ঢাকা ০৯:৫৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫

অপ্রত্যাশিতভাবে জেগে উঠছে সূর্য, বিস্মিত বিজ্ঞানীরা

  • আপডেট সময় : ০৫:০৩:০৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫
  • ১১ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

প্রযুক্তি ডেস্ক: আলো ও তাপের জন্য পৃথিবীর প্রতিটি প্রাণ সূর্যের ওপর নির্ভরশীল। অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সূর্য অপরিহার্য হলেও এ নিয়ে বিজ্ঞানীদের জানার পরিধি এখনও সীমিত। সাম্প্রতিত এক গবেষণা অবাক করে দিয়েছে নাসার বিজ্ঞানীদের।

গবেষণায় উঠে এসেছে, ২০০৮ সালের পর থেকে সূর্যের সক্রিয়তা হঠাৎ অনেকটা বেড়ে গেছে। অথচ গবেষকদের ধারণা ছিল সূর্য শান্ত থাকবে। সূর্যের এই বাড়তি সক্রিয়তার মানে এই নয় যে কোনো দুর্যোগকালীন সিনেমার মতো সূর্য এখনই আমাদের ওপর তেজস্ক্রিয়তা বর্ষণ করবে বা দু-এক দিনের জন্য নিভে যাবে। তবে এ পরিবর্তনের কারণে বিজ্ঞানীদের হয়ত মহাকাশ নিয়ে তাদের ভবিষ্যৎ বিভিন্ন পরিকল্পনা নতুন করে সাজাতে হতে পারে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে প্রযুক্তি সাইট স্ল্যাশগিয়ার।

গবেষণায় বলা হয়েছে, সূর্য তার সুপরিচিত ১১ বছরের চক্র মেনে চলার পাশাপাশি দীর্ঘ সময়ের জন্য নিজের সক্রিয়তা বাড়ায় বা কমায়। ১৭ ও ১৯ শতকেও বিজ্ঞানীরা সূর্যের এমন দীর্ঘমেয়াদী শান্ত অবস্থা বা কম সক্রিয়তা লক্ষ্য করেছিলেন, যা সাধারণত কয়েক দশক ধরে স্থায়ী হয়।

১৯৯০ থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে সূর্যের সক্রিয়তা পর্যবেক্ষণ করে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, এর বেশ কিছু প্রধান সূচক ক্রমাগত কমছে। তখন কেউ কেউ ধারণা করেছিলেন, সূর্য হয়ত আবারো কয়েক দশকের জন্য দীর্ঘ শান্ত বা কম সক্রিয় পর্বে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। তবে সম্প্রতি প্রকাশিত গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে, বাস্তবে এর উল্টোটা ঘটছে। ২০০৮ সাল থেকে সূর্য যেন দীর্ঘ ঘুম ভেঙে জেগে উঠতে শুরু করেছে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, ২০০৮ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে সূর্যের চৌম্বক ক্ষেত্রের শক্তি ও সৌর বাতাসের তীব্রতা ধীরে ধীরে বেড়েছে। তবে এই সক্রিয়তা ভবিষ্যতে আরো বাড়তে থাকবে কি না তা নিয়ে বিজ্ঞানীরা এখনও নিশ্চিত নন। গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল লেটার্স’-এ।

বাড়তি সৌর কার্যকলাপের প্রভাব: বর্তমানে বিজ্ঞানীরা ঠিক নিশ্চিত নন যে সূর্যের এই দীর্ঘমেয়াদী পরিবর্তনের আসল কারণ কী। তবে এই পরিবর্তনের প্রভাব নাসার বিভিন্ন মহাকাশ মিশনের ওপর পড়তে পারে, আবার আমাদের দৈনন্দিন প্রযুক্তির জন্যও ঝুঁকির কারণ হতে পারে। সূর্যের সক্রিয়তা বেড়ে যাওয়ার মানে, সৌরচ্ছ্বটা বা ‘করোনাল মাস ইজেকশন’ বা সিএমই ঘটার সম্ভাবনা বেড়ে যাওয়া। আর এ বিষয়টিই বেশি দুশ্চিন্তার।

