ঢাকা ০৫:০২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

দৃশ্যমান হচ্ছে প্রকট আয় বৈষম্য

  • আপডেট সময় : ১২:২৪:০০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২১
  • ১১৪ বার পড়া হয়েছে

বিশেষ সংবাদদাতা : দেশের অর্থনীতিতে সৃষ্ট আয়-বৈষম্যকে দীর্ঘসময় আড়ালে রাখা হলেও করোনার অভিঘাতে তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এ সময় বেশিরভাগ মানুষের আয় কমলেও কিছু মানুষের আয় বেড়েছে। ফলে আরো তীব্র আকার ধারণ করেছে আয় বৈষম্য। এতে একদিকে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বাড়ছে, অন্যদিকে ব্যাংকে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে দেশে এখন কোটি টাকার আমানতকারীর সংখ্যা প্রায় ১ লাখ। যা ছয় মাস আগেও ছিল প্রায় ৯৪ হাজার। অপরদিকে এক বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের জরিপ অনুযায়ী, করোনায় নতুন করে প্রায় আড়াই কোটি মানুষ দরিদ্র হয়েছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, করোনায় দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়েছে। অনেকেই চাকরি হারিয়েছেন। বিনিয়োগকারীরাও নতুন বিনিয়োগ করছেন না। ফলে একদিকে যেমন মানুষের কর্মসংস্থান কমে গেছে অন্যদিকে ব্যাংকে বিনিয়োগকারীদের অলস অর্থ জমা হচ্ছে। এতে দেশের আয় বৈষম্য বাড়ছে। এছাড়া, দুর্নীতির মাধ্যমে কালোটাকা অর্জন, হন্ডির মাধ্যমে দেশ থেকে টাকা পাচারে কিছুটা প্রতিবন্ধকতা, প্রণোদনা প্যাকেজের টাকা ভিন্ন খাতে স্থানান্তর, করনীতিতে অসামঞ্জস্য, ধনীদের কাছ থেকে কম হারে কর আদায়ও দেশের আয় বৈষম্যের অন্যতম কারণ। এসব কারণে এক শ্রেণির মানুষের বৈধ ও অবৈধ উপায়ে আয় বাড়ছে। তবে আয় কমেছে এমন মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এ অবস্থায় বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়ানোর উপর সরকারকে আরো বেশি গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, জুন শেষে দেশে ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক কোটিপতি আমানতকারীর ব্যাংক হিসাব সংখ্যা ৯৯ হাজার ৯১৮টি। এসব ব্যাংক হিসাবে আমানতের পরিমাণ ৬ লাখ ৩৪ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা। ছয় মাস আগে অর্থাৎ ২০২০ সালের ডিসেম্বরে কোটি টাকার বেশি হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল ৯৩ হাজার ৮৯০টি। অর্থাৎ ছয় মাসে দেশে নতুন কোটিপতি আমানতকারীর হিসাব সংখ্যা বেড়েছে ৬ হাজার ২৮টি। এদিকে, কোভিডের আঘাতে দেশে নতুন করে দরিদ্র হয়েছে ২ কোটি ৪৫ লাখ মানুষ। এক জরিপে দেখা গেছে, ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত দেশে এই নতুন দরিদ্র শ্রেণির সংখ্যা জনসংখ্যার ১৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ হয়েছে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) এক সাম্প্রতিক জরিপে এসব তথ্য জানা গেছে। জরিপে আরও বলা হয়েছে, মহামারি শুরু হওয়ার পর দেশের অর্থনীতিতে কোভিড-১৯ এর প্রভাব পড়েছে। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর প্রভাব অনেক বেশি। গবেষণায় আরও দেখা গেছে, অতি ধনীদের হাতে এখন দেশের মোট আয়ের ৩৭ দশমিক ৮০ শতাংশ, যা লকডাউনের আগে ছিল ২৭ দশমিক ৮২ শতাংশ। এই কোভিড-১৯-এর লকডাউন আয় বৈষম্যও বাড়িয়েছে। যা মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুন শেষে দেশে মোট আমানতকারীর সংখ্যা ১২ কোটি ১৫ লাখ ৪৯ হাজার ২৬৬। এসব হিসাবে মোট আমানতের পরিমাণ ১৪ লাখ ৩৯ হাজার ৭৬৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে কোটি টাকার হিসাব ৯৯ হাজার ৯১৮টি। এসব হিসাবে আমানতের পরিমাণ ৬ লাখ ৩৪ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ মোট আমানতের প্রায় ৪৪ শতাংশই কোটিপতি হিসাব। ছয় মাস আগে অর্থাৎ ২০২০ সালের ডিসেম্বরে কোটি টাকার বেশি হিসাব ছিল ৯৩ হাজার ৮৯০টি। হিসাবগুলোতে আমানতের পরিমাণ ছিল ৫ লাখ ৯৫ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ ছয় মাসে দেশে কোটিপতি হিসাব বেড়েছে ৬ হাজার ২৮টি। আর এসব হিসাবে আমানত বেড়েছে ৩৯ হাজার ৩৮৯ কোটি টাকা।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

