ঢাকা ০৮:১৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কাঠুরির গল্প

  • আপডেট সময় : ০৯:৪৭:৪৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ অক্টোবর ২০২১
  • ৪৭ বার পড়া হয়েছে

জুয়েল আশরাফ : একজন দরিদ্র কাঠুরি কঠোর পরিশ্রম করত রোজ। তার স্ত্রী আর তার সাত ছেলে। সে যতই পরিশ্রম করুক না কেন তারা অনেক দিন অনাহারে থাকে। এক রাতে তার ছেলেরা খেতে না পেরে ঘুমিয়ে পড়ল।
কাঠুরির স্ত্রী কাঠুরিকে বলল, আমরা আর কতোদিন ভুগব? না-খেয়ে, না-খেয়ে সবাই অসুস্থ। আমাদের ছেলেদের জঙ্গলে রেখে ফিরে আসো। অন্তত আমরা সুখে-শান্তিতে বেঁচে থাকতে পা
কাঠুরি বলল, তুমি যা বললে আমি তাই করব। কাল তাদের জন্য রান্না করো।
ছোট ছেলে জিল তাদের কথা শুনছিল। সকালের দিকে সবার আগে ঘুম থেকে উঠে পড়ল। সে নদীর তীরে গিয়ে সেখানে থাকা ছোট ছোট পাথর পকেটে তুলে নিল। তার জামার পকেটেও অনেকগুলো পাথর ভরে রাখল। তারপর বাড়ি ফিরে গেল। তার মা, বাবা এবং ভাইয়েরা তার জন্য অপেক্ষা করছিল।
কাঠুরি বলল, কোথায় ছিলে এতক্ষণ? চল বনে যাই। আজ আমরা সবাই কাঠ কাটতে যাচ্ছি। সেখানেই খাওয়া-দাওয়া করব।
সব ভাইয়েরা খুশিতে কাঠুরির সঙ্গে চলতে থাকল। জিল সবার শেষে। সে তার পকেটের পাথরের টুকরা বের করে পথে ছুঁড়তে লাগল।
কাঠুরি ছেলেদের নিয়ে অনেক দূর হেঁটে এসে জঙ্গলের মাঝখানে চলে এলো। সে মনে মনে ভাবল, যতই চেষ্টা করুক না কেন, তার ছেলেরা বাড়িতে পৌঁছাতে পারবে না। আমাকে তাদের ধোঁকা দিয়ে চলে যেতে হবে।
কাঠুরি বলল, তোমরা খেলতে থাকো। আমি একটু দূরে গিয়ে ভালো গাছের খোঁজে যাচ্ছি। জ্বালানির জন্য ভালো গাছ পেলেই কেটে ফেলব। সন্ধ্যার পর আমরা বাড়ি যাব।
তারা আনন্দে খেলতে শুরু করল।
পাশের গাছে একটি লাঠি ঝুলিয়ে দিল। যখনই বাতাস বয়ে যায় তখন এটি একটি গাছের সঙ্গে ধাক্কা খায়। মনে হচ্ছিল কাঠ কাটার মতো আওয়াজ। কাঠুরি তার ছেলেদের অজান্তেই বাড়িতে চলে এলো।
এদিকে তারা দীর্ঘসময় ধরে খেলছিল। অন্ধকার হতে শুরু করেছে।
বড় ভাই বলল, চল বাবাকে বাড়িতে নিয়ে যাই।
সবাই কাঠ কাটার আওয়াজ শুনে সেই জায়গায় চলে এলো। দ্বিতীয় ভাই চিৎকার করে বলে উঠল, ওহ! দেখো, বাবা আমাদের জঙ্গলে ফেলে রেখে চলে গেছে! এখন উপায় বের করো, কীভাবে এই জঙ্গল থেকে বাড়ি যাওয়া যায়? হিংস্র পশুরা আমাদের মেরে ফেলবে!
জিল বলল, চিন্তা করো না। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই চাঁদের আলো দেখা যাবে। তারপর আমরা পথ দেখতে পাব। আমরা সবাই বাড়িতে পৌঁছাতে পারব।
চাঁদের আলো ফকফকা জোছনা ছড়াল। জিল হাঁটতে হাঁটতে পথে রাখা পাথর চিহ্নিত করল। সবাই তাকে অনুসরণ করে হাঁটতে থাকে।
কাঠুরি বাড়িতে তার স্ত্রীর কাছে পৌঁছে গেছে। তার স্ত্রী কাঁদতে কাঁদতে বলল, আমাদের বাচ্চারা জঙ্গলে কষ্ট পাবে।
কাঠুরি বলল, তোমার মতো আমিও দুঃখ পাচ্ছি। কেন তারা আমাদের চোখের সামনে কষ্ট ভোগ করবে? সেজন্য আমি তাদের বনে রেখে চলে আসি। আমদের যা খাবার জোগাড় হয় দুজনে রান্না করে খেতে পারব।
মধ্যরাতে দুজনে খেতে বসলো। হঠাৎই দরজায় টোকা পড়ল। কাঠুরি বলল, এখন কে এলো?
কাঠুরির বউ দরজা খুলল। দরজার বাইরে তার ছেলেদের দেখে সহ্য করতে পারল না। কাঠুরির বউ নিজেদের খাবারগুলো ছেলেদের খেতে দিল। খাওয়া শেষ। হাঁটতে হাঁটতে ছেলেরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। তাই তারা ঘুমিয়ে পড়ল।
কাঠুরি এবং তার স্ত্রীর কাছে আর খাবার ছিল না। কাঠুরি জিজ্ঞেস করল, আমাদের ছেলেরা ফিরে এসেছে। এখন কী করা যাবে?
