ঢাকা ০৪:৫১ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দেয়ালে বিদ্ধ প্রেম

  • আপডেট সময় : ০৯:৫৩:৩৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ অক্টোবর ২০২১
  • ৫৭ বার পড়া হয়েছে

শামিমা ইয়াসমিন : সুন্দরী কন্যাটিরে সকলে মোহিনী নামেই ডাকে। মোহনীয় তার হাসি,মাধুর্যে পূর্ণ তার বাচনভঙ্গি, চিন্তা চেতনে উন্নত। বচনে,মননে,দর্শনে,ভবনার জগতে সে এক অনন্য মানবী। এই মানবীর চিন্তা জগতরে ছোঁবে এমন মানব সন্ধানে সে বিভোর। অবশ্য বিচলিত নয়! তার কাছে মানবীয় গুণে সমন্বিত মানুষই পূজনীয় আর সব মিছে।

অন্য অনেকের মতই ফেসবুকে তার অনেক সময় কাটে। সাধারণ দিনের মতই একদিন নোটিফিকেশনে এক অনুজের ইনভাইট এলো। হঠাৎই তার মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি খেলে গেলো! কেননা এটা ছিলো বিবাহ বিষয়ক গ্রুপে জয়েন ইনভাইট। ইনভাইট একসেপ্ট করলো সে। ল্যাপটপের মাউস স্ক্রল করে দেখতে লাগলো বিভিন্ন পাত্রের বায়োডাটা। এত এত রায়োডাটার মধ্যে চকিত চমকে সাধারণের চেয়ে একটি ব্যতিক্রমী বায়োডাটার একটিমাত্র লাইনে তার চোখ আটকে রইলো। লাইনটি সে বারবার পড়ে মনে মনে। স্বয়ং পাত্রটি লিখেছেন,”ধর্ম জানতে চেয়ে হুদাই বিব্রত করবেন না কেননা কেবল মানবধর্মের অনুসারী আমি; মানবধর্মের কোন সুশীল রোমান্টিক রমণী আগ্রহী হলে ইনবক্সে নক করবেন”। এবার সেই আশ্চর্য দুষ্টু বুদ্ধি প্রয়োগের পালা। মোহিনী তার স্ববিরোধী দুষ্টামিরে নিজের প্রমীত ব্যক্তিত্বের দ্বারা উপেক্ষা করতে পারলো না। এখন কি করা যায় আনমনে ভাবছে সে। নব ভাবনারে পাত্তা দিয়ে খুলে ফেললো একটি নতুন আইডি যার কোন তথ্যই সত্য নয়! তারপর? ছেলেটির ছিলো রিয়েল আইডি। তাই মোহিনী প্রশ্ন ছাড়াই জানতে পারলো বায়োডাটার পাত্রটির নাম কিশলয়। এবার নতুন আইডি দিয়ে গ্রুপটির সাথে সংযুক্ত হলো সে। ঠিক তখনই কিশলয়কে ইনবক্সে নক করলো। তাদের দুজনের আলাপ চলছে। চলছে উত্তর আর পাল্টা উত্তর প্রাপ্তির ক্ষণ গণনা। মেসেজ সেন্ড হতে দেরি যতটুকু রিপ্লাই হচ্ছে মুহূর্তে। এ যেন নব প্রেমরাগ। পাত্রটি মেয়েটির মোহে আবিষ্ট হয়ে প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে রীতিমত। কথোপকথনের মাঝে ললনার নামটি জানা হয়ে গেছে তার। এবার কিশলয় প্রেমময় বাক্যে বললে, তোমার কি ফুল পছন্দ মোহিনী? মোহিনী বিস্মিত স্বরে বললে, একেতো তুমি তার উপর আবার নাম ধরে ডাকা হচ্ছে! কিশলয়ের স্পষ্ট ব্যাখ্যা আমি তোমার বেশ সিনিয়র, তাছাড়া তোমাকে আমার ভীষণ পছন্দ হয়েছে। আর হ্যাঁ তুমিও তুমি করে বলবে, নো এক্সকিউজ। তুমি কি আমারে গ্রহণ করবে,মোহিনী? মোহিনী নিজেকে সামলে নিয়ে ফুলের প্রসঙ্গ মনে করিয়ে বললো,বেলী আমার প্রিয় ফুল। এবার কিশলয় চিন্তিত বাক্যে বলে, বাড়িতে ফুলবাগানে বিচিত্র ফুলের সমাহার থাকলেও বেলী ফুলের গাছতো নাই! বেলী ফুল আবার সহজপ্রাপ্য ফুলও নয়। চিন্তা করো না মোহিনী। তোমারে মোহিত করতে রাত পোহালেই বেলী ফুলের চারার সন্ধানে বের হবো। রোপণের পর করবো বাড়তি যতন। সময় অসময়ে বেলীর সুবাস ছড়াবে আমাদের চারপাশ ঘেরি। এরপর প্রিয় পোষাক,রঙ,শখ,জায়গা দিগ্বিদিক অর্থশূন্য অগুনিত অপ্রয়োজনীয় প্রশ্নোত্তর পর্ব চলে। মোহিনী যে কিশলয়ে বিমুগ্ধ নয় তা নয়। তবে বিমুগ্ধতা প্রকাশে কিশলয় এগিয়ে। রাতের সাথে তাদের পরিচিতিপর্বের পৃষ্ঠা সংখ্যাও ইনবক্সে বাড়তে থাকে। ছেলেটি আকুল পরানে জানতে চাইলো, মোহিনী তোমার কথামালার মতই কি তুমি সুন্দর? তোমাকে ভীষণ দেখতে মন চাইছে। মোহিনীর স্পষ্ট প্রকাশ, আগে তোমার ছবি দাও? কিশলয় বললো, আমি কৃষ্ণবর্ণের অসুন্দর মানব। তবে স্মার্ট পোষাক পড়তে ভীষণ পছন্দ করি। এই দুইয়ের মিশেল কি তব হৃদয়ে প্রেমাবেশ তৈরীতে সহায়ক হবে, হে অদেখা সুন্দরী? মোহিনী স্বভাবসিদ্ধ ভাষায় বলে মানুষের সৌন্দর্য বহন করে তার বাচনভঙ্গি, ইতিবাচক উন্নত মনন আর মানবিকতাবোধ। এর বাইরে আমি আর কিচ্ছু জানিনি তাই মানিও না। মোহিনীর চমৎকার বুদ্ধিদীপ্ত উত্তরে মুগ্ধ হয়ে কিশলয় একটা ছবি পাঠায় ম্যাসেনজারে। ছবিতে কিশলয়ের রূপ-বর্ণন অংশের পুরোপুরি মিল পেলো মোহিনী। এবার পালা তার ছবি বিনিময়ের। সদ্য তোলা একটি ছবি মোহিনীও পাঠিয়ে দিলো। মোহিনীর ছবি দেখে কিশলয় মুহূর্তে তারে স্থায়ীরূপে কাছে পাবার সিদ্ধান্তে স্থির হলো। অবশ্য মোহিনীর তাতে আপত্তি ছিলো না। তার অন্তরাত্মা দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভেবেচিন্তে হিসাব কষে বলছে, এমন স্ট্রং ব্যক্তিত্বের রোমান্টিক মননশীল কালচারাল মানুষের বাহ্যিক রূপের কিবা প্রয়োজন! সেও স্থির সিদ্ধান্তে আসতে মনকে প্রবোধ দিচ্ছে। কিন্তু এতটা মিল থাকা সত্ত্বেও অকস্মাৎ তাদের মাঝে এক অদৃশ্য দেয়াল দ-ায়মান হলো মুহূর্তে। হ্যাঁ, ঠিক তাই। এ দেয়াল অস্পৃশ্য অদৃশ্য।
