। পরদিন ধর্ষণ ও সোশাল মিডিয়ায় ‘চরিত্র হননের’ অভিযোগে ওই ছয়জনকে আসামি করে কোতোয়ালি থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আরেকটি মামলা করেন তিনি। মামলার পর গত ২৩ সেপ্টেম্বর আহ্বায়কের দায়িত্ব থেকে মামুনকে সাময়িক অব্যাহতি দিয়ে ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ। পরবর্তীতে ১১ অক্টোবর তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের সারমর্ম সাংবাদিকদের কাছে প্রকাশ করে ছাত্র অধিকার পরিষদ দাবি করে, বিবাদীদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের ‘মিথ্যা ও ভিত্তিহীন’ অভিযোগ করা হয়েছে। মামলার এজাহারে ওই ছাত্রী অভিযোগ করেন, একই বিভাগে পড়া এবং ছাত্র অধিকার পরিষদের কাজে থাকার কারণে হাসান আল মামুনের সঙ্গে তার ‘প্রেমের সম্পর্ক’ গড়ে ওঠে। এর সুযোগ নিয়ে মামুন চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি তার লালবাগের বাসায় নিয়ে তাকে ‘ধর্ষণ’ করেন। পরে সোহাগও তাকে ‘ধর্ষণ করেন’ বলে অভিযোগ করা হয়েছে। পরবর্তীতে ঘটনার প্রতিকার চেয়ে তিনি নূরসহ তাদের অপর সহকর্মীদের কাছে গেলে প্রথমে সহযোগিতার আশ্বাস দিলেও পরে ‘বাড়াবাড়ি করলে চরিত্রহননের’ ভয় দেখান বলেও অভিযোগ করেন ওই ছাত্রী। ধর্ষণের মামলায় আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে গত ৯ অক্টোবর থেকে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ২৭ ঘণ্টা অনশনের পর অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গত ১৪ জুন নূরের বিরুদ্ধে অপরাধের প্রমাণ পায়নি জানিয়ে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক ফরিদা পারভীন। গত ৫ অক্টোবর পিবিআইয়ের তদন্ত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নূরসহ পাঁচজনকে অব্যাহতি দিয়ে মামুনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে সাইবার ট্রাইবুনাল।
ধর্ষণ মামলায় আত্মসমর্পণের পর কারাগারে ছাত্র অধিকারের মামুন
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