কাঠুরির বউ বলল, তারা চাঁদের আলোয় তাদের পথ খুঁজে পেয়েছে। অমাবস্যায় আবার তাদের নিয়ে যাবেন। এবার আরও গভীর জঙ্গলে গিয়ে রেখে আসবেন। তারা আর ফিরে আসতে পারবে না।
এলো অমাবস্যা। কাঠুরির বউ সকালে তার ছেলেদের জাগিয়ে তুলে বলল, বাবার সঙ্গে যাও। বন থেকে কাঠ কেটে বাড়িতে চলে আসবে। আমি তোমাদের জন্য দুপুরের খাবার রান্না করে রাখব।
জিল বুঝতে পারল কী ঘটতে যাচ্ছে। এখন তো আর পাথর তোলার সময়ও নেই। কী করবে সে? অবাক হয়ে ভাবতে থাকে। ওদিকে কাঠুরির বউ বনে গিয়ে কাঠ কাটার জন্য তড়িঘড়ি করছিল।
চলে যাও!
জিল তাদের সঙ্গে শেষ পর্যন্ত যেতে বাধ্য হলো। তার হাতে থাকা ব্যাগের ভেতর রুটি বের করে ছোট ছোট টুকরা করতে লাগল। সেই টুকরা সে পথের সবখানে রেখে দিল। কিন্তু পাখি এবং পিঁপড়া তার ফেলে দেওয়া রুটির টুকরাগুলো খেয়ে ফেলল। বনে নিয়ে কাঠুরি তাদের যথারীতি খেলতে বলল। তারপর আগের মতোই কাঠ কাটার ফন্দি করে বাড়িতে চলে এলো। অন্ধকার হতে শুরু করেছে। বাবাকে কোথাও খুঁজে না পেয়ে সবাই হতবাক।
জিল তার ভাইদের বলল, আমি তোমাদের পথ দেখিয়ে বাড়ি নিয়ে যাব। তোমরা চিন্তা করো না
কিন্তু জিল বাড়িতে ফেরার পথ না পেয়ে এখানে-সেখানে ঘুরে বেড়াতে লাগল। এক সময় বুদ্ধি আসা মাত্রই একটি বড় গাছের চূড়ায় উঠে গেল। দূর থেকে সে দেখতে পেলো প্রদীপের আলো। গাছ থেকে নিচে নেমে বলল, ভাইয়েরা! আলোটা একটু দূরে মনে হচ্ছে। সেখানে অবশ্যই একটি বাড়ি আছে। আমরা সেখানে যাব এবং আজ রাতে থাকব।
সবাই যেখান থেকে আলো এসেছে সেদিকে হেঁটে গেল। তারা তাদের চোখের কাছে বড় বাড়ি দেখে চিনে ফেলল। এটি একটি রাক্ষসের বাড়ি। রাক্ষস ও তার সাত ছেলে বেরিয়ে গেছে। সেই সময় রাক্ষসের মা ছিল বাড়িতে একা।
জিল দরজায় নক করল। রাক্ষসী বুড়ি দরজা খুলে দিল। সে সাতটি ছেলেকে দেখে লোভে জিহ্বায় চুক চুক করতে লাগল।
জিল বলল, দাদি! আমরা এই জঙ্গলে পথ হারিয়ে ফেলেছি। আমাদের শুধু আজ রাতে এখানে থাকতে দাও।
বুড়ি মিষ্টি করে বলল, তোমরা এখানে খুশিতে থাকতে পারো। কিছুক্ষণের মধ্যে আমার ছেলে এবং সাত নাতি এখানে আসবে। তারা তোমাদের দেখে খুশি হবে। তোমরা ক্লান্ত। সেই ঘরটি, যেখানে আমার নাতিরা ঘুমায়। সেখানে গিয়ে শান্তিতে ঘুমাও।
বুড়ি মিষ্টি করে বলল। তারাও সেই ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ল।
কিছুক্ষণের মধ্যে রাক্ষস ও সাত ছেলে সেখানে উপস্থিত হল। বুড়ি সাত নাতির মাথায় মুকুট পরিয়ে দিল। বুড়ি বলল, তোমরা গিয়ে শুয়ে পড়ো।
তারাও গিয়ে শুয়ে পড়ল।
বুড়ি তার ছেলের দিকে তাকিয়ে বলল, আজ আমাদের একটি ভালো শিকার হয়েছে। সাতটি ছেলে পথ হারিয়ে ফেলে এখানে এসেছে। আমি তাদের ধোকা দিয়েছি। আমার নাতিদের শোবার ঘরে ঘুমিয়ে রেখেছি।
রাক্ষস লোভি গলায় বলল, আমি একটি বড় কড়াইয়ে তেল গরম করে রাখব। তেল ফুটে উঠলে তুমি সাতটি ছেলেকে তুলে নিয়ে তাতে রাখবে। যখন তারা ভালোভাবে ভাজা হবে আমরা পেট ভরে খাব। আমার ছেলেদেরকে ভোরবেলা বাকিটা খেতে দিও।
কিছুক্ষণ পর রাক্ষস অধৈর্য হয়ে পড়ে বলল, মা! আমি ক্ষুধার্ত হয়ে যাচ্ছি। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তেল চুলায় রাখো। আমার ছেলেরাও তো সেই ঘরে ঘুমাচ্ছে। অন্ধকারে ভুল করে আমার ছেলেদের তেলে ভাজব কিনা আবার! আমার ছেলেদের অন্ধকারে উঠিয়ে আলাদা ঘরে এনে রাখলে কেমন হয়? যদি মানুষের বাচ্চাগুলো টের পায় তারা কি জেগে উঠলে পালাবে?