মেয়েটি বললো, আমায় আপনজনেরা আদর করে মোহ নামে ডাকে। তুমিও ও নামে ডাকতে পারো নিঃসঙ্কোচে। আচ্ছা তোমার ডাকনাম কি হে বিমুগ্ধ মানব? ঘরে বাইরে সর্বত্র কিশলয়, হে প্রিয়ে! এতো মৌখিক নাম, লৈখিক নাম কিগো সখা? সত্যি শুনতে চাও? নিশ্চয়ই। তবে বলি, জন্মের পর নাম পেয়েছিলেম কিশলয় সরকার। তবে এখন আমি মানবতার সন্তান কেবল কিশলয়। মোহিনী অবাক বিস্ময়ে বলে, কিছু মনে করো না তুমি কি হিন্দু? কিশলয়ের জবাব স্পষ্ট, জন্মসূত্রে আমি হিন্দু কিন্তু শিক্ষাসূত্র আর অবয়বে কেবল মানবধর্মের প্রকৃতিপুত্র। আমি কথা দিচ্ছি তোমার অমর্যাদা আমি কেন আমার পরিবারের কেউ করবে না। তুমি পূর্ণ আস্থায় স্বাধীনতায় তোমার ধর্ম কর্মের রাজ্যে করবে বিচরন। আমি কেবল তোমার প্রেমে পূর্ণ একাধিপত্য চাই। প্রেম ছাড়া আর সবে তোমারি একাধিপত্য। মোহিনী চিন্তার সায়রে হাবুডুবু খায়। চিন্তার রাজ্যে ডুবে চোখ বন্ধ করে প্রথমেই সে বিবাহোত্তর সময়ে সমাজের আচরন দেখে। আবার চোখ বন্ধ করে পরিবার পরিজনের বিচিত্র বিশ্লেষণাত্মক কথামালা স্মরণ করে। সে ভাবে ধর্মের দেয়াল উতরাতে পারলেও সমাজ,পরিবার পরিজনের ভ্রূকুটি উপেক্ষা করবার অদম্য বাসনা সত্ত্বেও সাধ্য নাই। মোহিনী ভাবনায় দ্বিধা দ্বন্দ্বের জগত থেকে বের হতে পারছে না। এদিকে কিশলয় সরকার অনর্গল টেক্সট করেই যাচ্ছে, যদিও লজ্জাবতী গাছের মতো প্রত্যুত্তর গেছে হঠাৎ থমকে। সে কি করে উত্তর দেবে! কেননা তখনও মোহিনীর মনে দ্বিধান্বিত প্রশ্নের ঝড় বইছে,আচ্ছা! প্রেম বড় না ধর্ম?

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

দেয়ালে বিদ্ধ প্রেম

আপডেট সময় : ০৯:৫৩:৩৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ অক্টোবর ২০২১

শামিমা ইয়াসমিন : সুন্দরী কন্যাটিরে সকলে মোহিনী নামেই ডাকে। মোহনীয় তার হাসি,মাধুর্যে পূর্ণ তার বাচনভঙ্গি, চিন্তা চেতনে উন্নত। বচনে,মননে,দর্শনে,ভবনার জগতে সে এক অনন্য মানবী। এই মানবীর চিন্তা জগতরে ছোঁবে এমন মানব সন্ধানে সে বিভোর। অবশ্য বিচলিত নয়! তার কাছে মানবীয় গুণে সমন্বিত মানুষই পূজনীয় আর সব মিছে।

অন্য অনেকের মতই ফেসবুকে তার অনেক সময় কাটে। সাধারণ দিনের মতই একদিন নোটিফিকেশনে এক অনুজের ইনভাইট এলো। হঠাৎই তার মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি খেলে গেলো! কেননা এটা ছিলো বিবাহ বিষয়ক গ্রুপে জয়েন ইনভাইট। ইনভাইট একসেপ্ট করলো সে। ল্যাপটপের মাউস স্ক্রল করে দেখতে লাগলো বিভিন্ন পাত্রের বায়োডাটা। এত এত রায়োডাটার মধ্যে চকিত চমকে সাধারণের চেয়ে একটি ব্যতিক্রমী বায়োডাটার একটিমাত্র লাইনে তার চোখ আটকে রইলো। লাইনটি সে বারবার পড়ে মনে মনে। স্বয়ং পাত্রটি লিখেছেন,”ধর্ম জানতে চেয়ে হুদাই বিব্রত করবেন না কেননা কেবল