লাইফস্টাইল ডেস্ক :শিশু যখন হাত-পা নাড়তে শেখে, তখন থেকেই সে পরিবারের বড়দের কাছ থেকে শিখতে শুরু করে। তখন থেকেই শিশুর সামনে বাবা-মা তথা বড়দের কথাবার্তাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। আধুনিকতায় ছোঁয়া সন্তানের গায়ে লাগানো যাবে না- এমন নয়। শিশুকে সময়ের স্রোতে সাঁতার দিয়ে বড় করে তুলতে হবে, কিন্তু স্রোতের সঙ্গে ভাসিয়ে দেওয়া যাবে না। অবাধ স্বাধীনতা দিয়ে তাকে নষ্ট হওয়ার পথে ছেড়ে দেওয়া যাবে না। সন্তানকে শেখাতে হবে, উত্তম আচরণ আর মন্দ আচরণের পার্থক্য।
পিতা বা মাতা হিসেবে আপনি সন্তানের সামনে মোবাইলে ফেইসবুক ব্যবহারে মনোযোগী থাকবেন, আর আশা করবেন সন্তান বই পড়তে উৎসাহী হবে-এসব কপটতার আশ্রয়। শিশুরা অনুকরণ করতে ভালোবাসে, তারা যা দেখে তাই শেখে। কাদামাটি যেমন যে কোনো আকৃতিতে রূপান্তর করা যায়, শিশুদেরকেও ঠিক তেমনভাবে গড়ে তোলা যায়। জন্মের পর থেকেই শিশুরা পিতা-মাতা, প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজনদের ব্যবহার এবং জীবনধারা দেখে বড় হয়। আর বড় হয়ে সেই ধরনের আচার ব্যবহার করে ও সেই জীবনধারা অনুযায়ী চলতে চায়। তাই শিশুদের সঙ্গে যদি সব সময় নমনীয়তা নিয়ে, আন্তরিকতা নিয়ে কথা বলা হয় তবে শিশুর ভেতর আত্মবিশ্বাসী মনোভাব কাজ করবে।
শিশুরা যদি কোনো কাজ করে তবে তার প্রশংসা করতে হবে, এতে করে ভবিষ্যতে সে আরও ভালো কিছু করার প্রতি দৃঢ় মনযোগী হবে। পরীক্ষায় ভালো ফল করলে শিশুকে উপহার অথবা পুরস্কৃত করলে সে আরও ভালো কিছু করার দিকে মনযোগী হবে। মনে রাখতে হবে, প্রশংসার মধ্যে বড় হলে শিশু মানুষকে মূল্যায়ন করতে শেখে।
যদি শিশু ব্যর্থ হয়, তবে বকাবকি করা বা তিরস্কার করা যাবে না। বরং তাকে সুন্দর করে বলতে হবে, সে চেষ্টা করেছে এটাই অনেক বড় একটি সাহসিকতা। এতে শিশুটির ভেতর বারবার চেষ্টা করার মানসিকতা তৈরি হবে। মনে রাখতে হবে, তিরস্কার পেয়ে বড় হতে থাকলে শিশু মনোবলের অভাবে হীনমন্যতায় ভুগবে। শিশুরা বয়সে ছোট হলেও তাদের ভেতর আত্মসম্মানবোধ কাজ করে। ফলশ্রুতিতে কারও সামনে তাকে ছোট করে কথা বলা, ব্যঙ্গাত্মক হাস্যরস করে কথা বলা ঠিক নয়। পারিবারিক কিছু বিষয়ে শিশুর মতামত নিয়ে সেই মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে শিশুকে সাহসী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। এতে করে পরবর্তী সময়ে সে পরিবার তথা সামগ্রিক বিষয় নিয়ে ভাবতে শিখবে ও দায়িত্ববোধ গড়ে উঠবে। অনেক সময় প্রতিবেশী অন্য একটি শিশুর সাথে তুলনা করে শিশুকে ছোট করা হয়, এটা করলে স্থায়ীভাবে পিতা মাতা তথা পুরো পরিবারের সাথে শিশুর সম্পর্ক খারাপ হতে থাকে। দেখা যায় আস্তে আস্তে শিশু ঘরের বাইরে তার জগত তৈরি করে ফেলে, শিশুরা যেখানে মূল্যায়ন পাবে, সেখানেই তার জগত তৈরি করে নেবে। যে সকল পরিবারে পিতামাতা দুইজন চাকরি করেন ফলে শিশুকে বাসায় একা কাটাতে হয়, সে সকল পিতামাতাদের নিজেদের ভেতরে সম্পর্ক এতটা সুমধুর করতে হবে যেন সপ্তাহে ছুটির দিনে বাবা ও মাকে একসাথে পাবার জন্য শিশু অপেক্ষা করে। এছাড়া সারাদিন অফিস শেষে যখন বাসায় আসেন তখন যদি আপনাদের সন্তানদের সাথে সুন্দর ব্যবহার করেন এবং আপনারা সন্তানকে কতটা মিস করেছেন তা বুঝাতে পারেন, বাচ্চাদের সারাদিন কেমন কেটেছে জানতে উৎসাহী থাকেন, তাহলেও শিশুরা অনেক খুশি হয়। তা না করে যদি