বুড়ি বলল, আমি কেবল আমার নাতিদের মাথায় মুকুট পরিয়েছি যাতে আমরা তাদের সহজেই চিনে নিতে পারি।
জিল হঠাৎ জেগে উঠল। সে জানতো বুড়ির সাত নাতি মাথায় মুকুট নিয়ে তাদের সঙ্গে শুয়ে আছে। কেন এই রাক্ষসের বাচ্চাগুলো মুকুট নিয়ে ঘুমাবে? জিল চিন্তা করতে লাগল। সে তাদের মাথা থেকে মুকুটগুলো নিয়ে তার ভাইদের মাথায় পরিয়ে দিল। তারপর সে নিজের মাথায়ও একটি মুকুট পরল। অপেক্ষা করতে লাগল ঘটনা কী ঘটতে যাচ্ছে।
কিছুক্ষণ পর রাক্ষস ভেতরে প্রবেশ করল। সে একের পর এক রাক্ষসের ছেলেগুলো তুলে নিল। ফুটন্ত তেলে রাক্ষসের বাচ্চাগুলোকে রাখল।
জিল কী হচ্ছে তা দেখে হতবাক হয়ে গেল। সে আস্তে আস্তে তার ভাইদেরকে সাবধানতার গলায় বলল, আমরা রাক্ষসের ঘরে আটকা পড়েছি। অবিলম্বে পালাতে হবে। অন্যথায় তারা আমাদের হত্যা করবে।
একথা শুনে সবাই ভয় পেয়ে গেল। তারা সেখান থেকে পালিয়ে গেল। রাক্ষস এবং রাক্ষসী বুড়ি রান্না করা তরকারির স্বাদ নিচ্ছিল। তারপর দুজন নাক ডাকতে শুরু করে ঘুমিয়ে পড়ল।
তখন ভোর। রাক্ষসী ছেলেকে জাগিয়ে তুলল। বলল, আমার নাতিদের ডাকো। ওদের আনন্দে খেতে দাও।
রাক্ষস ঘরে ঢুকে বলল, মা! এখানে কেউ নেই।
বুড়ি যখন সেখানে গেল তখন সে সত্য বুঝতে পারল। পরিতাপের সুরে বলতে লাগল, হায় রে! সেই ছেলেরা আমাদের ঠকিয়েছে। আমরা আমাদের বাচ্চাদের হত্যা করেছি এবং নিজেরাই খেয়েছি।
একথা বলে রাক্ষসী বুড়ি কাঁদতে লাগল। আরও বলতে লাগল, আমি কি আমার নাতিদের ফুটন্ত তেলে রেখেছি? আমি কি সেগুলো খেয়েছি? কি নিষ্ঠুরতা? আমি এখন কী করব?
বুড়ি দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে কেঁদে উঠল। দুজনেই অনেকক্ষণ কাঁদল। রাক্ষস রাগে দাঁত কষতে কষতে বলল, এই ছেলেরাই আমার সন্তানদের হত্যা করেছে। তারা আমার কাছ থেকে পালাতে পারবে না। আমি তাদের সর্বত্র খুঁজব। আমি মেরে খাবো এবং প্রতিশোধ নেব।
রাক্ষস চিৎকার করে আরও বলল, আমার ম্যাজিক স্যান্ডেল এনে দাও।
বুড়ি স্যান্ডেল এনে দিল। রাক্ষস স্যান্ডেল পায়ে পরল এবং চলে গেল।
বনের ভেতর চলতে চলতে জিল বলল, রাক্ষস আমাদের খুঁজতে আসবে। আমাদের ধরলে সে আমাদের মেরে ফেলবে। চলো দ্রুত হেঁটে যাই।
সবাই অনেক দ্রুত হেঁটে এগিয়ে চলতে লাগল। বড় ভাইটি ক্লান্ত গলায় বলল, আমরা হাঁটতে হাঁটতে শরীরের শক্তি হারিয়ে ফেলেছি। পা দুটি অবশ হয়ে যাচ্ছে।
জিল বলল, আমি একটি গোপন গুহা চিনি। সেখানে নিরাপদে গুহায় প্রবেশ করব আমরা। রাক্ষস আর আমাদের তাড়াতে পারবে না। কেউ এই গুহা খুঁজে পাবে না।
সবাই গুহায় ঢুকে পড়ল। একটু পরই তারা রাক্ষসের পদধ্বনি শুনতে পেল। ভয়ে সবাই কেঁপে উঠল। রাক্ষসটি গুহার চারিদিকে তাকাল। কিন্তু সে দেখতে পাচ্ছিল না যে তারা লুকিয়ে আছে।
‘আরে! ম্যাজিক স্যান্ডেল! এখানেই আমাকে নিয়ে এসেছো! আমি কি তাদের এখানে দেখতে পাই? তুমি কি আমার সঙ্গে মজা করছো?’ একথা বলার পর রাক্ষস সেখানে শুয়ে পড়ল। ক্লান্ত হয়ে সে নাক ডাকল এবং ঘুমাতে লাগল।
জিল সব দেখে বলল, রাক্ষস ঘুমিয়ে আছে। এত তাড়াতাড়ি জাগবে না। তোমরা আওয়াজ না করে এখানে থাকো। ম্যাজিক স্যান্ডেল পরে আমি রাক্ষসের বাড়িতে যাচ্ছি। আমি সেখান থেকে অনেক জিনিস নিয়ে আসব। তারপর আমরা সবাই বাড়ি যাব।
সবাই বলল, আমাদের বাঁচানো তোমার দায়িত্ব ভাই। তুমি যা ঠিক মনে করো তাই করো।
গুহার ভেতর থেকে জিল বেরিয়ে এলো। সে রাক্ষসের পায়ে থাকা স্যান্ডেলজোড়া খুলে ফেলল। তারপর সে নিজের পায়ে পরল। স্যান্ডেলকে উদ্দেশ্য করে বলল, আরে! জাদুর স্যান্ডেল! আমাকে অবশ্যই রাক্ষসের বাড়িতে নিয়ে চলো।
মুহূর্তেই জাদুর স্যান্ডেল জিলকে রাক্ষসের বাড়ির সামনে নিয়ে এলো। জিল চিৎকার করে ডেকে বলল, দাদি! দরজা খোলো। তোমার ছেলে বিপদে পড়েছে।
বৃদ্ধা রাক্ষসী দরজা খুলে অবাক গলায় জিজ্ঞেস করল, আমার ছেলের কী হয়েছে?