মানবধর্মের অনুসারী আমি; মানবধর্মের কোন সুশীল রোমান্টিক রমণী আগ্রহী হলে ইনবক্সে নক করবেন”। এবার সেই আশ্চর্য দুষ্টু বুদ্ধি প্রয়োগের পালা। মোহিনী তার স্ববিরোধী দুষ্টামিরে নিজের প্রমীত ব্যক্তিত্বের দ্বারা উপেক্ষা করতে পারলো না। এখন কি করা যায় আনমনে ভাবছে সে। নব ভাবনারে পাত্তা দিয়ে খুলে ফেললো একটি নতুন আইডি যার কোন তথ্যই সত্য নয়! তারপর? ছেলেটির ছিলো রিয়েল আইডি। তাই মোহিনী প্রশ্ন ছাড়াই জানতে পারলো বায়োডাটার পাত্রটির নাম কিশলয়। এবার নতুন আইডি দিয়ে গ্রুপটির সাথে সংযুক্ত হলো সে। ঠিক তখনই কিশলয়কে ইনবক্সে নক করলো। তাদের দুজনের আলাপ চলছে। চলছে উত্তর আর পাল্টা উত্তর প্রাপ্তির ক্ষণ গণনা। মেসেজ সেন্ড হতে দেরি যতটুকু রিপ্লাই হচ্ছে মুহূর্তে। এ যেন নব প্রেমরাগ। পাত্রটি মেয়েটির মোহে আবিষ্ট হয়ে প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে রীতিমত। কথোপকথনের মাঝে ললনার নামটি জানা হয়ে গেছে তার। এবার কিশলয় প্রেমময় বাক্যে বললে, তোমার কি ফুল পছন্দ মোহিনী? মোহিনী বিস্মিত স্বরে বললে, একেতো তুমি তার উপর আবার নাম ধরে ডাকা হচ্ছে! কিশলয়ের স্পষ্ট ব্যাখ্যা আমি তোমার বেশ সিনিয়র, তাছাড়া তোমাকে আমার ভীষণ পছন্দ হয়েছে। আর হ্যাঁ তুমিও তুমি করে বলবে, নো এক্সকিউজ। তুমি কি আমারে গ্রহণ করবে,মোহিনী? মোহিনী নিজেকে সামলে নিয়ে ফুলের প্রসঙ্গ মনে করিয়ে বললো,বেলী আমার প্রিয় ফুল। এবার কিশলয় চিন্তিত বাক্যে বলে, বাড়িতে ফুলবাগানে বিচিত্র ফুলের সমাহার থাকলেও বেলী ফুলের গাছতো নাই! বেলী ফুল আবার সহজপ্রাপ্য ফুলও নয়। চিন্তা করো না মোহিনী। তোমারে মোহিত করতে রাত পোহালেই বেলী ফুলের চারার সন্ধানে বের হবো। রোপণের পর করবো বাড়তি যতন। সময় অসময়ে বেলীর সুবাস ছড়াবে আমাদের চারপাশ ঘেরি। এরপর প্রিয় পোষাক,রঙ,শখ,জায়গা দিগ্বিদিক অর্থশূন্য অগুনিত অপ্রয়োজনীয় প্রশ্নোত্তর পর্ব চলে। মোহিনী যে কিশলয়ে বিমুগ্ধ নয় তা নয়। তবে বিমুগ্ধতা প্রকাশে কিশলয় এগিয়ে। রাতের সাথে তাদের পরিচিতিপর্বের পৃষ্ঠা সংখ্যাও ইনবক্সে বাড়তে থাকে। ছেলেটি আকুল পরানে জানতে চাইলো, মোহিনী তোমার কথামালার মতই কি তুমি সুন্দর? তোমাকে ভীষণ দেখতে মন চাইছে। মোহিনীর স্পষ্ট প্রকাশ, আগে তোমার ছবি দাও? কিশলয় বললো, আমি কৃষ্ণবর্ণের অসুন্দর মানব। তবে স্মার্ট পোষাক পড়তে ভীষণ পছন্দ করি। এই দুইয়ের মিশেল কি তব হৃদয়ে প্রেমাবেশ তৈরীতে সহায়ক হবে, হে অদেখা সুন্দরী? মোহিনী স্বভাবসিদ্ধ ভাষায় বলে মানুষের