পিতামাতার মধ্যে কলহ লেগেই থাকে, তাহলে ছুটির দিনে শিশুরা নিজেদের জাহান্নামের অধিবাসী মনে করতে শুরু করবে। মনে মনে ভাববে আজ ছুটির দিন, আজ বাসায় যুদ্ধের দিন। তাই শিশু একটু বড় হলেই ছুটির দিনে বাসার বাইরে কোচিং ক্লাসে থাকা অথবা বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে থাকাতেই স্বস্তি অনুভব করবে। আর সময়ের ব্যবধানে একসময় পিতামাতা অভিযোগ করবেন সন্তান কেন দূরে দূরে থাকে! সন্তানের সঙ্গে পিতামাতার সম্পর্কের দূরত্ব কোনোভাবেই কাম্য নয়। এই সম্পর্কের দূরত্বের ফলে সন্তানের হাতে পিতা-মাতা খুন, সন্তান কর্তৃক পিতা-মাতাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসার মত ঘটনা কাছাকাছি সময়ে খুব একটা ঘটত না, কিন্তু এখন হরহামেশাই ঘটছে।
অনেক পিতা-মাতা আছেন যারা তাদের নিত্যদিনের দাম্পত্য কলহ তথা ঝগড়াঝাটি শিশুদের সামনেই করেন। বিষয়টি সন্তানদের উপর কতটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে তা প্রতিটি পিতা-মাতার জানা দরকার। এই ধরনের পরিবারের শিশুরা যথাসম্ভব পরিবার থেকে নিজেদের গুটিয়ে রাখে। শিশুরা যদি মায়ের মুখে তার বাবার এবং বাবার মুখে মায়ের সুনাম না শুনে, উল্টো একে অপরের প্রতি অভিযোগ শুনে বড় হয়, তবে শিশুর মনে পিতামাতার জন্য কখনই সম্মান সৃষ্টি হবে না। এই ধরনের শিশুরা অল্প বয়সেই বাইরে নিজের জগত তৈরি করে নেয়। তারা অল্প বয়সেই আবেগীয় তথা প্রেমঘটিত সম্পর্কে জড়িয়ে জীবনের সুখ খুঁজে পেতে চায়। ফলশ্রুতিতে খুব কম বয়সেই সম্পর্কে ভাঙনের তিক্ত অভিজ্ঞতা লাভ করে। আর ভবিষ্যতে সম্পর্কজনিত ভীতি নিয়ে জীবনে এগিয়ে চলে।
আজকাল টিকটক, লাইকি এবং অন্যান্য ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্মে তথা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সন্তানদের নৈতিক অবক্ষয় দেখে শুধু প্রশাসনের দোষ দিয়েই দায় সারতে চাওয়া কি আদৌ সমীচীন? মনে রাখতে হবে, সন্তানদের নৈতিকতা শিক্ষাদানের দায়িত্ব পিতামাতার, প্রশাসনের নয়। প্রশাসনের দায়িত্ব সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মানুষের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হলো নৈতিক শিক্ষা। আর এগুলো অর্জিত হয় ছোটবেলা তথা প্রথমত পরিবার থেকেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পড়ালেখা করে শিক্ষিত হওয়া যায়। উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করা যায়। মেধাবী হওয়া ও উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের সঙ্গে মার্জিত আচরণ সম্পর্কিত নয়। এ জন্য আজকাল দেখা যায়, উচ্চশিক্ষিত একজন মানুষ অন্যের সঙ্গে বাজে ব্যবহার করছেন। এ জন্য বলা হয়, তিনি হয়তো ছোটবেলায় পারিবারিক ও সামাজিক শিক্ষা ভালোভাবে পাননি কিংবা তাকে দেয়া হয়নি। ভদ্রতা বজায় রেখে চলতে না পারলে, মানুষের সঙ্গে সুন্দর ব্যবহার না করলে সব শিক্ষার গৌরব মূল্যহীন হয়ে পড়ে।
ভালো স্বামী-স্ত্রী হয় ভালো পিতা-মাতা
                                 ট্যাগস :  
                                                            
							
                            
                                      জনপ্রিয় সংবাদ                                
                                 
																			 
										

