জিল বলল, তোমার ছেলে মারাত্মক বনদস্যুর ফাঁদে পড়েছে। তারা তাকে ধরে নির্যাতন করে যাচ্ছে। তোমার ছেলেকে বাঁচানো যাবে যদি তুমি দস্যুদের অনেক স্বর্ণালঙ্কার দাও। নাহলে তারা তাকে হত্যা করবে। তুমি যেন আমার কথা বিশ্বাস করো এজন্য আমার সঙ্গে জাদুর স্যান্ডেল পাঠিয়ে দিয়েছে।
তখন স্যান্ডেলজোড়া বুড়ির নজরে এলো। সে উত্তেজিত হয়ে বলল, ওহ! আমার ছেলের স্যান্ডেল! না জানি তুমি কোন বিপদে আছো? ধনসম্পদ কি তোমার চেয়ে বড়?
বুড়ি চিৎকার করে উঠল। তারপর একটি বড় বস্তা সোনার মুদ্রায় ভরে জিলকে দিলো।
জিল বস্তা নিয়ে বলল, আর চিন্তা করো না। তোমার ছেলে অবশ্যই ফিরে আসবে।
জাদুর স্যান্ডেলের সাহায্যে জিল সেই জায়গায় পৌঁছে গেল যেখানে ভাইয়েরা ছিল। দৈত্যটি তখনও নাক ডেকে ঘুমাচ্ছিল। জিল ভাইদের বলল, জাদুর স্যান্ডেল এখন আমাদের। আমি রাক্ষসী বুড়ির বাড়ি থেকে অনেক স্বর্ণ নিয়ে এসেছি। সবাই আমাকে শক্ত করে ধরো।
ভাইয়েরা সবাই জিলকে ভালোভাবে ধরে রাখল। জিল স্যান্ডেলকে বলল, জাদুর স্যান্ডেল! আমাদের বাড়িতে পৌঁছে দাও।
কিছুক্ষণ পর সবাই বাড়ির দরজায় পৌছে গেল। তাদের বাবা এবং মা বলল, ছেলেরা! তোমরা জঙ্গলে থেকে কীভাবে চলে এসেছ? দারিদ্র্যের কারণে আমরা এই নৃশংসতা করেছি।
বাবা মা দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ শুনে খুলে দিয়েছিল। সাত ছেলেকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তারা তাদের জড়িয়ে ধরল। জিল বলল, মা! আমাদের আর দারিদ্র্য নেই। আমরা বহু বছরের জন্য প্রয়োজনীয় স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে এসেছি।
বস্তাটি খোলা হলো। এর ভেতরে প্রচুর স্বর্ণ জ্বলজ্বল করে উঠল। প্রত্যেকেই এই অপ্রত্যাশিত মঙ্গল উপভোগ করছে।
রাক্ষস তার ঘুম থেকে জেগে উঠল। সে পায়ে জাদুর স্যান্ডেল নেই দেখে হতবাক হয়ে গেল। সে একরকম কষ্ট সহ্য করে তার বাড়িতে পৌঁছে গেল। বুড়ি তখন দরজায় অপেক্ষা করছিল। বলল, ছেলে! তারা কি তোমাকে ছেড়ে দিয়েছে? আমি যে স্বর্ণগুলো সারাজীবন একসাথে জমিয়ে রেখেছিলাম তা পাঠিয়ে দিয়েছি তোমাকে মুক্ত করার জন্য।
রাক্ষস চমকে জিজ্ঞেস করল, তুমি কী বলছো মা? আমরা যে স্বর্ণ একসাথে রেখেছিলাম তা তুমি কাকে দিয়েছ?
বুড়ি রাক্ষসকে যা ঘটেছিল সব বলল।
রাক্ষস কেঁদে উঠে বলল, মা! সেই ছেলেরা আমাদের এত ভালোভাবে প্রতারিত করেছে। আমরা নিজেরাই আমার সন্তানদের হত্যা করেছি। আমি আমার জাদুর স্যান্ডেল হারিয়ে ফেলেছি। যেসব স্বর্ণ একসাথে রাখা হয়েছিল তাও চলে গেল। এখন কী হবে আমাদের?