সৌন্দর্য বহন করে তার বাচনভঙ্গি, ইতিবাচক উন্নত মনন আর মানবিকতাবোধ। এর বাইরে আমি আর কিচ্ছু জানিনি তাই মানিও না। মোহিনীর চমৎকার বুদ্ধিদীপ্ত উত্তরে মুগ্ধ হয়ে কিশলয় একটা ছবি পাঠায় ম্যাসেনজারে। ছবিতে কিশলয়ের রূপ-বর্ণন অংশের পুরোপুরি মিল পেলো মোহিনী। এবার পালা তার ছবি বিনিময়ের। সদ্য তোলা একটি ছবি মোহিনীও পাঠিয়ে দিলো। মোহিনীর ছবি দেখে কিশলয় মুহূর্তে তারে স্থায়ীরূপে কাছে পাবার সিদ্ধান্তে স্থির হলো। অবশ্য মোহিনীর তাতে আপত্তি ছিলো না। তার অন্তরাত্মা দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভেবেচিন্তে হিসাব কষে বলছে, এমন স্ট্রং ব্যক্তিত্বের রোমান্টিক মননশীল কালচারাল মানুষের বাহ্যিক রূপের কিবা প্রয়োজন! সেও স্থির সিদ্ধান্তে আসতে মনকে প্রবোধ দিচ্ছে। কিন্তু এতটা মিল থাকা সত্ত্বেও অকস্মাৎ তাদের মাঝে এক অদৃশ্য দেয়াল দ-ায়মান হলো মুহূর্তে। হ্যাঁ, ঠিক তাই। এ দেয়াল অস্পৃশ্য অদৃশ্য।
মেয়েটি বললো, আমায় আপনজনেরা আদর করে মোহ নামে ডাকে। তুমিও ও নামে ডাকতে পারো নিঃসঙ্কোচে। আচ্ছা তোমার ডাকনাম কি হে বিমুগ্ধ মানব? ঘরে বাইরে সর্বত্র কিশলয়, হে প্রিয়ে! এতো মৌখিক নাম, লৈখিক নাম কিগো সখা? সত্যি শুনতে চাও? নিশ্চয়ই। তবে বলি, জন্মের পর নাম পেয়েছিলেম কিশলয় সরকার। তবে এখন আমি মানবতার সন্তান কেবল কিশলয়। মোহিনী অবাক বিস্ময়ে বলে, কিছু মনে করো না তুমি কি হিন্দু? কিশলয়ের জবাব স্পষ্ট, জন্মসূত্রে আমি হিন্দু কিন্তু শিক্ষাসূত্র আর অবয়বে কেবল মানবধর্মের প্রকৃতিপুত্র। আমি কথা দিচ্ছি তোমার অমর্যাদা আমি কেন আমার পরিবারের কেউ করবে না। তুমি পূর্ণ আস্থায় স্বাধীনতায় তোমার ধর্ম কর্মের রাজ্যে করবে বিচরন। আমি কেবল তোমার প্রেমে পূর্ণ একাধিপত্য চাই। প্রেম ছাড়া আর সবে তোমারি একাধিপত্য। মোহিনী চিন্তার সায়রে হাবুডুবু খায়। চিন্তার রাজ্যে ডুবে চোখ বন্ধ করে প্রথমেই সে বিবাহোত্তর সময়ে সমাজের আচরন দেখে। আবার চোখ বন্ধ করে পরিবার পরিজনের বিচিত্র বিশ্লেষণাত্মক কথামালা স্মরণ করে। সে ভাবে ধর্মের দেয়াল উতরাতে পারলেও সমাজ,পরিবার পরিজনের ভ্রূকুটি উপেক্ষা করবার অদম্য বাসনা সত্ত্বেও সাধ্য নাই। মোহিনী ভাবনায় দ্বিধা দ্বন্দ্বের জগত থেকে বের হতে পারছে না। এদিকে কিশলয় সরকার অনর্গল টেক্সট করেই যাচ্ছে, যদিও লজ্জাবতী গাছের মতো প্রত্যুত্তর গেছে হঠাৎ থমকে। সে কি করে উত্তর দেবে! কেননা তখনও মোহিনীর মনে দ্বিধান্বিত প্রশ্নের ঝড় বইছে,আচ্ছা! প্রেম বড় না ধর্ম?