সিএমই হল সূর্য থেকে ছিটকে আসা গ্যাসের বিশাল এক মেঘ, যা মহাকাশে ছড়িয়ে পড়ে। অনেক সময় তা সৌরচ্ছ্বটার সঙ্গেই ঘটে থাকে। পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র সাধারণত আমাদের দিকে আসা ছোটখাটো বিভিন্ন সিএমইকে ঠেকিয়ে দেয়। তবে খুব বড় কোনো সিএমই সরাসরি পৃথিবীতে আঘাত করে তবে তা ভূ-চৌম্বকীয় ঝড় তৈরি করতে পারে। এই ঝড় পৃথিবীর বৈদ্যুতিক অবকাঠামো ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থার ব্যাপক ক্ষতি করতে পারে। চরম ভয়াবহ পরিস্থিতিতে অনেক বড় কোনো সিএমই-এর আঘাতে বর্তমান এই ডিজিটাল যুগ পুরোপুরি অচল হয়েও পড়তে পারে।

পৃথিবী বদলে দেওয়ার মতো এমন কোনো মহাপ্রলয় ঘটার সম্ভাবনা একেবারেই কম। তবে সূর্যের ছোটখাটো অগ্নুৎপাতও পৃথিবীর বিভিন্ন জিপিএস স্যাটেলাইটের ক্ষতি বা এদের ভেতরের যন্ত্রপাতি নষ্ট করে অথবা এদের পাঠানো সংকেত বা সিগনালে গোলযোগ তৈরি করতে পারে। পাশাপাশি, রেডিও যোগাযোগ ব্যবস্থাও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এ ছাড়া মহাকাশে তীব্র তেজস্ক্রিয় বিকিরণ ছড়িয়ে পড়ার ফলে সেখানে থাকা নভোচারীদের নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। এ কারণেই সূর্যের এই ক্রমাগত সক্রিয়তার ওপর কড়া নজর রাখছেন বিজ্ঞানীরা। অদূর ভবিষ্যতে সূর্যের তাপে আমাদের পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাওয়ার মতো কোনো বড় বিপদের শঙ্কা না থাকলেও সাবধানতার জন্য এই পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যাওয়া জরুরি।

সানা/এসি/আপ্র/২৯/১২/২০২৫

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

অপ্রত্যাশিতভাবে জেগে উঠছে সূর্য, বিস্মিত বিজ্ঞানীরা

আপডেট সময় : ০৫:০৩:০৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫

প্রযুক্তি ডেস্ক: আলো ও তাপের জন্য পৃথিবীর প্রতিটি প্রাণ সূর্যের ওপর নির্ভরশীল। অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সূর্য অপরিহার্য হলেও এ নিয়ে বিজ্ঞানীদের জানার পরিধি এখনও সীমিত। সাম্প্রতিত এক গবেষণা অবাক করে দিয়েছে নাসার বিজ্ঞানীদের।

গবেষণায় উঠে এসেছে, ২০০৮ সালের পর থেকে সূর্যের সক্রিয়তা হঠাৎ অনেকটা বেড়ে গেছে। অথচ গবেষকদের ধারণা ছিল সূর্য শান্ত থাকবে। সূর্যের এই বাড়তি সক্রিয়তার মানে এই নয় যে কোনো দুর্যোগকালীন সিনেমার মতো সূর্য এখনই আমাদের ওপর তেজস্ক্রিয়তা বর্ষণ করবে বা দু-এক দিনের জন্য নিভে যাবে। তবে এ পরিবর্তনের কারণে বিজ্ঞানীদের হয়ত মহাকাশ নিয়ে তাদের ভবিষ্যৎ বিভিন্ন পরিকল্পনা নতুন করে সাজাতে হতে পারে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে প্রযুক্তি সাইট স্ল্যাশগিয়ার।

গবেষণায় বলা হয়েছে, সূর্য তার সুপরিচিত ১১ বছরের চক্র মেনে চলার পাশাপাশি দীর্ঘ সময়ের জন্য নিজের সক্রিয়তা বাড়ায় বা কমায়। ১৭ ও ১৯ শতকেও বিজ্ঞানীরা সূর্যের এমন দীর্ঘমেয়াদী শান্ত অবস্থা বা কম সক্রিয়তা লক্ষ্য করেছিলেন, যা সাধারণত কয়েক দশক ধরে স্থায়ী হয়।