বুড়ি রাক্ষসকে সান্ত¡না দিয়ে বলল, মাত্র একদিন তারা এখানে ছিল। আমাদের অনেক ক্ষতি তারা করেছে। আমাদের জন্য তাদের পথে আর না যাওয়াই ভালো।
রাক্ষস বলল, তুমি যেমন বলো আমি তাই করব মা।
এরপরে, কাঠুরি তার পরিবারের সাথে সুখে বসবাস করতে লাগল।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

কাঠুরির গল্প

আপডেট সময় : ০৯:৪৭:৪৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ অক্টোবর ২০২১

জুয়েল আশরাফ : একজন দরিদ্র কাঠুরি কঠোর পরিশ্রম করত রোজ। তার স্ত্রী আর তার সাত ছেলে। সে যতই পরিশ্রম করুক না কেন তারা অনেক দিন অনাহারে থাকে। এক রাতে তার ছেলেরা খেতে না পেরে ঘুমিয়ে পড়ল।
কাঠুরির স্ত্রী কাঠুরিকে বলল, আমরা আর কতোদিন ভুগব? না-খেয়ে, না-খেয়ে সবাই অসুস্থ। আমাদের ছেলেদের জঙ্গলে রেখে ফিরে আসো। অন্তত আমরা সুখে-শান্তিতে বেঁচে থাকতে পা
কাঠুরি বলল, তুমি যা বললে আমি তাই করব। কাল তাদের জন্য রান্না করো।
ছোট ছেলে জিল তাদের কথা শুনছিল। সকালের দিকে সবার আগে ঘুম থেকে উঠে পড়ল। সে নদীর তীরে গিয়ে সেখানে থাকা ছোট ছোট পাথর পকেটে তুলে নিল। তার জামার পকেটেও অনেকগুলো পাথর ভরে রাখল। তারপর বাড়ি ফিরে গেল। তার মা, বাবা এবং ভাইয়েরা তার জন্য অপেক্ষা করছিল।
কাঠুরি বলল, কোথায় ছিলে এতক্ষণ? চল বনে যাই। আজ আমরা সবাই কাঠ কাটতে যাচ্ছি। সেখানেই খাওয়া-দাওয়া করব।
সব ভাইয়েরা খুশিতে কাঠুরির সঙ্গে চলতে থাকল। জিল সবার শেষে। সে তার পকেটের পাথরের টুকরা বের করে পথে ছুঁড়তে লাগল।
কাঠুরি ছেলেদের নিয়ে অনেক দূর হেঁটে এসে জঙ্গলের মাঝখানে চলে এলো। সে মনে মনে ভাবল, যতই চেষ্টা করুক না কেন, তার ছেলেরা বাড়িতে পৌঁছাতে পারবে না। আমাকে তাদের ধোঁকা দিয়ে চলে যেতে হবে।
কাঠুরি বলল, তোমরা খেলতে থাকো। আমি একটু দূরে গিয়ে ভালো গাছের খোঁজে যাচ্ছি। জ্বালানির জন্য ভালো গাছ পেলেই কেটে ফেলব। সন্ধ্যার পর আমরা বাড়ি যাব।
তারা আনন্দে খেলতে শুরু করল।
পাশের গাছে একটি লাঠি ঝুলিয়ে দিল। যখনই বাতাস বয়ে যায় তখন এটি একটি গাছের সঙ্গে ধাক্কা খায়। মনে হচ্ছিল কাঠ কাটার মতো আওয়াজ। কাঠুরি তার ছেলেদের অজান্তেই বাড়িতে চলে এলো।
এদিকে তারা দীর্ঘসময় ধরে খেলছিল। অন্ধকার হতে শুরু করেছে।
বড় ভাই বলল, চল বাবাকে বাড়িতে নিয়ে যাই।
সবাই কাঠ কাটার আওয়াজ শুনে সেই জায়গায় চলে এলো। দ্বিতীয় ভাই চিৎকার করে বলে উঠল, ওহ! দেখো, বাবা আমাদের জঙ্গলে ফেলে রেখে চলে গেছে! এখন উপায় বের করো, কীভাবে এই জঙ্গল থেকে বাড়ি যাওয়া যায়? হিংস্র পশুরা আমাদের মেরে ফেলবে!
জিল বলল, চিন্তা করো না। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই চাঁদের আলো দেখা যাবে। তারপর আমরা পথ দেখতে পাব। আমরা সবাই বাড়িতে পৌঁছাতে পারব।
চাঁদের আলো ফকফকা জোছনা ছড়াল। জিল হাঁটতে হাঁটতে পথে রাখা পাথর চিহ্নিত করল। সবাই তাকে অনুসরণ করে হাঁটতে থাকে।
কাঠুরি বাড়িতে তার স্ত্রীর কাছে পৌঁছে গেছে। তার স্ত্রী কাঁদতে কাঁদতে বলল, আমাদের বাচ্চারা জঙ্গলে কষ্ট পাবে।
কাঠুরি বলল, তোমার মতো আমিও দুঃখ পাচ্ছি। কেন তারা আমাদের চোখের সামনে কষ্ট ভোগ করবে? সেজন্য আমি তাদের বনে রেখে চলে আসি। আমদের যা খাবার জোগাড় হয় দুজনে রান্না করে খেতে পারব।
মধ্যরাতে দুজনে খেতে বসলো। হঠাৎই দরজায় টোকা পড়ল। কাঠুরি বলল, এখন কে এলো?
কাঠুরির বউ দরজা খুলল। দরজার বাইরে তার ছেলেদের দেখে সহ্য করতে পারল না। কাঠুরির বউ নিজেদের খাবারগুলো ছেলেদের খেতে দিল। খাওয়া শেষ। হাঁটতে হাঁটতে ছেলেরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। তাই তারা ঘুমিয়ে পড়ল।
কাঠুরি এবং তার স্ত্রীর কাছে আর খাবার ছিল না। কাঠুরি জিজ্ঞেস করল, আমাদের ছেলেরা ফিরে এসেছে। এখন কী করা যাবে?