দৃশ্যমান হচ্ছে প্রকট আয় বৈষম্য

আপডেট সময় : ১২:২৪:০০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২১

বিশেষ সংবাদদাতা : দেশের অর্থনীতিতে সৃষ্ট আয়-বৈষম্যকে দীর্ঘসময় আড়ালে রাখা হলেও করোনার অভিঘাতে তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এ সময় বেশিরভাগ মানুষের আয় কমলেও কিছু মানুষের আয় বেড়েছে। ফলে আরো তীব্র আকার ধারণ করেছে আয় বৈষম্য। এতে একদিকে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বাড়ছে, অন্যদিকে ব্যাংকে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে দেশে এখন কোটি টাকার আমানতকারীর সংখ্যা প্রায় ১ লাখ। যা ছয় মাস আগেও ছিল প্রায় ৯৪ হাজার। অপরদিকে এক বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের জরিপ অনুযায়ী, করোনায় নতুন করে প্রায় আড়াই কোটি মানুষ দরিদ্র হয়েছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, করোনায় দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়েছে। অনেকেই চাকরি হারিয়েছেন। বিনিয়োগকারীরাও নতুন বিনিয়োগ করছেন না। ফলে একদিকে যেমন মানুষের কর্মসংস্থান কমে গেছে অন্যদিকে ব্যাংকে বিনিয়োগকারীদের অলস অর্থ জমা হচ্ছে। এতে দেশের আয় বৈষম্য বাড়ছে। এছাড়া, দুর্নীতির মাধ্যমে কালোটাকা অর্জন, হন্ডির মাধ্যমে দেশ থেকে টাকা পাচারে কিছুটা প্রতিবন্ধকতা, প্রণোদনা প্যাকেজের টাকা ভিন্ন খাতে স্থানান্তর, করনীতিতে অসামঞ্জস্য, ধনীদের কাছ থেকে কম হারে কর আদায়ও দেশের আয় বৈষম্যের অন্যতম কারণ। এসব কারণে এক শ্রেণির মানুষের বৈধ ও অবৈধ উপায়ে আয় বাড়ছে। তবে আয় কমেছে এমন মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এ অবস্থায় বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়ানোর উপর সরকারকে আরো বেশি গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, জুন শেষে দেশে ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক কোটিপতি আমানতকারীর ব্যাংক হিসাব সংখ্যা ৯৯ হাজার ৯১৮টি। এসব ব্যাংক হিসাবে আমানতের পরিমাণ ৬ লাখ ৩৪ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা। ছয় মাস আগে অর্থাৎ ২০২০ সালের ডিসেম্বরে কোটি টাকার বেশি হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল ৯৩ হাজার ৮৯০টি। অর্থাৎ ছয় মাসে দেশে নতুন কোটিপতি আমানতকারীর হিসাব সংখ্যা বেড়েছে ৬ হাজার ২৮টি। এদিকে, কোভিডের আঘাতে দেশে নতুন করে দরিদ্র হয়েছে ২ কোটি ৪৫ লাখ মানুষ। এক জরিপে দেখা গেছে, ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত দেশে এই নতুন দরিদ্র শ্রেণির সংখ্যা জনসংখ্যার ১৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ হয়েছে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) এক সাম্প্রতিক জরিপে এসব তথ্য জানা গেছে। জরিপে আরও বলা হয়েছে, মহামারি শুরু হওয়ার পর দেশের অর্থনীতিতে কোভিড-১৯ এর প্রভাব পড়েছে। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর প্রভাব অনেক বেশি। গবেষণায় আরও দেখা গেছে, অতি ধনীদের হাতে এখন দেশের মোট আয়ের ৩৭ দশমিক ৮০ শতাংশ, যা লকডাউনের আগে ছিল ২৭ দশমিক ৮২ শতাংশ। এই কোভিড-১৯-এর লকডাউন আয় বৈষম্যও বাড়িয়েছে। যা মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুন শেষে দেশে মোট আমানতকারীর সংখ্যা ১২ কোটি ১৫ লাখ ৪৯ হাজার ২৬৬। এসব হিসাবে মোট আমানতের পরিমাণ ১৪ লাখ ৩৯ হাজার ৭৬৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে কোটি টাকার হিসাব ৯৯ হাজার ৯১৮টি। এসব হিসাবে আমানতের পরিমাণ ৬ লাখ ৩৪ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ মোট আমানতের প্রায় ৪৪ শতাংশই কোটিপতি হিসাব। ছয় মাস আগে অর্থাৎ ২০২০ সালের ডিসেম্বরে কোটি টাকার বেশি হিসাব ছিল ৯৩ হাজার ৮৯০টি। হিসাবগুলোতে আমানতের পরিমাণ ছিল ৫ লাখ ৯৫ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ ছয় মাসে দেশে কোটিপতি হিসাব বেড়েছে ৬ হাজার ২৮টি। আর এসব হিসাবে আমানত বেড়েছে ৩৯ হাজার ৩৮৯ কোটি টাকা।