১৯৯০ থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে সূর্যের সক্রিয়তা পর্যবেক্ষণ করে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, এর বেশ কিছু প্রধান সূচক ক্রমাগত কমছে। তখন কেউ কেউ ধারণা করেছিলেন, সূর্য হয়ত আবারো কয়েক দশকের জন্য দীর্ঘ শান্ত বা কম সক্রিয় পর্বে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। তবে সম্প্রতি প্রকাশিত গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে, বাস্তবে এর উল্টোটা ঘটছে। ২০০৮ সাল থেকে সূর্য যেন দীর্ঘ ঘুম ভেঙে জেগে উঠতে শুরু করেছে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, ২০০৮ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে সূর্যের চৌম্বক ক্ষেত্রের শক্তি ও সৌর বাতাসের তীব্রতা ধীরে ধীরে বেড়েছে। তবে এই সক্রিয়তা ভবিষ্যতে আরো বাড়তে থাকবে কি না তা নিয়ে বিজ্ঞানীরা এখনও নিশ্চিত নন। গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল লেটার্স’-এ।

বাড়তি সৌর কার্যকলাপের প্রভাব: বর্তমানে বিজ্ঞানীরা ঠিক নিশ্চিত নন যে সূর্যের এই দীর্ঘমেয়াদী পরিবর্তনের আসল কারণ কী। তবে এই পরিবর্তনের প্রভাব নাসার বিভিন্ন মহাকাশ মিশনের ওপর পড়তে পারে, আবার আমাদের দৈনন্দিন প্রযুক্তির জন্যও ঝুঁকির কারণ হতে পারে। সূর্যের সক্রিয়তা বেড়ে যাওয়ার মানে, সৌরচ্ছ্বটা বা ‘করোনাল মাস ইজেকশন’ বা সিএমই ঘটার সম্ভাবনা বেড়ে যাওয়া। আর এ বিষয়টিই বেশি দুশ্চিন্তার।

সিএমই হল সূর্য থেকে ছিটকে আসা গ্যাসের বিশাল এক মেঘ, যা মহাকাশে ছড়িয়ে পড়ে। অনেক সময় তা সৌরচ্ছ্বটার সঙ্গেই ঘটে থাকে। পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র সাধারণত আমাদের দিকে আসা ছোটখাটো বিভিন্ন সিএমইকে ঠেকিয়ে দেয়। তবে খুব বড় কোনো সিএমই সরাসরি পৃথিবীতে আঘাত করে তবে তা ভূ-চৌম্বকীয় ঝড় তৈরি করতে পারে। এই ঝড় পৃথিবীর বৈদ্যুতিক অবকাঠামো ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থার ব্যাপক ক্ষতি করতে পারে। চরম ভয়াবহ পরিস্থিতিতে অনেক বড় কোনো সিএমই-এর আঘাতে বর্তমান এই ডিজিটাল যুগ পুরোপুরি অচল হয়েও পড়তে পারে।

পৃথিবী বদলে দেওয়ার মতো এমন কোনো মহাপ্রলয় ঘটার সম্ভাবনা একেবারেই কম। তবে সূর্যের ছোটখাটো অগ্নুৎপাতও পৃথিবীর বিভিন্ন জিপিএস স্যাটেলাইটের ক্ষতি বা এদের ভেতরের যন্ত্রপাতি নষ্ট করে অথবা এদের পাঠানো সংকেত বা সিগনালে গোলযোগ তৈরি করতে পারে। পাশাপাশি, রেডিও যোগাযোগ ব্যবস্থাও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এ ছাড়া মহাকাশে তীব্র তেজস্ক্রিয় বিকিরণ ছড়িয়ে পড়ার ফলে সেখানে থাকা নভোচারীদের নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। এ কারণেই সূর্যের এই ক্রমাগত সক্রিয়তার ওপর কড়া নজর রাখছেন বিজ্ঞানীরা। অদূর ভবিষ্যতে সূর্যের তাপে আমাদের পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাওয়ার মতো কোনো বড় বিপদের শঙ্কা না থাকলেও সাবধানতার জন্য এই পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যাওয়া জরুরি।

সানা/এসি/আপ্র/২৯/১২/২০২৫