কাঠুরির বউ বলল, তারা চাঁদের আলোয় তাদের পথ খুঁজে পেয়েছে। অমাবস্যায় আবার তাদের নিয়ে যাবেন। এবার আরও গভীর জঙ্গলে গিয়ে রেখে আসবেন। তারা আর ফিরে আসতে পারবে না।
এলো অমাবস্যা। কাঠুরির বউ সকালে তার ছেলেদের জাগিয়ে তুলে বলল, বাবার সঙ্গে যাও। বন থেকে কাঠ কেটে বাড়িতে চলে আসবে। আমি তোমাদের জন্য দুপুরের খাবার রান্না করে রাখব।
জিল বুঝতে পারল কী ঘটতে যাচ্ছে। এখন তো আর পাথর তোলার সময়ও নেই। কী করবে সে? অবাক হয়ে ভাবতে থাকে। ওদিকে কাঠুরির বউ বনে গিয়ে কাঠ কাটার জন্য তড়িঘড়ি করছিল।
চলে যাও!
জিল তাদের সঙ্গে শেষ পর্যন্ত যেতে বাধ্য হলো। তার হাতে থাকা ব্যাগের ভেতর রুটি বের করে ছোট ছোট টুকরা করতে লাগল। সেই টুকরা সে পথের সবখানে রেখে দিল। কিন্তু পাখি এবং পিঁপড়া তার ফেলে দেওয়া রুটির টুকরাগুলো খেয়ে ফেলল। বনে নিয়ে কাঠুরি তাদের যথারীতি খেলতে বলল। তারপর আগের মতোই কাঠ কাটার ফন্দি করে বাড়িতে চলে এলো। অন্ধকার হতে শুরু করেছে। বাবাকে কোথাও খুঁজে না পেয়ে সবাই হতবাক।
জিল তার ভাইদের বলল, আমি তোমাদের পথ দেখিয়ে বাড়ি নিয়ে যাব। তোমরা চিন্তা করো না
কিন্তু জিল বাড়িতে ফেরার পথ না পেয়ে এখানে-সেখানে ঘুরে বেড়াতে লাগল। এক সময় বুদ্ধি আসা মাত্রই একটি বড় গাছের চূড়ায় উঠে গেল। দূর থেকে সে দেখতে পেলো প্রদীপের আলো। গাছ থেকে নিচে নেমে বলল, ভাইয়েরা! আলোটা একটু দূরে মনে হচ্ছে। সেখানে অবশ্যই একটি বাড়ি আছে। আমরা সেখানে যাব এবং আজ রাতে থাকব।
সবাই যেখান থেকে আলো এসেছে সেদিকে হেঁটে গেল। তারা তাদের চোখের কাছে বড় বাড়ি দেখে চিনে ফেলল। এটি একটি রাক্ষসের বাড়ি। রাক্ষস ও তার সাত ছেলে বেরিয়ে গেছে। সেই সময় রাক্ষসের মা ছিল বাড়িতে একা।
জিল দরজায় নক করল। রাক্ষসী বুড়ি দরজা খুলে দিল। সে সাতটি ছেলেকে দেখে লোভে জিহ্বায় চুক চুক করতে লাগল।
জিল বলল, দাদি! আমরা এই জঙ্গলে পথ হারিয়ে ফেলেছি। আমাদের শুধু আজ রাতে এখানে থাকতে দাও।
বুড়ি মিষ্টি করে বলল, তোমরা এখানে খুশিতে থাকতে পারো। কিছুক্ষণের মধ্যে আমার ছেলে এবং সাত নাতি এখানে আসবে। তারা তোমাদের দেখে খুশি হবে। তোমরা ক্লান্ত। সেই ঘরটি, যেখানে আমার নাতিরা ঘুমায়। সেখানে গিয়ে শান্তিতে ঘুমাও।
বুড়ি মিষ্টি করে বলল। তারাও সেই ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ল।
কিছুক্ষণের মধ্যে রাক্ষস ও সাত ছেলে সেখানে উপস্থিত হল। বুড়ি সাত নাতির মাথায় মুকুট পরিয়ে দিল। বুড়ি বলল, তোমরা গিয়ে শুয়ে পড়ো।
তারাও গিয়ে শুয়ে পড়ল।
বুড়ি তার ছেলের দিকে তাকিয়ে বলল, আজ আমাদের একটি ভালো শিকার হয়েছে। সাতটি ছেলে পথ হারিয়ে ফেলে এখানে এসেছে। আমি তাদের ধোকা দিয়েছি। আমার নাতিদের শোবার ঘরে ঘুমিয়ে রেখেছি।
রাক্ষস লোভি গলায় বলল, আমি একটি বড় কড়াইয়ে তেল গরম করে রাখব। তেল ফুটে উঠলে তুমি সাতটি ছেলেকে তুলে নিয়ে তাতে রাখবে। যখন তারা ভালোভাবে ভাজা হবে আমরা পেট ভরে খাব। আমার ছেলেদেরকে ভোরবেলা বাকিটা খেতে দিও।
কিছুক্ষণ পর রাক্ষস অধৈর্য হয়ে পড়ে বলল, মা! আমি ক্ষুধার্ত হয়ে যাচ্ছি। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তেল চুলায় রাখো। আমার ছেলেরাও তো সেই ঘরে ঘুমাচ্ছে। অন্ধকারে ভুল করে আমার ছেলেদের তেলে ভাজব কিনা আবার! আমার ছেলেদের অন্ধকারে উঠিয়ে আলাদা ঘরে এনে রাখলে কেমন হয়? যদি মানুষের বাচ্চাগুলো টের পায় তারা কি জেগে উঠলে পালাবে?
বুড়ি বলল, আমি কেবল আমার নাতিদের মাথায় মুকুট পরিয়েছি যাতে আমরা তাদের সহজেই চিনে নিতে পারি।
জিল হঠাৎ জেগে উঠল। সে জানতো বুড়ির সাত নাতি মাথায় মুকুট নিয়ে তাদের সঙ্গে শুয়ে আছে। কেন এই রাক্ষসের বাচ্চাগুলো মুকুট নিয়ে ঘুমাবে? জিল চিন্তা করতে লাগল। সে তাদের মাথা থেকে মুকুটগুলো নিয়ে তার ভাইদের মাথায় পরিয়ে দিল। তারপর সে নিজের মাথায়ও একটি মুকুট পরল। অপেক্ষা করতে লাগল ঘটনা কী ঘটতে যাচ্ছে।
কিছুক্ষণ পর রাক্ষস ভেতরে প্রবেশ করল। সে একের পর এক রাক্ষসের ছেলেগুলো তুলে নিল। ফুটন্ত তেলে রাক্ষসের বাচ্চাগুলোকে রাখল।
জিল কী হচ্ছে তা দেখে হতবাক হয়ে গেল। সে আস্তে আস্তে তার ভাইদেরকে সাবধানতার গলায় বলল, আমরা রাক্ষসের ঘরে আটকা পড়েছি। অবিলম্বে পালাতে হবে। অন্যথায় তারা আমাদের হত্যা করবে।
একথা শুনে সবাই ভয় পেয়ে গেল। তারা সেখান থেকে পালিয়ে গেল। রাক্ষস এবং রাক্ষসী বুড়ি রান্না করা তরকারির স্বাদ নিচ্ছিল। তারপর দুজন নাক ডাকতে শুরু করে ঘুমিয়ে পড়ল।
তখন ভোর। রাক্ষসী ছেলেকে জাগিয়ে তুলল। বলল, আমার নাতিদের ডাকো। ওদের আনন্দে খেতে দাও।
রাক্ষস ঘরে ঢুকে বলল, মা! এখানে কেউ নেই।
বুড়ি যখন সেখানে গেল তখন সে সত্য বুঝতে পারল। পরিতাপের সুরে বলতে লাগল, হায় রে! সেই ছেলেরা আমাদের ঠকিয়েছে। আমরা আমাদের বাচ্চাদের হত্যা করেছি এবং নিজেরাই খেয়েছি।
একথা বলে রাক্ষসী বুড়ি কাঁদতে লাগল। আরও বলতে লাগল, আমি কি আমার নাতিদের ফুটন্ত তেলে রেখেছি? আমি কি সেগুলো খেয়েছি? কি নিষ্ঠুরতা? আমি এখন কী করব?
বুড়ি দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে কেঁদে উঠল। দুজনেই অনেকক্ষণ কাঁদল। রাক্ষস রাগে দাঁত কষতে কষতে বলল, এই ছেলেরাই আমার সন্তানদের হত্যা করেছে। তারা আমার কাছ থেকে পালাতে পারবে না। আমি তাদের সর্বত্র খুঁজব। আমি মেরে খাবো এবং প্রতিশোধ নেব।
রাক্ষস চিৎকার করে আরও বলল, আমার ম্যাজিক স্যান্ডেল এনে দাও।
বুড়ি স্যান্ডেল এনে দিল। রাক্ষস স্যান্ডেল পায়ে পরল এবং চলে গেল।
বনের ভেতর চলতে চলতে জিল বলল, রাক্ষস আমাদের খুঁজতে আসবে। আমাদের ধরলে সে আমাদের মেরে ফেলবে। চলো দ্রুত হেঁটে যাই।
সবাই অনেক দ্রুত হেঁটে এগিয়ে চলতে লাগল। বড় ভাইটি ক্লান্ত গলায় বলল, আমরা হাঁটতে হাঁটতে শরীরের শক্তি হারিয়ে ফেলেছি। পা দুটি অবশ হয়ে যাচ্ছে।
জিল বলল, আমি একটি গোপন গুহা চিনি। সেখানে নিরাপদে গুহায় প্রবেশ করব আমরা। রাক্ষস আর আমাদের তাড়াতে পারবে না। কেউ এই গুহা খুঁজে পাবে না।
সবাই গুহায় ঢুকে পড়ল। একটু পরই তারা রাক্ষসের পদধ্বনি শুনতে পেল। ভয়ে সবাই কেঁপে উঠল। রাক্ষসটি গুহার চারিদিকে তাকাল। কিন্তু সে দেখতে পাচ্ছিল না যে তারা লুকিয়ে আছে।
‘আরে! ম্যাজিক স্যান্ডেল! এখানেই আমাকে নিয়ে এসেছো! আমি কি তাদের এখানে দেখতে পাই? তুমি কি আমার সঙ্গে মজা করছো?’ একথা বলার পর রাক্ষস সেখানে শুয়ে পড়ল। ক্লান্ত হয়ে সে নাক ডাকল এবং ঘুমাতে লাগল।
জিল সব দেখে বলল, রাক্ষস ঘুমিয়ে আছে। এত তাড়াতাড়ি জাগবে না। তোমরা আওয়াজ না করে এখানে থাকো। ম্যাজিক স্যান্ডেল পরে আমি রাক্ষসের বাড়িতে যাচ্ছি। আমি সেখান থেকে অনেক জিনিস নিয়ে আসব। তারপর আমরা সবাই বাড়ি যাব।
সবাই বলল, আমাদের বাঁচানো তোমার দায়িত্ব ভাই। তুমি যা ঠিক মনে করো তাই করো।
গুহার ভেতর থেকে জিল বেরিয়ে এলো। সে রাক্ষসের পায়ে থাকা স্যান্ডেলজোড়া খুলে ফেলল। তারপর সে নিজের পায়ে পরল। স্যান্ডেলকে উদ্দেশ্য করে বলল, আরে! জাদুর স্যান্ডেল! আমাকে অবশ্যই রাক্ষসের বাড়িতে নিয়ে চলো।
মুহূর্তেই জাদুর স্যান্ডেল জিলকে রাক্ষসের বাড়ির সামনে নিয়ে এলো। জিল চিৎকার করে ডেকে বলল, দাদি! দরজা খোলো। তোমার ছেলে বিপদে পড়েছে।
বৃদ্ধা রাক্ষসী দরজা খুলে অবাক গলায় জিজ্ঞেস করল, আমার ছেলের কী হয়েছে?
জিল বলল, তোমার ছেলে মারাত্মক বনদস্যুর ফাঁদে পড়েছে। তারা তাকে ধরে নির্যাতন করে যাচ্ছে। তোমার ছেলেকে বাঁচানো যাবে যদি তুমি দস্যুদের অনেক স্বর্ণালঙ্কার দাও। নাহলে তারা তাকে হত্যা করবে। তুমি যেন আমার কথা বিশ্বাস করো এজন্য আমার সঙ্গে জাদুর স্যান্ডেল পাঠিয়ে দিয়েছে।
তখন স্যান্ডেলজোড়া বুড়ির নজরে এলো। সে উত্তেজিত হয়ে বলল, ওহ! আমার ছেলের স্যান্ডেল! না জানি তুমি কোন বিপদে আছো? ধনসম্পদ কি তোমার চেয়ে বড়?
বুড়ি চিৎকার করে উঠল। তারপর একটি বড় বস্তা সোনার মুদ্রায় ভরে জিলকে দিলো।
জিল বস্তা নিয়ে বলল, আর চিন্তা করো না। তোমার ছেলে অবশ্যই ফিরে আসবে।
জাদুর স্যান্ডেলের সাহায্যে জিল সেই জায়গায় পৌঁছে গেল যেখানে ভাইয়েরা ছিল। দৈত্যটি তখনও নাক ডেকে ঘুমাচ্ছিল। জিল ভাইদের বলল, জাদুর স্যান্ডেল এখন আমাদের। আমি রাক্ষসী বুড়ির বাড়ি থেকে অনেক স্বর্ণ নিয়ে এসেছি। সবাই আমাকে শক্ত করে ধরো।
ভাইয়েরা সবাই জিলকে ভালোভাবে ধরে রাখল। জিল স্যান্ডেলকে বলল, জাদুর স্যান্ডেল! আমাদের বাড়িতে পৌঁছে দাও।
কিছুক্ষণ পর সবাই বাড়ির দরজায় পৌছে গেল। তাদের বাবা এবং মা বলল, ছেলেরা! তোমরা জঙ্গলে থেকে কীভাবে চলে এসেছ? দারিদ্র্যের কারণে আমরা এই নৃশংসতা করেছি।
বাবা মা দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ শুনে খুলে দিয়েছিল। সাত ছেলেকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তারা তাদের জড়িয়ে ধরল। জিল বলল, মা! আমাদের আর দারিদ্র্য নেই। আমরা বহু বছরের জন্য প্রয়োজনীয় স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে এসেছি।
বস্তাটি খোলা হলো। এর ভেতরে প্রচুর স্বর্ণ জ্বলজ্বল করে উঠল। প্রত্যেকেই এই অপ্রত্যাশিত মঙ্গল উপভোগ করছে।
রাক্ষস তার ঘুম থেকে জেগে উঠল। সে পায়ে জাদুর স্যান্ডেল নেই দেখে হতবাক হয়ে গেল। সে একরকম কষ্ট সহ্য করে তার বাড়িতে পৌঁছে গেল। বুড়ি তখন দরজায় অপেক্ষা করছিল। বলল, ছেলে! তারা কি তোমাকে ছেড়ে দিয়েছে? আমি যে স্বর্ণগুলো সারাজীবন একসাথে জমিয়ে রেখেছিলাম তা পাঠিয়ে দিয়েছি তোমাকে মুক্ত করার জন্য।
রাক্ষস চমকে জিজ্ঞেস করল, তুমি কী বলছো মা? আমরা যে স্বর্ণ একসাথে রেখেছিলাম তা তুমি কাকে দিয়েছ?
বুড়ি রাক্ষসকে যা ঘটেছিল সব বলল।
রাক্ষস কেঁদে উঠে বলল, মা! সেই ছেলেরা আমাদের এত ভালোভাবে প্রতারিত করেছে। আমরা নিজেরাই আমার সন্তানদের হত্যা করেছি। আমি আমার জাদুর স্যান্ডেল হারিয়ে ফেলেছি। যেসব স্বর্ণ একসাথে রাখা হয়েছিল তাও চলে গেল। এখন কী হবে আমাদের?
বুড়ি রাক্ষসকে সান্ত¡না দিয়ে বলল, মাত্র একদিন তারা এখানে ছিল। আমাদের অনেক ক্ষতি তারা করেছে। আমাদের জন্য তাদের পথে আর না যাওয়াই ভালো।
রাক্ষস বলল, তুমি যেমন বলো আমি তাই করব মা।
এরপরে, কাঠুরি তার পরিবারের সাথে সুখে বসবাস করতে লাগল।